নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ এএম, ০৪ মে, ২০২১
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। শুধু শহীদ রুমীর মা নন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল সন্তানদের মা। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় যখন তখন তিনি কিংবদন্তি হয়ে ওঠেননি। শিক্ষক এবং লেখিকা। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তাঁর লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। মনে মনে খুব ইচ্ছা ছিল তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার।
১৯৭৫ সালে পাবনা জেলা কারাগার থেকে মুক্ত করে বাবা জোর করে ঢাকায় নিয়ে আসেন লেখাপড়া করানোর উদ্দেশ্যে। কথায় বলে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।` মাথায় চাপল সিরাজগঞ্জের `স্ফুলিঙ্গ সাংস্কৃতিক সংসদ`-এর মতন ঢাকায়ও আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়বার। রাজনীতি তো আছেই। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢাকার প্রথম বন্ধু আতিক সিদ্দিকী কাজল (ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিকীর ভাই), গোলাম মোর্শেদ মাসু (বিশিষ্ট গীতিকার ও ব্যাবসায়ী, বেবিলন গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা)। দু`জনকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৬ সালে `সৃজন সাংস্কৃতিক সংসদ` গঠন করলাম। যার সভাপতি বানালাম, সে সময়ের প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মানুষ ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী (পরে ঢাবির ভিসি), সহসভাপতি জাহানারা ইমাম, কবি আসাদ চৌধুরী এবং অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান। সাধারণ সম্পাদক আমি। কাজল, মাসুসহ অন্যান্য বন্ধুরা বিভিন্ন পদে (যাদের কথা সৃজন নিয়ে লেখায় উল্লেখ করব)।
জাহানারা ইমামকে সম্মত করাতে টেলিফোনে যোগাযোগ করে আমরা ওনার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় যাই। সেদিনই প্রথম ড্রইংরুমে শহীদ রুমীর বড় পোট্রের্টটা দেখি। বিস্ময়, বেদনা, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় অনেকক্ষণ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম পোট্রেটটির সামনে! তাহলে এই সেই রুমী! আরো বিস্মিত হলাম রুমীর মা যখন ভেতর থেকে ড্রইং রুমে এলেন! অনিন্দ সুন্দরী এক মহিয়সী নারী! কী মার্জিত! কী রুচি সম্মত! কী বিনয়ী! কী সুন্দর করে কথা বলেন! আমরা ওনাকে খালাম্মা বলে সম্মোধন করায় খুশি হলেন। আমাদের উদ্দেশ্য-আদর্শ সব শুনে উনি সম্মত হলেন সৃজনের সঙ্গে থাকতে। কমিটি গঠনের মিটিংয়ে এলেন। কথা বললেন। মতামত দিলেন। টিএসসির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠলেন। কমিটি পরিচয় পর্বে উঠে দাঁড়িয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে মিষ্টি হেসে হাত নাড়লেন। যতদিন সৃজনের কর্মকান্ড ছিল ততদিন আমাদের পাশে মায়ের মতন, বন্ধুর মতন ছিলেন শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে। সৃজনের সদস্যরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় সৃজনের কর্মকান্ড কয়েক বছরের পর স্তিমিত হয়ে যায়। খালাম্মার সাথেও যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে যায়। তবে আবৃত্তি শিল্পী রূপা চক্রবর্তী খালাম্মার বাসা ভাড়া নিলে রূপার বাসায় যাতায়াত সূত্রে আবার নিয়মিত যোগাযোগ স্হাপন হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তৎপরতার শুরুর দিকে খালাম্মা ১৯৯১ সালের কবিতা উৎসবে বিকেলের অধিবেশনে এসে আমাকে বলেন, মোহন আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করছি, তোমাদের উৎসব মঞ্চ থেকে সে বিষয়ে একটা ঘোষণা দিতে চাই।` আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজী হলাম কিন্তু কবিতা পরিষদের নেতৃবৃন্দ কাউকে কিছু না জানিয়ে সময় বুঝে মঞ্চে গিয়ে ঘোষণা দিলাম, বিশিষ্ট লেখিকা, শহীদ রুমীর মা জাহানারা ইমাম এখন আপনাদের সামনে একটি জরুরি ঘোষণা দেবেন। আমি শ্রদ্ধেয়া জাহানারা ইমামকে মঞ্চ আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
সবাই অবাক হয়ে গেলেন, কী ব্যাপার কবিতা পাঠের মধ্যে আবার কিসের ঘোষণা! পরিষদ নেতৃবৃন্দও মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন। আমি জানতাম, মতামত চাইতে গেলে নানা মুনির নানা মত দেখা দিত। তাই কাউকে না বলেই ঘোষণা দিয়েছিলাম। খালাম্মা মঞ্চে উঠে এসে দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনরুত্থান, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির দাপাদাপি এসব বিষয়ে একটি ছোট বক্তৃতা করে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেই বক্তব্যে উনি গোলাম আজমসহ একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় ডাক দেন এবং তিনি অবিলম্বে সেই লক্ষ্যে একটি আন্দোলন শুরু করবেন, যে আন্দোলনে সবার সমর্থন এবং একাত্ম হওয়ারও আহ্বান জানান।
উপস্থিত দেশ বিদেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ হাজার জনতা এই ঘোষণায় করতালিতে ফেটে পড়েন। খালাম্মা মঞ্চ থেকে নেমে এলে অনেকেই তাঁকে ঘিরে ধরে অভিনন্দন জানান। তাঁর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। খালাম্মা সেদিন আমার উপর ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। পাশে বসে অনেকক্ষণ আমার হাত তাঁর হাতের মুঠিতে ধরে রেখেছিলেন। আমি সেদিনের সেই মাতৃস্নেহের অনুভূতি কাউকে বোঝাতে পারব না। আমার সমস্ত শরীরের শিরা-উপশিরায় এক মহারণের অগ্নিলাভা প্রবাহিত হচ্ছিল! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, নিজের জীবন দিয়ে হলেও একাত্তরের ঘাতক দালাল আর যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটি থেকে চির নির্মূলের লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাব। কথা দিয়েছিলাম প্রিয় শহীদ জননীকে। সেই প্রদীপ্ত প্রতিজ্ঞা আর অঙ্গিকার থেকেই `মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি`র প্রতিটি কর্মসূচি, আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখ কাতারের সৈনিক হিসেব নিজেকে সদা নিয়োজিত রেখেছিলাম।
অনেক স্মৃতির মাঝে একটি দিনের কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়। সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখের আগের রাত্রি (খুঁজলে সন তারিখ বের করা যাবে)। কোলকাতা থেকে কবি বন্ধু কাজল চক্রবর্তী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় (আরেক জনের নাম মনে নেই) এসেছে ঢাকায়। উঠেছে আমার আজিমপুরের ছোট্ট বাসায়। ওদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরেফিরে রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরতেই আমার স্ত্রী জানাল, জাহানারা খালাম্মা ফোন দিয়েছিলেন, তুমি ফেরা মাত্রই ফোন দিতে বলেছেন, খুব জরুরি। তখন মোবাইল ফোন ছিল না। বাসার ল্যান্ডফোন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম। অপর প্রান্তে খালাম্মা ধরলেন। সালাম দিতেই বললেন, মোহন তুমি এক্ষুণি আমার বাসায় চলে এসো।` বলেই ফোন কেটে দিলেন। হকচকিয়ে গেলাম। কোনো বিপদ নাতো, খালাম্মা এভাবে বললেন, ফোন কেটে দিলেন! বন্ধুদের বললাম, তোমরা খেয়ে নাও, খুব জরুরি কাজে আমাকে এখনি বাইরে যেতে হবে। কাজল বলল, চলো আমিও তোমার সঙ্গে যাব।` দু`জন দ্রুত বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। স্ত্রী বললো, খেয়ে যাও।` বললাম, না, খালাম্মার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে না হলে এভাবে কেন ডাকলেন। আজিমপুর শেখ সাহেব বাজার মোড়েই রিক্সা এবং বেবীট্যাক্সি স্ট্যান্ড আর পাশেই বেবিট্যাক্সি গ্যারেজ। কিন্তু কোনো বেবিট্যাক্সি নাই এত রাতে। বাধ্য হয়ে গ্যারেজে গিয়ে পরিচিত এক ড্রাইভারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললাম, খুব জরুরি চলো এলিফ্যান্ট রোড যেতে হবে, তোমার গাড়িতেই ফিরব। ভাড়া একটু বেশি নিয়ো। সে কোনো ওজর-আপত্তি করল না। আমরা ছুটলাম। খালাম্মার বাসার কলিংবেল টিপতেই খালাম্মা দরজা খুলে দিলেন। আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। একটা হাতে লেখা কাগজ আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এই লেখা দিয়ে একটা লিফলেটে ছেপে আগামীকাল পহেলা বৈশাখ রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।` কাগজটা হাতে নিয়ে আমি বললাম, এখন এত রাতে কি করে সম্ভব? সবতো বন্ধ হয়ে গেছে। বললেন, এত লোক থাকতে তাহলে তোমাকে ডাকলাম কেনো? তোমার পক্ষে সম্ভব বলেই তো।` কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি বললাম, টাকা লাগবে না খালাম্মা কিন্তু..। কোনো কিন্তু নয় মোহন, আমি চাই রাতেই মধ্যেই ছেপে সকালে বিলি করবে। কীভাবে করবে আমি জানি না।` ঠিক আছে খালাম্মা। বলে বেরিয়ে এসে বেবিতে উঠলাম। শেখ সাহেব বাজার সাগর প্রেসে গিয়ে সার্টারে চাপড় দিয়ে ডাকলাম, এই ভেতরে কে আছো খোলো। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই। এবার টিনের সার্টারের উপর সব রাগগোস্বা ঢেলে দিলাম দুমদাম। কাঁচা ঘুম ভেঙে ভেতর থেকে কে একজন খেকিয়ে উঠল, এই ক্যাডারে?` ধমকে উঠলাম, এই ব্যাটা খোল কইলাম, নাইলে বিপদ আছে তোর। ক্যাডা? এবার সুর একটু নরম। বললাম, সাগরের বন্ধু, খোলো। ক্যান কি দরকার?` বললাম, দুই রিম হোয়াইট প্রিন্ট লাগব। এত রাতে বেচা-কেনা করতে তো মাহাজনের পারমিশন লাগব।` ঠিক আছে তুমি বাইরাও চলো, সাগরের বাসায় চলো। সাগরের বাসা কাছে-কুলেই কিন্তু আমি চিনি না। অনেক বলে ক`য়ে ওর কর্মচারীকে নিয়ে ওর বাসায় গিয়ে, ওকে ডেকে তুলে সব খুলে বলে, দুই রিম কর্ণফুলী ডবল ডিমাই কাগজ নিয়ে কাজল আর আমি ৯৯, হাজী ওসমানগণি রোডে(আলু বাজার) আমার বিকল্প প্রিন্টিং প্রেসে (যে প্রেসে পটুয়া কামরুল হাসানের সর্বশেষ স্কেচ `দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে` পোস্টার, ছাত্র ঐক্যের ঐতিহাসিক বুলেটিনসহ সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল মুদ্রিত হয়েছে, অনেক গোপন মিটিং হয়েছে) যখন পৌঁছালাম তখন রাত প্রায় দেড়টা। প্রেসের কর্মচারীদের ডেকে তুলে কাজে লাগিয়ে দিলাম। ভাগ্যিস কম্পোজিটর, মেশিনম্যান একজন করে প্রেসেই থাকত। কাজল আর আমি পাশে বসে কম্পোজ করিয়ে, প্রুফ কারেকশন করে ট্রেডল মেশিনে তুলতে তুলতে রাত প্রায় চারটা বেজে গেল। এতক্ষণে নাড়িভূড়ির মোচড়ে মনে পড়ল আমরা ক্ষুধার্ত! কিন্তু উপায় কি? ঢকঢক করে পানি খেয়ে দু`জন মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ভোর ছয়টা নাগাদ ছাপা শেষ করে লিফলেট নিয়ে রমনার বটমূলে ছুটলাম রিক্সায়। শহীদ জননীর হুকুম লংঘন করার সাধ্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের নাই। কিন্তু মৎসভবন পর্যন্ত এসে রিক্সা আটকে দিল। কোনো উপায় না পেয়ে দুটো প্যাকেট দুজন কাঁধে তুলে নিলাম। বেশ ওজন যা আমাদের পক্ষে বহন করা কঠিন। কিন্তু করতেই হবে, এ যে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন। এ যে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে একাত্তরের মতন অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রশ্ন। শহীদ জননীর কাছে অঙ্গীকারের প্রশ্ন। অনেক কষ্টে একজন ভারতীয় নাগরিক আর একজন বাংলাদেশী নাগরিক সম্মিলিতভাবে থেমে থেমে জিরিয়ে অনেক কষ্টে রমনার বটমূলে পৌঁছে কিছু তরুণকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক হাজার লিফলেট কিছুক্ষণের মধ্যেই বিলি করে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেললাম।
এমনি আরো অনেক কাজ সেই আন্দোলনে আমাদের করতে হয়েছে। ১৯৯২`র ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণআদালত অনুষ্ঠানের দিন আসাদুজ্জামান নূর, কামাল পাশা চৌধুরী, হাসান আরিফ আর আমি ছিলাম একত্রে একটি ট্রাকের উপরে দাঁড়িয়ে। গণআদালত শেষে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কট করে আমরা নিয়ে গেলাম প্রেসক্লাবে।
কত মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, সংগ্রাম, পরিশ্রম, কষ্ট, ত্যাগ, গ্রেফতারী পরোয়ানা, জুলুম, নির্যাতনের পথ বেয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামেের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন তাঁর প্রয়াণের অনুপস্থিতিতেও বিশাল, ব্যাপক রূপ পরিগ্রহ করেছিল, শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে। জেগে উঠেছিল সারাদেশ একাত্তরের চেতনায় গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে। ফাঁসি হয়েছিল একাত্তরের ঘৃণ্য অপরাধীদের। কিন্তু কিছু মানুষের ফাঁসির মাধ্যমেই কি বাস্তবায়ন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আমরা কি শুধু কতিপয় ঘাতক, দালাল, রাজাকার, আলবদর তথা যুদ্ধাপরাধীদের শারিরীক মৃত্যু চেয়েছিলাম নাকি বাংলার মাটি থেকে স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার সমূল বিনাশ চেয়েছিলাম?
কেন তাহলে স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোষরফা করে আজ বাস করতে হয় শহীদের রক্তস্নাত এই ভূমিতে? কেন তাদের এত আস্ফালন, এত আকাশচুম্বী স্পর্ধা ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু`লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে? ওই নরাধমদের সমাজ-প্রগতি বিরোধী পশ্চাৎপদ, কুপমন্ডুক, অন্ধ-কালো চিন্তা-চেতনা তথা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ধ্যান-জ্ঞান-অবস্থান সমূলে উৎপাটনের জন্যই তো ছিল জাহানারা ইমামের আন্দোলন। কিন্তু আমরা কি সেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি?
আজ সেই শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম ভরে গেছে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে! কিন্তু আমি বিবেকের দংশনে ক্ষতবিক্ষত। রক্তাক্ত। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শহীদ জননী ডুঁকরে কাঁদছেন-আজকের এই স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষক, অগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নির্লজ্জতা দেখে!
আমি কোন মুখে শ্রদ্ধা জানাব মাকে?
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।