ইনসাইড থট

কোভিড-১৯, বাংলাদেশ এবং কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় (৩)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ১৮ মে, ২০২১


Thumbnail

২০২০ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত ডিপ্লোমেট পত্রিকায় একজন ভারতীয় স্বাধীন সাংবাদিক মহিলা সুধা রামচন্দ্রন লিখেছিলেন, “বাংলাদেশের কোভিড-১৯ এর বিপর্যয়” শিরোনামে। তিনি লিখছিলেন, “ভাইরাসের ঝুঁকি জনস্বাস্থ্যের সঙ্কটের কথা উল্লেখ না করেই বলা যায় এই ভাইরাস বাংলাদেশকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির অশান্তিতে বিশাল ভাবে জর্জরিত করবে।” তারপরে আমি বাহিরের এবং বাংলাদেশের অনেক খবরের কাগজ পড়লাম এবং খবরে শুনেছি, কিছু বিদেশের এবং কিছু বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও কোভিডের কারণে বাংলাদেশে বিশিষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা বলেছিলেন বা বলছেন। আসলেই কি তা ঘটেছিল? নাকি আগামীতে তাই ঘটবে বলে আমরা বিশ্বাস করছি? আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে এর প্রভাব থাকবে আরো কিছু মাস তবে একটা বিরাট দুর্ঘটনা ঘটবে না। ন্যূনতম ক্ষতির সাথে আমরা এখন আছি এবং আমরা বর্তমানের এই মহামারীটি ন্যূনতম ক্ষতিতে কাটিয়ে উঠব। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলার আগে আসুন বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিং ইনস্টিটিউট কী বলছে তা নিয়ে কথা বলি।

বিশ্বব্যাংক, ১২ ই এপ্রিল ২০২১: বিশ্বব্যাংকের একটি নতুন প্রতিবেদনে, “বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেট- অগ্রসরমান: সংযোগ ও লজিস্টিক প্রতিযোগিতা জোরদার করার জন্য” বলা হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রফতানিতে তীব্র পুনরুদ্ধার, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং চলমান টিকাদান কর্মসূচী দ্বারা সমর্থনিত পুনরুদ্ধারের নবীন লক্ষণ প্রদর্শন করছে। কোভিড মহামারী দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার পরে - যা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিয়েছিল এবং দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতাটি বিপরীত হয়েছে - অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ২০২১ সালে ৬.৮% এবং ২০২২ সালে ৭.২% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

ব্রুকিং ইনস্টিটিউট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৬ মার্চ ২০২১: “স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি দরিদ্র দেশ — ভারতের চেয়ে দরিদ্র এবং পাকিস্তানের চেয়ে অনেক দরিদ্র ছিল। তত্কালীন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সিকিউরিটির উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার দ্বারা বর্ণিত "বাংলাদেশ তলা বিহিন ঝুড়ির দেশ হিসাবে, এবং বেশ কয়েক বছর ধরে ভ্রষ্ট হওয়া, দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বিশাল একটি দ্বীপপুঞ্জ”। ১৯৭৪ সালে নিক্সন প্রশাসন যখন দুর্ভিক্ষের সময় কিউবাতে পাটের ব্যাগ রফতানি করে বাংলাদেশের কিছু অর্থ উপার্জন করছে এই কারণেই হঠাৎ করে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল। আজ, বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী উদযাপন করছে, দেশটি অর্থনৈতিক বিকাশে কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে যা খুব কম লোকই অনুমান করেছিলেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এখন ভারতের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পাকিস্তানের তুলনায় তা উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে গেছে। গড় আয়ু ৭৪ বছর, ভারত ৭০ এবং পাকিস্তানের ৬৮ এর চেয়ে বেশি। দেশটি তৈরি পোশাকের শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক রফতানিকারী দেশ এবং অন্যান্য খাতও দ্রুত অগ্রসরের পথে চলছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প সমৃদ্ধ হচ্ছে। ৩০০ টি সংস্থার (যার বেশিরভাগ গবেষণা পরিচালনা করে) নিয়ে এখন দেশটি ৯৭% অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এবং বিশ্বব্যাপী রফতানি শুরু করেছে।” উপরের সমিক্ষাগুলো বিবেচনা করে বলা যায় কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ কোনও বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে না।

সাম্প্রতিক কালের উগ্রপন্থী দল হেফাজত ই ইসলামের নৃশংসতা ব্যতীত আমরা কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখিনি (আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের শক্তিশালী এবং প্রসারিত বাহু ভবিষ্যতে এ জাতীয় সহিংসতার সম্ভাবনা বন্ধ করে দিচ্ছে) এবং ভারতের তুলনায় আমদের স্বাস্থ্যসেবার কোন ভাঙ্গনও এখনও পর্যন্ত দেখিনি।

বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলা যাক। আজ ১৬ই মে অবধি বাংলাদেশে ৭৮০,১৬৯ জন সংক্রামিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭২২,০৩৬ জন সংক্রামিত মানুষ পুনরুদ্ধার হয়েছে। আজ বাংলাদেশে ৪৫,৯৭৫ হাজারের মত সক্রিয় সংক্রামিত লোক রয়েছে (মৃত এবং সংক্রামিত মানুষ পুনরুদ্ধারের সংখ্যা বাদ দিয়ে) এবং তাদের বেশিরভাগই ঘরে বসে চিকিত্সা করছেন এবং ৫% এরও কম হাসপাতালে এবং যারা হাসপাতালে আছেন তাদের মধ্যে হতে পারে শুধুমাত্র প্রায় ১৫০ বা তারও কম লোকের কিছু অতিরিক্ত বা জরুরী যত্নের প্রয়োজন হতে পারে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১২,১৪৯ জনের। আমরা দেখেছি ২০২০ সালের আগস্টে, সর্বাধিক সংখ্যক সক্রিয় সংক্রামিত লোকের সংখ্যা, যা ছিল ১১৫,৭৭৯ জন। ১৬ই এপ্রিল ২০২১ সালে তা নেমে এসে হয় ৩৭,৮১১ জনে। 

দুর্ভাগ্যক্রমে, লোকেদের বাংলাদেশে কোভিড মহামারী কাটিয়ে উঠার ভুল ধারণার কারণে এবং তারপর থেকেই বিশাল অভ্যন্তরীণ এবং বহিরঙ্গন সমাবেশ শুরু করায় ভাইরাসটি আবার প্রচুর সংখ্যায় সংক্রমণ শুরু করে। সংক্রমণের হার আবার ২৩% পর্যন্ত যেতে শুরু করে এবং ১৩ ই এপ্রিল ২০২১, মোট সক্রিয় সংক্রামিত লোকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াত ১০২, ১২৮ জনে। ২০ শে জুলাই ২০২০ সালে আমরা দেখলাম প্রতিদিনের সর্বোচ্চ নতুন সংক্রামিত সংখ্যক সংখ্যা ৪০১৯ জন, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ এসে দাঁড়ায় ২৯১ জনে।২০২১ সালের ৭ই এপ্রিল আমরা সর্বাধিক সংক্রামিত লোকের সংখ্যা দেখলাম ৭৬২৬ জনে যা কমতে শুরু করে এবং ১ই মে ২০২১ এ নেমে আসে হয় ৩৬৩ জনে। মৃত্যুর দিকে নজর দেওয়া যাক। ২০২০ সালের ৩০শে জুনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয় যা ১ই ফেব্রুয়ারিতে কমিয়ে হয় ৫ জনে। ২০২১ সালের ১৯সে এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১১২ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে এবং আজ ১৬ই মে ২৫ জন মারা গেছেন। ১৬ই মে ২০২১ সংক্রমণের হার ছিল ৬.৬৯%। কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুর হার এখনও বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নতমের মধ্যে যা ১.৪-১.৫% এর মধ্যে ঘোরা ফিরা করছে। পুনরুদ্ধারের হার প্রায় ৯২% এর বেশি। ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫ মিলিয়ন এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম একদেশ হওয়ার সত্তেও অন্যান্য কিছু ঘনবসতিপূর্ণ এশীয় দেশগুলির তুলনায় কোডিভ-১৯ বড় একটা ধাক্কা আমরা দেখিনি।

যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি সন্ধান করা যাক। যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ৬৯ মিলিয়ন। এইদেশ আজ পর্যন্ত ৪,৪৫০,৭৭৭ সক্রিয় সংক্রামিত লোক ছিল আর ৪,২৭৭,২০৭ সংক্রামিত লোক পুনরুদ্ধার হয়েছেন। করোনার ভাইরাসের কারণে ১২৭,৭৬৯ জন মারা গিয়েছিল। ২০শে জানুয়ারি ২০২১ যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা দেখা গিয়েছিল, যা ছিল ১৮৩৩ জনে। ভারতে সক্রিয় সংক্রামিত লোক ছিল আজ পর্যন্ত ২৪,৯০৫,৪৬৩ জন। যার মধ্যে ২১,১৭৪,০৭৬ মানুষ পুনরুদ্ধার করেছেন। ১ই মে মোট সক্রিয় সংক্রামিত লোকের সংখ্যা ছিল ৩,৫৩৩,৯০৫ জন। কয়েকদিন ধরে সর্বাধিক সংখ্যক দৈনিক সংক্রামিত ৪০০,০০০ জনের চেয়ে বেশি এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০০ এরও বেশি।

হ্যাঁ আমি অনেকের সাথে একমত হব বাংলাদেশের মোট সংক্রামিত লোকের সংখ্যা আরও আনেক গুণ বেশি হতে পারে যেহেতু আমরা দেখেছি যে ৮০% বেশি সংক্রামিত লোক অ্যাসিপ্টোমেটিক/কোনও চিহ্ন এবং লক্ষণ ছাড়াই হতে পারে, তারা জানেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন এবং তাই পরীক্ষা করার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সম্ভবত পরীক্ষার জন্য না আসতে পারে। তবে কখনো আমি মেনে নেব না যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। আমরা জানি গত বছর ইউএনডিপি-র তহবিলের সাথে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল, যা কোভিড -১৯-এর কারণে প্রাপ্ত রিপোর্টের চেয়ে বেশি মৃত্যুর সন্ধান পাইনি। বাংলাদেশের ইন্টারনেট/মোবাইল অনুপ্রবেশ খুব বেশি, আমরা কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়ার বা গুরুতর অবস্থার বা অক্সিজেনের অভাবের কোনও প্রতিবেদন দেখতে পাইনি। আমরা ভারতের মতো দেখিনি, সারি পর সারি লাশ পোড়ানো (আমাদের ক্ষেএে কবরের পরে কবর) বা নদীতে ভাসমান মৃতদেহগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সংখ্যা। ভারতে লোকেরা অক্সিজেনের অভাবে কান্নাকাটি করছে, হাসপাতালগুলিও রোগীদের ভর্তি করতে পারছেনা হাসপাতালের বিছানা এবং প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাবে। আমরা কি এরকম কোন অবস্থার কথা শুনেছি বা দেখেছি? অথবা আমেরিকার নিউ ইয়র্কের মতো রাস্তার পাশে ফ্রিজার ট্রাকে পচা মৃতদেহ থাকতে কি দেখেছি? না দেখিনি।

হ্যাঁ, এখনও কম মাএায় হলেও কোভিডের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আমাদের দেশে রয়েছে, কোভিডের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যাও রয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত সাধারণ দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এবং সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে আমরা বহু বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পন্ডিতদের পূর্বাভাসকে মিথ্যা বলে প্রমান করে কোন বড় বিপর্যয় দেখিনি। এমনও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে কোভিড-১৯ আমদের জনাকীর্ণ বস্তিতে বিশাল বিপর্যয় নিয়ে আসবে। না তা নেমে আসতে আমরা দেখিনি। যদি বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে মারা যেত তাহলে কেউ কি তা গোপন করতে পারতো? না, শত চেষ্টা করলেও এই সোসাল মিডিয়ার যুগে তা লুকিয়ে রাখতে পারতো না।

হ্যাঁ, আমরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পথ চলায় কিছু ভুল করেছি, হ্যাঁ আমাদের কাছে বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল, এখনও রয়েছে, তবুও আমি বিশ্বাস করি না যে আমরা আসন্ন ভবিষ্যতে একটি বিপর্যয় দেখব। এটি কি বিপুল সংখ্যক, বিশেষত জনাকীর্ণ শহরগুলিতে থাকা জনগন ইতিমধ্যে কোভিডে অজান্তে সংক্রামিত হয়েছে এবং তাই তাদের মধ্যে অনাক্রম্যতা বিকাশ করেছে বলে তার কারণে; এটি কি আপামর জনগণের করোনার ভাইরাস সহ অন্যান্য ভাইরাসগুলির সাথে পূর্ববর্তী সংক্রমণের জন্য ক্রস প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকশিত হয়েছে তার কারণে; আমাদের যুবকের সংখ্যা বেশি তার কারণ; বেশিরভাগ লোকের বিসিজি টিকা আছে তার কারণে; কম জনগোষ্ঠী ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছেন বলে তার কারণে; বাংলাদেশের লোকেরা কম স্থূলকায় বা অন্যান্য ধরণের রোগ কম থাকার কারণে বা আমরা সময় মত সুপার স্প্রেডিং ইভেন্টগুলি হ্রাস করতে করতে পেরেছি বলি তার কারণে???? আমরা এখনও জানি না যে কেন বাংলাদেশ কিছু সামান্য বিপর্যয় নিয়ে এই মহামারী থেকে বাঁচতে পারছে। গবেষক আর জনস্বাস্থ্য নেতাদের এটি অধ্যয়ন করতে হবে।

কেউ কেউ আবার দেখছি ভারতীয় বৈকল্পিক রূপ, তৃতীয় তরঙ্গ এবং বাংলাদেশে তার বিস্তারের কারনে আসন্ন বিশিষ্ট নতুন ধ্বংসযজ্ঞের কথা বলছেন। যুক্তরাজ্যও ভ্যাকসিনের উচ্চ কভারেজ সত্ত্বেও এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সর্বশেষতম পরিসংখ্যান অনুসারে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় রূপগুলির সনাক্তকরণের সংখ্যা এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সই সপ্তাহে ৫২০ থেকে ১৩১৩ জনের মধ্যে ভারতীয় বৈকল্পিক রূপটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা দেখেছি যে ভারতীয় রূপটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বেশ অনেক আগে এবং আমি নিশ্চিত যে যুক্তরাজ্যের মতো এটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরেও আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাই নেপালের মতো বাংলাদেশে ভারতের এই রূপটি ছড়িয়ে পরার কারনে আমরা বাংলাদেশে নতুন করে বেশি সংখ্যায় সংক্রামনের খবর বা নজির পাইনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির খুব প্রাথমিক তথ্য, আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনগুলি - অক্সফোর্ড / অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার / বায়োএনটেক এবং মডর্না - ভারতের রূপটির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। যেহেতু স্পুটনিক-ভি এবং সিনোফর্ম অক্সফোর্ড / অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো একই পদ্ধতির সাথে বিকাশিত হয়েছে, এটা যৌক্তিক যে সেগুলিও ভারতীয় বৈকল্পিকের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক হবে।

আমি আগে বলেছি এবং আমি আগে আমার তা বলার কারণগুলি বলেছি। আমি কারন সহ বলেছি স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কেন লকডাউন বাংলাদেশের পক্ষে কার্যকর এবং কার্যকরযোগ্য কৌশলগত বিকল্প নয়। আমরা বিপুল সংখ্যায় বাড়িতে যাওয়া এবং একই পথে ফিরে আসা থামাতে পারিনি আর পারবও না। এই সেইদিন আমরা দেখেছি যে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ব্রিজটি খোলার সাথে সাথে ৫৪ হাজারেরও বেশি যানবাহন অতিক্রম করছে। ৬৫ লাখ লোক শহর ছেড়ে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে গিয়েছে। লক ডাউন পরিবর্তে আমাদের সকল ধরণের পরিবহণের সংখ্যা এবং ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো উচিত ছিল। এটি করলে ফেরিফগ্যাটগুলিতে কাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো যেত (প্রত্যেককে ভুল প্রমান করে চাহিদা সহ দিনে অনেক বেশি ফেরি চলাচল সম্ভব ছিল তা ফেরি কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছে এবং তাই হয়েছে)।

অনেক লোক প্রচুর অসুবিধা সত্ত্বেও মহামারী শুরুর পর থেকে তাদের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করেছে। আরও বেশি লোক মুখোশ পরছেন। একটি আসন্ন কল্পনাতীত বিপর্যয় সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে কেবল মাএ উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করা উচিত নয়। তবে একই সাথে বলা উচিত আমরা কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। আমার মতে:

১। আর লক ডাউন নয় (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে এবং অফিসে বসে এবং বিশাল আর্থিক স্বচ্ছলতা সহ জীবনযাপন করা জনস্বাস্থ্য নেতা, সরকারী উচ্চ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বার বার অপ্রতিরোধ্য লকডাউনের কথা, যার আসল ইতিবাচক প্রভাব এখনও বাংলাদেশে দেখা যায়নি, বলা হয়ত সহজ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছে সেই বিলাসিতা বা ক্ষমতা নেই। প্রতিদিন তারা তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য লড়াই করে চলেছে। তারা দিনে দিনে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে, অদূর ভবিষ্যতে শক্ত ভাবে উঠে দাঁড়াবে)

২। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য আর অপেক্ষা না করে, বিভিন্ন উৎস থেকে যত সহজে এবং তাড়াতাড়ি যাতে আরও ভ্যাকসিন পাওয়া (যেমন আমি দেখছি এটির জন্য আমাদের সর্ব শক্তি দিয়ে আমরা একসাথে কাজ করছি) যায় তার ব্যবস্থা করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকদের টিকা দিন। আমি খুশি যে সরকার যখন ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে তখন শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৩। এই বছরে, রাজনৈতিক সমাবেশ বা ধর্মীয় সমাবেশ, বা সামাজিক এবং ভ্যাকসেশনাল ইভেন্টের মতো সাধারণ অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের সমাগম বন্ধ করুন।

৪। নিশ্চিত হয়ে নিন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি খোলার সময়, শপিং সেন্টার, রেঁস্তোরা, অফিসগুলিতে জানালা এবং দরজা খোলা থাকে এবং ভাল বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকে। নিজের বাসা ছারা, ইনডোর এবং বহিরঙ্গন থাকা কালিন সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, এমনকি যারা পুরোপুরি টিকা দিয়েছেন তাদেরও। মাস্ক সম্পর্কে আমেরিকার সিডিসি গাইড অনুসরণ করবেন না দয়া করে।

৫। সক্ষম ওষুধ সংস্থাগুলি যাতে, বাহ্যিক ভ্যাকসিন উত্পাদনকারী সংস্থাগুলির সহযোগিতায় ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে তার সর্বাধিক প্রচেষ্টা করা। দরকার হলে অগ্রিম পেমেন্ট করুন।

৬। দয়া করে গ্লোব ফার্মাসিটিকাল বঙ্গোভ্যাক্সের সাথে তাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণা শুরু করার অনুমোদন দিতে আর বিলম্ব করবেন না।

আমি মনে করি আমাদের সচেতন আর কিছুটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত তবে কোন ভাবে আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। ডিসেম্বরে পর থেকে যখন যুক্তরাজ্যের কেন্ট বা দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরিয়েন্ট আমাদের প্রথম আঘাত করেছিল তারপরেও আমরা এখনও অনেক বেশি ভাল জায়গায় আছি। ভারতের ভেরিয়েন্টও এখন পর্যন্ত কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এখন হাসপাতালগুলি জনাকীর্ণ নয়, আমাদের হাসপাতালের যত্নের চাহিদা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং আমরা সাফল্যের সাথে কোভিড -১৯ টিকা শুরু করেছি এবং আমি খুব নিশ্চিত, আমরা খুব শীঘ্রই ভ্যাকসিন গ্রহণ শুরু করব। মাস্ক পরার এবং যে কোন উপায়ে আগামী মাসগুলোতে অভ্যন্তরীণ এবং আউটডোর সুপার স্প্রেডিং ইভেন্টগুলি বন্ধ করার পাশাপাশি টিকা দেওয়ার জোরদার করতে পারলে আমরা টানেলের শেষে আলো দেখতে পারবো। জীবন এবং জীবিকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারবো। আমি দারুন আশাবাদী।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন