ইনসাইড থট

কোভিড-১৯, বাংলাদেশ এবং কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় (৩)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ১৮ মে, ২০২১


Thumbnail

২০২০ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত ডিপ্লোমেট পত্রিকায় একজন ভারতীয় স্বাধীন সাংবাদিক মহিলা সুধা রামচন্দ্রন লিখেছিলেন, “বাংলাদেশের কোভিড-১৯ এর বিপর্যয়” শিরোনামে। তিনি লিখছিলেন, “ভাইরাসের ঝুঁকি জনস্বাস্থ্যের সঙ্কটের কথা উল্লেখ না করেই বলা যায় এই ভাইরাস বাংলাদেশকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির অশান্তিতে বিশাল ভাবে জর্জরিত করবে।” তারপরে আমি বাহিরের এবং বাংলাদেশের অনেক খবরের কাগজ পড়লাম এবং খবরে শুনেছি, কিছু বিদেশের এবং কিছু বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও কোভিডের কারণে বাংলাদেশে বিশিষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা বলেছিলেন বা বলছেন। আসলেই কি তা ঘটেছিল? নাকি আগামীতে তাই ঘটবে বলে আমরা বিশ্বাস করছি? আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে এর প্রভাব থাকবে আরো কিছু মাস তবে একটা বিরাট দুর্ঘটনা ঘটবে না। ন্যূনতম ক্ষতির সাথে আমরা এখন আছি এবং আমরা বর্তমানের এই মহামারীটি ন্যূনতম ক্ষতিতে কাটিয়ে উঠব। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলার আগে আসুন বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিং ইনস্টিটিউট কী বলছে তা নিয়ে কথা বলি।

বিশ্বব্যাংক, ১২ ই এপ্রিল ২০২১: বিশ্বব্যাংকের একটি নতুন প্রতিবেদনে, “বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেট- অগ্রসরমান: সংযোগ ও লজিস্টিক প্রতিযোগিতা জোরদার করার জন্য” বলা হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রফতানিতে তীব্র পুনরুদ্ধার, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং চলমান টিকাদান কর্মসূচী দ্বারা সমর্থনিত পুনরুদ্ধারের নবীন লক্ষণ প্রদর্শন করছে। কোভিড মহামারী দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার পরে - যা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিয়েছিল এবং দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতাটি বিপরীত হয়েছে - অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ২০২১ সালে ৬.৮% এবং ২০২২ সালে ৭.২% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

ব্রুকিং ইনস্টিটিউট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৬ মার্চ ২০২১: “স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি দরিদ্র দেশ — ভারতের চেয়ে দরিদ্র এবং পাকিস্তানের চেয়ে অনেক দরিদ্র ছিল। তত্কালীন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সিকিউরিটির উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার দ্বারা বর্ণিত "বাংলাদেশ তলা বিহিন ঝুড়ির দেশ হিসাবে, এবং বেশ কয়েক বছর ধরে ভ্রষ্ট হওয়া, দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বিশাল একটি দ্বীপপুঞ্জ”। ১৯৭৪ সালে নিক্সন প্রশাসন যখন দুর্ভিক্ষের সময় কিউবাতে পাটের ব্যাগ রফতানি করে বাংলাদেশের কিছু অর্থ উপার্জন করছে এই কারণেই হঠাৎ করে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল। আজ, বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী উদযাপন করছে, দেশটি অর্থনৈতিক বিকাশে কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে যা খুব কম লোকই অনুমান করেছিলেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এখন ভারতের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পাকিস্তানের তুলনায় তা উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে গেছে। গড় আয়ু ৭৪ বছর, ভারত ৭০ এবং পাকিস্তানের ৬৮ এর চেয়ে বেশি। দেশটি তৈরি পোশাকের শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক রফতানিকারী দেশ এবং অন্যান্য খাতও দ্রুত অগ্রসরের পথে চলছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প সমৃদ্ধ হচ্ছে। ৩০০ টি সংস্থার (যার বেশিরভাগ গবেষণা পরিচালনা করে) নিয়ে এখন দেশটি ৯৭% অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এবং বিশ্বব্যাপী রফতানি শুরু করেছে।” উপরের সমিক্ষাগুলো বিবেচনা করে বলা যায় কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ কোনও বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে না।

সাম্প্রতিক কালের উগ্রপন্থী দল হেফাজত ই ইসলামের নৃশংসতা ব্যতীত আমরা কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখিনি (আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের শক্তিশালী এবং প্রসারিত বাহু ভবিষ্যতে এ জাতীয় সহিংসতার সম্ভাবনা বন্ধ করে দিচ্ছে) এবং ভারতের তুলনায় আমদের স্বাস্থ্যসেবার কোন ভাঙ্গনও এখনও পর্যন্ত দেখিনি।

বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলা যাক। আজ ১৬ই মে অবধি বাংলাদেশে ৭৮০,১৬৯ জন সংক্রামিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭২২,০৩৬ জন সংক্রামিত মানুষ পুনরুদ্ধার হয়েছে। আজ বাংলাদেশে ৪৫,৯৭৫ হাজারের মত সক্রিয় সংক্রামিত লোক রয়েছে (মৃত এবং সংক্রামিত মানুষ পুনরুদ্ধারের সংখ্যা বাদ দিয়ে) এবং তাদের বেশিরভাগই ঘরে বসে চিকিত্সা করছেন এবং ৫% এরও কম হাসপাতালে এবং যারা হাসপাতালে আছেন তাদের মধ্যে হতে পারে শুধুমাত্র প্রায় ১৫০ বা তারও কম লোকের কিছু অতিরিক্ত বা জরুরী যত্নের প্রয়োজন হতে পারে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১২,১৪৯ জনের। আমরা দেখেছি ২০২০ সালের আগস্টে, সর্বাধিক সংখ্যক সক্রিয় সংক্রামিত লোকের সংখ্যা, যা ছিল ১১৫,৭৭৯ জন। ১৬ই এপ্রিল ২০২১ সালে তা নেমে এসে হয় ৩৭,৮১১ জনে। 

দুর্ভাগ্যক্রমে, লোকেদের বাংলাদেশে কোভিড মহামারী কাটিয়ে উঠার ভুল ধারণার কারণে এবং তারপর থেকেই বিশাল অভ্যন্তরীণ এবং বহিরঙ্গন সমাবেশ শুরু করায় ভাইরাসটি আবার প্রচুর সংখ্যায় সংক্রমণ শুরু করে। সংক্রমণের হার আবার ২৩% পর্যন্ত যেতে শুরু করে এবং ১৩ ই এপ্রিল ২০২১, মোট সক্রিয় সংক্রামিত লোকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াত ১০২, ১২৮ জনে। ২০ শে জুলাই ২০২০ সালে আমরা দেখলাম প্রতিদিনের সর্বোচ্চ নতুন সংক্রামিত সংখ্যক সংখ্যা ৪০১৯ জন, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ এসে দাঁড়ায় ২৯১ জনে।২০২১ সালের ৭ই এপ্রিল আমরা সর্বাধিক সংক্রামিত লোকের সংখ্যা দেখলাম ৭৬২৬ জনে যা কমতে শুরু করে এবং ১ই মে ২০২১ এ নেমে আসে হয় ৩৬৩ জনে। মৃত্যুর দিকে নজর দেওয়া যাক। ২০২০ সালের ৩০শে জুনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয় যা ১ই ফেব্রুয়ারিতে কমিয়ে হয় ৫ জনে। ২০২১ সালের ১৯সে এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১১২ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে এবং আজ ১৬ই মে ২৫ জন মারা গেছেন। ১৬ই মে ২০২১ সংক্রমণের হার ছিল ৬.৬৯%। কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুর হার এখনও বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নতমের মধ্যে যা ১.৪-১.৫% এর মধ্যে ঘোরা ফিরা করছে। পুনরুদ্ধারের হার প্রায় ৯২% এর বেশি। ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫ মিলিয়ন এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম একদেশ হওয়ার সত্তেও অন্যান্য কিছু ঘনবসতিপূর্ণ এশীয় দেশগুলির তুলনায় কোডিভ-১৯ বড় একটা ধাক্কা আমরা দেখিনি।

যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি সন্ধান করা যাক। যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ৬৯ মিলিয়ন। এইদেশ আজ পর্যন্ত ৪,৪৫০,৭৭৭ সক্রিয় সংক্রামিত লোক ছিল আর ৪,২৭৭,২০৭ সংক্রামিত লোক পুনরুদ্ধার হয়েছেন। করোনার ভাইরাসের কারণে ১২৭,৭৬৯ জন মারা গিয়েছিল। ২০শে জানুয়ারি ২০২১ যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা দেখা গিয়েছিল, যা ছিল ১৮৩৩ জনে। ভারতে সক্রিয় সংক্রামিত লোক ছিল আজ পর্যন্ত ২৪,৯০৫,৪৬৩ জন। যার মধ্যে ২১,১৭৪,০৭৬ মানুষ পুনরুদ্ধার করেছেন। ১ই মে মোট সক্রিয় সংক্রামিত লোকের সংখ্যা ছিল ৩,৫৩৩,৯০৫ জন। কয়েকদিন ধরে সর্বাধিক সংখ্যক দৈনিক সংক্রামিত ৪০০,০০০ জনের চেয়ে বেশি এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০০ এরও বেশি।

হ্যাঁ আমি অনেকের সাথে একমত হব বাংলাদেশের মোট সংক্রামিত লোকের সংখ্যা আরও আনেক গুণ বেশি হতে পারে যেহেতু আমরা দেখেছি যে ৮০% বেশি সংক্রামিত লোক অ্যাসিপ্টোমেটিক/কোনও চিহ্ন এবং লক্ষণ ছাড়াই হতে পারে, তারা জানেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন এবং তাই পরীক্ষা করার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সম্ভবত পরীক্ষার জন্য না আসতে পারে। তবে কখনো আমি মেনে নেব না যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। আমরা জানি গত বছর ইউএনডিপি-র তহবিলের সাথে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল, যা কোভিড -১৯-এর কারণে প্রাপ্ত রিপোর্টের চেয়ে বেশি মৃত্যুর সন্ধান পাইনি। বাংলাদেশের ইন্টারনেট/মোবাইল অনুপ্রবেশ খুব বেশি, আমরা কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়ার বা গুরুতর অবস্থার বা অক্সিজেনের অভাবের কোনও প্রতিবেদন দেখতে পাইনি। আমরা ভারতের মতো দেখিনি, সারি পর সারি লাশ পোড়ানো (আমাদের ক্ষেএে কবরের পরে কবর) বা নদীতে ভাসমান মৃতদেহগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সংখ্যা। ভারতে লোকেরা অক্সিজেনের অভাবে কান্নাকাটি করছে, হাসপাতালগুলিও রোগীদের ভর্তি করতে পারছেনা হাসপাতালের বিছানা এবং প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাবে। আমরা কি এরকম কোন অবস্থার কথা শুনেছি বা দেখেছি? অথবা আমেরিকার নিউ ইয়র্কের মতো রাস্তার পাশে ফ্রিজার ট্রাকে পচা মৃতদেহ থাকতে কি দেখেছি? না দেখিনি।

হ্যাঁ, এখনও কম মাএায় হলেও কোভিডের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আমাদের দেশে রয়েছে, কোভিডের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যাও রয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত সাধারণ দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এবং সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে আমরা বহু বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পন্ডিতদের পূর্বাভাসকে মিথ্যা বলে প্রমান করে কোন বড় বিপর্যয় দেখিনি। এমনও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে কোভিড-১৯ আমদের জনাকীর্ণ বস্তিতে বিশাল বিপর্যয় নিয়ে আসবে। না তা নেমে আসতে আমরা দেখিনি। যদি বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে মারা যেত তাহলে কেউ কি তা গোপন করতে পারতো? না, শত চেষ্টা করলেও এই সোসাল মিডিয়ার যুগে তা লুকিয়ে রাখতে পারতো না।

হ্যাঁ, আমরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পথ চলায় কিছু ভুল করেছি, হ্যাঁ আমাদের কাছে বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল, এখনও রয়েছে, তবুও আমি বিশ্বাস করি না যে আমরা আসন্ন ভবিষ্যতে একটি বিপর্যয় দেখব। এটি কি বিপুল সংখ্যক, বিশেষত জনাকীর্ণ শহরগুলিতে থাকা জনগন ইতিমধ্যে কোভিডে অজান্তে সংক্রামিত হয়েছে এবং তাই তাদের মধ্যে অনাক্রম্যতা বিকাশ করেছে বলে তার কারণে; এটি কি আপামর জনগণের করোনার ভাইরাস সহ অন্যান্য ভাইরাসগুলির সাথে পূর্ববর্তী সংক্রমণের জন্য ক্রস প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকশিত হয়েছে তার কারণে; আমাদের যুবকের সংখ্যা বেশি তার কারণ; বেশিরভাগ লোকের বিসিজি টিকা আছে তার কারণে; কম জনগোষ্ঠী ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছেন বলে তার কারণে; বাংলাদেশের লোকেরা কম স্থূলকায় বা অন্যান্য ধরণের রোগ কম থাকার কারণে বা আমরা সময় মত সুপার স্প্রেডিং ইভেন্টগুলি হ্রাস করতে করতে পেরেছি বলি তার কারণে???? আমরা এখনও জানি না যে কেন বাংলাদেশ কিছু সামান্য বিপর্যয় নিয়ে এই মহামারী থেকে বাঁচতে পারছে। গবেষক আর জনস্বাস্থ্য নেতাদের এটি অধ্যয়ন করতে হবে।

কেউ কেউ আবার দেখছি ভারতীয় বৈকল্পিক রূপ, তৃতীয় তরঙ্গ এবং বাংলাদেশে তার বিস্তারের কারনে আসন্ন বিশিষ্ট নতুন ধ্বংসযজ্ঞের কথা বলছেন। যুক্তরাজ্যও ভ্যাকসিনের উচ্চ কভারেজ সত্ত্বেও এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সর্বশেষতম পরিসংখ্যান অনুসারে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় রূপগুলির সনাক্তকরণের সংখ্যা এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সই সপ্তাহে ৫২০ থেকে ১৩১৩ জনের মধ্যে ভারতীয় বৈকল্পিক রূপটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা দেখেছি যে ভারতীয় রূপটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বেশ অনেক আগে এবং আমি নিশ্চিত যে যুক্তরাজ্যের মতো এটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরেও আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাই নেপালের মতো বাংলাদেশে ভারতের এই রূপটি ছড়িয়ে পরার কারনে আমরা বাংলাদেশে নতুন করে বেশি সংখ্যায় সংক্রামনের খবর বা নজির পাইনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির খুব প্রাথমিক তথ্য, আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনগুলি - অক্সফোর্ড / অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার / বায়োএনটেক এবং মডর্না - ভারতের রূপটির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। যেহেতু স্পুটনিক-ভি এবং সিনোফর্ম অক্সফোর্ড / অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো একই পদ্ধতির সাথে বিকাশিত হয়েছে, এটা যৌক্তিক যে সেগুলিও ভারতীয় বৈকল্পিকের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক হবে।

আমি আগে বলেছি এবং আমি আগে আমার তা বলার কারণগুলি বলেছি। আমি কারন সহ বলেছি স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কেন লকডাউন বাংলাদেশের পক্ষে কার্যকর এবং কার্যকরযোগ্য কৌশলগত বিকল্প নয়। আমরা বিপুল সংখ্যায় বাড়িতে যাওয়া এবং একই পথে ফিরে আসা থামাতে পারিনি আর পারবও না। এই সেইদিন আমরা দেখেছি যে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ব্রিজটি খোলার সাথে সাথে ৫৪ হাজারেরও বেশি যানবাহন অতিক্রম করছে। ৬৫ লাখ লোক শহর ছেড়ে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে গিয়েছে। লক ডাউন পরিবর্তে আমাদের সকল ধরণের পরিবহণের সংখ্যা এবং ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো উচিত ছিল। এটি করলে ফেরিফগ্যাটগুলিতে কাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো যেত (প্রত্যেককে ভুল প্রমান করে চাহিদা সহ দিনে অনেক বেশি ফেরি চলাচল সম্ভব ছিল তা ফেরি কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছে এবং তাই হয়েছে)।

অনেক লোক প্রচুর অসুবিধা সত্ত্বেও মহামারী শুরুর পর থেকে তাদের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করেছে। আরও বেশি লোক মুখোশ পরছেন। একটি আসন্ন কল্পনাতীত বিপর্যয় সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে কেবল মাএ উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করা উচিত নয়। তবে একই সাথে বলা উচিত আমরা কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। আমার মতে:

১। আর লক ডাউন নয় (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে এবং অফিসে বসে এবং বিশাল আর্থিক স্বচ্ছলতা সহ জীবনযাপন করা জনস্বাস্থ্য নেতা, সরকারী উচ্চ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বার বার অপ্রতিরোধ্য লকডাউনের কথা, যার আসল ইতিবাচক প্রভাব এখনও বাংলাদেশে দেখা যায়নি, বলা হয়ত সহজ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছে সেই বিলাসিতা বা ক্ষমতা নেই। প্রতিদিন তারা তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য লড়াই করে চলেছে। তারা দিনে দিনে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে, অদূর ভবিষ্যতে শক্ত ভাবে উঠে দাঁড়াবে)

২। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য আর অপেক্ষা না করে, বিভিন্ন উৎস থেকে যত সহজে এবং তাড়াতাড়ি যাতে আরও ভ্যাকসিন পাওয়া (যেমন আমি দেখছি এটির জন্য আমাদের সর্ব শক্তি দিয়ে আমরা একসাথে কাজ করছি) যায় তার ব্যবস্থা করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকদের টিকা দিন। আমি খুশি যে সরকার যখন ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে তখন শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৩। এই বছরে, রাজনৈতিক সমাবেশ বা ধর্মীয় সমাবেশ, বা সামাজিক এবং ভ্যাকসেশনাল ইভেন্টের মতো সাধারণ অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের সমাগম বন্ধ করুন।

৪। নিশ্চিত হয়ে নিন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি খোলার সময়, শপিং সেন্টার, রেঁস্তোরা, অফিসগুলিতে জানালা এবং দরজা খোলা থাকে এবং ভাল বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা থাকে। নিজের বাসা ছারা, ইনডোর এবং বহিরঙ্গন থাকা কালিন সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, এমনকি যারা পুরোপুরি টিকা দিয়েছেন তাদেরও। মাস্ক সম্পর্কে আমেরিকার সিডিসি গাইড অনুসরণ করবেন না দয়া করে।

৫। সক্ষম ওষুধ সংস্থাগুলি যাতে, বাহ্যিক ভ্যাকসিন উত্পাদনকারী সংস্থাগুলির সহযোগিতায় ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে তার সর্বাধিক প্রচেষ্টা করা। দরকার হলে অগ্রিম পেমেন্ট করুন।

৬। দয়া করে গ্লোব ফার্মাসিটিকাল বঙ্গোভ্যাক্সের সাথে তাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণা শুরু করার অনুমোদন দিতে আর বিলম্ব করবেন না।

আমি মনে করি আমাদের সচেতন আর কিছুটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত তবে কোন ভাবে আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। ডিসেম্বরে পর থেকে যখন যুক্তরাজ্যের কেন্ট বা দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরিয়েন্ট আমাদের প্রথম আঘাত করেছিল তারপরেও আমরা এখনও অনেক বেশি ভাল জায়গায় আছি। ভারতের ভেরিয়েন্টও এখন পর্যন্ত কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এখন হাসপাতালগুলি জনাকীর্ণ নয়, আমাদের হাসপাতালের যত্নের চাহিদা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং আমরা সাফল্যের সাথে কোভিড -১৯ টিকা শুরু করেছি এবং আমি খুব নিশ্চিত, আমরা খুব শীঘ্রই ভ্যাকসিন গ্রহণ শুরু করব। মাস্ক পরার এবং যে কোন উপায়ে আগামী মাসগুলোতে অভ্যন্তরীণ এবং আউটডোর সুপার স্প্রেডিং ইভেন্টগুলি বন্ধ করার পাশাপাশি টিকা দেওয়ার জোরদার করতে পারলে আমরা টানেলের শেষে আলো দেখতে পারবো। জীবন এবং জীবিকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারবো। আমি দারুন আশাবাদী।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন