ইনসাইড থট

আমাদের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যা কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:০১ পিএম, ১০ জুন, ২০২১


Thumbnail

আমার চট্টগ্রাম নিবাসী কন্যার একটি শল্য চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হল। আমাদের অনুরোধে পরিবারের অন্যতম সুহৃদ অনুজপ্রতীম বিশিষ্ট এক চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসার উদ্যোগ নিলেন। তার সহযোগিতায় আমি যখন আমার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সার্জারী বিভাগের এক নারী চিকিৎসকের কাছে যাই, তিনি কাগজ-পত্র পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ভর্তির পরামর্শ দিলেন ও আমাদের সেই বন্ধুর কল্যাণে কেবিন-সহ অন্যান্য ব্যবস্থাদি সম্পন্ন হলো। এক পর্যায়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত একজন উর্ধতন কর্মকর্তার রুমেও কিছু সময় আমাদের বসার সৌভাগ্য হলো। তিনি তখন তার একজন সহকর্মীকে বলছিলেন, “আমরা হাসপাতালের এক বছরের সব ওষুধ কিনে ফেলেছি এখন দেখছি রাখার জায়গা নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে”!  

নির্ধারিত দিনে, যথারীতি সকল কর্ম সম্পাদন শেষে আমার কন্যাকে যখন সকাল সাড়ে সাতটায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবার সময় হলো তখন আমি ও জামাতা সেখানে উপস্থিত। আগেরদিন রাত ১২টা থেকে রোগীর সকল খাবার, এমনকি পানি পানও বন্ধ। হাতে লাগানো স্যালাইন নিয়ে যথাসময়ে হুইল চেয়ারে তাকে উঠিয়ে একজন নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী অপারেশন থিয়েটারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সাথে আমরাও, আমাদের হাতে কাগজ-পত্রের ফাইল। কেবিনের কাছেই একটি লিফট যার কোন নির্দেশক বাতি জ্বলছিল না ও জানা গেল এটা না থাকলেও লিফট কাজ করে। আমরা মিনিট দশেক অপেক্ষার পরেও যখন লিফট ওই তলায় এলো না তখন পাশের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসা একজন জানালেন লিফট নষ্ট, উনি নীচে দেখে এসেছেন। সহযোগী নারী কর্মী আমাদের নিয়ে অন্য একটি লিফটের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, চক্ষু বিভাগের কাছে সেই লিফটের কাছে এসে জানা গেল সেটি লকড, এটা যিনি খুলে দেবেন তিনি নেই বা তাকে এখনও কেউ দেখেনি। সেখানে আরও মিনিট দশেক অপেক্ষার পরে জানা গেল পূর্বের লিফট চালু হয়েছে। আমরা যেয়ে সেই লিফটে উঠলাম, কিন্তু তার দরোজা বন্ধ হচ্ছে না। একজন তরুণ জানা গেল তিনি লিফটম্যান নন, একটি ঝুলন্ত তার টানাটানি করলে দরোজাটি বন্ধ হলো কিন্তু আবার খুলে গেল। এরকম বেশ কয়েকবার হবার পরে আমরা কিছুটা বিচলিতবোধ করলাম ও বের হয়ে যেয়ে বিকল্প উপায়ে যাবার আলোচনা শুরু করলাম। হঠাৎ লিফটের দরোজা বন্ধ হয়ে গেলো কিন্তু লিফট উপরে উঠছে না, মুহুর্তে আবার দরোজা খুলে এলো। আমরা দ্রুত বেরিয়ে এলাম। আমার নিরীহ, শান্ত স্বভাবের মেয়েটির চোখে মুখে তখন আতঙ্ক, আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, ‘বাবা, আমরা চলো হেঁটেই যাবো’। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার অনেক দূর তাই হুইল চেয়ারে বসে যাওয়াই ভালো বলে সেই নারী কর্মীর পরামর্শে আমরা সেটাই শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর জানা গেল সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে হবে। আমরা ধরে-ধরে মেয়েকে নিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে নীচে গেলাম ও এক পর্যায়ে শত শত শুয়ে-বসে থাকা চিকিৎসাকামী বা চিকিৎসাধীন নারী পুরুষের ভীড় ও বিছানা ঠেলে গন্তব্যে পৌছালাম। মেয়ে যখন অপারেশন থিয়েটারে গেল তখন আমাদের কাছ থেকে তাকে আলাদা করে ফাইল ও আগে থেকে ধরিয়ে দেয়া তালিকা অনুযায়ী ওষুধের ব্যাগটা নিয়ে ভেতরের কর্মীরা নিষ্ক্রান্ত হল তখন সকাল ৮.১৫ মিনিট।

নানা চেষ্টায় আমরা জানতে পেরেছিলাম এই শল্য চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সময় লাগবে এক ঘন্টা। কিন্তু ভেতরে যাবার পর থেকে দুই ঘন্টা অর্থাৎ ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি আমাদের মেয়ের কি হাল হয়েছে ও সে কোথায় আছে। আমাদের সুহৃদ চিকিৎসক আমাদের উৎকণ্ঠিত ফোন পেয়ে খোঁজ করে ফিরতি ফোনে জানালেন মেয়ে ভেতরে আছে ও যথাসময়ে তার অপারেশন হবে, আমাদের ভাবনার কিছুই নেই! আমরা দেখছিলাম তখন অন্যান্য শল্যপ্রার্থীদের আসা যাওয়া ও উদ্বেগে কাতর পরিবারের মুখগুলো যারা আমাদের মতোই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আবর্জনাময় স্থানে কিছু চেয়ার পাতা আছে কিন্তু কেউই যেন বসতে চাইছে না। বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি ও ভেতরে অস্বস্তিকর গরম। 

সাড়ে দশটার দিকে দেখলাম আমার মেয়ের মতো একটি অজ্ঞান মুখের মানুষকে সশব্দে ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছে ও আমরা দৌড়ে গিয়ে বিধ্বস্ত মুখখানা নিরীক্ষণ করে দেখি সে আমাদেরই মেয়ে। লালা জামা পড়া দুইজন মানুষ ট্রলির দুই ধারে টেনে নিচ্ছেন, বললাম, ভাই কোথায় নেবেন? তারা খুব বিরক্তির সাথে উত্তর দিল, দেখেন কই যাই!

তাদের পিছু পিছু প্রায় দৌড়ে যেয়ে আমরা যেখানে পৌঁছালাম সেটি পোস্ট-অপারেটিভ অবজারভেশন রুম। আমাদের বলা হল মেয়েকে বিছানায় নামিয়ে নিতে, কিন্তু আমি বিছানার চাদর অপরিচ্ছন্ন বিধায় এটি পাল্টে দিতে অনুরোধ করি যদিও তা প্রত্যাখ্যাত হয় ও তারা আমার অজ্ঞান মেয়েকে নামাবার চেষ্টা শুরু করে। বাধ্য হয়ে আমি ও জামাতা দুই পাশে ধরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেই। নার্স এসে ফাইল দেখে রেগে গেলেন, এই রোগী এখানে আনলেন কেন? এই রোগী নীচের রুমেই নিলেই হতো। আমি বিনয়ের সাথে জানাই এটা তো আমাদের জানা নাই ও ওই লাল জামা মানুষদের দেখিয়ে বলি তারাই এখানে এনেছে। যা হোক, মেনে নিয়ে তারা তাকে পর্যবেক্ষণে থাকবে বলে আমাদের সেখান থেকে বাইরে চলে যেতে বলেন। বেলা পৌনে এগারোটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমার মেয়েকে সেখানে রাখা হয় ও শেষে কেবিনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে দুপুরের দিকে আমাদের সুহৃদ চিকিৎসক বন্ধু এসে তাকে দেখে যান ও বলেন এখান থেকে যথাসময়ে তাকে কেবিনে দিয়ে দেয়া হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।

কেবিনে নেবার পরে সংযুক্ত একজন নার্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তাকে স্যালাইনেই থাকতে হবে, কিছুই খাওয়া যাবে না, এমনকি পানিও না। কতদিন? তিনি জানালেন আজ রাত তো বটেই, তবে আগামীকাল সকালে ডাক্তার ম্যাডাম এসে জানাবেন কি খাবে ও কখন থেকে খাবে। আমরা ধৈর্য ধরে থাকলাম।

হাসপাতালের বড়কর্তার মাধ্যমে আমরা যে কেবিনখানা বরাদ্দ পাই তার দরোজার উপরে লাল রঙ দিয়ে লেখা ভি আই পি। কেন এর নাম এরকম করা হল আমরা জানিনা বা কেনই বা আমাদের এই কেবিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা-ও জানিনা। ভেতরে বিদঘুটে গন্ধ ও পরিচ্ছন্ন কর্মী জানালেন বেশ কিছু ইঁদুর এই রুমে, সেগুলো বের করে জানালা বন্ধ করে রুম পরিষ্কার করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করলাম জানালায় একটি কাঁচ নেই ও স্প্লিট এসি-র নীচের দেয়ালে একটি পুরনো উইন্ডো টাইপ এসি-র ফাঁকা বা শূন্যস্থান যেটি একটি কার্টুনের টুকরো অংশ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাথরুমের দরোজার নীচে বেশ খানিক অংশ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে ও পাশে একটি ছোট রুম সম্ভবত ড্রেসিং রুম, সেটি এখন একটি স্টোর রুমে করে রাখা হয়েছে। আমাদের উদ্যোগে ও আর্থিক তাগিদে রুমটি পরিষ্কার করা হলো, জানালায় একটি কাঁচ লাগানো হলো যাতে কয়েকদিনের জন্যে এটি বসবাসের উপযোগী হয়।

অপারেশনের পরেরদিন সকাল ৯টার দিকে দলবেঁধে একদল ডাক্তার এসে রোগী দেখে গেলো ও জানিয়ে গেল ম্যাডাম কিছুক্ষণ পরে এসে জানাবেন কখন ছুটি হবে ও কখন থেকে কী খাবে। আরও ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পরে ম্যাডাম চিকিৎসক এলেন ও মিনিটখানেক পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিকল্পনা জানিয়ে গেলেন। সেই মতে আমরা আমাদের প্রায় ৩০ ঘন্টা না খেয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মেয়েকে খাবারের ব্যবস্থা করলাম।  

খুঁটিনাটি আরও কথা লিখতে হলে একটি বৃহৎ রচনা হবে কিন্তু যে যে প্রসঙ্গগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো সেসব আমার মতো একজন নগণ্য নাগরিক যে কীনা গত ৩৪ বছর হেলথ কমিউনিকেশন নিয়ে দেশে-বিদেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি তার কাছে এই চিত্র নতুন নয়। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এইসব ঘটনাবলী নৈমিত্তিক ও মিডিয়ায় সরব। কিন্তু আফসোস হলো, বাবার পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিতে এসে আমার মেয়েটি যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেল তার জন্যে আমি অপরাধী কী না। এই দেশে যেসব বাণিজ্যিক স্বার্থবুদ্ধির সমান্তরাল চিকিৎসা ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি তার কাছে যেতে আমার মেয়ের, মেয়ের শ্বশুর বাড়ির বা আমার সে খরচ বহন করে চিকিৎসা সেবা নেবার সামর্থ্য আছে কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে এলেও আমার প্রতিটি মুহুর্ত বারবার মনে হয়েছে কেন আমি এই ভুল করলাম। আমার দু’টো মেধাবী ও সমাজের কল্যাণ অবদানে ভূমিকা রাখার জন্যে যথা উপযুক্ত বিনয়ী সন্তান যারা আমার ও আমার দেশের প্রিয় সম্পদ, তাদের কেন এইরকম অপমানের মধ্যে দিয়ে দেশের কথিত সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা সেবার বিড়ম্বনায় পড়তে হলো!

এইসব ঘটনাবালী ঘটতে দেখে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে ও আমি প্রত্যক্ষদর্শী হবার সুযোগ পেয়েছি বলে যে শিক্ষা আমি অর্জন করতে পেরেছি তাতে আমার প্রত্যয় জন্মেছে-

১। দেশের এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটেই নাগরিকের জন্যে গৌরবের নয়। আমরা এই ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রেখেছি কারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের কোন দায় নেই। আমাদের সমাজের যে অংশের মানুষ চিকিৎসা সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে রেখেছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই সমাজের প্রতি কোন দায় নেই। যে কারণে আমরা প্রফেসর ইব্রাহিম বা প্রফেসর এম আর খানের মতো খুব বেশী কাউকে স্মরণ করতে পারি না। না হয়, যারা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান কান্ডারী তাঁদের বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকেই ওই পদে যান, তারা কেমন করে সে পদে বসে গৌরববোধ করেন? যেসব হাল হকিকত তারা দেখে যান তার পরিবর্তন বা রূপান্তরের কি উদ্যোগ তারা নেন? তাহলে একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সঠিক পথে চলতে পঞ্চাশ বছরেও পারে না? একটি উদাহরণও নেই যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সমূলে ঠিকঠাক করতে যেয়ে কোন মহাপরিচালকের পদ থেকে কাউকে কোনদিন অপসারিত হতে হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা নিয়ে পড়াশুনা করে ওই পদে কেউ যেয়ে বসেছেন বা বসানো হয়েছে এমন নজীরও খুব কম। যারা গেছেন রাজনীতির কাছে সরকারকে হার মানিয়েই গেছেন আর কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই করেছেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। যে কারণে হয়তো আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এমন উদ্যোগী কাউকে খুঁজে পাইনা। 

২। সরকারের এখানে কোন দায় নাই কারণ সরকার এই সেদিনও কাগজে দেখলাম স্বাস্থ্য সেবার জন্যে যে টাকা বরাদ্দ করে রেখেছেন তার ২৪ ভাগও নাকি স্বাস্থ্যখাত খরচ করতে পারেনি। কিন্তু মেয়ের চিকিৎসা করাতে যেয়ে আমি তো দেখলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেই টাকা খরচ করে দায়িত্ব পালনের অসংখ্য কাজ পড়ে আছে। বারান্দায় পানি, ওয়ার্ডের মেঝে জুড়ে রোগী আর রোগী, যেন এরা কেউই মানুষ নয় এমন কি নাগরিকও নয়। অথচ এদের টাকা কুড়িয়ে নিয়েই এই ব্যবস্থাকে সরকার নিশ্চিত করে দিয়েছে যে তুমি উদ্যোগ নাও, সব ঠিক কর। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বৃষ্টির পানি ছাঁদ চুইয়ে হাসপাতালের রোগীর মাথায় পড়বে কেন? আবর্জনা আর দুষ্টের ক্ষত নিয়েই ব্যস্ত থাকবে পুরো ব্যবস্থা? যে হাসপাতালে বছরের সব ওষুধ এক সাথে কিনে ফেলা হয়েছে আর রাখবার জায়গাই নেই সেই হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে ঘন্টায় পাচ-ছ’বার কেন এসে এসে বিহ্বল দরিদ্র চিকিৎসা প্রার্থীর স্বজনের হাতে একটি চিরকূট ধরিয়ে দেয়া হবে, ‘যান এই ওষুধ নিয়ে আসেন’? 

৩। যারা চিকিৎসা সেবা দেন তাঁদের আচরণগত সমস্যা অনেকটা মানসিক রোগের মতো। আমি আমার মেয়েকে এখনও জিগ্যেস করিনি এক ঘণ্টার কাজে তোমাকে ওরা কেন ভেতরে নিয়ে আড়াই ঘন্টা সময় রাখল? কারণ আমি জানি তারা আমার মেয়ের সাথে খুব ভালো আচরণ করেনি। যদি করতো তাহলে তার কি অপারেশন হবে, বা কেন দেরী হচ্ছে বা হয়েছে ইত্যাদি তাকে জানানো হতো বা আমরা বাইরে থেকেও জানতে পারতাম। শুধু একবার কানে ভেসে এলো আমার মেয়ে ওখানে বসে থাকতে থাকতে ঘেমে নেয়ে উঠেছে ও একজন চিকিৎসককে বলেছিল, ‘আমার ভয় লাগছে’। যথারীতি উপেক্ষা ছাড়া সেই আকুল উদ্বেগের কোন অনু্কম্পা উত্তর আমাদের মেয়েটার ভাগ্যে জুটেনি। কেন তারা এমন করেন? কেন রোগীর সাথে এমন আচরণ করেন? কেন তারা রোগীর পরিবার-পরিজন-কে ব্রীফ করেন না? রোগী কখন কী খাবে কেন তারা ভালো করে বুঝিয়ে বলেন না? কী তাঁদের অসুবিধা? আমার জানামতে মেডিক্যাল এথিক্স বলে একটা বিষয় আছে, কেন আমাদের চিকিৎসক সমাজ তার জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সেই বিদ্যা অর্জন করতে ও ধরে রাখতে চান না? 

প্রশাসনিক নির্বুদ্ধিতা নিয়ে যতো গল্প আছে সেসব বেশীরভাগই সেবাপ্রার্থী ও সেবাদানকারীর সম্পর্ক নিয়ে। এই কাজে অন্তত আমাদের দেশে প্রচলিত চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার লোকজন যথেষ্ট পারদর্শী। বিশেষ করে যখন তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাকে গড়ে তুলতেই চান না উল্টো একে গড়তে গেলে বাধা দেন বেশী। যে দেশে একটি অনুপম স্বাস্থ্য নীতি পর্যন্ত আমলে নেয়া গেল না সেখানে এদের কাছ থেকে কিছু আশা করা উচিত নয়। সরকারের এই নিয়ে প্রচুর ভাবা উচিত ও এর গভীরে হাত দেয়া উচিত।

আমার সেই সুহৃদ বন্ধুর জন্যে শুভ কামনা যেন তার সরল সহযোগিতায় আর কোন মানুষ নিজেকে প্রতারিত মনে না করেন। আর সেই কর্তা ব্যাক্তি যিনি এক বছরের ওষুধ কিনে এখন রাখবার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না, তাকে বলি এটা কোন গৌরবের গাঁথা হবে না, এটা হবে অপচয়ের ব্যবস্থাপনা। আর সদাশয় সরকারকে বলি, আরও একবার ভাবতে হবে। যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অচল রেখে সরকারকে টাকা খরচ করতে দেয় না আর যেটুকু করে তা-ও অপচয় ও অদৃশ্য হয়, দয়া করে নাগরিকের করের টাকায় আর এসব করতে দেবেন না। একজন মানুষ রোগী হয়ে হাসপাতালে যেতে পারে কিন্তু সে এই দেশের নাগরিক। সরকার কোন নাগরিকের অসম্মান কেন মেনে নেবে? হাসপাতাল আক্ষরিক অর্থে হসপিটালিটি বা আথিতেয়তার স্থান হবার কথা কিন্তু সেখানে শুধু অপমান আর অপমান। আর এই অপমান সরকারকেই বিব্রত করতে করা বা করানো হয় কী না সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।

রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন