নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৯ এএম, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭
গৃহবধু রেশমা খবরের কাগজ পড়েন না,দেখেন না বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন চ্যানেলও। কেন? কারণ ভালো লাগেনা, এমনিই সারাদিন বিভিন্ন চাপে আর নাগরিক যন্ত্রণায় থাকেন তাই এই সব গণমাধ্যমে ছাপানো আর প্রচারিত নেতিবাচক খবর তাঁকে আর টানেনা। ছন্দা একটি বেসরকারি টেলিভিশনে চাকরি করেন কিন্তু তার খবর পড়াটা অনেকটা তেতো ঔষধ গেলার মতোই। আগ্রহ পাননা তিনিও, কেন সকালটা আমার শুরুই করতে হবে নেতিবাচক খবর পড়ার মধ্য দিয়ে? ভালো কি একটি সংবাদও আমাদেও প্রতিদিন ঘটে না?
নিউজ এডিটর বলেন যত খুন, হত্যা, নিপীড়ন এর খবর তত রমরমা আর গরম খবর! বেশ ক্ষোভ নিয়েই বললেন এক রিপোর্টার রমরমা খবর প্রচারের পর কিন্তু ফলোআপ শূন্যর কোঠায়! অথচ একজন রিপোর্টার হিসেবে একটি ধর্ষণ বা খুনের রিপোর্ট করেই তিনি ক্ষান্ত হন না বরং তার ইচ্ছা থাকে শেষ পর্যন্ত কেসটা নিয়ে কাজ করা কিন্তু মজার বিষয় হলো এই ইচ্ছাটা তার থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর সেই রিপোর্ট নিয়ে তার ফলোআপ হয়না !কেননা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হয়তো তখন অন্য কোনো গরম খবরের জন্য তাকেই মনোনীত করেছেন।একটা বিষয় একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেই দীর্ঘ ১২ বছর জানার চেষ্টা করেছি ইতিবাচক খবর কেনও বিশেষ পাতার জন্য? কেন সেগুলো অন্য বাংলাদেশ বা আলোর পথের দিশারী নামে বিশেষ রিপোর্টেই বিশেষ দিনে ছাপানোর জন্য? কেনও স্থাপত্যে আর্কেশিয়া অ্যাওয়ার্ড বা সোলার প্যানেল নিয়ে এক বাংলাদেশির উদ্যোগকে বিশেষ পাতায় স্থান দেওয়া হয় প্রথম পাতায় নয়?কিছু পত্রিকা ইতিবাচক খবরের জন্য আলাদা দিন বেছে নিচ্ছেন এটাও একটি ভালো উদ্যগ আর তাই চয়নের মতো অনেক কিশোরই সেই বিশেষ দিনের জন্য অপেক্ষা করেন! তার মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের মায়া ছেড়ে হয়তো কিছু সময়ের জন্য ডুব মারেন তারই বয়সী কোনও কিশোরের সফলতার গল্পে! প্রতিদিন পড়ে না পত্রিকা বা টিভি? আরে মাথা খারাপ! কি আছে আমার টিভিতে আমাদের জন্য দেখার?সেইতো খবর যেটা সকালে দেখাবে সেটাই সারাদিন চলবে আর না আছে আমাদের উপযোগী কিছু! কেন দূরন্ত টিভিতো এসেছে,দেখছোনা? সেটা কি আর আমার জন্য? আমার ৫ বছরের ভাই অর্নবের জন্য! কি ভয়ংকর কথা! যে জেনারেশনটা হাল ধরবে একদিন এই দেশের তাদের জন্য নেই কোনও গণমাধ্যমে অনুষ্ঠান বা তাঁকে অনুপ্রাণীত করে এমন কোনো খবর! তথ্য প্রযুক্তিতে যুগে যেখানে একটা ক্লিকেই একটি কিশোরের সামনে খুলে যাবে হাজারটা জানালা সেখানে কার দায় পড়েছে নিরানন্দময় বস্তাপচা অনুষ্ঠান আর পুনপ্রচারিত একঘেয়ে খবরের জাবর শোনার?
একটি জাতি তৈরি হচ্ছে যারা জানেনা লালনের গানের মর্ম,জানেনা নিজের দেশের মাটির সোঁদা গন্ধ কেমন হয়! তারা জানে না জীবনকে অর্থবহ করে তোলার রঙ্গীন গল্প! এর দায় শুধুই পরিবার আর রাষ্ট্রের?গণমাধ্যমের নয়?বাসে ধর্ষণের ঘটনা,বা পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যার খবর যখন রগরগে করে উপস্থাপন হয় গণমাধ্যমে তখন একই সাথে তা উস্কে দেয় এক অপরাধপ্রবনতার বিকৃত সুপ্ত আকাঙ্খাকেও! আর তাই একই খবর ঘুরে ফিরে জায়গা করে নেয় আবারও গণমাধ্যমের পাতায়! পাঠক, একবার ভেবে দেখুন এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির দায় কি গণমাধ্যমের নয়? গণমাধ্যম কি নিপীড়নকামী মানুষগুলোকেই উস্কে দিচ্ছেনা? অথচ যে নিষ্ঠা নিয়ে এই নিপীড়ন বা হত্যার ঘটনাটি প্রচার করা হয় তার বিচার বা আইনসংক্রান্ত বিষয়গুলোর পরবর্তী ধাপগুলো কি ফলোআপ করা হয়?এখানে কি গণমাধ্যম দায়বদ্ধ নয়? গণমাধ্যম কি চাইলেই পারেনা এই নিপীড়নের স্বীকার মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে? তারা পারেনা এই ঘটনার আসামিদের সাজা প্রাপ্তির বিষয়টাও ফলাওভাবে প্রচার করতে? তাতে অন্তত অন্য কেউ এই নিপীড়নের আগে সাজার কথা ভেবেই নিজেকে বিরত রাখতে পারে!গণমাধ্যমতো গণমানুষের কথাই বলবেন,সেটাইতো হওয়া উচিত,তাই নয় কি পাঠক? কিন্তু বলছে কি কথা গণমাধ্যম গণমানুষের জন্য? সকালটা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভোরের গান না শোনাতে পারি কিন্তু শোনাতেতো পারি এমন কোনও সংবাদ যা তার সকালটাকে আলোময় করে তুলবে! মানুষ অনুকরণপ্রিয়,আর বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্য ও রসবোধ অসাধারন!আর তাই ইতিবাচক কিছু খবর এর প্রভাব পড়বে এই গণমানুষের মনেও যেমন করে নেতিবাচক খবরের প্রভাব পড়ছে জনমনে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয় একজন মানুষকেই আর সেখানে একটি রাষ্ট্রের বা সমাজের জন্য গণমাধ্যম যখন বেশী করে ইতিবাচক খবর প্রচার করবেন তখন সেই প্রভাবই একদিন হয়তো তৈরি করবে ছোট্র একটি ভালো উদ্যেগের আর অনেকগুলো ছোট ছোট ভালো উদ্যেগ একসাথে হয়ে “না” বলবে একদিন এই দেশমাতার উপর নেমে আসা অনাচারগুলোকে!
গণমাধ্যমের যে কি অপরিসীম ক্ষমতা সেটা আমি আমার ছোট একটি অভিজ্ঞতায় বলি, সাল ২০১২ সময় টিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রযোজক হিসেবে কাজ করছি।বার্তাপ্রধান তুষার আব্দুল্লাহ বললেন, একটি নারীবিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মান করতে হবে। অনেক গবেষণা ও মাঠপর্যায়ের কাজ শেষে সেই অনুষ্ঠানটির প্রযোজক হিসেবে কাজ শুরু করলাম। এই অনুষ্ঠানটিতে নারীর অধিকার,ক্ষমতায়ন এবং সর্বোপরি নারীর অগ্রযাত্রাকেই গভীর মমতায় তুলে আনা হতো। তো এই অনুষ্ঠানটিরই একটি শ্যুটিং এর কাজে মানিকগঞ্জের এক গ্রামে গেছে অনন্যা টিম। জানতে পারলাম ভ্যানচালক রহমতউল্লাহর ছয়টি মেয়ের প্রত্যেকেই মেধাবী কিন্তু ইভটিজিং এর কারণে তার চার মেয়েকেই বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। বাকী দুজনও ইভটিজারদের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। মজার বিষয় শুধুমাত্র ক্যামেরা তাদের বাড়ি যাওয়ার কারণে এলাকার প্রভাবশালীমহল দাড়িয়ে গেলো এই হতদরিদ্র ভ্যানচালকের পাশে এবং যারা এই মেয়ে দুটিকে উত্যক্ত করতো তারাও পুলিশ আর এলাকার মানুষের হস্তক্ষেপে সাহস পেলোনা মেয়ে দুটিকে উত্যক্ত করার! কি করেছিলাম আমরা? মাত্র একটি রিপোর্ট করেছিলাম আর সেই রিপোর্ট পাল্টে দিলো দুটি মেয়ের জীবন! ২০১৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি নির্মাণের কাজ চলেছিল।তারপর আর এই অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার এগোয়নি। রানা প্লাজা বা তাজিন ফ্যাশন এর গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছিল গার্মেন্টসকর্মীদের উপর বিশেষ তথ্য চিত্র “পিঁপড়ার জীবন”,,যা প্রচারিত হওয়ার পর সেই মেয়েদের জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছেন ফোন করেছেন। বৃদ্ধাশ্রমের এক মায়ের গল্প দেখে সেই সুদুর আমেরিকা থেকে একজন ফোন করে জানান তিনি এই মাকে দত্তক নেবেন।কেউ শুনেছেন মাকে দত্তক নেয়ার কথা? এরকম আরোও অনেক ইতিবাচক গল্প জন্ম দিয়েছিলো এই টেলিভিশন প্রযোজনাটি। হয়তো আমার মতো হাজারটার ইতিবাচক গল্প জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের আরো অনেক টিভি চ্যানেল।কিন্তু সেই ইতিবাচক খবরগুলোর কয়টা পৌছায় সাধারণ মানুষের কান অবধি।
গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তি বর্গ ভেবেই বসে আছেন নেতিবাচক খবরই পাবলিক খাবে বেশি আর তাই এই খবরগুলোই আগে দেওয়া দরকার কিন্তু এই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি থেকে বের হয়ে আসার দায়িত্বটাও কিন্তু কাউকে না কাওকে নিতে হবে। জণগণকেও উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন ইতিবাচক খবর দেখার ব্যাপারে। কেননা এই অস্থির সময়ে গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপ আজ বিশেষ প্রয়োজন। শুধু ব্যবসায়িক মুনাফা নয় আজ গণমাধ্যম সামাজিকভাবেও দায়বদ্ধ তার ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে, দায়বদ্ধ গণমানুষের কাছে। খারাপ খবরের পাশাপাশি ভালো খবরগুলোও পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের দ্বারে। আর এই কাজটি গণমাধ্যম যত সুন্দর পারবে সেটা আর কোনও মাধ্যমেই সম্ভব নয়। হাতের ফোনে গান,খবর যাই দেখা হোক না কেনও দিনশুরুতে এক কাপ চায়ের সাথে খবরের কাগজ বা অনলাইনে পত্রিকাটি যেমন চোখ বুলিয়ে নিই ঠিক তেমনি দিনশেষে আমার টেলিভিশনে সুইচটিও অন করি। তাই এই দুটো মাধ্যমেই যত বেশি মানুষের কাছে পৌছানো যাবে তেমনটি আর কোথাও নয়! আর তাই যত বেশী একটি ইতিবাচক বিষয়গুলোকে এই মাধ্যমে তুলে ধরতে পারবো, ততবেশী এক ইতিবাচক মেধাবী বাংলাদেশ এর জন্য কয়েকধাপ এগিয়ে যাবো আমরা। নিপীড়ন বা শিশুহত্যার খবর নয় বরং কলসুন্দর বা রাঙ্গাটুঙ্গির সোনার মেয়েদের মাঠ দাপানোর খবরটাও দেখতে চাই প্রথম পৃষ্ঠায়। আমি আন্তরিক ভাবেই বিশ্বাস করি গণমাধ্যমে কর্মরত প্রত্যেকেই শুধুই চাকরী বা জীবনধারনের জন্য এই পেশা বেছে নেননি বরং এই প্রতিটি মানুষই দিনশেষে স্বপ্ন দেখেন এক ইতিবাচক বাংলাদেশের আর তাই এই ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের গণমাধ্যমকেও ইতিবাচক খবর প্রচারে আরোও অনেক বেশী আন্তরিক হতে হবে, আন্তরিক হতে হবে গণমানুষের জন্য তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে,তাদের জন্য তাদের উপযোগী অনুষ্ঠানমালা নির্মান ও প্রচারের উদ্যেগ নিতে হবে।
যদি সুন্দর দেখে এই চোখ তবেই তো অনুভবেও চর্চা হবে সুন্দরের, সুন্দর হবে মানুষের মন, সম্পর্ক, প্রকৃতি, সমাজ…
সুন্দর হবে আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
আফরোজা চৈতী
কলামিস্ট, লেখক
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।