শেখ হাসিনাকে আল্লাহ বাঁচাইয়া রাখুক, দেশটা রক্ষা পাউক। দেশের মানুষ ঘুমাইয়া আছে, কিচ্ছু টের পাইতাছে না। আল্লাহ না করুক, শেখ হাসিনা একটু স্লিপ কাইট্যা পরলে দেগবা গণ্ডগোল কারে কয়। আবার দেশে আগুন জ্বলবো। মারামারি হইবো, গেঞ্জাম হইবো। অনেক শান্তিতে আছি। আল্লাহ হাসিনারে বাঁচাইয়া রাখুক, এই দোয়াই করি‘। পিতৃমাতৃহীন শেখ হাসিনার জন্য এভাবেই দোয়া করলেন, একজন ৮০ উর্ধ বয়স্ক মা। শেখ হাসিনার অধীনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন তিনি।
ফজরের নামাজের পর নিয়মিত তসবিহ পাঠ শেষে এশরাকের নামাজ আদায় করে সকালে চা খেতে বসেছেন। ডাইনিং টেবিলে রাখা ছিল জার্মান প্রবাসী সরাফ আহমেদ রচিত ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন‘ বইটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে জার্মানির হ্যানোভার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে মাস্টার্স শেষে জার্মানির লোয়ারসাক্সেন প্রদেশে শিক্ষা বিভাগে চাকুরীর পাশাপাশি বাংলাদেশের একটি পত্রিকার জার্মান প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত ইউরোপ সম্পর্কে লিখছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে কতিপয় বিপথগামী তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ছিলেন। শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের ভয়াবহ কালরাতের মাত্র কয়েকদিন পূর্বেই (৩০ জুলাই) জার্মানিতে স্বামীগৃহে চলে গিয়েছিলেন, সাথে বোন শেখ রেহানাও। শেখ হাসিনার স্বামী বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়া, ১৯৭৫ সালের ১৩ মার্চ জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণা করার জন্য এসেছিলেন। শেখ হাসিনা দুই সন্তান জয় ও পুতুল এবং ছোটবোন মুন্নাকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানাকে আদর করে মুন্না বলে ডাকেন) নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন এবং ছোটবোনকে সাথে নিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে বেড়াবেন। সেই পরিকল্পনায়ই শেখ হাসিনা সকলকে নিয়ে ১২ আগস্ট বন থেকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের সরকারী বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। বিদেশে থাকার কারণে প্রানে বেঁচেছিলেন দুই বোন। ব্রাসেলসে তিন রাত কাটিয়ে ১৮ আগস্ট ফিরে আসেন জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে। তবে সেখানে বেশিদিন থাকতে পারেননি, ব্রাসেলস ও কার্লসরুয়ে মোট ১০ দিন আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় কাটিয়ে ২৫ আগস্ট ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবনে ভারতে, লন্ডনে, জার্মানিতে ও বেলজিয়ামে তাঁরা কোথায় কিভাবে ছিলেন, কারা কারা সেই দুঃসময়ে তাদের বিপদের সঙ্গী হয়েছিলেন, সহানুভূতি জানিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন, জার্মানির তৎকালীন রাজনৈতিক এবং জার্মানরা কিভাবে দেখেছিলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে সরাফ আহমেদ রচিত এই বইটি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন তখন জার্মানিতে সরকারী সফরে ছিলেন, সেসময় প্রবাসে তাঁর বিতর্কিত ভূমিকার কথাও এই বইতে স্থান পেয়েছে। সেই দুঃসময়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার লেখা চিঠি ও চিরকুটও বাদ যায়নি। ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন‘ বইটির লেখক চ্যানেল আই অনলাইনে শেখ হাসিনার একটি প্রকাশনা থেকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন (পৃঃ ১২৯), ১৯৮০ সালের ৪ এপ্রিল দিল্লী থেকে লন্ডন গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে ছোট বোন রেহানার সাথে বেশ কিছুদিন একসাথে ছিলেন। তাঁরা লন্ডনে যে পাড়ায় থাকতেন, সেই পাড়ার ৮-১০ জন ছেলেমেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। ছুটি হলে আবার ঘরে পৌঁছে দিতেন। তাঁরা বাচ্চাপ্রতি ১ পাউন্ড করে মজুরি পেতেন। ওই অর্থেই নিজেদের প্রয়োজনগুলো মেটাতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা চ্যানেল আই অনলাইনে লিখেছেন:
‘ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করে মজুরী পেতাম। ওই টাকা থেকে সর্বপ্রথম যে খরচটা আমি প্রতিদিন করতাম, তা হলো কর্নার শপ থেকে একটি পত্রিকা কেনা। বাচ্চাদের পৌঁছে দিয়ে ঘরে ফেরার সময় পত্রিকা, রুটি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাসা ফিরতাম। তখন একটা পত্রিকা হাতে না নিলে মনে হতো সমস্ত দিনটাই যেন পানসে হয়ে গেছে‘।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই লেখাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপরোক্ত মন্তব্য করেছিলেন আশি বছরোর্ধ বয়স্ক ‘মা‘।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর শেখ হাসিনার জীবনে আসে ভিন্ন ধরনের দুঃসময়। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী ও ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামায়াত এর নিপীড়ন ও নির্যাতন এবং মৌলবাদী শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পৃক্ত করে বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস।
১৯৯৬ সালে দেশসেবার সুযোগ পেয়ে সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করলেও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির কারণে ক্ষমতা হারিয়েও হাল ছাড়েননি শেখ হাসিনা। ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সারাদেশে জনগণকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামগ্রামান্তরে, উপজেলা থেকে জেলা, সারাদেশে।
আমার স্পষ্ট মনে আছে, একবার জেলা সফরে সকাল ৭টায় সুধাসদন থেকে রওয়ানা হয়ে যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত ৩৯টি পথসভায় বক্তৃতা করেছেন শেখ হাসিনা। বাইরে প্রচণ্ড গরম, গাড়ীর ভিতরে ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডা-গরমে গলার স্বর বসে যেতে পারে, আতংকে ছিলাম। পথসভা চলাকালে স্থানীয় বাজার থেকে কমলা বা কমলা জাতীয় ফল কিনে নিতাম মাননীয় নেত্রীর জন্য। সার্কিট হাউসে পৌঁছে সফরসঙ্গীদের আহার-বিশ্রাম নিশ্চিত করে সব কাজ শেষ হতে সময় রাত ১০ টা প্রায়, নেত্রীর নিকট রিপোর্ট করতে গেলে, মাননীয় নেত্রী ক্লান্ত শরীরে সোফায় হেলান দিয়ে টিভির সংবাদ দেখতে দেখতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘সারাদিন এত পরিশ্রম, ক্লান্ত হস না‘? আমার উত্তর শুনে, আমার দিকে ফিরে সন্তুষ্টির হাসি হেসেছিলেন। আমি বলেছিলাম, ‘ খাটো মানুষ পরিশ্রমী হয়। আমি খাটো তো‘।
একবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান সাহেব তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মাননীয় নেত্রী, আপনি যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, আপনার সাথেতো কেউ নেই। আপনি কিভাবে আন্দোলন করবেন‘? প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা (কবিতার সুরে) বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে‘। তবে শেখ হাসিনার একা থাকতে হয়নি। স্বাধীনতাকামী সকল জনগন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল সংগঠন জোট বেঁধেছিল। সেদিনের আন্দোলন সফল হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিও থেমে নেই। মহান আল্লাহ এই সুন্দর পৃথিবীতে আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব ‘মানুষ‘ পাঠিয়েছেন। মানুষের কল্যাণে আরও অসংখ্য পশুপাখি, গাছপালা, লতাপাতা, প্রাণীকুল সৃষ্টি করেছেন, ঠিক পাশাপাশি মানুষের অনিষ্ট করার জন্য ‘শয়তান‘কেও পাঠিয়েছেন। শয়তান মানুষকুলের মাঝে বিভিন্ন বেশে বিরাজ করছে, মানুষকে বিপথগামী করছে। ঠিক তেমনি, আমাদের এই সুন্দর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাভুক্ত হয়েছে। দেশে নাই কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাই খাদ্যাভাব, নাই কোন হরতাল, জ্বালাওপোড়াও, ভাংচুর, নাই কোন অশান্তি। ঠিক এমনি সময় মানুষরূপী কতিপয় ‘শয়তান‘ দেশের বাইরে বসে অশান্তি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে, অশান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা করছে।
গত ২৪ অক্টোবর ২০২১, বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও দেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে তাঁর উদ্বেগের কথা, শয্যার পাশে থাকা একজন চিকিৎসকের মোবাইল ফোনে টাইপ করে, ঢাকার একটি অনলাইন পোর্টালে পাঠকদের জন্য পাঠিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা আকস্মিক নয়। .... বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিরোধ না করা গেলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষা করা যাবে না।...
হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী, পীরগঞ্জে যে রক্তপাত ঘটেছে, তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। বারবারই এই ধর্মান্ধ শক্তি কখনো জামায়াতের বেশে, কখনো হেফাজতের বেশে মাথা তুলেছে এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে নির্মমভাবে অত্যাচার করছে।...
রোগশয্যায় শুয়ে আব্দুল গাফফার চৌধুরী দেশের তরুণ সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, (ধর্মান্ধ) দানবের বিরুদ্ধে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। তিনি বলেছেন, ‘বিদায়ের আগে ডাক দিয়ে যাই, দানবের সঙ্গে সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হও ঘরে ঘরে‘।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও দেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে তাঁর উদ্বেগের কথা, শয্যার পাশে থাকা একজন চিকিৎসকের মোবাইল ফোনে টাইপ করে, ঢাকার একটি অনলাইন পোর্টালে পাঠকদের জন্য পাঠিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা আকস্মিক নয়। .... বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিরোধ না করা গেলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষা করা যাবে না।...
হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী, পীরগঞ্জে যে রক্তপাত ঘটেছে, তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। বারবারই এই ধর্মান্ধ শক্তি কখনো জামায়াতের বেশে, কখনো হেফাজতের বেশে মাথা তুলেছে এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে নির্মমভাবে অত্যাচার করছে।...
রোগশয্যায় শুয়ে আব্দুল গাফফার চৌধুরী দেশের তরুণ সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, (ধর্মান্ধ) দানবের বিরুদ্ধে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। তিনি বলেছেন, ‘বিদায়ের আগে ডাক দিয়ে যাই, দানবের সঙ্গে সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হও ঘরে ঘরে‘।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।