নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১৩ মে, ২০২১
ঈদের আগেই বাংলাদেশ নিয়ে কূটনৈতিক লড়াইয়ের প্রকাশ্য রূপ দেখা গেছে। বাংলাদেশে বাংলাদেশে যদি কোয়াডে যায় তাহলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। যদিও ঘোষণা দেয়ার একদিন পরেই তিনি তার তিনি সুর পাল্টান এবং তিনি বলেন যে শব্দগত ভুলের জন্য তার এই বক্তব্য ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাই চীনের মনোভাব। চীন এই বক্তব্যটি বাংলাদেশ সরকারের কানে তুলতে চেয়েছিল যে কোন উপায়ে এবং কানে তুলে তারা তাদের নিজেদের জায়গায় ফিরে গেছে। আর অন্যদিকে ৫ লাখ টিকা দিয়ে চীন এখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী একটি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে সক্রিয়।
অন্যদিকে করোনার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ভারত। তারপরও ভারত-বাংলাদেশ নিয়ে বসে নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা হবে নাকি বাংলাদেশের উপর চাপ দেওয়া হবে এ নিয়ে চলছে নানামুখী পর্যালোচনা। তবে বাংলাদেশে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন স্বার্থ নিয়েই চলে। বিশেষ করে গত এক দশকে এই দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের লক্ষ্য এবং কৌশল অভিন্ন। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ কোয়াডে যাবে কি যাবে না এটি তার নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রীতিমতো টানাহেচরা চলছে। আর এই টানাহেচরায় বাংলাদেশ স্যান্ডউইচ হয়ে যায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন নানা জটিলতায় বিদ্ধ। বিশেষ করে কোভিড টিকার না দেওয়ার বিষয়টিকে বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার কেউই মেনে নিতে পারেনি। আর তাই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের যে গত এক যুগ ভারতমুখী কূটনৈতিক নীতি সেখান থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে। তবে কূটনৈতিকরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশ মোটেও ভারতমুখী কূটনীতি থেকে সরে আসেনি। বরং করোনা এবং অন্যান্য কারণে নাস্তানাবুদ ভারত নিজেই বাংলাদেশের দিকে মনোযোগ দিতে পারছেন না। ভারতের থিংক ট্যাংকের একটা বড় অংশই চায় যে বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক রক্ষা করতেই হবে। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসী চক্র যদি বাংলাদেশে অতীতের মতো বাসা বাধে তাহলে ভারতের জন্য সেটি নতুন বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে। তাছাড়া এই অঞ্চলে যখন চীনের আধিপত্য তখন জঙ্গিবাদের ইস্যুটি আবার নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আর এ কারণেই করোনা পরিস্থিতিতে একটু ভালো হলেই ভারতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেবে। আর এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় চিহ্ন হতে পারে যে সেরামের টিকা বাংলাদেশে পাঠানো।
ভারতের কূটনীতিকরা মনে করছেন যে, টিকা পাঠালে দু`দেশের সম্পর্কের যে আপাত টানাপোড়ন তা কেটে যাবে। আর এই জন্যই চীন ভারতকে বাংলাদেশ নিয়ে বেশি সুযোগ দিতে রাজি নয়। তারা তাদের ইস্যুগুলোকে দ্রুত সমাধান করতে করতে আগ্রহী। ৫ লাখ টিকা দিয়ে তারা মনে করছে যে বাংলাদেশকে তারা তাদের পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আর এখন সামনের দিনগুলোতে চীন ভারতবিরোধী তাদের যে প্রকল্পগুলো এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সেগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর এই চেষ্টার অংশ হিসেবেই তারা বাংলাদেশে তাদের টিকা দ্রুত আগামী মাসে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে। যদিও চীনা রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন যে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে কিন্তু চীন মনে করছে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ হলেই ভারত থেকে বাংলাদেশকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। আর এই দুই দেশের কূটনৈতিক খেলায় বাংলাদেশ কি করবে বা কি করছে সেটাই দেখার বিষয়। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বাংলাদেশকে এগুতে হবে খুবই সতর্কভাবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।