নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১২ অক্টোবর, ২০১৭
হঠাৎ করেই মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট তিনটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো। বেগম জিয়া বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। আইন অনুযায়ী, জামিন পেতে হলে, হয় উক্ত আদালতে তাঁর আইনজীবীদের আপিল করতে হবে অথবা স্বশরীরে নিম্ন আদালতে অত্মসমর্পন করে জামিন নিতে হবে। না হলে ফিরলেই বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হবে। অন্যদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্কের দিন নির্ধারণ হয়েছে। এরপর রায় ঘোষিত হবে। এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণে আমরা তারেক জিয়ার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা আশা করি, তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’ এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। জিয়া পরিবারের নিয়ন্ত্রক দুইজনের জেল ও ফাঁসি ভাবনায় বিএনপি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘জামাতকে যেভাবে পঙ্গু করা হয়েছে, সেই একই ভাবে বিএনপিকেও পঙ্গু করার পথে এগুচ্ছে সরকার।’ অবশ্য আওয়ামী লীগ এ ধরনের অভিযোগ খন্ডন করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বিষয়গুলো আইনগত, রাজনৈতিক নয়।’
বেগম জিয়ার উপর্যুপরি তিনটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক আদালত বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ, মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগে গত বছরের এক মানহানি মামলায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকা মহানগর হাকিম। এর আগে গত ৯ অক্টোবর পেট্রোল বোমার এক মামলায় কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উচ্চ আদালতে জামিন না হলে দেশে ফিরলেই জেলে যেতে হবে বেগম জিয়াকে। সরকার এখন এব্যাপারে কঠোর অবস্থানে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, ‘মামলা এড়ানোর জন্যই বেগম জিয়া লন্ডনে বসে আছেন। তিনি বিচার আদালত কিছুই মানছেন না, এটা চলতে পারে না।’ বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে যদি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়, তাহলে সরকার পক্ষ তার বিরোধীতা করবে। সরকার পক্ষের একজন আইনজীবী বলেছেন, ‘ মামলার একজন আসামি বিদেশে গেলে তাঁকে অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু জিয়া অরফানেজ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়া আদালতের অনুমতি না নিয়েই গেছেন।’ এছাড়াও সমস্যা আছে, উচ্চতর আদালতে বেগম জিয়ার জামিন আবেদন করলেই তাঁকে মেডিকেল রিপোর্ট দিতে হবে, স্বাস্থ্যের সবশেষ অবস্থার ডাক্তারি রিপোর্ট দিতে হবে। জানাতে হবে তাঁর ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা এসব ব্যাপারে অন্ধকারে। জিয়ার অরফানেজ মামলায় বেগম জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার জুলাই মাসে তিন সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন। এখন বিএনপির কেউই জানে না, বেগম জিয়া কবে ফিরবেন। তাই উচ্চতর আদালতে জামিন পাওয়া সহজ নাও হতে পারে। বিএনপির অনেক নেতাই এখন চিন্তিত। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আতঙ্কে শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়া লন্ডনে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলেন কিনা। আবার সাহস করে দেশে ফিরলে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে, তা প্রতিরোধের সামর্থ্য ও শক্তি বিএনপির আছে কিনা, সে ভাবনাতেও উদ্বিগ্ন বিএনপি। বিএনপির একজন নেতা বললেন, ‘ম্যাডাম, লন্ডনে থাকলে আমরা তাও গলা ফাঁটিয়ে বক্তৃতা দিতে পারব, কিন্তু তাঁকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে তো আমরা ঘর থেকেই বেরুতে পারব না।’ এরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়া কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার বিষয়।
বেগম জিয়ার চেয়েও বিএনপির নেতা উদ্বিগ্ন তাঁদের দ্বিতীয় নেতা তারেক জিয়াকে নিয়ে। নভেম্বরের মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় দেবে। এই মামলায় যদি তারেক জিয়া দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের অধিকার হারাবেন। ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী,‘কেউ যদি আদালত কতৃক সন্ত্রাসবাদে দণ্ডিত হন বা কারও বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের অধিকার হরাবেন। এই মামলা তাই বিএনপিকে অস্তীত্বের সংকটে নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। আর দণ্ডিত হলে তাঁকে আত্মসমর্পন করেই আপিল করতে হবে। এরকম পস্থিতিতে তারেক জিয়া কী করবেন-তা বিএনপিরে মাথাব্যাথার এক বড় কারণ।
দলের দুই শীর্ষ নেতা যদি এরকম অবস্থায় পতিত হয় তাহলে নেতৃত্বহীন বিএনপি কী করে, সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।