দেশের অন্যতম আলোচিত ও ব্যবসা সফল ছবি 'ছুটির ঘণ্টা' এর পরিচালক আজিজুর রহমান। যিনি আর আমাদের মাঝে নেই। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে কানাডার টরেন্টোতে মারা গেছেন আজিজুর রহমান। তার মেয়ে আলিয়া রহমান বিন্দি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকে রইলো এই নির্মাতার প্রতি শ্রদ্ধা।
সেই ১৯৮০ সালের কথা, মুক্তি পেয়েছে সিনেমা ‘ছুটির ঘন্টা’। কোন সিনেমাহলই ছবিটি চালাতে রাজি হয়নি, শেষ পর্যন্ত পরিচালক ইনিয়ে-বিনিয়ে কয়েকটি সিনেমাহলের মালিককে রাজি করালেন। মাত্র ২০ টি সিনেমাহলে মুক্তি পেল, এদেশের অন্যতম সেরা ছবি ‘ছুটির ঘন্টা’!
তারপরের ঘটনা অবশ্য ইতিহাস। এরপর সারা দেশে কোথাও চার-পাঁচ সপ্তাহ, কোথাও এক-দুই থেকে পাঁচ মাসও ছবিটি চলেছে। ছবিটি ছাড়পত্র নিয়ে ও অনেক ঝামেলা হয়; চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড আটকে দেয়!
তাদের যুক্তি, এই ছবি দেখলে কোমলমতি শিশুরা ভয় পাবে, তাদের ওপর বাজে প্রভাব পড়বে। পরিচালক আজিজুর রহমান বিপদে পড়ে যান। তিনি বুদ্ধি বের করলেন। ছবির একটা বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সেখানে বেশির ভাগ শিশুকে বাবা-মাসহ আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু, ছবি শেষে দেখা গেল, শিশুরা ভয় তো পেলই না, উল্টো চোখ মুছতে মুছতে হল থেকে বের হচ্ছে, এমনকি অভিভাবকেরাও।
বাচ্চারা জানায়, তারা মোটেও ভয় পায়নি। এরপর এই ছবির মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকল না। ছুটির ঘণ্টা’ ছবির নাম শোনেনি বা দেখেনি, বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দর্শক খুব কমই আছে। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির যে ৪/৫টি ছবির নাম যদি বলতে হয়, তার মধ্যে অবশ্যই ‘ছুটির ঘণ্টা’ নামটিও থাকে। গত শতকের আশির দশকে অনেক দর্শকের প্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় ছিল ‘ছুটির ঘণ্টা’।
ছবিটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। পরিচালক তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, ফতেহাবাদ গ্রামে একটি পুকুরপাড়ে বিখ্যাত ‘অশিক্ষিত’ ছবির শুটিং করছিলেন। ওই সময় ঢাকায় জাপান এয়ারলাইনসের একটি বিমান ছিনতাই হয়। ফলে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরিচালক টেনশনে পড়ে যান। তখন মোবাইল দূরে থাক, ল্যান্ডফোনও এত সহজলভ্য ছিল না। প্রোডাকশন ম্যানেজারকে বললেন- শহর থেকে কয়েকটি পত্রিকা নিয়ে আসতে। দুপুরে বাংলার বাণী পত্রিকা হাতে আসে। পড়তে পড়তে ভেতরের পাতায় একটি খবরে চোখ আটকে যায় — ‘একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’। নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলের ছাত্র ছুটির আগে বাথরুমে আটকা পড়েছিল। খবরটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালকের মন খারাপ হয়ে গেল। কীভাবে সে বেঁচে ছিল, সেই ঘটনাগুলোও দেয়ালে ছেলেটি লিখে গিয়েছিল!’
প্রথমেই গল্পটি নিয়ে একটি ছবি বানানোর ভাবনা পরিচালকের মাথায় আসে। ওই দিন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করেন। কিন্তু খুব একটা উৎসাহ দেয়নি কেউ। পরে ঢাকা ফিরে যোগাযোগ করেন নানা দিকে। এই গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণের জন্য প্রযোজক মিলছিল না।
ওই সময় ১০ জনের বেশি প্রযোজকের কাছে তিনি গিয়েছেন। সবার একই কথা, একটি স্কুলছাত্র বাথরুমে মারা গেছে, সেখানে কী দেখানোর আছে। তাছাড়া তখন নায়ক আর নায়িকাপ্রধান ছবির প্রাধান্য ছিল। এ গল্পে তো নায়িকা রাখার সুযোগ নেই।
এরকম পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন সত্য সাহা। সত্য সাহা তখন ‘অশিক্ষিত’ সিনেমাটিও প্রযোজনা করেছিলেন! আজিজুর রহমান বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে আবার সত্যদাকে (সত্য সাহা) ধরলাম। বোঝালাম। ‘অশিক্ষিত’ ছবিতে তো তিন-চার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। আমার এই ছবির জন্য পাঁচ সাত লাখ টাকা বিনিয়োগ করুন। একটা ঝুঁকি নিন। আমার আগ্রহ দেখে তিনি রাজি হলেন।’ এবার চরিত্র নির্বাচনের পালা!
স্কুলের ঘণ্টাবাদক হিসেবে ঠিক হলো নায়ক রাজ্জাক। কিন্তু ওই প্রশ্নটা থেকেই যায়, নায়িকার কী হবে। একদিন কাকতালীয়ভাবে নায়িকার চরিত্রটি গল্পে যুক্ত হয়। তখন কাকরাইলে ফিল্মপাড়া ছিল। একদিন পরিচালক আজিজুর রহমান তাঁর কাকরাইলের অফিসের দরজা খুলে দেখতে পান, এক নারী অফিসের টেবিলের ওপর বসে সিগারেট ফুঁকছে। তিনি জানালেন, তিনি সুইপারের স্ত্রী, স্বামীর জ্বর হয়েছে, তাই সে ঝাড়ু দিতে এসেছে।
আজিজুর রহমান বলেন, ‘ওই দৃশ্য দেখে মাথায় নায়িকা আইডিয়া আসে। নায়িকা হবে স্কুলের ঝাড়ুদারনি। সেই চরিত্রে অভিনেত্রী খুঁজতে খুঁজতে মনে হলো, শাবানাই যথাযথ।’
ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শাবানাকে নিয়ে ধোলাইখালের সুইপারপট্টিতেও গিয়েছিলেন পরিচালক। তাদের পরিবেশ, আচার-আচরণ, পোশাক, চলাফেরা কাছ থেকে দেখেছেন শাবানা আর আজিজুর রহমান। ছবির শুটিং হয়েছিল কাপ্তাই এলাকায়।সেখানকার একটি রেস্ট হাউসকে ছাত্রের বাড়ি বানানো হয়। রেস্ট হাউসের জানালা থেকে স্কুল দেখা যায়।
ফলে সেখান থেকে স্কুলের ছবি নেওয়া হলো। আবার স্কুল থেকে বাড়ির দৃশ্যও ধারণ করা হলো। এফডিসিতে সেট বানিয়ে ঘরের ভেতরের অংশ ধারণ করা হয়। বাথরুমের ভেতরের অংশের চিত্র ধারণ করা হলো
ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে সবার অজান্তে তালাবদ্ধ হয়ে আটকে পড়ে একটি ১২ বছর বয়সের ছাত্র। আর তালাবদ্ধ বাথরুমে ১১ দিনের ছুটি শেষ হওয়ার প্রতীক্ষার মধ্যে দিয়ে হৃদয়বিদারক নানা ঘটনা ঘটে। অমানবিক কষ্ট সহ্য করার পর কীভাবে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, এমনই একটি করুণ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে।
প্রথমে স্কুলে আনা টিফিন, পরে কিছুদিন শুধু পানি পান করে বেঁচে ছিল সে। আটকে পড়া দিনগুলোতে নিজের অনুভূতিগুলো দেয়ালে লিখে রেখেছিল। শেষে শিশুটির জীবনে বাজে ‘ছুটির ঘণ্টা’। ঈদের ছুটি শেষে স্কুল খোলে।
উদ্ধার হয় ছেলেটির মরদেহ। স্কুলের দপ্তরি আব্বাস মিয়া স্বেচ্ছায় এই মৃত্যুর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জেলে যান। ছবি মুক্তির পরের দুটো ঘটনার কথা না বললেই নয়।
রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ আজাদের কর্মী চান মিয়া স্মৃতিচারণায় বলেন, মুক্তির কিছুদিন পর ছবিটি উঠিয়েছিলাম। টানা কয়েক মাস চলেছে। একদিনের কথা মনে আছে, এক শোতে “ছুটির ঘণ্টা” দেখতে আসা হলের সব দর্শকই ছিলেন নারী।
ছুটির ঘণ্টা চলচ্চিত্র আজিজুর রহমান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে ও বিচ্ছেদ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছেন ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান। অপু বিশ্বাস ও বুবলী এই নায়কের দুই সাবেক স্ত্রী হলেও বাবা হিসেবে দুই সন্তান আব্রাম ও শেহজাদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে এবার নতুন সম্পর্কের পথে হাঁটতে চলেছেন ঢালিউড কিং।
নায়কের পরিবারের মতে, অতীত ভুলে সংসারী হয়ে উঠুক শাকিব খান। আর এ কারণেই শাকিবের পরিবারে চলছে বিয়ের তোড়জোড়। খুব শিগগিরই বিয়ে করবেন অভিনেতা। এর জন্য শাকিবের সম্মতিতে পাত্রী দেখাও শুরু হয়েছে।
গুঞ্জন চলছে, যুক্তরাজ্য থেকে চিকিৎসা বিষয়ে লেখাপড়া করে দেশে ফেরা এক ডাক্তার মেয়ের সঙ্গে বিয়ের আলোচনা এগোচ্ছে শাকিবের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাকিবের পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, যখনই সিনেমা মুক্তির সময় আসে তখনই আলোচনায় থাকতে সাক্ষাৎকারে শাকিব প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন অপু ও বুবলী। এতে শাকিব খান যেমন বিব্রত হন, তেমনি তার পরিবারকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। আর এ কারণেই শাকিবের পরিবার তাকে বিয়ে দিচ্ছে।
শাকিবের পরিবারের ওই সদস্য আরও বলেন, দুজনই এখন শাকিবের অতীত। অথচ তারা এখনও শাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে দাবি করছেন। আমরা তাই বেশ বিরক্ত।
এদিকে শাকিবের বাড়িতে যাওয়ায় নিষেধ রয়েছে অপু ও বুবলীর। এ ছাড়া তারা দুজন যদি কোনো সাক্ষাৎকারে শাকিবকে নিয়ে কোনো মিথ্যাচার করেন তবে সে বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে শাকিবের পরিবারের।
শোনা যাচ্ছে, দুবার নিজের পছন্দে বিয়ে করে জটিলতায় পড়েছেন শাকিব। আর তাই এবার পরিবারের পছন্দেই সম্মতি দিয়েছেন তিনি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জমকালো আয়োজনে চলতি বছরের শেষের দিকেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন ঢালিউড কিং।
মন্তব্য করুন
এবার অস্ট্রেলিয়ায় স্টেজ শো করেছেন জায়েদ খান। রোববার মেলবোর্নের টাউন হলে এই অনুষ্ঠানটি হয়েছে। সেখানকার বাঙালি দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন ‘সোনার চর’ সিনেমার এই নায়ক। স্টেজ থেকে ‘শিরায় শিরায় রক্ত, আমরা জায়েদ খানের ভক্ত’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিলেন দর্শকরা। বিষয়টিতে বেশ মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জায়েদ খান।