চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির নির্বাচকে ঘিরে জল কম ঘোলা হয়নি। 'টক অব দ্য' কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও চিত্রনায়িকা নিপুণের দ্বন্দ্ব। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। জায়েদ খান নাকি নিপুণ কে, বসতে যাচ্ছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে? এনিয়ে বেশ কয়েকবার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছেন দুজনের কেউই পরবর্তীর নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবে না।
তবে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে কার্যক্রম চালান ভোটে পরাজিত নিপুণ আক্তার। এমন অবস্থায় আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছিলেন ভোটে বিজয়ী চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থার আদেশ কঠোরভাবে পালন করতে জায়েদ খান ও নিপুণ আক্তারকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
১৪ মার্চ (সোমবার) নিপুণের বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগ শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। কিন্তু তারপরও ১৭ মার্চ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে দেখা গেছে। সর্বশেষ শনিবার (২৬ মার্চ) চেয়ার বসা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন সহ-সাধারণ সাইমন সাদিক। এ সময় সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে মিটিং করেছেন।
আইন অমান্য করে মিটিং করার ব্যাপারে জানতে চাইলে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন
বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, দেখুন বিষয়টি আমি নিজেও পরিষ্কার না। নিপুণের আইনজীবী বলছেন তাঁর পক্ষে কথা, জায়েদের আইনজীবী বলছে তাঁর পক্ষে কথা। শুধু তাই নয় মহামাণ্য বিচারপতিও বিষয়টি পরিষ্কার করছেন না। আমি বা আমরা কী করবো? আমাদের তো মিটিং করতে হবে তাই না!
কোর্টের নির্দেশ অনেকের কাছেই আছে কিন্তু আপনি জানেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে কোর্টের কাগজ থাকলে তা আপনারা ভালো করে বিশ্লেষণ করে দেখুন। আমি তো আর এ্যাডভোকেট না।
এদিকে আরও জানা গেছে সমিতির কার্যকরী পরিষদের মিটিংয়ে জানানো হয়নি সহ-সভাপতি ডিপজল ও নায়ক রুবেলকে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসবের কিছু জানিনা। বিষয়টি দফতর ও প্রচার সম্পাদক জানেন। আমি তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি সবাইকে জানাতে। তাঁরা জানিয়েছে কিনা সেটি তাদের জিজ্ঞাসা করুন।
এর আগে, ৮ মার্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসার অভিযোগে নিপুণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন জায়েদ খান।
এদিকে, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে আবারও বেড়েছে অপেক্ষা। ২ মার্চ জায়েদ খানের পক্ষে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। এরপর শপথ নিয়ে চেয়ারে বসেছিলেন জায়েদ খান। পরে জায়েদ খানকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।
রোববার (৬ মার্চ) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের একক বেঞ্চ। আগামী চার সপ্তাহ এ পদে স্থিতাবস্থা থাকবে বলেও জানান আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ।
এদিকে সমিতির কার্যকরী পরিষদের মিটিং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার বিনোদন প্রধান এফ আই দিপু তাঁর দেয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ছবিটি আজকের। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মিটিং বলে জেনেছি।
জিজ্ঞাসা-
১. অমীমাংসিত সাধারণ সম্পাদকের পদবী বা চেয়ার কী আদালত উন্মুক্ত করে দিয়েছে?
২. আদালতের রায় হয়ে গেছে? নাকি আদালত অবমাননা চলছে ধুমসে?
ছুটির দিন বলে সারাদিন ঘুমিয়েছি। ঘুম থেকে উঠেই দেখি এ ঘটনা। প্রথমে ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি। গায়ে চিমটি কাইটা দেখি ব্যথা লাগে। বুঝলাম, আদালত এখনও এফডিসি পাড়ায় পৌঁছাইতে পারে নাই। এরমধ্যে আবার ছোট ভাই ফোন দিয়া কয়, "ভাই, সমাজের এই টাইপের লোকগুলাই যদি আদালতের আদেশ নির্দেশ না মানে, তাহলে আমজনতা কী শিখবে?"
আমি ছোট ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি নাই। এ বিষয়ক কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট কারো কাছে আছে নাকি?
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। ২৮ জানুয়ারি (শুক্রবার) চলচ্চিত্র শিল্পীদের দ্বিবার্ষিক এই নির্বাচনে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর আপিল বোর্ড জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে একই পদে জয়ী ঘোষণা দেয়। তাই পদটি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তারা।