নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২২ পিএম, ২১ অক্টোবর, ২০১৮
কলকাতার প্রথিতজশা সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রক সংগীত বিশ্বমানের’। এই রক সংগীতকে যাঁরা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন, তাঁদেরই একজন সংগীত কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু। শুধু রক নয়, সংগীতের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে আইয়ুব বাচ্চুর পা পড়েনি। তথকথিত রক ইমেজকে আড়ালে রেখে গান গেয়েছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য। ফোক, রক, সেমি ক্লাসিক্যাল, আধুনিক এমন সব ঘরানার সংগীতকে গেঁথেছেন একই সুতায়। পেয়েছেন কোটি মানুষের ভালোবাসা।
শ্রোতাদের এই ভালোবাসাই ছিল এবির সবচেয়ে দামী সম্পদ। তিনি সবসময় বলতেন, ‘শ্রোতারা আমার ‘অক্সিজেন’। তাঁরাই আমার প্রাণ।‘ মৃত্যুর পর তাঁর কফিন ঘিরেও দেখা গেছে এমন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কনসার্টে যেমন প্রিয় শিল্পীকে এক নজর দেখার জন্য জনস্রোত নামত, তেমনি তাঁর নিথর দেহকে ঘিরে নেমেছে হাজারো মানুষের ঢল। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্নভাবে তাঁকে উৎসর্গ করছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, লিসেনিং… সেই তুমি, রুপালি গিটার, ফেরারি মন, কষ্ট, হাসতে দেখ গাইতে দেখ, মাধবী, হকার, বাংলাদেশসহ এবির অসংখ্য সৃষ্টিকর্ম। কেউ কেউ নিজের পছন্দের গানগুলোকে জড়ো করে ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করছেন, একে অন্যকে জানান দিচ্ছেন। সেসব গান নিয়ে চলছে নানান ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। অনেকে আবার গিটার হাতে গান গেয়ে উৎসর্গ করছেন প্রিয় শিল্পীকে।
বাইরেও দেখা গেল এবি বন্দনা। সংসদ ভবন এলাকায় ভক্তরা জড় হয়ে সমবেত কণ্ঠে গাইছে এবির গান। কারো কানে আবার হেডফোন, শোকাতুর চোখ। এমনই একজন এবি ভক্ত রাহাত। কি শুনছেন? জিজ্ঞেস করতেই যেন সম্বিত ফিরে পেলেন তিনি। অপ্রসন্ন দৃষ্টিতে স্থির কণ্ঠে রাহাতের জবাব, এবি বসের ‘নীল বেদনায়’ শুনছি। গানটি আমার খুবই প্রিয়। অল ডে লং তাঁর গান শুনছি। আগামী কয়েকদিন শুধু তাঁর গান শুনেই তাঁকে উৎসর্গ করবো।’ রাহাত ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ের ছাত্র। সেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই নাকি তিনি এবিতে মুগ্ধ।
গিটার হাতে বিরামহীনভাবে এবির গান গেয়ে চলেছেন পার্থ ভৌমিক। সঙ্গে এবি ভক্ত ও উৎসুক জনতা। কিছুটা সময় চাইতে জানালেন, ‘মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় এবির গান আমাকে মুগ্ধ করে। তখন সবে সেখানে ভর্তি হয়েছি। প্রায়ই বড় ভাইদের দেখতাম বিভিন্ন ফেস্টে গিটার বাজিয়ে এবির গান গাইছে। সেখান থেকে তাঁকে মনে লালন করে গিটার শেখার প্রতিজ্ঞা করি। সেই থেকে শুরু। আজও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে।’
সংসদ ভবনের পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানেও দেখা গেল একই চিত্র। পুরনো ঢাকার বাসিন্দা জাফরিন গিটার হাতে গেয়ে চলেছেন এবির গান। তাঁকে ঘিরে রীতিমত উৎসুক জনতার ভিড়। জানলাম, একটি রক ব্যান্ড রয়েছে জাফরিনের। নিজেদের কোনো অ্যালবাম নেই। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কনসার্টে আইয়ুব বাচ্চুর গানই তাঁর একমাত্র সম্বল। কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে জাফরিনের। আবেগ জড়ানো কণ্ঠে জানান, ‘আমার মতো বহু শিল্পী বাচ্চু ভাইয়ের গান গেয়ে দু’পয়সা আয় করে। অথচ জীবদ্দশায় তাঁকে অপমানিত হতে দেখেছি। অপসংস্কৃতির ধারক বলে আখ্যা দিয়েছেন অনেকেই। এমনও হয়েছে মাঝপথে কনসার্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক জায়গায়। আমৃত্যু তিনি পাইরেসি নিয়ে কথা বলেছেন, শিল্পীদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। কই কেউ তো শোনে নাই!’
এবির সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছেন ‘মাইলস’ ব্যান্ডের কিবোর্ড বাদক মানাম আহমেদ। আক্ষেপ ঝরেছে তাঁর কণ্ঠেও। একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একসময় বাচ্চু গিটারের ওপর একটি অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনাও সাজিয়েছি। অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে সে উঠতি গিটারিস্টদের সঙ্গে কানেক্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু কেউই তখন পৃষ্ঠপোষকতা দিতে রাজী হয়নি। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন শুধু গিটার বাজালে নাকি দর্শক দেখবে না। অথচ তাঁরাই আজ বাচ্চুকে বিজ্ঞ গিটারিস্ট বলে মাথায় তুলে নাচছে।’ পপগুরু আজম খান ও লাকি আখন্দের মতো শিল্পিরাও জীবদ্দশায় উপযুক্ত মূল্যায়ন পায়নি বলে উল্লেখ করেছেন মানাম আহমেদ।
এমন আক্ষেপ শুনে মনে হয়, সত্যি কি আমরা মূল্যায়ন করতে পেরেছি জীবনানন্দ দাশ থেকে শুরু করে আইয়ুব বাচ্চুর মতো কিংবদন্তিদের?
বাংলা ইনসাইডার/এইচপি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বলিউড স্টার সালমান খানের জীবন থেকে শনির দশা কাটছেই না। এই তো
গত এপ্রিলের ১৪ তারিখ তার বান্দ্রার ফ্ল্যাটে হামলা চালান বিষ্ণোই-গ্যাংয়ের সদস্যরা।
দুটি গুলি অভিনেতার ফ্ল্যাটের বাইরের দেওয়াল প্রায় ভেদ করে দিয়েছে।
বলিউড ভাইজান খ্যাত সালমান খানের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে হামলা চালায়
বিষ্ণোই-গ্যাংয়ের সদস্যরা। দুটি গুলি অভিনেতার ফ্ল্যাটের বাইরের দেওয়াল প্রায় ভেদ করে
দিয়েছে।
গত মাসের রোববার (১৪ এপ্রিল) সালমানের বাড়িতে হামলা চালাতে বন্দুকবাজদের
অস্ত্র সরবরাহ করেছেন সোনু বিষ্ণোই ও অনুজ থাপন নামে দুই ব্যক্তি। ঘটনার পাঁচ দিনের
মাথায় দুজনকেই গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার সকালে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন
আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অনুজ। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা
করেন। মুম্বাইয়ের সেন্ট জর্জ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে অনুজের।
সালমনের ফ্ল্যাটে গুলি চালিয়েছিলেন সাগর পাল ও ভিকি গুপ্ত নামে
দুজন। ঘটনার দুদিন পরই গুজরাতের ভূজ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই
উঠে আসে সোনু ও অনুজের নাম। জানা যায়, দশ রাউন্ড গুলি চালানোর নির্দেশ পেয়েছিলেন অভিযুক্তরা।
গুলিকাণ্ডের পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন সালমান খান। উদ্বেগে দিন পার করছেন অভিনেতার পরিবারসহ তার অনুরাগীরাও। শোনা গেছে বান্দ্রার ফ্ল্যাট ছেড়ে পানভেলের খামারবাড়িতে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেছেন সালমান খান।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন