নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৫ পিএম, ১৩ অগাস্ট, ২০১৯
বিশাল সাফল্য, পর্দার জগতে লাস্যময়ী একজন নায়িকা তিনি। বলিউডে সর্বোচ্চ নামডাক ও জনপ্রিয়তা, একের পর এক সর্বোচ্চ পুরস্কার, আলোচনা-সমালোচনায় ভরপুর ব্যক্তিগত জীবন ও প্রেম, প্রণয় শেষে পরিণয়, দীর্ঘ এক দশকের বিরতির পরেও প্রথম কোনো নায়িকার আবার পর্দায় প্রধান চরিত্রে সবচেয়ে জমকালোভাবে ফিরে আসা, সবশেষে আকস্মিক মৃত্যু- এতক্ষণে বুঝে গেছেন কার কথা বলছি। তিনি শ্রীদেবী। জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছি তার জীবনবৃত্তান্ত জেনে-
আজীবন নিরামিষাশী ছিলেন শ্রীদেবী। জন্ম ভারতের মাদ্রাজে ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট। জন্মগতভাবে তার প্রকৃত নাম শ্রী আম্মা ইয়াগার আইয়াপ্পা। বাবা ছিলেন তামিলনাড়ুর বাসিন্দা আইয়্যিপা আর তেলেগু মায়ের নাম রাজেশ্বরী। দুই সৎভাই আর নিজের একবোনের সাথে কাটে এই নায়িকার শৈশব। ছেলেবেলাতেই ঢুকে যান অভিনয়ের জগতে। সাথে। স্কুলে আসা-যাওয়ার চেয়ে অভিনয়ের মঞ্চে আসা-যাওয়াতেই তার শৈশবের বেশিরভাগ কাটে। সেই থেকেই শুরু এই নক্ষত্রের পথচলা।
মাত্র চার বছর বয়সে ১৯৬৯ সালে অভিনয় করেন তামিল সিনেমা ‘থুনায়ভান’তে। এরপরে শিশু শিল্পী হিসাবে তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম আর কান্নাডা সিনেমায়। বলিউডে তাঁর অভিষেক ‘রানী মেরা নাম’ সিনেমাতে। মাত্র তেরো বছর বয়সে তিনি প্রথম অভিনয় করেন প্রথম সারির চরিত্রে। তামিল ও তেলেগু সিনেমাতে নায়িকা হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তার পরে ১৯৭৯ সালে ‘সোলভা সায়ান’ সিনেমার মাধ্যমে নায়িকা হিসাবে তার যাত্রা শুরু হয় এবং ১৯৮৯ সালে ‘হিম্মতওয়ালা’ সিনেমার মাধ্যমে সবার নজরে আসেন। ‘মাওয়ালি’, ‘তোহফা’, ‘নায়া কাদম’, ‘মাকসাদ’, ‘মাস্টারজি’, ‘নাজরানা’, ‘মি.ইন্ডিয়া’, ‘ওয়াক্ত কি আওয়াজ’, ‘চাঁদনী’ আরো কত কী! ‘চাঁদনী’ আর ‘মি. ইন্ডিয়া’ সিনেমাতে শ্রীদেবীর লাবণ্যময়ী উপস্থাপনা সে সময়ের দর্শকের মনে এক স্থায়ী মোহনীয়তার সৃষ্টি করে।
এরপর ‘নাগিনা’, ‘সাদমা’, ‘চালবাজ’, ‘খুদা গাভাহ’, ‘লামহে’, ‘গুমরাহ’, ‘লাডলে’ আর ‘জুদাই’য়ের মতো সিনেমাগুলো শ্রীদেবীর নাম ভারতের চলচ্চিত্র জগতে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়। শ্রীদেবীই প্রথম নায়িকা যিনি চলচ্চিত্রে দীর্ঘস্থায়ী স্থান দখল করেন, জমা হতে থাকে স্বীকৃতি, সম্মান আর জনপ্রিয়তা। প্রায় ৩০০টিরও অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী।
অভিনয় জগতে তার এই দৃঢ় পদচারণা তাকে এনে দিয়েছে আটটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার সহ অসংখ্য পুরষ্কার। আরও আটবার ফিল্মফেয়ার পুরষ্কারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরষ্কার ‘পদ্মশ্রী’। তামিলনাড়ু রাজ্যের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ তিনি ভূষিত হয়েছেন আরো প্রায় একুশটি পুরষ্কার ও সম্মাননাতে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ২০১৩ সালে কেরালা সরকার ও ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে থেকে পাওয়া পৃথক দুটি সম্মাননা।
সিনেমার মতোই তার ব্যক্তিগত জীবন দারুণ ঘটনাবহুল আর আলোচিত। তখনকার পত্রিকার পাতায় সেগুলো ভালোই আলোচনা হতো। তখনো তিনি তামিল আর তেলেগু সিনেমার নায়িকাই, শ্রীদেবীর তামিল ছবি দেখার পরই নায়িকার প্রেমে পড়েছিলেন বনি কাপুর। মিস্টার ইন্ডিয়া ছবির জন্য প্রথম শ্রীদেবীকে নায়িকার প্রস্তাব দেন বনি। ছবির প্রযোজক ছিলেন তিনি। মিস্টার ইন্ডিয়ার সময় অবিবাহিত ছিলেন বনি কাপুর। মিঠুনের সঙ্গে তখন শ্রীদেবীর জমাটি সম্পর্ক। জল্পনা রটেছিল, গোপনে শ্রীদেবীকে বিয়ে করেছিলেন মিঠুন। নিজের স্ত্রীকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না তিনি। শেষপর্যন্ত মিঠুন ও শ্রীদেবীর সম্পর্ক শেষ হয়। এর মধ্যেই মোনার সঙ্গে দেখাশোনা করে বিবাহ হয় বনি কাপুরের। ১৩ বছর একসঙ্গে ছিলেন তাঁরা। অর্জুন ও অনশূলার মা-বাবাও হন। শ্রীদেবীর মায়ের বিশাল অঙ্কের দেনা শোধ করেন বনি কাপুর। মন গলে শ্রীদেবীর। কাছাকাছি আসেন দুজন। স্ত্রীর অগোচরে একই বাড়িতে থাকায় বনি ও শ্রীদেবীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আচমকা সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন শ্রীদেবী। তা মেনে নিতে পারেননি মোনা। বিবাহবিচ্ছেদ হয় বনি কাপুর ও মোনার। ১৯৯৬ সালে লমহে ছবির পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বনি কাপুর ও শ্রীদেবী। শ্রীদেবীর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়াটা মোটেও সহজ ছিলো না।
বিয়ের পরপরই বলিউডের এই রানী প্রায় ১৫ বছর অভিনয় জগত থেকে বিরতি নেন। কিন্তু এরপর ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ সিনেমার মাধ্যমে আবার যখন ফিরে আসেন, তা যেন আসলেই রানীর মতোই হয়। ব্যবসায়িকভাবে সফল ২০১২ সালের এই সিনেমার পর তিনি আসেন ‘মম’ সিনেমাতে, প্রমাণ করেন যে সময় তার প্রতিভাকে একটুও ম্লান করতে পারেনি।
এই বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। প্রথমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হলেও ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, হোটেলের বাথটাবে ডুবে আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে তার। শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। এক আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতেই তিনি স্বামী ও কন্যাসহ দুবাই যান। বিয়ে শেষে সবাই ফিরে আসলেও তিনি পরিবারসহ আরো কিছুদিন থেকে যেতে চান। তার মৃত্যুর এই ঘটনার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলেও পুরো ব্যাপারটা নিয়ে এখন সন্দেহ যায়নি।
আরও কত প্রশ্নই তো ঘোরে। সত্যিই কি এই জনপ্রিয় নায়িকা ব্যক্তিজীবনে ততটাই সুখী ছিলেন? হাজারো পুরুষের কামনার এই নারীর কি তার ভালোবাসা আর বিয়ের অসঙ্গতি নিয়ে কোন ক্ষোভ জমে ছিলো মনে শেষ পর্যন্ত? এই সকল প্রশ্নের উত্তর অসম্পূর্ণ রেখে তিনি চলে গেছেন পার্থিব জীবনের অনেক উর্ধ্বে। কিন্তু তার প্রতিভা আর ব্যক্তিত্বের সাক্ষর থেকে যাবে আজীবন।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বলিউড স্টার সালমান খানের জীবন থেকে শনির দশা কাটছেই না। এই তো
গত এপ্রিলের ১৪ তারিখ তার বান্দ্রার ফ্ল্যাটে হামলা চালান বিষ্ণোই-গ্যাংয়ের সদস্যরা।
দুটি গুলি অভিনেতার ফ্ল্যাটের বাইরের দেওয়াল প্রায় ভেদ করে দিয়েছে।
বলিউড ভাইজান খ্যাত সালমান খানের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে হামলা চালায়
বিষ্ণোই-গ্যাংয়ের সদস্যরা। দুটি গুলি অভিনেতার ফ্ল্যাটের বাইরের দেওয়াল প্রায় ভেদ করে
দিয়েছে।
গত মাসের রোববার (১৪ এপ্রিল) সালমানের বাড়িতে হামলা চালাতে বন্দুকবাজদের
অস্ত্র সরবরাহ করেছেন সোনু বিষ্ণোই ও অনুজ থাপন নামে দুই ব্যক্তি। ঘটনার পাঁচ দিনের
মাথায় দুজনকেই গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার সকালে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন
আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অনুজ। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা
করেন। মুম্বাইয়ের সেন্ট জর্জ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে অনুজের।
সালমনের ফ্ল্যাটে গুলি চালিয়েছিলেন সাগর পাল ও ভিকি গুপ্ত নামে
দুজন। ঘটনার দুদিন পরই গুজরাতের ভূজ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই
উঠে আসে সোনু ও অনুজের নাম। জানা যায়, দশ রাউন্ড গুলি চালানোর নির্দেশ পেয়েছিলেন অভিযুক্তরা।
গুলিকাণ্ডের পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন সালমান খান। উদ্বেগে দিন পার করছেন অভিনেতার পরিবারসহ তার অনুরাগীরাও। শোনা গেছে বান্দ্রার ফ্ল্যাট ছেড়ে পানভেলের খামারবাড়িতে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেছেন সালমান খান।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন