২১ এপ্রিল, ১৯৭৭।
মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বঙ্গভবনে তার বেডরুমে গভীর নিদ্রায়। হঠাৎ বুটের শব্দ। চিৎকার চেঁচামেচি। নিদ্রা ভঙ্গ হলো রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের। ঘুম ভাঙতেই প্রচণ্ড শব্দ। কিছু সৈনিক তার বেডরুমের দরজা ভেঙে ফেলল। রাষ্ট্রপতি তখনো বিছানা থেকে পুরোপুরি উঠতে পারেননি। স্টেনগান তাক করে রাষ্ট্রপতিকে ঘিরে ধরলেন সশস্ত্র সামরিক ব্যক্তিরা। নেতৃত্বে জিয়াউর রহমান। বিচারপতি সায়েম ভয়ে কাঁপছেন। বয়োবৃদ্ধ মানুষ। এরকম পরিস্থিতি ছিল তার চিন্তারও বাইরে। জিয়ার হাতে একটি কাগজ। ধমকের সুরে বললেন, ‘সাইন হেয়ার।’ রাষ্ট্রপতি একটু বিব্রত। ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, কী এটা। জিয়া
বললেন, ‘ইউ আর সিক।
অসুস্থতার কারণে আপনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে রিজাইন
করছেন।’ বিচারপতি সায়েম একটু ধাতস্থ হলেন। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললেন, ‘আমি তো গত সপ্তাহেই
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছি। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।’ এবার জিয়া তার বুকে স্টেনগান তাক করলেন। কঠোর স্বরে বললেন ‘সাইন’। আবু সাদাত
মোহাম্মদ সায়েম দেখলেন উপায় নেই। জীবন অথবা রাষ্ট্রপতির পদ যে কোনো
একটি তাকে ত্যাগ করতেই হবে। কম্পিত হাতে তিনি কাগজ এবং কলম তুলে নিলেন। স্বাক্ষর করলেন। কাগজটা প্রায় ছিনিয়ে নিলেন জিয়া। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন বিচারপতি সায়েমকে। এর মাত্র কয়েক
মিনিট পর সেনাপ্রধান, সামরিক
একনায়ক জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন। মধ্যরাতে জিয়ার বঙ্গভবন দখলের বিবরণ উঠে এসেছে আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিজের লেখা গ্রন্থে। ‘অ্যাট বঙ্গভবন : লাস্ট ফেস’ শীর্ষক এ গ্রন্থটি এখন
বাজারে পাওয়া যায় না। এর এক বাংলা
অনুবাদ আছে বটে। কিন্তু সেটি সেন্সর করা। বাংলা অনুবাদে জিয়ার বঙ্গভবন দখলের কাহিনি নেই। মূল ইংরেজি বইটি বিএনপি ’৯১ সালে ক্ষমতায়
এসে নিষিদ্ধ করে। বঙ্গভবন ঘিরে স্বাধীনতার পর যত ন্যক্কারজনক
ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ভাগ্য খুব সুখকর নয়। বেশির ভাগ রাষ্ট্রপতি তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। দুজন রাষ্ট্রপতি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক ধরনের রাষ্ট্রপতি যারা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার আওতায়। তারা ছিলেন প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। এদের মধ্যে তিনজন সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। যদিও তিনটি ভোটই ছিল বিতর্কিত এবং প্রহসনমূলক। অন্য এক ধরনের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন যারা সংসদীয় গণতন্ত্রের অধীনে। অনেকটা অলঙ্কারিক। এখন বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এখন অনেকটাই আনুষ্ঠানিক। কিন্তু তারপরও রাষ্ট্রের অভিভাবক তিনি। দেশের এ সর্বোচ্চ পদটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চলতি বছর একজন রাষ্ট্রপতিকে বরণ করবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। কার অপেক্ষায় বঙ্গভবন?
এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা খুব শিগগিরই পাব। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রপতি পদের অতীত ইতিহাস তিক্ততায় ভরা। নানাভাবে গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়েছে বঙ্গভবনে। তাই বঙ্গভবনের নতুন বাসিন্দা নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। ‘মুজিবনগর সরকারে’ রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে। তাজউদ্দীন আহমদ কৌশলগত কারণেই বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ১০ জানুয়ারি। কালবিলম্ব না করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেন। রাষ্ট্রপতি পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধু। ১২ জানুয়ারি নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। প্রায় দুই বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরী। এরপর ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি হন মোহাম্মদ উল্লাহ। ’৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে মোহাম্মদ উল্লাহ মন্ত্রী হন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পর মোহাম্মদ উল্লাহ খুনি মোশতাকের অধীনে উপ-রাষ্ট্রপতি হন। রাষ্ট্রপতি পদকে হাস্যকর বা খেলো করার ক্ষেত্রে যাদের নাম উল্লেখযোগ্য এদের মধ্যে নিঃসন্দেহে মোহাম্মদ উল্লাহ অন্যতম। এক সময় তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারান। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থাকার পর একজন ব্যক্তি কীভাবে মন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি হন? এসব ব্যক্তিত্বহীন, লোভী বঙ্গভবনে প্রবেশ করলে তা রাজনীতি এবং দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়।
১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারির পর দেশে নতুন সরকারব্যবস্থা চালু হয়। সব রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু মাত্র ২০২ দিনের মাথায় দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। বিজয়ের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে হত্যার কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয় বাংলাদেশে। খুনি মোশতাকের রাষ্ট্রপতি অধ্যায়কে সর্বোচ্চ আদালত অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছেন। কাজেই খুনি মোশতাকের ৮৩ দিনের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকে আমি স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। মোশতাকের পর ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি সায়েম। তার পরিণতির কথা দিয়েই এ লেখা শুরু করেছিলাম। অস্ত্রের মুখে সায়েমকে হটিয়ে সেনাপ্রধান জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। আমার বিবেচনায় এটি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কারণ সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় তার রাষ্ট্রপতি হওয়াটা ছিল গুরুতর সাংবিধানিক অপরাধ। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যে অস্ত্রের জোরে জিয়া ক্ষমতায় বসেছিলেন সেই অস্ত্রই তার করুণ পরিণতি ডেকে আনে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নির্মমভাবে নিহত হন। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তিনি অযোগ্য ছিলেন। বিচারপতি সাত্তারকে নির্বাচনে যোগ্য করতে সংবিধানে সংশোধনী করা হয়। ১৯৮১-এর ১৫ নভেম্বর সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. কামাল হোসেনকে পরাজিত করে বিচারপতি সাত্তার নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু বিচারপতি সাত্তার ও বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যাপক ভোট কারচুপি এবং জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। আবার আক্রান্ত হয় বঙ্গভবন। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে সামরিক ক্যু সংঘটিত হয় বাংলাদেশে। গদিচ্যুত হন বিচারপতি সাত্তার। ক্ষমতা দখল করে এরশাদ পুতুল রাষ্ট্রপতি বানান। বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু আসল ক্ষমতার মালিক ছিলেন এরশাদ। এরশাদ তার অবৈধ স্বৈরশাসনের প্রতিটি ধাপে জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে এরশাদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এরশাদ। রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রায় সাত বছর দায়িত্ব পালন করেন এ সামরিক একনায়ক। যদিও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং অবৈধ ক্ষমতার দখলদার হিসেবে তিনি ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় ৯ বছর। এরপর বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের নেতৃত্বে এক স্বল্পমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এটি ছিল স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের ফসল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। ’৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। প্রধান দুই দল একমত হয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার রক্তাক্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রচণ্ডভাবে সংকুচিত হয়। বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদকেই মর্যাদাহীন করে ফেলে। এ সম্পর্কে প্রয়াত ড. আকবর আলি খান তার ‘অবাক বাংলাদেশ, বিচিত্র ছলনা জালে রাজনীতি’ গ্রন্থে ‘বঙ্গভবনে বাঁটকু : নির্বাহী বিভাগ কি ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রে’র পথে চলছে?’ শিরোনামে প্রবন্ধে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে এর খানিকটা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি :
‘‘১৯৯১ সালের শেষদিকে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে অর্থনৈতিক পরামর্শক (Economic Minister) পদ থেকে বদলি হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যোগ দিই। অর্থ বিভাগে যোগ দেওয়ার দুই-তিন দিন পর অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আমাকে ডেকে পাঠান। তিনি কোনো একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন এবং তাঁকে অপসারণ করে তাঁর জায়গায় জ্যেষ্ঠতম উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে ফাইল পেশ করতে পরামর্শ দেন। আমি অফিসে ফিরে আসি এবং সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সন্তুষ্ট হই যে, মন্ত্রীর অভিযোগসমূহের অনেকাংশেরই সত্যতা রয়েছে। আমি যুগ্ম সচিবকে অবিলম্বে মন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে ফাইল প্রস্তুত করতে অনুরোধ করি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফাইল আমার টেবিলে চলে আসে। নথিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য একটি সারসংক্ষেপ পেশ করা হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পরিবর্তন-সংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করতে হতো। কিন্তু এরশাদের পতনের পর সংবিধান সংশোধন করে মন্ত্রিসভা শাসিত সরকার সাংবিধানিকভাবে চালু করা হয়। সংবিধান সংশোধন হলেও তখনো কার্যবিধিমালা সংশোধিত হয়নি। সংবিধান সংশোধনের আগের কার্যবিধিমালায় নির্দেশ ছিল যে, ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমতি লাগবে। যেহেতু তখনো সংবিধান ও কার্যবিধিমালার মধ্যে অসঙ্গতি ছিল, সেহেতু এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না, সে সম্পর্কে ক্যাবিনেট ডিভিশনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে ক্যাবিনেট বিভাগ জানায় যে, যতদিন পর্যন্ত কার্যবিধিমালা সংশোধিত না হবে ততদিন পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিতে হবে। যুগ্ম সচিব আমাকে নথি দেখালেন। আমি সন্তুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রপতির জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিই।
পরের দিন মন্ত্রী অফিসে আসার পর তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আমাকে খবর দিলেন যে, আমি যেন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করি। আমি মন্ত্রীর কক্ষে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থমন্ত্রী আমাকে প্রশ্ন করলেন, আমি কেন রাষ্ট্রপতির জন্য সারসংক্ষেপ পেশ করলাম? দেশে যে মন্ত্রিসভা শাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেটা সম্পর্কে কি আমি অবগত নই? সেই প্রসঙ্গেই তিনি ইংরেজিতে প্রশ্ন করলেন যে, আমি কি মনে করি বঙ্গভবনে উপবিষ্ট বাঁটুক সত্যি সত্যিই দেশ পরিচালনা করছেন? আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এ কাজ করা হয়েছে বলার পর তাঁর রাগ গিয়ে পড়ল আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর। তিনি আইন সচিবকে টেলিফোনে গালিগালাজ করলেন এবং আমাকে বললেন যে, নথি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো যাবে না। আমি বললাম, আপনি লিখে দেন যে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সারসংক্ষেপ পেশ করা হোক। তিনি লিখে দিলেন এবং তদনুসারে আবার নথি তাঁর কাছে ফিরে গেল এবং তাঁর ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ব্যবস্থা গৃহীত হলো।
বিভাগীয় কাজের সমাধান ঠিকই হলো, কিন্তু আমার মনে একটা বড় খটকা জেগে উঠল। তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সম্পর্ক ভালো ছিল না। তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি খর্বাকৃতির ছিলেন। কিন্তু বাঁটকু শব্দটি ব্যবহার করে অর্থমন্ত্রী শুধু খর্বাকৃতিকেই পরিহাস করেননি, এর ভিতর অর্থমন্ত্রীর রাজনৈতিক দর্শনও নিহিত ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, মন্ত্রিসভা শাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গৌণ। মন্ত্রিসভার সদস্যরা যদি দৈত্যের মতো ক্ষমতাবান হন তাহলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নেহাত বাঁটকুর মতো।’’ (গ্রন্থ : অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি; পৃষ্ঠা ১৬৫-১৬৬)।
আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৯৭১ সালে স্থানীয় পর্যায়ের রাজাকার ছিলেন। এর মাধ্যমে বিএনপি দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদকে গুরুত্বহীন করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আবদুর রহমান বিশ্বাস তার মেয়াদ পূর্ণ করেন। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনা সংসদীয় গণতন্ত্রকে কার্যকর করার চেষ্টা করেন। সংসদে চালু করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব। সংসদীয় কমিটিগুলোকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেন। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদকেও মর্যাদাবান করেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রের অভিভাবক পদে নির্বাচন করেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে। দেশের প্রথম ব্যক্তিকে শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ রাখতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে। শেখ হাসিনাই রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানানোর রেওয়াজ চালু করেন। বিদেশ সফর করে এসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। তাকে বিভিন্ন পরিস্থিতি অবহিত করার জন্য বঙ্গভবনে যাওয়ার রীতি চালু করেন শেখ হাসিনা। বাঁটকু রাষ্ট্রপতিকে তিনি ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি’ করেন। ক্ষমতা বড় কথা নয়, রাষ্ট্রপতির সম্মান তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। সংবিধানের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক পদের স্বীকৃতি প্রদানের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রীতিমতো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে তিনি সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। ২০০১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের একটি কারণ বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের বিতর্কিত ভূমিকা। তথাকথিত দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পদে আনলে কী হয়, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন তার বড় উদাহরণ। ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনে বিপুল জয় পায় বিএনপি। বিএনপি রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেয় দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। কিন্তু বিএনপি রাষ্ট্রপতি চায় একজন ‘বাঁটকু’। একজন গ্রহণযোগ্য, সত্যিকারের অভিভাবক রাষ্ট্রপতি বিএনপি মেনে নেয়নি। দায়িত্ব নিয়েই অধ্যাপক চৌধুরী অনেক ‘লম্বা’ হয়ে গিয়েছিলেন। এ জন্যই তাকে ছেঁটে ফেলার উদ্যোগ নেয় ক্ষমতাসীন বিএনপি। অবস্থা বেগতিক দেখে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০২ সালের ২১ জুন নিজেই সরে দাঁড়ান। তার পদত্যাগের পর আরেকজন ‘বাঁটকু’ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য খুঁজে বের করতে বিএনপি সময় নেয় ৭৭ দিন। ততদিন স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির আবিষ্কৃত নতুন ‘বাঁটকু’ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ। বিএনপি নেতারা যাকে ‘ইয়েস উদ্দিন’ বলে টিপ্পনী কাটতেন। তিনিও সংকটকালে ব্যক্তিত্বহীন, ভাঁড়ে পরিণত হয়েছিলেন। আজ্ঞাবহ হতে গিয়ে পুরো দেশকেই সংকটের গভীরে ঠেলে দিয়েছিলেন ‘ইয়েস উদ্দিন’। দুই বছর অনির্বাচিত সরকার বাংলাদেশের বুকের ওপর যে চেপে বসেছিল তার প্রধান কারণ ড. ইয়াজ উদ্দিনের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব। বিএনপির সবচেয়ে ক্ষতি করেছিল দ্বিতীয় বাঁটকু এ রাষ্ট্রপতি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এবার শেখ হাসিনা বেছে নেন দলের অভিভাবক, রাজনীতিতে বিচ্যুতিহীন আদর্শবাদী নেতা জিল্লুর রহমানকে। এক-এগারোর সংকটেই অবশ্য জিল্লুর রহমান তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতার কল্যাণে জাতির একজন অভিভাবকে পরিণত হয়েছিলেন। সবার আস্থা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়েছিল গোটা দেশ। একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই রাষ্ট্র নামক পরিবারের প্রধান। তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেয় আবদুল হামিদকে। তৃণমূল থেকে বেড়ে ওঠা অন্তঃপ্রাণ এক রাজনীতিবিদ। সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলেন। সহজ সরল কথায় বঙ্গভবনের সুউচ্চ দেয়াল উপড়ে তিনি জনতার স্রোতে মিশে যেতে পারেন। আদর্শবান কিন্তু একেবারে সাদামাটা একজন মানুষ। দুই মেয়াদে প্রায় ১০ বছর তাঁর বঙ্গভবনে বসবাস এখন সমাপ্তির পথে।
স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রপতিদের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করলাম শঙ্কা থেকে। বঙ্গভবনে ভুল মানুষ যখনই প্রবেশ করেছে তখনই গণতন্ত্র হুমকিতে পড়েছে। অগণতান্ত্রিক শাসকরা একান্ত অনুগতদের বঙ্গভবনে ঢুকিয়ে সর্বোচ্চ পদকে হেয় করেছে। আমরা যেমন মোহাম্মদ উল্লাহর মতো লাজ-লজ্জাহীন রাষ্ট্রপতি চাই না, তেমনি অস্ত্র হাতে কেউ কেউ বঙ্গভবন দখল করে দেশপ্রেমের বাদ্য বাজাক তা-ও প্রত্যাখ্যান করি। আমরা যেমন নাম-পরিচয়হীন কোনো ‘বাঁটকু’ রাষ্ট্রপতি হোক চাই না, তেমনি আবার কোনো সুশীল ছদ্মবেশী সাবেক আমলা অতি নিরপেক্ষতার শক্তিতে ‘বঙ্গভবন’ বিতর্কিত করুক সেটিও চাই না। রাষ্ট্রপতি এ রাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক। একজন রাজনীতিবিদ। আদর্শবান ব্যক্তি, যার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক থাকবে। জনগণ যাকে আপন মানুষ ভাববে। তেমন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের আছে। বঙ্গভবনের টিকিট তাকে দিলেই ‘গণতন্ত্র’ সুরক্ষিত হবে। ভুল মানুষের হাতে বঙ্গভবনের চাবি গেলে আবার ‘গণতন্ত্র’ নির্বাসনে যাবে। সামনে কঠিন সময়। বঙ্গভবনের বাসিন্দা নির্বাচন এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
আরও পড়ুন: কুড়ি বছর পর আবারো আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভক্ত, কোন্দলে
জর্জরিত আওয়ামী লীগ দল গোছাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে একটি ছিল উপজেলা নির্বাচনে
দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি মন্ত্রী-এমপির
স্বজনদের উপজেলায় প্রার্থী না করার আহ্বান জানায়; কিন্তু দলের ওই নির্দেশনা মানেননি
অনেকেই। যেসব মন্ত্রী, এমপির স্বজনরা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউই
মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা
ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সারা দেশে আওয়ামী
লীগের তৃণমূলের দৃষ্টি সেদিন ছিল গণভবনে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত গণভবনে
বৈঠকে উপজেলা প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, সাংগঠনিক বিষয় নিয়েই কোনো আলোচনা হয়নি। বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। একজন সংবাদকর্মী
প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার
মর্মার্থ হলো, এখনই চটজলদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আওয়ামী
লীগ কোনো শাস্তির সিদ্ধান্তই চটজলদি নেয় না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তা অনুমোদন করে
না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কোনো নেতাকর্মী সংগঠনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে
প্রথমে তাদের কারণ দর্শানো হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে
সবকিছু পর্যালোচনা করে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু বিএনপিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় এক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবে, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে। কয়েক বছর ধরেই বিএনপি শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। উপজেলা নির্বাচনেও প্রথম দফায় ৭৩ জন, পরবর্তী সময়ে আরও ৬০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। কিন্তু শাস্তি প্রদানের একটি প্রক্রিয়া থাকা দরকার। সবার সামনে খুন করলেও, পুলিশ যদি অপরাধী ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গুলি করে, সেটা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এটাকে অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থেকে বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার।
আরও পড়ুন: আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার
কিন্তু দলেই প্রতিনিয়ত বিচারহীনতার
সংস্কৃতি লালন করা হচ্ছে। যে কোনো অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ
করা উচিত। কিন্তু বিএনপি কিছুদিন ধরে যে গণবহিষ্কারের উৎসব করছে, তা কি আইনি প্রক্রিয়া
অনুসরণ করে? যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের কি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল? তারা
কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছেন? কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থায়ী কমিটিতে কি গোটা বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা হয়েছে? উপজেলায় যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের কাউকে ন্যূনতম আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ দেওয়া হয়নি। দপ্তর থেকে সেসব হতভাগাকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি
একটি গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেমন গর্হিত, অনাকাঙ্ক্ষিত,
ঠিক তেমনি এই বহিষ্কার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। অথচ দলের ভেতর চলছে অগণতান্ত্রিক
কার্যক্রম। বিএনপির জন্য অবশ্য ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভ্যাস জন্মগত।
ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। তিনি
অবৈধ প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরপর যারা তার জন্য ন্যূনতম
হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতো, তাদের বিচার ছাড়াই জিয়া নির্মমভাবে হত্যা করতেন। কেন্দ্রীয়
কারাগারে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ সৈনিককে। যুদ্ধাহত
মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) তাহেরকে এরকম বিচারের নামে প্রহসন করেই হত্যা করা হয়েছিল।
কাজেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। জিয়ার মৃত্যুর পর
বেগম জিয়া এবং এখন তারেক জিয়াও সেই চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
গণতান্ত্রিক চিন্তা থেকে দেখলে, বিএনপির গণবহিষ্কার সমর্থন যোগ্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এটি করতে পারে না। আওয়ামী লীগ যেভাবে একজন নেতা বা কর্মীকে শাস্তি দেয়; সেটিই সঠিক। কিন্তু এর বিপরীতে কোন ব্যবস্থা বেশি কার্যকর, দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে পারে; সে তর্ক হতেই পারে। বিএনপির এক নেতা বলেছিলেন, দলে শৃঙ্খলা রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে অন্যরা শিক্ষা পাবে। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহস পাবে না। এ কঠোর অবস্থান নাকি দলকে শক্তিশালী করবে। সত্যি কি তাই? এর জবাব পাওয়া যায় ১ মে প্রকাশিত ‘দৈনিক কালবেলায়’। ‘বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—‘বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে।’ কী তাজ্জব কথা! রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শুনেছি, কমিটি ও পদ-বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বিএনপি এখন রাজনীতিতে ‘বহিষ্কার বাণিজ্য’ শুরু করল। নেতাদের অভিনব উপার্জনের এই পথ আবিষ্কারের জন্য দলটির শীর্ষ নেতাকে পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। অতীতে এরকম অনেক নেতাকে দেখা গেছে, যারা দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাদের দলে মহাসমারোহে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি কখন বিএনপিতে থাকেন আর কখন বহিষ্কৃত হন, সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কথাই ধরা যাক। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারালেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন।
আরও পড়ুন: আদর্শবানরা ক্ষমতায় বিনয়ী হন, অযোগ্যরা বদলে যায়
কিন্তু ২০০১ সালে আবার বীরদর্পে ফিরে
আসেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নানা বাণিজ্যে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এক-এগারোর
সময় বিএনপিতে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র প্রয়াত আবদুল মান্নান
ছাড়া সবাই বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। দুষ্ট লোকেরা বলে, মান্নান ভূঁইয়া বেঁচে থাকলে তিনিও
আবার বিএনপিতে ফেরত আসতেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা অলি আহমদদের মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন
নেতারা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে বিএনপিতে ফেরত যাননি; কিন্তু তাদের দলে ফেরাতে কম চেষ্টা
হয়নি। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপিতে ‘বহিষ্কার’ আর ‘সাধারণ ক্ষমা’র লুকোচুরি খেলা চলছে।
এ যেন শুধু যাওয়া-আসার খেলা। কে কখন দল থেকে ছাঁটাই হচ্ছেন, কে দলে ফিরছেন, কেউ জানেন
না। একই অপরাধের জন্য একজনকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। দলের
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যখন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির স্থানীয় নেতাদের
বহিষ্কার করা হচ্ছে, তখন একই অপরাধে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দেওয়া হচ্ছে
পুরস্কার। বিএনপিতে গঠনতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে দল।
যার ফলে সংগঠনে অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং হতাশা দানা বেঁধেছে। চরম পন্থা যে একটি রাজনৈতিক
দলের সাংগঠনিক শক্তিকে ক্ষয় করে বিএনপি তার প্রমাণ। বিএনপিতে মৃত্যুদণ্ড তাই ক্রমেই
অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বহিষ্কার’ অস্ত্র ব্যবহার করে কদাচিৎ। লতিফ সিদ্দিকীর মতো গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অপরাধ না করলে, আওয়ামী লীগ এই চরম শাস্তি প্রয়োগ করে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা কাপুরুষতা করে অথবা লোভে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল, শেখ হাসিনা ফিরে এসে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি। দলে তাদের ধীরে ধীরে অপাঙক্তেয় করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আবদুল মান্নান কিংবা মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। এক-এগারোতে যারা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেছিল, তাদের বিএনপি স্টাইলে গণবহিষ্কার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট যে চার নেতা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাদের ২০০৯ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জাঁদরেল নেতারা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আলংকারিক পদে জায়গা পেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন। প্রয়াত মুকুল বোস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো তারকা নেতাদের বহিষ্কার না করে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। তাদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। দলে থেকেও তারা গুরুত্বহীন, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হন। কর্মীদের উপেক্ষা আর টিপ্পনী সহ্য করে তাদের দল করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে তারা অপমানিত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিল তিল করে তাদের সাজা দেওয়া হয়। এই শাস্তি সহ্য করতে না পেরে মান্না, সুলতান মনসুর, আবু সাইয়িদের মতো নেতারা দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগের পর তারা রীতিমতো রাজনৈতিক উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। আওয়ামী লীগের প্রায়শ্চিত্ত নানা মেয়াদে। অপরাধের গুরুত্ব এবং মাত্রা বিবেচনা করে প্রায়শ্চিত্তের সময় নির্ধারণ করা হয়। অনেককে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন প্রয়াত মুকুল বোসের প্রায়শ্চিত্তকালীন সময় শেষ হলে, তাকে উপদেষ্টা পরিষদে ফিরিয়ে আনা হয়। লঘু অপরাধে অনুশোচনার শাস্তি ভোগ করা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এখন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আবার সাবের হোসেন চৌধুরী প্রায়শ্চিত্ত শেষ করে এখন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
২০০৯ সালে মনোনয়ন না পাওয়া প্রয়াত খ
ম জাহাঙ্গীর পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্তির
কয়েকটি তাৎপর্য আছে। প্রথমত, এই শাস্তির ফলে নেতাদের আত্মোপলব্ধির সুযোগ বটে। তারা
তাদের ভুল এবং বিভ্রান্তি উপলব্ধির সুযোগ পান। ফলে তারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের
শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, এর ফলে দলের অন্য নেতারা একটি সতর্ক সংকেত পান।
চূড়ান্ত সুবিধাবাদ এবং আদর্শহীনতা একজন রাজনৈতিক নেতার ক্যারিয়ার কীভাবে গিলে খায়,
তার উদাহরণ সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চর্চা হয়। অন্য কেউ দলের এবং নেতৃত্বের
বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের পরিণাম উপলব্ধি করেন। তৃতীয়ত, এর ফলে দলের প্রধান নেতার প্রতি
নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সাজার কৌশলের পার্থক্য দল
দুটির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগে কোন্দল আছে, আতঙ্ক নেই।
দলে দ্বন্দ্ব, বিভক্তি আছে, কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই।
সুবিধাবাদী আছে, আদর্শহীনতা আছে; কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি নেই। প্রতিপক্ষ
হীন রাজনীতির মাঠে ‘কোন্দল’ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তৎপর রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপির
চরম শাস্তির কৌশল নেতাকর্মীদের আতঙ্কের ঘরে বন্দি করেছে। সারা জীবন দলের জন্য অবদান
একটি ভুলে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দলে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মতো। দলে সবাই
কুণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। গণতন্ত্র চর্চার বদলে ষড়যন্ত্র
ডালপালা মেলেছে। যোগ্যতার বদলে চাটুকারিতা, তোষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে
বিএনপি সংগঠনটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে।
শুধু রাজনীতি নয়, কোনো ক্ষেত্রেই চরম শাস্তি সমাধান নয়। আর সেই শাস্তি যদি উপযুক্ত বিচার ছাড়াই হয়; তাহলে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, ঠিক একই কারণে, একটি ভুলেই দল থেকে বহিষ্কার মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল। গণতান্ত্রিক ধারা বিশ্বাস করলে চরম অপরাধীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তার কথাও শুনতে হবে। একটি গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট কায়দায় চলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন তিনি হুমকি দিচ্ছেন, প্রতিদিন তিনি সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন, হুশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা আসলে দলের নির্দেশনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এই নির্দেশনা মানছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান ওবায়দুল কাদেরের নয়, এই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত তাঁর তার বক্তব্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেল যে, একমাত্র প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালককে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছেন। অন্য কেউই ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেননি। ওবায়দুল কাদের এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা বারবার ঘোষণা করছেন।