রাজনীতির খবর নির্বাচনকালীন সরকার আওয়ামী লীগ বিএনপি
মন্তব্য করুন
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কিন্তু এ নির্বাচনে হেরেও জিতেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ একদিকে যেমন উৎসব করতে পারে, ঠিক তেমনি এ নির্বাচন আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে সতর্কবার্তা দিল। গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে দলটি। এ আন্দোলনের কৌশল হিসেবে সব নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখছে বিএনপি। আগে বিএনপির জনপ্রিয় নেতারা স্থানীয় প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ধরে রাখার স্বার্থে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হতেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সে ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে বিএনপি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরও আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল খুবই সোজাসাপ্টা। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপি ভোট বর্জন করলেই নির্বাচন নিরুত্তাপ হবে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে না। ফলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপির কৌশল কাজে লেগেছে। চট্টগ্রামের একটি উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশের মতো। বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়—এটি প্রমাণের জন্যই বিএনপি ভোট থেকে দূরে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। যুক্তরাষ্ট্র ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। যদিও তারা বিএনপির ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের দাবিকে সমর্থন জানায়নি। কিন্তু আকারে ইঙ্গিতে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শর্তপূরণের জন্য প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ জরুরি। বিএনপি কূটনীতিকদের বোঝাতে চাইছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় উত্তাপহীন, জনগণ সেই নির্বাচনে অংশ নেয় না, প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল মিলে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এরকম উত্তেজনাহীন নির্বাচন যত হবে, তত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জোরালো হবে। কিন্তু গাজীপুরে বিএনপির কৌশল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উৎসবমুখর, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে করা যায়, গাজীপুর তার প্রমাণ। এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তির। এর ফলে বিএনপি ছাড়াই আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে এগোতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি গত এক বছর ধরেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। তিনি বারবার বলছেন, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। যুক্তরাজ্যের মতো নির্বাচন হবে বাংলাদেশে—এমন বক্তব্য তিনি একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। শেখ হাসিনা এটিও বলেছেন, জনগণ ভোট দিলে সরকার গঠন করব। আর ভোট না দিলে ক্ষমতা ছেড়ে দেব। এটি যে কথার কথা নয়, গাজীপুর সিটি নির্বাচন তার প্রমাণ। এ নির্বাচনে পর্দার আড়ালে অনেক নাটক হয়েছে। অতি উৎসাহীরা নানাভাবে প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ জোর করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার ফর্মুলা নিয়েও দৌড়াদৌড়ি করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা অর্বাচীনদের এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো নেতাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সতর্ক করে দিয়েছেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কারচুপির চেষ্টা করলে তিনি কাউকে ছাড়বেন না। ফলে গাজীপুর নির্বাচনে কোনো কেলেঙ্কারি হয়নি। শেখ হাসিনা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ দেননি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ধারায় যদি বাকি চারটি নির্বাচন হয়, তাহলে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ দাবি মুখ থুবড়ে পড়বে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব বলা যৌক্তিক হবে। গাজীপুর নির্বাচন প্রমাণ করেছে, একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের একমাত্র ফ্যাক্টর বিএনপির অংশগ্রহণ নয়। বিএনপি ছাড়াও যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব, গাজীপুর তার বিজ্ঞাপন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বিশাল স্বস্তির। এ নির্বাচনের আগের দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সৃষ্টিকারীদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়। এরকম সতর্কবার্তার পর প্রথম পরীক্ষায় আওয়ামী লীগ সরকার খুব ভালোমতোই পাস করেছে। নির্বাচন নিয়ে চাপ বিএনপির কাঁধে তুলে দিতে গাজীপুর নির্বাচনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তাই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের চেয়ে এ নির্বাচন সরকারের জন্য একটি বড় বিজয়। গাজীপুর হেরেও জিতেছে আওয়ামী লীগ।
গাজীপুরের নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা বাড়াবে। কিন্তু নানা কারণে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কবার্তা। গাজীপুর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তর্কলহ এবং বিভক্তির ভয়ংকর রূপ প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামী লীগই যে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ, তা প্রমাণ হয়েছে গাজীপুরে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন দেয় দলের প্রবীণ নেতা আজমত উল্লাকে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর গাজীপুরে জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের তরুণরা তাকে পছন্দ করে। সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ জনগণের মধ্যে জাহাঙ্গীরের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ বাস্তবতাগুলো উঠে আসেনি। জনমতের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলমকে ‘কোণঠাসা’ করতে গিয়ে প্রভাবশালী নেতারা আওয়ামী লীগকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। আজমত উল্লাকে মনোনয়ন আরও সুন্দর এবং শালীনভাবে দেওয়া যেত। যেমনটি করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রে। সেখানে আওয়ামী লীগের দুই প্রতিপক্ষ নেতাকে গণভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দুজনের সঙ্গে কথা বলে একটি সমঝোতা করে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। গাজীপুরে তেমনটি করা হলো না কেন? ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করেন, দল যাকে ইচ্ছা মনোনয়ন দেবে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গিয়েছিল। জাহাঙ্গীর এবং তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমন নীতি’ কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না। জাহাঙ্গীরের (এবং তার মা) বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ভুল কৌশল প্রয়োগ করেছেন। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, তার কর্মীদের ওপর পেশিশক্তি প্রয়োগ—সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মীরা এটা পছন্দ করেননি। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে সব নেতাই প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তার পরামর্শকরা গাজীপুরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। তার ফলও ভালো হয়নি। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কারও ক্রীতদাস নয়। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেছেন। কান্নাকাটি করেছেন। ভোটারদের সহানুভূতি আদায় করেছেন। যেটি আওয়ামী লীগের আদি নির্বাচন কৌশল। ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য আজমত উল্লা ভোটার নয়, নানা শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীরের সমর্থদের গ্রেপ্তার, কাউকে কাউকে হুমকি দিতেও শোনা গেছে। জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। এমন পরিকল্পনার নিপুণ বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ঢাকা থেকে আসা কিছু নেতা। তারা বিশ্বাসও করেননি, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন এরকম অভাবনীয় নিরপেক্ষ হবে। ভোটের স্বাভাবিক সহজ কৌশলকে আওয়ামী লীগ পাত্তা দেয়নি। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের অঙ্ক তিনি ভালোই বোঝেন। জাহাঙ্গীর তার মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমর্থদের সংগঠিত করেছেন। নিরপেক্ষ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছেন। গাজীপুরের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন নিরপেক্ষ ছিল। নির্বাচন কমিশন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সবকিছু উজাড় করে কাজ করেছে। ফলে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপর্যয় হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগ কি শিক্ষা নেবে? ২৫ মের নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো প্রার্থী বাছাই। প্রার্থী যদি যথাযথ না হয়, জনপ্রিয় না হয়, তাহলে ভরাডুবি অনিবার্য। জাতীয় নির্বাচনের বাকি ছয় মাস। এখনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে সময় আছে। এখন যারা জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্য, দলের বাইরে সাধারণ জনগণের সঙ্গে যারা সম্পর্কহীন, তাদের বাদ দেওয়ার এখনই সময়। গাজীপুর শেখাল, জনবিচ্ছিন্ন, বিতর্কিত প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না। এ নির্বাচনের দ্বিতীয় শিক্ষা হলো—তৃণমূলের শক্তিতে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলটিকে প্রশাসননির্ভরতা কমাতে হবে। আগামী ভোটে প্রশাসন আর পুলিশ দিয়ে পার করা যাবে না। জনগণের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে যেতে হবে। ভোটাররাই রাজনৈতিক দলের আসল শক্তি। নতুন মার্কিন নীতিমালার পর অতি আওয়ামী লীগার হয়ে ওঠা প্রশাসনের লোকজন যে আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো ঝুঁকি নেবেন না, তার অনুধাবন করতে হবে দলের প্রার্থীদের। এ উপলব্ধি যত দ্রুত হয়, ততই তাদের জন্য মঙ্গল।
২০০৮-এর নির্বাচনের পর বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটার হয়েছেন। এমন প্রার্থী দিতে হবে যাতে তরুণরা আকৃষ্ট হন। ভোট একটি রাজনৈতিক বিজ্ঞান। এখানে গণিত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের হিসাব ঠিকঠাক মতো করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে আওয়ামী লীগকে।
আগামী নির্বাচন হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর শেষ নির্বাচন। একটি অসাধারণ, অনবদ্য এবং অনন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তিনি কোনো আপস করবেন না। একবিন্দুও ছাড় দেবেন না। গাজীপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি সেটি ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা চাটুকার, সুবিধাভোগী, মতলববাজরা কি সেই বার্তাটা পেয়েছেন? না পেয়ে থাকলে সামনে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
‘তথ্য প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা কারও চরিত্র হননের লাইসেন্স দেয় না। ব্যক্তি আক্রমণ, মিথ্যা অপপ্রচার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়।’ গত সোমবার (২২ মে) দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সচিন দত্ত এ মন্তব্য করেন। ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ শিরোনামে বিতর্কিত প্রামাণ্যচিত্র ইস্যুতে এক মামলায় বিচারপতি দত্তের এ উক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এক আদেশে বিবিসিকে হাই কোর্টে তলব করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিবিসি ওই প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করে গত ১৭ জানুয়ারি। প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল গুজরাট সহিংসতা নিয়ে। প্রামাণ্যচিত্রে সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হয়। তথ্যচিত্রটি ছিল অনেকটাই একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট। ভারত সরকার বিবিসিকে কোনো প্রতিবাদ পাঠায়নি। কঠোর ভাষায় ওই বিতর্কিত প্রামাণ্যটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ‘আপত্তিকর’ ভিডিওটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে ফেলার নোটিস দেওয়া হয়। ফেসবুক, ইউটিউব বাধ্য ছেলের মতো বিতর্কিত এ প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলে। এটুকু করেই ভারত সরকার সন্তুষ্টির ঢেকুর তোলেনি। আয়কর বিভাগ এক মাসের মধ্যে (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের ভারতীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সর্বশেষ ২২ মে দিল্লি হাই কোর্ট এ ধরনের ‘ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক’ প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের অভিযোগে বিবিসির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলেন। এ মামলা তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানোর লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
ঠিক দুই বছর আগে প্রায় একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশকে ঘিরেও। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি মনগড়া, প্রতিহিংসামূলক এবং অসত্য প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে আলজাজিরা। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেন’ শিরোনামে ওই প্রামাণ্যচিত্রটিতে জোর করে অসংলগ্নভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জড়ানো হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রকাশের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভুলেভরা এক প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিল আলজাজিরায়। কাতারভিত্তিক এ টেলিভিশন চ্যানেলটি ওই প্রতিবাদলিপিকে পাত্তা দেয়নি। এটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল প্রামাণ্যচিত্রটিকে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এখন অবধি। ফেসবুক, ইউটিউবে এর নানা খন্ডিত অংশ এবং পুরোটা প্রচার হচ্ছে। বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এ বিদ্বেষমূলক, হিংসাত্মক প্রামাণ্যচিত্রটি নামিয়ে ফেলার কোনো উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়নি। ভারত দেশের স্বার্থরক্ষায় ‘প্রধানমন্ত্রী’ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। ভারত পেরেছে, বাংলাদেশ পারেনি কেন? সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা মিচকে ষড়যন্ত্রকারীরা মিনমিন করে বলে ‘ভারত অনেক বড় দেশ। অনেক জনসংখ্যা, তাদের সঙ্গে কি আমরা পারি।’ তাদের এ কথা শুনে মনে হয় তারা বোধহয় দূর গ্রহে বাস করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেদের দেশের আত্মমর্যাদার ব্যাপারে কতটা সচেতন তা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যেই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতার ‘ওলটপালট’ করতে পারে জেনেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করছেন। এ সমালোচনা একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের স্বার্থে, মর্যাদার জন্য। সরকারে বিভিন্ন পদে যেসব ব্যক্তি বসে আছেন তারা কি এ থেকে এতটুকু সাহসী, দৃঢ় হতে পারেন না? তারা পারছেন না এ কারণে যে, তারা ষড়যন্ত্রকারী।
ভারত যখন মতপ্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরেছে। বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রভাবশালী মিডিয়াকে তলব করেছে, তখন বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হাঁটু গেড়ে ফেসবুককে কুর্নিশ করছে। গত ১১ মে ফেসবুকের চাকর-বাকরদের সঙ্গে বৈঠক করেন একদা জাসদের বিভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক বিপ্লবী ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। ফেসবুকের লোকজনকে তিনি জামাই আদর করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর, ঘৃণাসূচক, চরিত্র হননের কনটেন্টগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ফেসবুক বাংলাদেশে অফিস করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ফেসবুক এটাও বলেছে, কনটেন্ট মনিটরিং সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ফেসবুকের এসব আপত্তিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী খুশিতে বাকবাকুম। তিনি বলেছেন, ‘ফেসবুক বর্তমানে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অনুরোধ রাখছে।’
বাংলাদেশ এখন যে গুজবের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে তা মূলত ফেসবুক এবং ইউটিউবের কারণে। শুধু গুজব নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাস্তানাবুদ হচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বিকৃতি এবং কুৎসার বীভৎস উৎসব। লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক জিয়ার অর্থে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স থেকে কিছু সাইবার সন্ত্রাসীর ভয়ংকর তথ্যসন্ত্রাস এবং কদর্য আক্রমণের শিকার আজ বাংলাদেশ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এগুলো বোধহয় সরকারবিরোধী অপপ্রচার। কিন্তু যেভাবে একযোগে এসব নোংরা আবর্জনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে গোটা বাংলাদেশই দূষিত এবং দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। অথচ অবিরত এসব অশ্রাব্য প্রচারণা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কোনো মাথাব্যথা। তাহলে কি সাইবার-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে? এ প্রশ্ন উঠছে এ কারণে যে, সাইবার-সন্ত্রাসীদের আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যারা কাজ করছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ নেই বিদেশে বসে মিথ্যাচার প্রচারকারীদের। কদিন আগে দেখলাম এক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে বলে ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু তারপর আর রিপোর্ট নেই। সংশ্লিষ্ট বমি উগলানোর ইউটিউব চ্যানেল কার্ডটি পর্যন্ত নামিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আমলে একাধিক ব্যাংকের মালিক বনে যাওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে বলে ঘোষণা চলল কয়েক দিন। কিন্তু রিপোর্ট আর আসে না। সরকারের সঙ্গে হঠাৎ করে ঘনিষ্ঠ হওয়া কিছু ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা লক্ষ্য করলাম। কেন? একটু খোঁজখবর নিলেই দেখা যায় এর পেছনে রয়েছে ভয়ংকর সর্বনাশা ষড়যন্ত্র। ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী ফুলেফেঁপে উঠেছেন। নাম-পরিচয়হীন ব্যক্তিরাও হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মুদির দোকানদার ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যাদের টিকিটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি তারাই এখন ক্ষমতার চারপাশে ফেভিকলের মতো সেঁটে আছেন। এসব অনুপ্রবেশকারী, হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগার একদিকে যেমন সীমাহীন দুর্নীতি করছেন, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন, তেমনি ভবিষ্যতে তাদের লুণ্ঠিত সম্পদকে নিরাপদ করতে লন্ডনে যোগাযোগ করছেন। সাইবার-সন্ত্রাসীরা তাদের ব্ল্যাকমেল করছে। এদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এরা বিদেশে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। লুণ্ঠিত সম্পদের ছিটেফোঁটা দিয়ে ওইসব সংবাদ বন্ধ করছেন। শুধু যে অর্থ দিচ্ছেন তা-ই নয়, সরকারের অনেক স্পর্শকাতর গোপন তথ্যও তারা তুলে দিচ্ছেন সাইবার-সন্ত্রাসীদের হাতে। অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ী তিল তিল করে ত্যাগে, শ্রমে মেধায় দেশের উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন তারা সাইবার-সন্ত্রাসীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন না। এসব কুৎসিত মিথ্যাচারের কাছে নতিস্বীকার করছেন না দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাই তাদেরও এখন টার্গেট করা হয়েছে। এখন অবিরাম কুৎসিত প্রচারণা চলছে। বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাজ যেন শুধু তামাশা দেখা। গণকণ্ঠে যারা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সেই বিপ্লবীরাই এখন বর্তমান সরকারের মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই। তখন তারা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার করতেন গণকণ্ঠে। আর এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তাঁর বিশ্বস্তদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচারের পথ করে দেন। এরা ষড়যন্ত্রকারী। প্রধানমন্ত্রীর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফর ছিল কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক অর্বাচীন প্রতিমন্ত্রী বিমানে আরও কজন মন্ত্রী এবং সফরসঙ্গীকে নিয়ে এক সেলফি তুললেন। মনে হচ্ছে পিকনিকে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনিই ছবিটা ছেড়ে দিলেন। তিনি কি ইচ্ছা করেই সাইবার-সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন? তার এ ছবি তোলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া যেমন আপত্তিকর, অনুচিত, তার চেয়েও গর্হিত হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার পর এটি নিজের আইডি থেকে অপসারণ করা। শুধু এ প্রতিমন্ত্রী কেন? প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এমন অনেকে যাচ্ছেন তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এরা সাইবার-সন্ত্রাসীদের তথ্যের অন্যতম উৎস। এদের পাঠানো ছবি, তথ্যকে রংচং দিয়ে বিদেশ থেকে ফেসবুক আর ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সত্যিকারের বিশ্বস্তদের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় নোংরামি চলছে তা যে কোনো দেশের মানদন্ডে ঘৃণিত, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশে বসে কেউ যদি এর একাংশও করে তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তা অপরাধ। কিন্তু বিদেশে বসে করলে? বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার এ ধরনের কনটেন্ট বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছে, ফেসবুক এবং ইউটিউবের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার মাঝে মাঝে ভ্রম হয়, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা আসলে কার প্রতিনিধিত্ব করছেন? সরকারের না সাইবার-সন্ত্রাসীদের? বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তারেক জিয়া একজন দন্ডিত ফেরারি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির এ পলাতক নেতা দন্ডিত। হাই কোর্ট এক আদেশে ওই ফেরারি ব্যক্তির কোনো বক্তব্য বাংলাদেশে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন এ পলাতক ব্যক্তি লাইভে এসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছেন। কর্মিসভা করছেন, মিটিং করছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত মিথ্যাচার করছেন। এসব প্রচারণা বন্ধে যারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তারা তো আদালত অবমাননা করছেন। পচা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী মন্ত্রীর বদৌলতে, বিটিআরসির পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আশীর্বাদে বিএনপি-জামায়াত এখন সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে নিয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোও সাইবার-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। আজ পর্যন্ত শুনিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স কিংবা কানাডায় বাংলাদেশের দূতাবাস এদের অপতৎপরতা সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে সে দেশের সরকারকে অনুরোধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা, নোংরামির প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি দূতাবাসগুলো। কদিন আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরকম ২২ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছে বিভিন্ন দূতাবাসে। তালিকা পাওয়ার পর কোনো দূতাবাসের তৎপরতা নেই। সরকারের ঘরেই এভাবে সর্বনাশ বসবাস করছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের গ্রাহক ৫ কোটির বেশি। ফেসবুক, ইউটিউবের জন্য বাংলাদেশ এক বিরাট বাজার। তাদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত সহজ। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। বর্ণবাদ, হিংসাত্মক প্রচারণা, বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে দেশে দেশে অভিযুক্ত হয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশে ফেসবুকের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক মামলা হয়েছে। প্রায় সব মামলাতেই ফেসবুক আত্মসমর্পণ করেছে। ফেসবুক মার্কিন প্রতিষ্ঠান। মার্কিন আইন অনুযায়ী মানহানিকর কোনো তথ্য প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলায় হেরে গেলে দিতে হয় বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ। মামলার ক্ষতিপূরণ কে দেবে, এ নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু নিউইয়র্কের এক ক্ষতিপূরণ মামলায় আদালত জানিয়ে দেন ফেসবুক তার দায় এড়াতে পারে না। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ফেসবুককেই। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষিত হিসেবে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যে দেশ ফেসবুকে ভুয়া তথ্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ, বর্ণবাদ, হেইট ক্রাইমের বিরুদ্ধে যত সোচ্চার হয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছেই নমনীয় হয়েছে। ফেসবুক পৃথিবীর কোনো দেশেই স্বেচ্ছায় অফিস করেনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে করও দেয়নি। যেসব দেশ তাদের আইন, রীতির ব্যাপারে দৃঢ় ছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ব্রাজিলে একজন গর্ভবতী নারীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন তার এক প্রতিবেশী। ওই নারী তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণেœœর অভিযোগে মামলা করেন। ব্রাজিলের আদালত ফেসবুককে ওই ছবি অপসারণের নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ আদালতের রায় অস্বীকার করে। আদালত সরকারকে নির্দেশ দেন, ফেসবুক যদি আদালতের নির্দেশ না মানে তাহলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সরকার ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে ব্রাজিলে নিজস্ব অফিস করতে বলে। ২১ দিনের মাথায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্রাজিলে অফিস করে। ওই ছবিও অপসারণ করে। মেক্সিকোর একজন মন্ত্রীকে মাদক ব্যবসায়ী বলে মন্তব্য করেন মার্কিন এক সিনেটর। তার এ বক্তব্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী এক মেক্সিকান নাগরিক। মন্ত্রী মামলা করেন। মেক্সিকো সরকার এ নিয়ে শক্ত অবস্থান নেয়। অবশেষে মাথানত করে মেক্সিকোতে অফিস করে ফেসবুক। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে যৌন ব্যবসার স্বর্গ বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। থাইল্যান্ড সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দুই দিনের মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চায়। ওই কনটেন্টটি অপসারণ করে এবং তিন মাসের মধ্যে থাইল্যান্ডে নিজস্ব অফিস করার অঙ্গীকার করে। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। ফেসবুক কিংবা ইউটিউব যখন একটি দেশে অফিস করে তখন তাকে সে দেশের আইনকানুন মানতে হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জবাবদিহিতার আওতায় না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফেসবুক তো একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগে তারা ভ্যাট, করও দিত না। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার উদ্যোগে এবং এনবিআরের সঠিক পদক্ষেপের কারণে এখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে কিছু ভ্যাট ও কর দিচ্ছে বটে। কিন্তু এখনো অনেক টাকার কর ফাঁকির অভিযোগও আছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে হইচই চলছে। এ আইনটি বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো। এটি দিয়ে কেবল প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা যায়, সাইবার-সন্ত্রাসীদের দমন করা যায় না। সাইবার- সন্ত্রাসীদের দমন করতে দরকার ডাটা প্রটেকশন আইন। সব উন্নত দেশে এটি আছে। সম্প্রতি ‘গাইডলাইন অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া ইথিকস কোড’কে আইনে পরিণত করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যই এ নীতিমালা।’ এ নীতিমালা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ তদন্তে ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সহযোগিতা করতে হবে। এ ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। ভারত সরকারের এ নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতে ফেসবুকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত মোহন। তিনি ভারতের আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ নেই।’ ভারতে যখন মার্কিন টেক জায়ান্ট একান্ত অনুগত তখন বাংলাদেশে তার রূপ অন্যরকম। তার চেয়েও নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ডাটা প্রটেকশন আইন নিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে, এমনটি শুনছি বহুদিন। কিন্তু এটি হচ্ছে না। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর মনোযোগ লাভজনক প্রকল্পে। আইন করে তার কী লাভ? সম্প্রতি সরকার ওটিটি গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফরমস ২০২১’ শিরোনামে এ নীতিমালার ব্যাপারে অংশীজনের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এখানে ফেসবুকও তাদের মতামত দিয়েছে। বিটিআরসি খসড়া নীতিমালার ব্যাপারে ৪৫টি মতামত পর্যালোচনা করছে। এর মধ্যে ৩৩টি মতামতই হলো মেটা বা ফেসবুকের। বাংলাদেশে যাদের অফিস নেই, যারা এ দেশের আইনের ঊর্ধ্বে, ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার আছে? বিটিআরসি তাদের মতামত নেয় কেন? ফেসবুক, ইউটিউবকে আইনের আওতায় আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং কর্তৃপক্ষের এত অনীহা কেন? সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের স্বার্থেই কি তাদের এ উদারতা। বিরোধী আন্দোলন নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকারকে বিব্রত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পিশাচের চিৎকার চেঁচামেচিতে দেশের জনগণ অস্থির। শেখ হাসিনা যদি স্যাংশন দেওয়া দেশের কাছ থেকে কিছু কিনবেন না বলে দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে ৫ কোটি গ্রাহকের দেশের মন্ত্রী কেন সাহস করে বলতে পারেন না বাংলাদেশে অফিস না করলে ফেসবুক, ইউটিউব কাউকেই ব্যবসা করতে দেব না। ফেসবুক, গুগলকে এমন সতর্কবার্তা দিতে মন্ত্রীরা কেন শরম পান? নাকি তাদের অন্য মতলব আছে?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনাই এখন রাষ্ট্রদ্রোহী, ষড়যন্ত্রকারী, গণতন্ত্র বিনাশী শক্তির একমাত্র বাধা।
শেখ হাসিনাকে হটাতে পারলেই নির্বাসনে পাঠানো যাবে গণতন্ত্রকে।
শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে পারলেই জঙ্গিবাদের উত্থান হবে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করলেই বাংলাদেশ পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান হবে। শেখ হাসিনাকে মাইনাস করলে এদেশের উন্নয়নের চাকা থেমে যাবে।
শেখ হাসিনা না থাকলেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
আর তাই বিরোধী দলের আন্দোলন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার সবকিছুর একমাত্র টার্গেট হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাঁকেই আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গত ১৪ বছর একাই লড়ছেন তিনি স্রোতের বিপরীতে। নিঃসঙ্গ একাকী একযোদ্ধা আগলে রেখেছেন বাংলাদেশকে, এদেশের জনগণকে। সরকারের অনেকে প্রকাশ্যে বা গোপনে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আপস রফার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা লক্ষ্যে অবিচল নির্ভীক। তিনি তাঁর বিশ্বাস চিন্তায় অটল রয়েছেন। আর এ কারণেই তাঁকে একমাত্র টার্গেট করা হয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কুৎসিত এবং হিংসাত্মক আক্রমণের শিকার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বিএনপির আহ্বায়ক আবু সায়ীদ চাঁদ। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু এই হত্যার হুমকি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন সময়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার সবচেয়ে বীভৎস ষড়যন্ত্রের প্রকাশ্য রূপ। কিন্তু এ ছাড়াও তাকে দুই ডজন বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। কাজেই এবারের ঘটনা সেই ঘৃণ্য অভিপ্রায়ের আরেকটি প্রকাশ। এটি স্রেফ কথার কথা নয়। মেঠো বক্তৃতা নয়। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য বিএনপির ওই নেতা ফাঁস করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষরা, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি, গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তি সবাই এখন একটি স্থির বিশ্বাসে এসে উপনীত হয়েছে যে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে বা সরিয়ে দিতে পারলেই আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে হটানো যাবে। শেখ হাসিনা থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। আর এ কারণেই তিনিই টার্গেট।
বিএনপি নেতা চাঁদের এই ঘোষণা দেওয়ার দুদিন আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছিলেন যে, তাদের দাবি ১০ দফা বা ২০ দফা নয়। দাবি একটাই। সেটি হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া তারা ঘরে ফিরে যাবেন না এমন ঘোষণাও তিনি দেন। এখন মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সঙ্গে চাঁদের বক্তব্যের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং সেখানে কূটনীতিকদের বলা হচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। তাদের একমাত্র আক্রোশ শেখ হাসিনার প্রতি। শেখ হাসিনাতেই তাদের যত আপত্তি। শুধু বিএনপি নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু দেশের কাছে শেখ হাসিনা এখন প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশ গত ১৪ বছরে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের জন্য বিস্ময়। এ কারণে বাংলাদেশ পরনির্ভরতা থেকে স্বনির্ভরতার পথে যাত্রা করেছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এটিকে পছন্দ করছে না প্রভাবশালী কিছু দেশ। তারা চায় বাংলাদেশ সব সময় নতজানু হয়ে থাকুক। তাদের আদেশ নির্দেশ অনুগত ভৃত্যের মতো অক্ষরে অক্ষরে পালন করুক। তাদের তুষ্ট করতে দেশের স্বার্থ বিলিয়ে দিক। কিন্তু শেখ হাসিনা নতজানু হন না। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ কারণেই শেখ হাসিনাকে তারা টার্গেট করেছে। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগের ডালি নিয়ে বসেছে পশ্চিমারা। শেখ হাসিনা বিরোধী অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে আমাদের সুশীল সমাজ। বিএনপি জামায়াত শেখ হাসিনাকে শারীরিকভাবে হত্যা করতে চায়। আর সুশীলরা তার রাজনৈতিক মৃত্যুর জন্য অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই তারা শেখ হাসিনার নীতি ও কৌশলের সমালোচক। সুশীল সমাজের একটি বড় অংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক হোমরাচোমরা নেতার সখ্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে এবং গোপনে বৈঠক করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের একসঙ্গে দেখাও যায়। সেসব আড্ডায় শেখ হাসিনার সমালোচনা মুখর থাকেন দুই পক্ষ। শেখ হাসিনা কী কী ভুল করছেন তা নিয়ে তাদের আধো আর্তনাদ, আধো উল্লাস বোঝা যায় সহজেই। এরা সবাই একটি ব্যাপারে একমত। তারা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চান। এক-এগারোর কুশীলবরাই বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি বড় প্রতিনিধিত্বশীল অংশ। এই কুশীলবরা মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তায় সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। কিন্তু এখনো তারা সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এ কারণেই এখনো শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার নতুন করে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চলছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের তকমা লাগিয়ে তার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় ব্যস্ত সুশীলরা।
শেখ হাসিনা যে এখন প্রধান টার্গেট সেটি লক্ষ্য করা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপপ্রচার এবং কুৎসিত মিথ্যাচারগুলোতে। তারেক জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় সাইবার সন্ত্রাসীরা কিছুদিন আগেও সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি আক্রমণ করত। কিন্তু এখন টার্গেটের এর মূল কেন্দ্র হচ্ছেন শেখ হাসিনা। ফেসবুক, ইউটিউবে দিনরাত অবিরত শেখ হাসিনাকে অকথ্য নোংরা ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে। জাসদ থেকে আমদানিকৃত এক গণবাহিনীর পরিত্যক্ত বিপ্লবীর হাতে দেওয়া হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তার অধীনে বিটিআরসি। এসব নর্দমার চেয়ে নোংরা শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে তিনি নীরব। মন্ত্রী বলছেন, ফেসবুক, ইউটিউবের কনটেন্টের ব্যাপারে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি বলেই দায়িত্ব এড়িয়ে নিজস্ব আয় রোজগারে তিনি ধ্যানের মতো মনোনিবেশ করেছেন। কী আশ্চর্য! তাহলে ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড অসত্য, হিংসাত্মক কনটেন্ট আটকায় কীভাবে? ৫ কোটি ব্যবহারকারীর এই দেশে কেন এখন পর্যন্ত ফেসবুক অফিস করেনি? এই প্রশ্নের উত্তরে একদা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী লা জবাব। ফলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সাইবার সন্ত্রাসীরা মিথ্যাচারের বমি করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারকে লক্ষ্য করেই চলছে কুৎসিত অপপ্রচার। কারণ শেখ হাসিনা তার আদর্শের সঙ্গে আপস করেন না। সাইবার সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে লড়াই করে তিনি টিকে আছেন। এভাবেই শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে বিরোধী পক্ষের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। সব পক্ষ একজোট হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তাকে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ’৭৫-এর খুনিচক্র বারবার শারীরিকভাবে হত্যা করতে চেয়েছে, তেমনি রাজনৈতিকভাবে হত্যারও চেষ্টা চলছে। বার বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে কুৎসিত মিথ্যাচারের জবাব দিয়ে জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রজ্ঞা, মেধা এবং দূরদর্শিতায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরও হতাশ করেছেন বারবার। এবারও জিতবেন শেখ হাসিনাই। তাকে জিততেই হবে কারণ, শেখ হাসিনা হারলে হারবে বাংলাদেশ।
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমার ভালো লাগে। মাঝে মাঝে মুখ ফসকে কিংবা নিজের অজান্তে সত্যটা বলে ফেলেন। এই যেমন গত শনিবার (১৩ মে) পল্টনের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঝড় আসছে। সমুদ্র থেকে উত্তাল ঢেউ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। আজ শুধু প্রাকৃতিক ঝড় আসছে, সেটি মনে করার কোনো কারণ নেই। আজ রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে।’ মির্জা ফখরুল যখন ‘ঝড় আসছে’ বলে উচ্ছ্বাস করছিলেন তখন দেশের মানুষ ছিল উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত, আতঙ্কিত। উপকূলবাসী প্রিয় আপন ঠিকানা ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছিল আশ্রয় কেন্দ্রে। আবহাওয়া অধিদফতর, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করেছিল। ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো কোনো আনন্দের উপলক্ষ নয়। বিভীষিকা, মৃত্যু, আতঙ্ক, কান্না, আহাজারি। কিন্তু বিএনপি মহাসচিব এই তান্ডবে পুলক অনুভব করেছিলেন। একটি সুস্থ, জনঅধিকারে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দল কখনো জনগণের দুর্দশা কামনা করতে পারে না। কিন্তু মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে মানুষের কষ্টের আগাম বার্তা দিলেন। এ দেশের জনগণের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর, আইলা, মোখা যেমন অপরিচিত নয়, তেমনি অপরিচিত নয় রাজনৈতিক ঝড়ের নামে সন্ত্রাস, সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস, অসাংবিধানিক শাসন।
রাজনৈতিক ঝড় দুই রকমের। এক ধরনের ঝড় সাময়িক স্বল্প সময়ের জন্য। যেমন ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের রাজনৈতিক টর্নেডো। এই দুর্যোগের আগুনে বাস পুড়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এই ঝড় বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। আরেক ধরনের রাজনৈতিক ঝড় দীর্ঘমেয়াদি। যেমন ২০০৭ সালের রাজনৈতিক ঝড়। ওই তান্ডবের নাম ছিল এক-এগারো। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের জনগণকে ভুগিয়েছিল দুই বছর। তাহলে কি বিএনপি মহাসচিব আরেকটি এক-এগারো আনার ইঙ্গিত দিলেন। শুধু ইঙ্গিত বলি কী করে? বিএনপি কয়েক মাস ধরেই দেশে আরেকটি এক-এগারো আনার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছে। এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেই তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে চাইছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেকটি অনির্বাচিত সরকারকে আনার কিছু দৃশ্যমান আলামতও পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাজ্য সফরকালে বিবিসির সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিমকে তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলেই বাংলাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবাহী। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন প্রকাশ্যে রূপ নিতে শুরু করেছে। তিন দেশ সফর শেষে গত সোমবার (১৫ মে) গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম না বলে তিনি ঘোষণা করেন, যেসব দেশ আমাদের স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু কিনব না। স্পষ্টতই শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেই এ মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন সে সময়েই ঢাকার পুলিশ কমিশনার জানালেন, যে চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা অতিরিক্ত প্রটোকল বা নিরাপত্তা সুবিধা পেতেন তা আর পাবেন না। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় একই রকম ঘোষণা দেন। সিদ্ধান্ত ঘোষণার ধরন এবং প্রক্রিয়া ছিল বিভ্রান্তিকর। বুঝে না বুঝে এ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। বিএনপি সরকারের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায়। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিএনপির উথলে পড়া দরদের রহস্য বুঝতে গবেষক হওয়ার দরকার নেই। একদা বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের কেউ ছিলেন মস্কোপন্থি। কেউ ছিলেন চীনপন্থি। সে সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি কৌতুক প্রচলিত ছিল। কৌতুকটি ছিল এরকম-‘মস্কোতে বৃষ্টি হলে কমিউনিস্টরা বাংলাদেশে ছাতা ধরে।’ জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে খালকাটা শুরু করলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতকে এতে আমন্ত্রণ জানানো হতো। সৌজন্যতার খাতিরে কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত খালকাটা কর্মসূচিতে যোগ দিতেন। এরকম একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত। ব্যস। আর যায় কই, পরদিন থেকে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা কোমর কষে কোদাল নিয়ে খাল কাটতে নেমে পড়লেন। রাজনীতিতে এ নিয়ে শুরু হলো হাস্যরস। কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরাও হতবাক। পরে নেতারা ইনিয়ে-বিনিয়ে জানালেন, কৌশলগত কারণে তারা খালকাটা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্যই তাদের এই কৌশল। প্রটোকল বা এসকট প্রত্যাহার নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সেরকম একটি একান্ত অন্ধ অনুগত রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। ওয়াশিংটনে বৃষ্টি হলে কি একদা চৈনিক বিএনপি নেতা ছাতা মেলে ধরেন? আসলে ঘটনা কী? বাংলাদেশে বহু দেশের দূতাবাস আছে। সব দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতরা একই রকম নিরাপত্তা সুবিধা পান না। এখানে কিছু দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ‘রাজা’দের মতো সুযোগ-সুবিধা পেতেন। তারা যেন প্রভু। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা যখন এখানে ওখানে যেতেন তখন তাদের নিরাপত্তার নামে রীতিমতো বাড়াবাড়ি হতো। বাংলাদেশের সচিবরা তো নয়ই, মন্ত্রীরাও এমন প্রটোকল পান না। সরকার এখন এরকম কয়েকটি দেশের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া বন্ধ করেছে। ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রদূত বা একটি দূতাবাসের নিরাপত্তা বিধানের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তার সবই নেওয়া হয়েছে। শুধু তাদের বাড়তি খাতির বন্ধ করা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের স্বাভাবিক এবং সাধারণ একটি পদক্ষেপ। কিন্তু সরকারের একজন মন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনার যেভাবে আয়োজন করে সিদ্ধান্ত জানালেন মনে হলো ভয়ংকর এক কান্ড ঘটেছে। সরকারের এই ঘোষণা লুফে নিল বিএনপি। বাড়তি বা অতিরিক্ত কথাটি বাদ দিয়ে তারা এ নিয়ে এমনভাবে কান্নাকাটি শুরু করেছে যেন যুক্তরাষ্ট্রসহ রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য টানাপোড়েন তখন বিএনপি কি মার্কিন দূতাবাসের আস্থা অর্জনে মরিয়া? কারণ বাংলাদেশে সব অসাংবিধানিক ক্ষমতা বদলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। অথচ বিএনপি ভুলে গেছে; তাদের শাসনামলে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে কী ভয়ংকর হামলা চালানো হয়েছিল। বিএনপির মধ্যে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ার রোগ এখন প্রবলভাবে দৃশ্যমান। তারা শুধু বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তাদানের ব্যর্থতার কথাই ভুলে যায়নি, নিজেদের তাবৎ ব্যর্থতার কথাও ভুলে গেছে। লোডশেডিং, হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, বাংলাভাইদের মতো সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের উত্থান। ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনা : ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, বাজারে সিন্ডিকেট সবকিছু বিএনপি নেতাদের স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। অথবা তারা ইচ্ছা করেই এসব ভুলে গেছেন। কারণ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যা করেছে; তা একবার যদি স্মরণ করত তাহলে বিএনপির কোনো নেতা এভাবে বুক চিতিয়ে কথা বলতে পারতেন না। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতেন না। বিএনপি নেতাদের ভুলে যাওয়ার তালিকায় আছে এক-এগারোর ঘটনাবলিও। এ জন্য তারা আবার সে রকম একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছে। বিএনপি নেতারা হয়তো মনে করছেন; এরকম একটি সরকার এলে আওয়ামী লীগকে প্যাদানি দেবে আর বিএনপি আরাম আয়েশে ঘুরবে। বিষয়টি তেমন নয়। অনির্বাচিত সরকার রাজনীতির প্রতিপক্ষ; অর্থনীতির বাধা; সাধারণ জনগণের শত্রু। আসুন একটু ‘ঝাপসা’ স্মৃতি পরিষ্কার করে নিই। ২০০৭ সালের ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে প্রথমেই আক্রমণ করে রাজনীতির ওপর। ঢালাওভাবে গ্রেফতার শুরু হয় রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ প্রমাণের এক নোংরা খেলা শুরু হয়। প্রভাবশালী গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন চলে। বিনা অভিযোগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ‘কারাগারে কেমন ছিলাম’ কিংবা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি, যে কথা বলা হয়নি।’ এ দুটি গ্রন্থ পড়লেই যে কারও গা শিউরে ওঠে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাদের গ্রেফতার করে টর্চার সেলে নেওয়া হতো। চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বিএনপি তখন ছিল সদ্য ক্ষমতা থেকে বিদায়ী দল। আওয়ামী লীগ ছিল বিরোধী দল। কিন্তু সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ নেতাদেরও ছাড়েনি। বরং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বেগম জিয়ার আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কাজেই, বিএনপি যদি মনে করে একটি সুশীল সরকার এসে তাদের জামাই আদর করবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে বাংলাদেশ থেকে রাজনীতি নির্বাসিত হবে। গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে। অর্থনীতি ধ্বংস হবে। শুধু রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করেই ড. ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বসে থাকেনি। তারা রাজনীতিতে কিছু মেরুদন্ডহীন চাকর-বাকরের সন্ধানে নেমেছিল। এই ভৃত্যদের দিয়ে প্রধান দুই দুটি রাজনৈতিক দলে ভাঙন ধরানোর নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল এক-এগারো সরকার। মাইনাস ফর্মুলা করে জনপ্রিয় দুই নেত্রীকে অসাংবিধানিকভাবে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে চেয়েছিল সুশীলরা। যেন তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা যায়। মজার ব্যাপার হলো, সে সময় যারা ওই সেনাসমর্থিত সরকারের পদলেহন করত, সে সময় যারা সংস্কারপন্থি হিসেবে ঘৃণিত হয়েছিল, তখন যারা রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছিল- তারাই এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সবচেয়ে সোচ্চার। বিএনপিতে এক-এগারোর সময় যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তারা এখন অনেকেই কোণঠাসা। সংস্কারপন্থিরা এখন বিএনপির ড্রাইভিং সিটে। এক-এগারোর সময় যেসব লোভী নেতা সেনা গোয়েন্দাদের পায়ের কাছে বসে থাকতেন, তারাই এখন সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি চিৎকার করেন। তাহলে কি এক-এগারোর অসমাপ্ত এজেন্ডা সমাপ্ত করার মিশনে তারা? এক-এগারো আসলে কী? আমার বিবেচনায় বাংলাদেশকে পরনির্ভর এবং পঙ্গু বানিয়ে পশ্চিমাদের পুতুল রাষ্ট্র বানানোই এক-এগারোর মূল ধারণা। শুধু ক্ষমতা লিপ্সা থেকে সে সময় ক্ষমতার পালাবদল ঘটেনি। ড. ফখরুদ্দীন-মইন উ আহমেদের শাসনামল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল সে সময়। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাত। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে সেই সময় শুরু হয়েছিল কুৎসিত খেলা। শুরুতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তাকে। তথাকথিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের তালিকা ছিল মানহানিকর আপত্তিকর এবং আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা। এই তালিকা দিয়েই শুরু হয় নির্বিচারে চাঁদাবাজি। দেশের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হানা দেওয়া শুরু হয়। নানা অজুহাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া, মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করার আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। অনেকে মানসম্মানের ভয়ে সারা জীবনের অর্জিত টাকা তুলে দেন রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজদের হাতে। কেউ দেশের বাইরে চলে গিয়ে দূর থেকে সর্বনাশের নির্মমতায় ডুকরে কেঁদেছেন। কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে ভোরের অপেক্ষায় ছিলেন। এক-এগারোর সময় দেশে বেসরকারি খাত থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই অর্থ আদায়কে অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এই অর্থ ফেরত পাননি ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা। বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বড় স্তম্ভ হলো কৃষি খাত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঝড়ে ল-ভ- হয়েছিল আমাদের কৃষিও। সারের উচ্চমূল্য ও সংকট, বিদ্যুতের অভাবে সেচ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দিশাহারা হয়ে যান আমাদের কৃষক। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে রাস্তায় উৎপাদিত আলু ফেলে প্রতিবাদ করেন তারা। কৃষক যখন অস্তিত্বের সংকটে তখন পাঁচতারকা হোটেলে আলু উৎসব করে এক নিষ্ঠুর তামাশা করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয় কারাগারে। শিক্ষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে গোটা জাতিকে অপমানিত করা হয়। সাধারণ মানুষ এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। নির্বিচারে ধরপাকড় গোটা দেশকে আতঙ্কপুরীতে পরিণত করে। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একটি তারবার্তা যায় ওয়াশিংটনে। তাতে বলা হয়, ‘নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর হাতে ৪৩ হাজার মানুষ গ্রেফতার হয়েছে।’ (তথ্যসূত্র : এক-এগারো বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮, পৃষ্ঠা : ১৯৭)। নিম্ন আদালত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল সেনাসমর্থিত সরকার দ্বারা। এমনকি উচ্চ আদালত জামিন দিলেও ড. কামাল হোসেনের মতো মানবাধিকারের ঠিকাদার তার প্রতিবাদ করেন। আজ যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে হাহাকার করেন, সেদিন তারা এর প্রতিবাদ করেননি। বরং মানবাধিকারের এই চরম লঙ্ঘনকে সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং বলেছে বেশ বেশ। কিছু তাঁবেদার পরগাছা রাজনীতিবিদ, ভ- লোভী বুদ্ধিজীবী ছাড়া কেউ সেনাসমর্থিত ওই সরকারকে সমর্থন করেনি। তাহলে বিএনপি কি দেশে আবার সেরকম একটি পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে চায়?
ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন আঘাত হানার আগে কিছু লক্ষণ জানান দেয়। তেমনি রাজনৈতিক ঝড়েরও আগমনী পূর্বাভাস কিছু ঘটনাবলিতে বোঝা যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এখন আরেকটি রাজনৈতিক ঝড়ের আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দুর্যোগের প্রথম আলামত রাজনৈতিক অস্থিরতা। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে এক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি রাজনীতিতে একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি যদি সামনে জ্বালাও-পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাসের পথ বেছে নেয় তাহলে তা দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করবে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ক্ষমতাসীন দলেরও ব্যর্থতা থাকে। তাদের ভিতরও কিছু গোষ্ঠী গোপনে এ ধরনের দুর্যোগকে স্বাগত জানায়। আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। কিন্তু এ সময়ে সব দায়িত্ব একাই পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য কারও যেন কোনো কাজ নেই। মন্ত্রীদের একটি বড় অংশ অযোগ্য। কেউ কেউ দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো। একজন প্রতিমন্ত্রী কদিন আগে বিস্ফোরক এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কয়েকটি গণমাধ্যমে। সেখানে তিনি মন্ত্রীদের সিন্ডিকেট, দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা নিয়ে খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন। সরকারের ভিতর অস্থিরতা প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। সরকারের ভিতর সুবিধাবাদী, চাটুকারদের প্রচ- ভিড়। এরা সরকারপ্রধানকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী সুযোগসন্ধানীরা আস্তে আস্তে প্রকাশ্য হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। শেখ হাসিনা তাদের আবার ক্ষমতায় আনবেন এমন একটি ভাবনায় বুঁদ আওয়ামী লীগ। দলের অবস্থা হতশ্রী। বিভক্তি কোন্দল কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা গাজীপুর আর বরিশাল সিটি করপোরেশনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এসব অনির্বাচিত সরকার আসার পূর্ব লক্ষণ। অনির্বাচিত সরকারের মাস্টারমাইন্ড হলো সুশীল সমাজ। এরা আসলে পশ্চিমা প্রভুদের এজেন্ট, পোষা প্রাণী। প্রভুদের কথায় এরা সবকিছু করে। এখন কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই এরা মাঠে নেমেছে। সরকারকে নাস্তানাবুদ করার জন্য সবকিছু করছেন ক্ষমতালিপ্সু সুশীলরা। সুশীলদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। যাদের এখন বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথার শেষ নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি ইসু্যুতে তারা কোণঠাসা করতে চাইছে সরকারকে। সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মনস্তাত্ত্বিক কূটনৈতিক লড়াই এখন প্রকাশ্যে। এটাও অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দখলের ইঙ্গিত। এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন এই কূটনীতিকরাই।
তবে, এক-এগারো আঘাত হানতে গেলে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করতে হয়। অতীতে দেশে যতবার অগণতান্ত্রিক শাসন এসেছে প্রত্যেকবারই সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী বিভ্রান্ত অংশের ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে পেশাদার, বিশ্বমানের। নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে তারা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে আছে। এ ধরনের বিভ্রান্তির প্রলোভনে গত ১৪ বছর তারা পা দেয়নি। এ কারণেই দুর্যোগ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হানবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। আশার আরেকটি কারণ হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস, দৃঢ়তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। এ ধরনের দুর্যোগ সামাল দেওয়ার জন্য যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দরকার শেখ হাসিনার তা ভালোমতোই আছে। তার কারণেই এক-এগারোর তান্ডব থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়। তার জন্য ২০১৪ এবং ২০১৫-এর রাজনৈতিক সাইক্লোন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
আকাশে মেঘের ঘনঘটা। কালবৈশাখীর আগে যেমন প্রকৃতি থমথম হয়ে যায়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন তেমন। শেখ হাসিনা কি পারবেন? শেষ পর্যন্ত মোখা বাংলাদেশে আঘাত হানেনি। সেন্টমার্টিনের একটি অংশের ওপর দিয়ে আঘাত হানে মিয়ানমারে। বাংলাদেশ রক্ষা পায় বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে। রাজনৈতিক ঝড়ও কি এভাবে ঠিকানা বদল করবে?
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে দলটি। এ আন্দোলনের কৌশল হিসেবে সব নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখছে বিএনপি। আগে বিএনপির জনপ্রিয় নেতারা স্থানীয় প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ধরে রাখার স্বার্থে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হতেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সে ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে বিএনপি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরও আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল খুবই সোজাসাপ্টা। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপি ভোট বর্জন করলেই নির্বাচন নিরুত্তাপ হবে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে না।
ভারত যখন মতপ্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরেছে। বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রভাবশালী মিডিয়াকে তলব করেছে, তখন বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হাঁটু গেড়ে ফেসবুককে কুর্নিশ করছে। গত ১১ মে ফেসবুকের চাকর-বাকরদের সঙ্গে বৈঠক করেন একদা জাসদের বিভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক বিপ্লবী ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। ফেসবুকের লোকজনকে তিনি জামাই আদর করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর, ঘৃণাসূচক, চরিত্র হননের কনটেন্টগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ফেসবুক বাংলাদেশে অফিস করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ফেসবুক এটাও বলেছে, কনটেন্ট মনিটরিং সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ফেসবুকের এসব আপত্তিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী খুশিতে বাকবাকুম। তিনি বলেছেন, ‘ফেসবুক বর্তমানে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অনুরোধ রাখছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ। জনগণ যাকে ভোট দেবে তাকে আমরা মাথা পেতে নেব। এই কথাটি যে স্রেফ কথার কথা নয়, এই কথাটি যে তিনি বিশ্বাস থেকে বলেছেন এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে যে শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর- তা প্রমাণিত হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
রোধী দলের আন্দোলন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার সবকিছুর একমাত্র টার্গেট হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাঁকেই আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গত ১৪ বছর একাই লড়ছেন তিনি স্রোতের বিপরীতে। নিঃসঙ্গ একাকী একযোদ্ধা আগলে রেখেছেন বাংলাদেশকে, এদেশের জনগণকে। সরকারের অনেকে প্রকাশ্যে বা গোপনে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আপস রফার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা লক্ষ্যে অবিচল নির্ভীক। তিনি তাঁর বিশ্বাস চিন্তায় অটল রয়েছেন। আর এ কারণেই তাঁকে একমাত্র টার্গেট করা হয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কুৎসিত এবং হিংসাত্মক আক্রমণের শিকার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক ঝড় দুই রকমের। এক ধরনের ঝড় সাময়িক স্বল্প সময়ের জন্য। যেমন ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের রাজনৈতিক টর্নেডো। এই দুর্যোগের আগুনে বাস পুড়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এই ঝড় বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। আরেক ধরনের রাজনৈতিক ঝড় দীর্ঘমেয়াদি। যেমন ২০০৭ সালের রাজনৈতিক ঝড়। ওই তান্ডবের নাম ছিল এক-এগারো। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের জনগণকে ভুগিয়েছিল দুই বছর। তাহলে কি বিএনপি মহাসচিব আরেকটি এক-এগারো আনার ইঙ্গিত দিলেন। শুধু ইঙ্গিত বলি কী করে? বিএনপি কয়েক মাস ধরেই দেশে আরেকটি এক-এগারো আনার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছে।