শঙ্কার মেঘ কেটে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মহাসড়কে উঠেছে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে ক্ষণগণনা। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। নির্বাচন শেষ পর্যন্ত আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে কদিন আগেও যারা সন্দিহান ছিলেন, তারাও এখন মত পাল্টাচ্ছেন। সবাই একমত নির্বাচন হবেই। কিন্তু কেমন হবে সেই নির্বাচন? বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
কদিন আগেও ১৭
বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি ছিল আশাবাদী। বেশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু এখন সেই দলটি যেন
পথহারা। গন্তব্যহীন আন্দোলনে বিএনপি এখন অস্তিত্বের সংকটে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির ভুল
রাজনীতি তাদের আবার নিয়ে গেছে সর্বনাশের কিনারে। একটি ভুল আরেক ভুলের জন্ম দেয়। ২৮
অক্টোবর সহিংসতা এবং নাশকতা করে বিএনপি যে ভুল করেছে, তা তাদের নিয়ে গেছে ভুলপথে। একের
পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দলটি। ৩১ অক্টোবর থেকে তিন দিনের অবরোধ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
সেখান থেকে কৌশল পাল্টায়নি তারা। অকেজো, অর্থহীন অবরোধ আবার ডেকেছে। দেশের মানুষ এখন
হরতাল, অবরোধ, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পছন্দ করে না। এসব কর্মসূচি একটি রাজনৈতিক দলকে গণবিচ্ছিন্ন
করে। বিএনপি ক্রমেই একলা হয়ে যাচ্ছে। তাদের যারা শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও এই হঠকারিতায় হতবাক।
লা-জবাব। বিএনপির জন্য যারা ইনিয়ে-বিনিয়ে সহানুভূতি দেখাত, তারা নির্বাক। সহিংসতার
দায় আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বটে। কিন্তু পুলিশ কনস্টেবল
আমিরুলকে সাপের মতো পেটানো কিংবা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের হামলার দৃশ্য এখন সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা এসব মধ্যযুগীয় বর্বরতা করেছে, তাদের চেহারা জাতি
দেখেছে, জেনেছে পরিচয়। এ অবস্থায় আগামী দুই মাস জঙ্গি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যে কোনো
রাজনৈতিক দলের পক্ষে অসম্ভব। জনগণের কাছে দায়বদ্ধহীন একটি রাজনৈতিক দলই শুধু এ ধরনের
গোঁয়ার্তুমি করতে পারে। বিএনপি যদি এখনো মনে করে, এরকম অকার্যকর কর্মসূচি দিয়ে তারা
নির্বাচন ঠেকাবে, তাহলে সেটা হবে মহাভুল। বিএনপির পক্ষে নির্বাচন বানচাল করা অসম্ভব।
বিএনপির সামনে দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত শর্তহীনভাবে নির্বাচনে যাওয়া। নির্বাচনের
মাধ্যমে সংগঠনকে গোছানো। দ্বিতীয়ত তাদের নিজেদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া। নির্বাচন
বর্জন করে অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া। বিএনপি যে পথেই যাক, নির্বাচন হবেই। বিএনপি আন্দোলন
করেছিল বিদেশি কয়েকটি দেশের সমর্থনের ভরসায়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, যুক্তরাষ্ট্রের
মনোভাবের জন্য। দুই বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মহাব্যস্ত। অবাধ,
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কমতি নেই।
এ নিয়ে সরকারকেও বেশ চাপে ফেলছিল ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটি। ভিসা নীতিসহ নানা হুমকি দিচ্ছিল
সরকারকে। হিরো আলম মার খেলেও যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা জানায়। প্রচ্ছন্নভাবে বর্তমান সরকারকে
তারা রীতিমতো প্রতিপক্ষ বানিয়ে ছিল। একের পর এক মার্কিন কর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন।
এসব দেখেশুনেই বিএনপি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। বিএনপির অনেক নেতা ভাবছিলেন, আওয়ামী
লীগের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র মানবে না, এমন সহজ
সমীকরণে আত্মহারা হয়েছিল তারা। এজন্যই ২৮ অক্টোবর দলের নেতাকর্মীরা আক্রমণাত্মক হয়ে
ওঠে। পুরোনো চেহারায় ফিরে যায়। কিন্তু এ ঘটনায় তারা (বিএনপি) মার্কিন সহানুভূতি হারায়।
যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক, পুলিশ হত্যা, হাসপাতাল হামলা, জ্বালাও-পোড়াও সমর্থন করতে
পারে না। ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কৌশল পরিবর্তন করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত
পিটার ডি হাস এখন শর্তহীন সংলাপের কথা বলছেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র সচিবের
সঙ্গেও কথা বলেছেন। অথচ এর মাত্র কয়েক দিন আগে, মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক
দল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। সেই সুপারিশের প্রথমটি ছিল
বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ। মার্কিন পর্যবেক্ষকদের সুপারিশের পর আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘শর্তহীন সংলাপে
আমাদের আপত্তি নেই।’ বিএনপি নেতারা তখন হাওয়ায় উড়ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর সে সময় দম্ভ করে বলেছিলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি
যদি সরকার নীতিগতভাবে মেনে নেয়, তাহলেই সংলাপ হতে পারে। তা ছাড়া কোনো সংলাপ নয়।’ তখন
পিটার হাস কোথায় ছিলেন? তখন কেন বিএনপিকে ‘বিশ্বস্ত অভিভাবক’ হিসেবে বকে দেননি। এখন
যে শর্তহীন সংলাপের কথা তিনি বলছেন, তখন কেন তা উচ্চারণ করলেন না? এখন ভুল কৌশলে বিএনপি
বিপর্যস্ত, এজন্যই কি পিটার হাসের মুখে সংলাপের আকুতি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি ২৮ অক্টোবরের
আগে বলতেন, আন্দোলনের দরকার নেই, সংলাপ চাই—তাহলেই বুঝতাম তিনি নিরপেক্ষ। আন্তরিকভাবেই
তিনি বাংলাদেশে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন চান। কিন্তু এখন তার ভূমিকায় কী বলব? গত বছর
৭ ডিসেম্বর যখন নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হলো, তখন পিটার হাস এর নিন্দা
জানাতে ২৪ ঘণ্টাও সময় নেননি। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগেও তিনি ছুটে গেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
কাছে। কিন্তু পুলিশ কনস্টেবল হত্যার প্রতিবাদ করেননি রাষ্ট্রদূত। কদিন আগেই মান্যবর
রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমকে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন। ২৮ অক্টোবর যখন ৩২ সাংবাদিক
আহত হলেন, বেদম মার খেলেন তখন মিস্টার হাস নীরব কেন? যারা সাংবাদিকদের বীভৎসভাবে পিটিয়েছে,
তারা কি ভিসা নীতির আওতায় আসবে মান্যবর রাষ্ট্রদূত? সে প্রসঙ্গ থাক। ২৮ অক্টোবরের পর
মার্কিন দূতাবাস চাইছে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে। সেজন্য সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র
হয়তো চায় সংলাপের মাধ্যমে একটি সম্মানজনক সমঝোতার পথ উন্মুক্ত হোক। সে পথ দিয়ে বিএনপি
নির্বাচনী বাসে উঠতে পারে। অবশ্য এই সংলাপের আগ্রহের জন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ দেশের
রাজনীতিতে সংলাপ এবং ষড়যন্ত্র যমজ ভাইয়ের মতো। ২০০৬ সালেও যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য
বিদেশি দেশের চাপে আবদুল জলিল এবং আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সংলাপ হয়েছিল। সেটা সংলাপ
ছিল না, ছিল অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার সুড়ঙ্গ। ২০১৩ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী
তৎকালীন বিরোধী দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। এর উত্তরে বেগম জিয়া যেসব শব্দ
প্রয়োগ করেছিলেন, তা শালীনতা-বিবর্জিত। তাই এবার হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ আগ্রহের
অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, খতিয়ে দেখা দরকার। গত শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার
৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানান। বিএনপি এ সংলাপে যায়নি। মার্কিন
রাষ্ট্রদূত কিংবা বিএনপিপন্থি সুশীলদের উচিত ছিল বিএনপিকে ওই সংলাপে যাওয়ার পরামর্শ
দেওয়া। ওই সংলাপে গেলে কিছুটা হলেও বিএনপির পাপ স্খলন হতো। এর ফলে সরকারের সঙ্গে সংলাপেরও
একটা পটভূমি তৈরি হতো। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়েছে। এ
সংলাপের মধ্য দিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো—বিএনপি অংশগ্রহণ করুক না করুক, দেশে
নির্বাচন হবে। বহু দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে। আর এ নির্বাচন ২০১৪-এর মতো হবে না। নির্বাচন
হবে কি না, এ নিয়ে কদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। ছিল আতঙ্ক।
বিএনপির হুংকার, মার্কিন চাপ এবং সুশীলদের সমালোচনায় রীতিমতো চাপে ছিল টানা ১৫ বছর
ক্ষমতায় থাকা দলটি। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই শঙ্কায় ছিলেন। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করলে
সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। মার্কিন চাপ কতটা গভীর হবে সে নিয়েও কথা কম
হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র যদি বড় নিষেধাজ্ঞা দেয় তখন কী হবে—এ প্রশ্ন আওয়ামী চায়ের আড্ডাকে
বিষণ্ন করে তুলত। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপির ‘আত্মঘাতী আন্দোলন’ সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে
দিয়েছে। বদলে গেছে দৃশ্যপট। ব্যাকফুটে থাকা আওয়ামী লীগই এখন চালকের আসনে। তবে এ ঘটনায়
আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের
নেতাকর্মী মনে করছেন, খেলা শেষ। বিএনপি হেরে গেছে। টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগের সরকার
গঠন এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আওয়ামী লীগের এই অতি আত্মবিশ্বাস তাদের সর্বনাশের কারণ
হতে পারে। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে, লড়াই এখনো শেষ হয়নি। ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। নির্বাচনের
রাস্তায় এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ২৮ অক্টোবর একটা বিষয় প্রমাণ করেছে, একটি ভুল
কিংবা একটি ঘটনা রাজনীতির সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। নির্বাচন পর্যন্ত একটি
ভুলও করা যাবে না। সহিংস রাজনীতি আর নাশকতার আন্দোলন বিএনপিকে রাজনীতির ভিলেন বানিয়েছে।
নির্বাচনে তারা এখন পার্শ্বচরিত্র। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, তাদের সিদ্ধান্ত।
বিএনপি আসুক আর না আসুক, আওয়ামী লীগকে একটি নির্ভুল নির্বাচন করতে হবে। বিএনপি না এলে
যেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪-এর মতো না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আবার বিএনপি
অংশ নিলে নির্বাচন যেন ২০১৮-এর মতো প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে—এটা প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার। বারবার দেশে-বিদেশে
তিনি এ কথা বলেছেন। দেশের জনগণ শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে। জনগণ জানে, তিনি যা বলেন,
তা করেন। তাই একটি অসাধারণ নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্য আগামী
নির্বাচন দুই অগ্নিপরীক্ষার। প্রথমত তাদের জয়ী হতে হবে। উন্নয়ন এবং অগ্রগতির ধারাবাহিকতার
স্বার্থে। না হলে এ দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। দ্বিতীয়ত একটি প্রশ্নহীন, বিতর্কমুক্ত
নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন করেই ষড়যন্ত্রকারী এবং সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে হবে।
আগামী নির্বাচন কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের অস্তিত্ব।
লেখক : নির্বাহী
পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল
: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কল্যাণ পার্টির নেতা লে. জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই সত্যটি আরেকবার প্রমাণিত হলো। ২৭ অক্টোবর, বিএনপির মহাসমাবেশের আগের দিন এই সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আর জাহান্নামের আগুনে ঝাঁপ দেওয়া একই কথা।’
সৈয়দ ইবরাহিম চৌকস সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কোরআন এবং ইসলামী ব্যাখ্যায় তিনি অনবদ্য। মুসলিম যুদ্ধের কৌশল নিয়ে একটি চমৎকার গ্রন্থের লেখক এই মেধাবী মানুষটি। সহজ সরল সদালাপী। নির্বাচনে যাওয়ার যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন, তাতে যথেষ্ট যুক্তি আছে। আছে সহজ-সরল স্বীকারোক্তি। কিন্তু তার নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেনি শরিকরা। নির্বাচনী এলাকায় তিনি এখন বিএনপি কর্তৃক অবাঞ্ছিত। ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সৈয়দ ইবরাহিমের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। নুর বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদরা কোরবানির গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হচ্ছেন।’ শুধু নুর নয়, একই রকম বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গত শুক্রবার এলডিপির নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, ‘এ বয়সে এসে গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হতে চাই না।’ সৈয়দ ইবরাহিম গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। বরং নিজের বুদ্ধি বিবেচনার দ্বারাই এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমার ধারণা। কোরবানির হাটে নিজেকে বিক্রির অভিপ্রায় থাকলে তিনি নিশ্চয়ই তৃণমূল বিএনপি, কিংবা বিএনএমে যোগ দিতেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গেও যোগাযোগ করতেন। সৈয়দ ইবরাহিম তা করেননি। এটি তার নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তে ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে নির্বাচনের মাঠে এখন কেনাবেচার খেলা জমে উঠেছে। সন্দেহের তালিকায় থাকা অনেক নেতাই বলছেন, ‘আমি গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হব না।’ রাজনীতিতে এ কেনাবেচার ইতিহাস অনেক পুরোনো। নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হয়েছেন। নিজেদের আদর্শকে কোরবানি দিয়েছেন।
বিএনপির এখন পর্যন্ত অবস্থান নির্বাচনে না যাওয়ার। এখনো দলটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে, অন্তত কাগজে-কলমে। অবরোধের ঘোষণা দিয়ে চুপচাপ বসে নদীর ঢেউ গুনছেন নেতারা। বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছিল ৩৪টি দল। এদের মধ্যে বেশ কিছু দল এখন নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সামনে আরও চমক অপেক্ষা করছে।’ বিএনপির এখন অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, নির্বাচন বর্জনের পক্ষে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বাড়ানো। এজন্য রাজনীতিতে কেনাবেচার খেলা চলছে। জাতীয় পার্টির একজন নেতা স্বীকার করেছেন, জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচনে না যায় সেজন্য ‘বড় অফার’ দেওয়া হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। কান পাতলে নানা কথা শোনা যায়। এখনো জাতীয় পার্টি নাকি নিলামে আছে। দর-কষাকষি এখনো চলছে। শেষ মুহূর্তে ভালো দর পেলে, ২০১৪ সালের মতো, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে দলটি, এমন গুঞ্জনও শোনা যায়। বিএনপির শরিকদের মোটা অঙ্কের উপঢৌকনের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, যেন তারা নির্বাচনে না যায়। আদর্শ বা নীতি নয়, টাকার লোভে নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তও এক ধরনের কেনাবেচা। গরু-ছাগলের মতো কোন কোন রাজনীতিবিদের কত দাম ওঠে তা জানার অপেক্ষায় আমরা। বিএনপির প্রধান লক্ষ্য নির্বাচনে না যাওয়াদের পাল্লা ভারী করা। নির্বাচন যেন গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়ে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পর বলে—‘এটা পাতানো খেলা। আবার নির্বাচন করতে হবে।’ সে আশায় রাজনীতির হাটে এখন লন্ডনি পাউন্ডের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। শুধু জোট নয়, ঘরেই অবিশ্বাস-সন্দেহের দোলাচলে বিএনপি। দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের সঙ্গে তারা গোপন আঁতাত করছেন। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য তারা ‘গরু-ছাগলের’ মতো বিক্রি হয়েছেন। এজন্য ঘর সামলাতে ব্যস্ত বিএনপি। এর আগে সিলেট সিটি নির্বাচনে দলের নেতাকে ধরে রাখতে ‘নজরানা’ দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতা। নির্বাচনে না দাঁড়ানোর বিনিময়ে তিনি কী কী পেয়েছেন, তা গোপনই রয়ে গেছে। তবে দলীয় পদ প্রাপ্তিও যে এক ধরনের উৎকোচ, তা নিশ্চয়ই জনগণ উপলব্ধি করে। এবার বিএনপি আরও মরিয়া। জনপ্রিয় এবং নির্বাচনে যেতে আগ্রহীদের তা থেকে দূরে রাখতে নানা টোপ দেওয়া হচ্ছে। পদ-পদবির সঙ্গে আছে নগদ প্রলোভন। আন্দোলন নয়, বিএনপিতে চলছে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’র রাজনীতি। আদর্শহীন রাজনীতিতে টাকা-পয়সা ও পদ-পদবির লোভই শেষ অস্ত্র।
এটা স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়া একটি অর্থপূর্ণ নির্বাচন চায়। এমন একটি নির্বাচন যেখানে ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। দৃশ্যত নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। কিন্তু আওয়ামী লীগ একা তো নির্বাচন উৎসবমুখর করতে পারবে না। এজন্যই বাজারে এসেছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, ইসলামী জোট, যুক্তফ্রন্টসহ নানা জাতের-রঙের বাহারি রাজনৈতিক দল। জাতীয় পার্টিসহ এসব নতুন রং করা পুরোনো গাড়ি নির্বাচনী মহাসড়কে চলাচল শুরু করতেই দেশে সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। জনগণ ধীরে ধীরে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী হতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা গোটা দেশকে আচ্ছন্ন করেছিল, এখনকার পরিস্থিতি তার ধারেকাছেও নয়, বরং দেশ স্বাভাবিক। বিএনপি রাজনীতির মূলধারা থেকে প্রায় ছিটকে যাচ্ছে ক্রমাগত। নির্বাচনের মহাসড়কে এত গাড়ি নামাতে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ কসরত করেছে। বিনিয়োগ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছোট একটি গল্প বলতে চাই। এক ব্যবসায়ী তার ম্যানেজারকে নির্দেশ দিলেন, একজন কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে একটা কাজ বাগাতে হবে। ম্যানেজার ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে খোঁজখবর নিলেন। এসে মালিককে বললেন, ‘উনি (ঘুষ) খান না।’ ব্যবসায়ী হেসে বললেন, ‘কত খান না?’ পরে ব্যবসায়ী নিজেই ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দফারফা করলেন। এখন আমরা এমন এক আর্থসামাজিক বাস্তবতায় বসবাস করি, যেখানে আদর্শ মূল্যহীন, নীতি অর্থহীন। সবকিছুই কেনাবেচা হয়। রাজনীতিতে কেনাবেচা এখন ‘হালাল’। তাই কে ‘নগদে’, কে ‘আশ্বাসে’ নির্বাচনে এলো; তার হিসাব খুঁজে লাভ নেই। নির্বাচনী মাঠ এখন কোরবানির গরু-ছাগলের হাট। তবে এখানে ক্ষমতাসীনরা একাই ক্রেতা নয়। বিরোধীরাও নিলামে শক্তিশালী পক্ষ। বাংলাদেশে কেনাবেচার রাজনীতি নতুন নয়। সৈয়দ ইবরাহিমই প্রথম রাজনীতিতে ‘ডিগবাজি’ দিয়েছেন এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ’৭৫-এর পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে গরু-ছাগলের হাট প্রথা চালু হয়। সহজভাবে বলা যায়, বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের গরু-ছাগলের মতো কেনাবেচার জনক জিয়াউর রহমান। তিনি সামরিক গোয়েন্দাদের দিয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন। বিভিন্ন লোককে বিএনপিতে যোগদানের জন্য নগদ অর্থ, ব্যবসা, টেন্ডার, ব্যাংক ঋণ দেওয়ার প্রথা চালু হয় জিয়ার হাত ধরেই। তিনি একদিকে যেমন স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজ, মশিউর রহমানকে (যাদু মিয়া) দলে ভেড়ান, তেমনি চৈনিক বাম, গলাকাটা পার্টির তরিকুল ইসলাম, মান্নান ভূঁইয়াদেরও কাছে টানেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী কে এম ওবায়দুল রহমানের মতো নেতাদের বিএনপিতে নিয়ে জিয়া আওয়ামীবিরোধী ‘ককটেল’ সৃষ্টি করেন, যার নাম বিএনপি। জিয়া রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে সত্যিই ডিফিকাল্ট করেছিলেন। তার নেতৃত্বে রাজনীতিতে প্রবেশ করে কালো টাকার মালিক, মাস্তান, দুর্বৃত্তরা। তবে রাজনীতিতে গরু-ছাগলে হাটকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদ কবি ছিলেন, তাই রাজনীতিবিদদের গরু-ছাগল বানিয়েছিলেন তিনি কাব্যিক ঢঙে। বিকেলে জনসভায় এরশাদকে তুলোধোনা করেছিলেন ব্যারিস্টার কোরবান আলী। সন্ধ্যায় গোটা জাতি অবাক বিস্ময়ে দেখল স্বৈরাচারের মন্ত্রী হয়ে নিজেকে কোরবানি দিলেন মুজিব সৈনিক। কাজী জাফর আহমেদ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কিংবা মিজান চৌধুরীর জাতীয় পার্টিতে যোগদান ছিল একেকটি প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতার অনুপম কাব্য। তাদের ডিগবাজি এত বিস্ময়কর যে, অলিম্পিকে এরকম কোনো খেলা থাকলে অবলীলায় তারা স্বর্ণপদক পেতেন। রাজনীতিকে এরশাদ রীতিমতো গরু-ছাগলের হাট বানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই হাটেই এরশাদ নিঃস্ব রাখালে পরিণত হন ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে। এরশাদের পতনের পর গরু-ছাগলদের রশি আর রাখালের হাতে থাকেনি। যারা এরশাদের জন্য জান কোরবার করার প্রতিযোগিতা করতেন, তাদের প্রায় সবাই যোগ দেন বিএনপিতে। স্বৈরাচারের দোসররাই যখন এরশাদকে স্বৈরাচার বলে গালি দেয়, তখন লজ্জায় মুখ লুকানো ছাড়া উপায় কি? এখানেও কেনাবেচার রাজনীতি। এরশাদের চাটুকার গোষ্ঠীর ব্যারিস্টার মওদুদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বহুজনকে সস্তায় কিনে নেয় বিএনপি। ভাবখানা এমন বুড়ো গরুর দাম কম! স্বৈরাচারের উপ-রাষ্ট্রপতি ২০০১ সালে বিএনপির আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। বিএনপির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ডিগবাজির রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’ বিরোধী দল ভাঙার জন্য, বিরোধী নেতাদের ভাগিয়ে আনার যে ‘অস্ত্র’ বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি আবিষ্কার করেছিল, আজ সেই অস্ত্রেই তারা ঘায়েল হচ্ছে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। ১৯৮৮ সালে নির্বাচনের জন্য এরশাদ আ স ম আবদুর রবকে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করতে বিএনপি মৃতপ্রায় খুনিদের দল ‘ফ্রিডম পার্টি’কে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। ক্ষমতায় থাকার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা থেকে রাজনীতিতে যারা ‘গরু-ছাগলের হাট’-এর প্রবর্তন করেছিলেন, তারাই এখন কোরবানির হাটের পণ্য। ’৭৫-এর পর রাজনীতির যে কেনাবেচার অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, সেই অধ্যায় আজ ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব’ হয়ে উঠেছে। বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি তাতেই ক্ষতবিক্ষত। শুধু রাজনীতিবিদরা গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হচ্ছেন না। রাজনীতিই এখন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। সবচেয়ে বড় বাণিজ্য।
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com
কল্যাণ পার্টি নির্বাচন আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের নির্বাচন ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের নির্বাচন ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
প্রায় দু সপ্তাহ নীরব থাকার পর মাহমুদুর রহমান মান্না আবার সরব হয়েছেন। আবার রাস্তায় এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। কিন্তু গত দু সপ্তাহ তিনি কোথায় ছিলেন? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এ সময় মান্না সরকারের সাথে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে দেন দরবার করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেন দরবারের রফা হয়নি। সেই কারণেই মান্না এখন আবার সরব হয়েছেন। আবার বিরোধী দলের লড়াকু সৈনিক হিসেবে মাঠে নেমেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না যা চেয়েছিল তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কল্যাণ পার্টির নেতা লে. জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই সত্যটি আরেকবার প্রমাণিত হলো। ২৭ অক্টোবর, বিএনপির মহাসমাবেশের আগের দিন এই সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আর জাহান্নামের আগুনে ঝাঁপ দেওয়া একই কথা।’
যেকোনো সংকট সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটও এক অসাধারণ সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। রাজনীতিকে আবর্জনামুক্ত এবং দূষণমুক্ত করার এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭৫ এর পর থেকে দূষিত, দূর্গন্ধময় হতে হতে এখন তাতে পচন ধরেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তরুণরা। সাধারণ মানুষ মনে করে, রাজনীতি হলো শর্টকাটে নির্বিঘ্নে লুটপাটের সহজ পথ। রাজনীতি এখন প্রধান ব্যবসা। দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, দূর্বৃত্ত, অর্থপাচারকারীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে রাজনীতি। জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়ে রাজনীতিকে ‘ডিফিকাল্ট’ করতে চেয়েছিলেন। রাজনীতিবিদদের জন্য সত্যিই তিনি রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করেছেন। ভাড়াটেরা রাজনৈতিক দলগুলোকে রীতিমতো দখল করেছে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
বাংলাদেশ নিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সরব ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক কূটনীতিকরা বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং তারা বাংলাদেশে নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা রকম পরামর্শ দিয়েছেন, হুমকিও দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে এবং সেই ভিসা নীতি গত সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। কিন্তু যে মুহূর্তে ২৮ অক্টোবর বিএনপি সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং তাণ্ডব করল, সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলে যেতে শুরু করে। এরপর অবশ্য ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন, বৈঠক করেছেন। মার্কিন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিলেন, তারা যেন শর্তহীন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত মুখোমুখি অবস্থানে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের ইচ্ছারই জয় হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অভিপ্রায় মেনে নিল। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের যে আগ্রহ ছিল তা গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা চায়, বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়িত হোক। এটুকু প্রত্যাশা সকল দেশের, সকল বন্ধুরাষ্ট্রের এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তাদেরও। আর তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহনীয় এবং সহনশীল অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তনের হাওয়া সূচনা করেছে।