দেশ
নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু
করেছে। যে কোনো সময়
নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল
ঘোষণা করবে। অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে চলছে নানা
ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ সভাপতি গত
বৃহস্পতিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির
বৈঠকে বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই নির্বাচন করতে
হবে।’ নির্বাচনের পথে আনুষ্ঠানিক প্রধান
বাধা বিএনপি। দলটি নির্বাচন ঠেকাতে
সহিংস রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।
নির্বাচন বানচালের শেষ পর্যন্ত তৎপর
থাকবে দলটি, এমন আশঙ্কা আওয়ামী
লীগের। তবে এখন পর্যন্ত
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নাশকতা কঠোরভাবে মোকাবিলা করছে আওয়ামী লীগ।
সহিংস রাজনীতির ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছে
টানা ১৫ বছর ক্ষমতায়
থাকা দলটি। ২৮ অক্টোবর বিএনপির
তাণ্ডব মোকাবিলায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের
বিএনপির আন্দোলন তাই মুখ থুবড়ে
পড়েছে। তবে নির্বাচন বানচালের
ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে
যায়নি। বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি পর্দার আড়ালে চলছে নানারকম খেলা।
এসব খেলায় বিএনপি এবং পশ্চিমা কিছু
দেশের কূটনীতিকরাই শুধু জড়িত নয়,
আওয়ামী লীগেরও কেউ কেউ যুক্ত,
এমন কথা কান পাতলেই
শোনা যায়। বিএনপি যেমন
আত্মঘাতী আন্দোলনে খাদের কিনারে গেছে, তেমনি আওয়ামী লীগেরও কারও কারও মধ্যে
আত্মঘাতী তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
অনেকে আবার অতি আত্মবিশ্বাসী।
আবার ক্ষমতায় এসে গেছে, এমন
একটা আবেশে তারা আক্রান্ত। যারা
আওয়ামী লীগের মধ্যে এসব তৎপরতায় জড়িত,
তারা আসলে আওয়ামী লীগের
ক্ষতি করছেন। এরা আওয়ামী লীগের
শত্রু। বাইরের শত্রু মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ যতটা দক্ষ,
ঘরের শত্রু মোকাবিলায় ততটাই অপ্রস্তুত। ঘরের শত্রুদের কী
করবে আওয়ামী লীগ? ইতিহাস বলে,
বাইরের শক্তি আওয়ামী লীগকে কখনো হারাতে পারেনি।
অতীতে ঘরের বিভীষণদের হাতেই
ঘটেছে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ।
২০০৬
সালেও নির্বাচন নিয়ে দেশে রাজনৈতিক
অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন বিএনপি ছিল
ক্ষমতায়, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে।
এবারের মতো সে সময়ও
নির্বাচন নিয়ে সরব ছিল
কূটনীতিকপাড়া। সে সময় মার্কিন
রাষ্ট্রদূত ছিলেন প্যাট্রিসিয়া বিউটিনেস। গোপনে পরীবাগে আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসায়
গিয়েছিলেন। গোপন বৈঠক করেছিলেন।
তখনই রোপিত হয়েছিল মাইনাস ফর্মুলার বীজ। ঠিক ১৮
বছর পর সেই একই
বাড়িতে গেলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এবার পিটার হাস।
কী আলোচনা হয়েছে, তা গোপন করা
হলো। জলবায়ু নিয়ে হঠাৎ কী
এমন তুলকালাম হলো যে, পিটার
হাসকে অবরোধ ঠেলে পরীবাগে আসতে
হলো? পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যখন রাষ্ট্রদূতদের বাড়াবাড়িতে
বিরক্তি প্রকাশ করছেন প্রকাশ্যে, ঠিক তখন আওয়ামী
লীগের অনেকে পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে গোপন অভিসারে। এসব
কীসের আলামত। এক-এগারোতে আওয়ামী
লীগে যারা সরব ছিলেন,
তাদের অনেকে এখন তৎপর। তাদের
লক্ষ্য কী? তারা কী
চান? এসব প্রশ্ন আজ
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আড্ডায় আলোচনা হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে ছুটিতে
পাঠিয়ে নির্বাচনী ফর্মুলার কোন মন্ত্রী ‘মৃদু
সম্মতি’ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে নানা
আলোচনা কান পাতলেই শোনা
যায়। বিএনপির আটক এক নেতা
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুই নেতার সঙ্গে
লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যোগাযোগের এক্সক্লুসিভ তথ্য এখন আকাশে-বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। তাদের
ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর হতে
পারে না কেন? ২০০৭
সালের এক-এগারোর সময়
আওয়ামী লীগে যারা সংস্কারপন্থি
ছিলেন, তাদের অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে।
কয়েকজন আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন বটে,
কিন্তু বাকিদের কারও পদোন্নতি হয়েছে,
কেউ মন্ত্রী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংস্কারপন্থিদের সংখ্যা কম নয়। ২০০৭
সালে যারা শেখ হাসিনাকে
মাইনাস করতে চেয়েছিলেন, তারাই
কি এখন প্রধানমন্ত্রীকে ছুটিতে
পাঠানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত? এ ষড়যন্ত্রকারীদের আওয়ামী
লীগ মোকাবিলা করবে কীভাবে? অবশ্য
২০০৭ সালের আওয়ামী লীগ আর এখনকার
আওয়ামী লীগের পার্থক্য অনেক। ২০০৭ সালে অনেক
আওয়ামী নেতা শেখ হাসিনার
সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য বিরোধিতা করতেন। চ্যালেঞ্জ করতেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এক-এগারোর সময় যখন প্রথম
তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমালোচনা করলেন, দ্রুত নির্বাচন দাবি করলেন, তখন
কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে সমালোচনা শুনতে
হয়েছিল। আমির হোসেন আমু,
তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত মুকুল বোস কেন্দ্রীয় কমিটিতে
এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এখন আর সেই দিন
নেই। এক-এগারো শেখ
হাসিনাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
দলের তৃণমূল পর্যন্ত তার একক নেতৃত্ব
সমর্থন করে। কর্মীদের ভালোবাসায়
তিনি এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই
ষড়যন্ত্রকারীরা এখন বাঘ থেকে
বিড়ালে রূপান্তরিত হয়েছেন। মিউ মিউ করা
ছাড়া এদের কোনো ক্ষমতা
নেই। তবে রাজনীতিতে দুটি
শিক্ষা চিরন্তন। প্রথমত, একবারের বিশ্বাসঘাতক সারাজীবনই বিশ্বাসঘাতক হয়। বিশ্বাসঘাতকের চরিত্র
কখনো বদলায় না। সুযোগ পেলেই
এরা ছোবল মারে। খুনি
মোশতাক ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে
বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করতে চেয়েছিল। ৭৫-এ জাতির পিতাকে
হত্যা করে আবার বিশ্বাসঘাতক
হিসেবে তার ঘৃণ্য চেহারা
উন্মোচন করেছে। মোশতাকরা বদলায় না। এরা ভালো
হয় না।
রাজনীতির
দ্বিতীয় শিক্ষা হলো, কোনো শত্রুকেই
খাটো করে দেখতে নেই।
ষড়যন্ত্রকারীরা যে কোনো সময়ই
ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
এজন্য বিশ্বাসঘাতকদের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। একজন বিশ্বাসঘাতকের
জন্য একটি রাজনৈতিক দল
বিপন্ন হতে পারে। আর
শত্রুদের উপেক্ষা করার জন্য সুযোগ
রাজনীতিতে নেই।
যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে কী চায় তা
স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
অস্বস্তি দূর করতে হবে
দক্ষ কূটনীতি দিয়ে। প্রকাশ্যে হুমকি নয়। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী
লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট
বার্তা দিয়েছেন। কোনো রাষ্ট্রদূত সম্পর্কে
আপত্তিকর মন্তব্য না করার নির্দেশনা
দিয়েছেন। এক যুবলীগ কর্মী
মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে যে মন্তব্য
করেছেন, তা ধৃষ্টতাপূর্ণ ও
অগ্রহণযোগ্য। আশার কথা, তার
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে যখন ভারতে
আলোচনা হচ্ছে, সরকার যখন নানামুখী তৎপরতায়
লিপ্ত, তখন আওয়ামী লীগের
কারও কারও দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা
বিপদের কারণ হতে পারে।
এরাই ঘরের শত্রু। এরাই
ষড়যন্ত্রকারী।
ষড়যন্ত্র
নানভাবে হয়। এই যেমন
লক্ষ্মীপুর-৩ এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের
কথাই ধরা যাক। জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে
এ নির্বাচন ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা।
যারা এতে নির্বাচিত হবেন,
তারা জাতীয় সংসদে একদিন বসারও সুযোগ পাবেন না। তবে ওই
উপনির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের
মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তারা একদিক দিয়ে
মহা ভাগ্যবান। কারণ তারা দুজনই
নিশ্চিত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। তাই তাদের দায়িত্ব
ছিল উপনির্বাচনে দৃষ্টান্ত স্থাপন। একটি সুষ্ঠু, অবাধ
এবং সুন্দর নির্বাচন করে সব সমালোচনার
জবাব দেওয়া। বিএনপি যখন বলছে, তারা
অংশ না নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
নির্বাচন হবে না। বিএনপির
অভিযোগ হলো, আওয়ামী লীগের
অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
সম্ভব নয়। তখন বিএনপির
এ অভিযোগ খণ্ডনের এক চমৎকার সুযোগ
সৃষ্টি হয়েছিল, এ দুটি উপনির্বাচনে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে
এ উপনির্বাচন দুটি সুষ্ঠু হলে
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী
লীগের মান রক্ষা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে আওয়ামী লীগ বলতে পারত,
এই দেখো আমরাও পারি।
বিএনপি ছাড়াও একটি অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। এই
নির্বাচন যদি ঢাকা-১৭
উপনির্বাচনের মতো মাত্র ১৩
শতাংশ ভোটার উপস্থিতি হতো, তাহলেও সমস্যা
ছিল না। সবাই জানে
শেষ মুহূর্তেই এরকম উপনির্বাচনের ব্যাপারে
ভোটারদের আগ্রহ থাকে না। প্রার্থীদের
দায়িত্ব ছিল শুধু সুষ্ঠু
এবং সুন্দর ভোট নিশ্চিত করা।
কিন্তু ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে
এ দুই আসনে লজ্জাজনক
জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। গণহারে
সিল মেরে ব্যালট বাক্স
ভরানোর দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
ভাইরাল হয়েছে। ভোট জালিয়াতির অকাট্য
প্রমাণ পেয়ে নির্বাচন কমিশন
ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত করেছে। কী ভয়াবহ লজ্জার
ঘটনা। আওয়ামী লীগ সারা জীবন
ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছে। আওয়ামী
লীগই এ দেশে গণতন্ত্রের
সংগ্রাম করেছে, সেই আওয়ামী লীগের
প্রার্থী (দুজন) কী করে এরকম
ন্যক্কারজনক কাণ্ড করতে পারেন। বিশেষ
করে, যে সময় নির্বাচন
নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কড়া নজরদারি। এ
দুই আসনের উপনির্বাচন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে আন্তর্জাতিক
পরিমণ্ডলে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির
মধ্যে দাঁড় করাল। প্রধানমন্ত্রী
সব আন্তর্জাতিক ফোরামে, বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন,
‘আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ। নির্বাচনে কোনো কারচুপি প্রশ্রয়
দেওয়া হবে না। নির্বাচনে
সরকার প্রভাব বিস্তার করবে না।’ শুধু
আন্তর্জাতিক ফোরামে নয়, দলীয় ফোরামেও
প্রধানমন্ত্রী একই কথা বলছেন
বারবার। প্রধানমন্ত্রীর এ অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ
করল দুই অর্বাচীন প্রার্থী।
জাতীয়, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা না করে গুরুত্বহীন
উপনির্বাচনে যারা এ ধরনের
দায়িত্বজ্ঞানহীন কাণ্ড করে, তারা একালের
মোশতাক। জাল ভোটে ব্যালট
বাক্স ভরিয়ে তারা কী প্রমাণ
করল? তারা কি এটাই
প্রমাণ করল না যে,
এটা তো জাতীয় নির্বাচনের
একটি মহড়া মাত্র। জাতীয়
নির্বাচনেও তারা এমনটাই করবে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পশ্চিমারা কি বিশ্বাস করবে,
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে
হবে? অতি উৎসাহীরা কি
সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দেবে? অর্থহীন
দুই উপনির্বাচনে অতি উৎসাহী প্রার্থীরা
আওয়ামী লীগের কত বড় ক্ষতি
করেছে, তা বোঝার সামর্থ্য
কি তাদের আছে? তারা জেনেবুঝেই
আওয়ামী লীগকে বিব্রত এবং বিতর্কিত করার
জন্য এসব করেনি, তা
কে বলবে?
আওয়ামী লীগের ভেতর অনেক মোশতাক। তারা নানা সর্বনাশের খেলা শুরু করে দিয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরকম বহু আত্মঘাতী তৎপরতা হয়তো আমরা দেখব। এসব ঘরের শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে আওয়ামী লীগকে। সন্ত্রাসী, অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে সরকার যেভাবে কঠোর হয়েছে, এসব নব্য মোশতাক দুর্বৃত্ত, ছদ্মবেশীদেরও প্রতিহত করতে হবে এখনই। না হলে ঘরের শত্রুদের হাতেই আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হবে আরও একবার।
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল : poriprekkhit@yahoo.com
বাংলাদেশ রাজনীতি আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র সৈয়দ বোরহান কবীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ টেলিভিশন আমার পরিচয়। আমি মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে এই টেলিভিশনে আমি নিউজ রিপোর্টিং শুরু করি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার ‘পরিপ্রেক্ষিত’ অনুষ্ঠান চালু হয়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনধর্মী এই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবার দুই গুগ পরেও এখনও মানুষ ঐ অনুষ্ঠানকে মনে রেখেছে। আমার সাংবাদিকতা জীবনে পূর্ণতার নাম ‘পরিপ্রেক্ষিত’। পরিপ্রেক্ষিত আমাকে তারকা খ্যাতি দিয়েছে। একারণেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছে আমি সব সময় ঋণী। বিটিভি আমার আবেগের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা, আমার সত্তার অংশ। সেই বিটিভি যখন পুড়ছিল তখন আমি আবেগ সামাল দিতে পারিনি। ৭১ এর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী, রাজাকারাও বিটিভিতে আগুন দেয়নি। প্রায় ২৫ ঘণ্টা বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ ছিলো। এখনও রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি পৈশাচিকতার চিহ্ন বহন করে আছে। শুধু বিটিভি কেন? গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বাংলাদেশ জুড়ে টার্গেট নাশকতা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে লুট হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। মেট্রোরেল আমাদের গর্বের পরিবহণ ব্যবস্থা। অল্প সময়ের মধ্যে এই গণ পরিবহনটি আমাদের সবার প্রিয় বাহনে পরিণত হয়েছে। এবার হায়নাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলো মেট্রোরেল। তিন দফায় হামলা হয়েছে মেট্রোরেলের উপর। মেট্রোরেলের উপর কোন সাধারণ নাগরিক হামলা করতে পারে, আমি বিশ্বাস করি না। একমাত্র যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যাদের জন অসহ্য তারাই এমন ন্যাক্কারজনক কাণ্ড করতে পারে। কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সেতু ভবনে, দুর্যোগ ভবনে কিংবা অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় এভাবে হামলা করতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বাংলাদেশে যা হয়েছে তা কোন আন্দোলন না, শ্রেফ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই আন্দোলন কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে কোনো ছাত্র আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন। উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। নব্য রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির নতুন প্রজন্ম এই অপকর্ম করেছে। ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিতরা তাদের প্রতিশোধ গ্রহণের মিশনে নেমেছিলো। এজন্যই তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে। বাংলাদেশ এরকম ভয়ংকর সময়ের মুখোমুখি আগে কখনও হয়নি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন, কোভিড হাসপাতালের মতো জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়নি। যেসব স্থাপনা স্বৈরাচার বা তার দোসরদের নিয়ন্ত্রিত কেবল সেই সব প্রতিষ্ঠানের উপর হামরা চালানো হয়েছিল। কর্নেল মালেক, ব্যারিস্টার হাসনাত, আদেলের মতো স্বৈরাচারের দোসরদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছিল ৯০ এর আন্দোলনে। এটি ছিলো সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনেও ভাঙ্গচুর, অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ঐসব কোন ঘটনার সঙ্গেই গত ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের তাণ্ডবের তুলনা করা যায় না। এই দুই দিন হয়েছে রীতিমতো গুপ্ত হামলা, পরিকল্পিত নাশকতা এবং উন্নয়নের চিহ্ন মুছে ফেলার বীভৎস জিঘাংসা। এটি ছিলো ৭১ এর পরাজিত শক্তির প্রতিহিংসার প্রকাশ।
কোটা আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা ছিলো যৌক্তিক এবং শান্তিপূর্ণ। শুরুতেই সরকার এই আন্দোলনকে সমঝোতার পথে নিয়ে যেতে পারতো। সরকারের একটি মহলের অতিরিক্ত অহংকার, কোন কিছুকে পাত্তা না দেয়ার মানসিকতার কারণে এই আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে সব কোটা বিলোপ করে। দ্রুত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ঐ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সরকারের ঐ সিদ্ধান্ত ছিলো সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা ঐ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। গত ৬ বছর কোটা ছাড়াই সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এনিয়ে কোন আপত্তি ওঠেনি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা পরিপত্র বাতিল এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনঃবহাল চেয়ে রিট পিটিশন দাখিল করে। আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের তখনই উচিত ছিলো এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। এই রিটের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি লড়াই করা। কিন্তু এনিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ছিলো নির্লিপ্ত। কোটা নিয়ে সরকারি পরিপত্রটি যখন হাইকোর্ট বাতিল করে দেয় তখন শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। এসময়ও ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হয় আইন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি যখন আপিল বিভাগে আসে তখন সঙ্গত কারণেই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের ভিত্তিতে লিভ টু আপিল করার নির্দেশনা দেয় আপিল বিভাগ। এসময় যদি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করতো, তাহলে হাইকোর্টের রায় স্থিতাবস্থায় নেয়ার জন্য আপিল বিভাগকে অনুরোধ জানাতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। আপিল বিভাগ যখন হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে তখন আন্দোলন গতি পায়। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করায় একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ খুব দরকার ছিলো। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভরপুর আওয়ামী লীগ আসন্ন ধেয়ে আসা সংকটের গুরুত্ব অনুভব করতে পারেনি। এসময় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারকে একটি সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর ঐ আগাম সতর্কবার্তা আমলে নেয়নি ক্ষমতাসীন সরকার। এই কোটা আন্দোলন যে বহুদূর গড়াতে পারে সে সম্পর্কেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছিলো। কোটা আন্দোলনের পরিধি যখন বিস্তৃত হতে শুর করে তখন মাঠে নামে বিএনপি-জামায়াত। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ছাত্রদল এবং ছাত্র শিবির। ঢাকায় গোপনে জড়ো করা হয় হাজার হাজার কর্মী। উত্তপ্ত কোটা আন্দোলনে ভড় করে সরকার পতন আন্দোলন শুরু করে বিরোধী দল।
কোটা আন্দোলনের উৎপত্তি এবং বিকাশ গবেষণা করলে দেখা যায় এই আন্দোলনটি আসলে স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের গর্ভজাত। ১৯৯১ সালে ছাত্র শিবির ‘ছাত্র সমাজের দাবি-দাওয়া’ শীর্ষক ২০ দফা দাবি নামায় কোটা সংস্কারের কথা প্রথম উল্লেখ করে। ২০০১ সালে ছাত্র শিবির সব কোটা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং মুক্তিযুদ্ধের কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারক লিপি প্রদান করে। শুরু থেকেই কর্মী হিসেবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চালিকা শক্তি ছিলো শিবির। আর ছাত্র শিবিরের মাধ্যমেই এই আন্দোলনের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পরে সারা দেশে। ১৪ জুলাই গণ ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য বিকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয় ছাত্র শিবির। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করা। কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে সরকার পতনের আন্দোলনকে বেগবান করার এক নীল নকশা বেশ আগে থেকেই বাস্তবায়নের চেষ্টায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত। ১৪ জুলাই রাত থেকে সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেও স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্তবীজ ধ্বংস করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এরা সংগঠিত হয়েছে। সরকারকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এতো বড় সংকটে আগে পরেনি।
স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৮ ও ১৯ জুলাই আরেকবার জানিয়ে দিলো তারা উন্নয়ন বিরোধী। বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায় তারা। আর একারণেই সামনের দিনগুলোতে মুক্ত বুদ্ধি ও প্রগতির চর্চার বিকাশ ঘটাতে হবে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে। একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় সংকটে পরতে হতে পারে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটি। বাংলাদেশ মুখোমুখি হতে পারে এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে।
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
সহিংসতা হায়না রুখতে হবে বিটিভিতে আগুন জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাস
মন্তব্য করুন
অবশেষে
কারফিউ জারি করা হলো।
আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামানো হলো
সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার ঢাকা
সহ সারাদেশে যে তান্ডব হয়েছে
তার প্রেক্ষিতে সরকারের সামনে কোন বিকল্প ছিলো
না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বাধীনতা
বিরোধী জামায়াত-শিবির এই আন্দোলন
ছিনতাই করে। যেভাবে সরকারী
স্থাপনা গুলো আক্রমণ করা
হয়েছে, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তা
মধ্য যুগীয় পৈশাচিকতা। যারা বাংলাদেশের অস্তীত্ব
বিশ্বাস করেনা, এদেশের অগ্রযাত্রায় যারা ঈর্ষান্বিত, এটি
তাদের পক্ষেই করা সম্ভব। এটা
কোন আন্দোলন না রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ। এটি কঠোর ভাবে
দমন করতেই হবে। কিন্তু পরিস্থিতি
এমনটি হবার কথা ছিলো
না। কেন এমন সংকটময়
পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো?
কেন
টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ
এরকম একটি জটিল সংকটের
মুখোমুখি। বর্তমান পরিস্থিতি ২০১৩ সালে নির্দলীয়
নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের
আন্দোলন, ২০১৪ সালের আগুন
সন্ত্রাস অথবা গত বছরের
বিরোধীদলের এক দফা আন্দোলনের
চেয়েও ভয়াবহ। এমনকি-২০১৮ সালের কোটা
আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়েও
এবারের আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও অনেক বেশী।
বৃহস্পতিবার থেকে এটি আসলে
বাংলাদেশ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। মেট্রোরেলে হামলা,
এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে হামলা, বিটিভিতে আগুন ইত্যাদি সবই
৭১ এর বর্বরতার সাথে
তুলনীয়। সরকারি স্থপনা এবং উন্নয়নের স্মারক
অবকাঠামো গুলোতে আগুন লাগানো হয়েছে।
এসব কোন ঘটনার পেছনেই
শিক্ষার্থীরা ছিলো না। সন্ত্রাসী
ভাড়া করে দেশে একটি
অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এই
আন্দোলন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন
জেলা থেকে প্রায় ৫
লাখ শিবির ছাত্রদল, যুবদলের কর্মীরা এলো। সরকারের বিভিন্ন
সংস্থা কি করলো? এরকম
একটি পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তাই ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতাও
কম নয়। আওয়ামী লীগের
বোঝা উচিত ছিলো যেকোন
আন্দোলন খারাপ দিকে মোড় নিতে
লাগে এক মুহূর্তে। আওয়ামী
লীগ তার জন্মের পর
থেকে আজ পর্যন্ত রাজপথে
যত আন্দোলনে সফলতা অর্জন করেছে তার সবগুলোতে অগ্রভাগে
ছিলো শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু টানা ক্ষমতায় থাকার
ফলে অতি আত্ম বিশ্বাস,
অতি অহংকারের কারণে আওয়ামী লীগ সবকিছুকে তুচ্ছ
করেছে। সবকিছুকে উপেক্ষা করার এক সংস্কৃতি
তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীদের
মধ্যে। আওয়ামী লীগের এমন এক হাইব্রীড
প্রজন্ম তৈরি হয়েছে যারা
মিছিল করেনি, আন্দোলন করেনি, পুলিশের মার খায়নি তারা
পরিপাটি বাবু। এরা জনবিচ্ছিন্ন। রাজনীতি
মানে এদের কাছে নিজেদের
আখের গোছানো। সবচেয়ে
খারাপ যে প্রবণতাটি তৈরি
হয়েছে পুরো আওয়ামী লীগে
তাহলো শেখ হাসিনার দিকে
তাকিয়ে থাকা। তিনি সবকিছু করবেন
এমন একটি আশায় আওয়ামী
লীগের নেতারা যথেচ্ছাচার করেন। কেউ অনৈতিক সুবিধা
আদায় করেন, কেউ দুর্নীতি করেন,
কেউ লুটপাট করেন, কেউ নিজের আখের
গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। ইদানিং আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ
ভাবতে শুরু করে তারা
অক্ষয়, অবিনশ্বর। চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু এই আন্দোলন ক্ষমতাসীনদের
একটি কঠিন সংকেত দিলো।
এই আন্দোলনের ধাক্কায় আওয়ামী লীগ কি তার
ভগ্ন দশা দেখতে পেরেছে?
আওয়ামী লীগ কি সতর্ক
বার্তাটা বুঝতে পেরেছে?
কোটা
সংস্কার আন্দোলন থেকে আওয়ামী লীগ
যে সতর্ক বার্তা পেল তার মধ্যে
অন্যতম হলো দ্রুত সরকারকে
আমলা নির্ভরতা থেকে সরে আসতে
হবে। এই সংকটে আমলারা
ছিলেন নির্লিপ্ত, নিরাপদ দূরত্বে। হঠাৎ আমলা বাবুরা
কেতা দূরস্থ নিরপেক্ষ হয়ে গেছেন। আওয়ামী
লীগের চেয়ে বড় আওয়ামী
লীগ হয়ে ওঠা আমলারা
রাজনৈতিক সরকারের পাশে থাকেনি। কোন
সহযোগিতাও করেনি। আমলাদের সুবিধাবাদী চেহারা দেখা যাচ্ছে উৎকটভাবে।
সংকটে ভোল পাল্টাতে এদের
যে এক মুহূর্ত সময়
লাগেনি। শুধু আমলা কেন
আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শাসনামলে
সুবিধাভোগী অনেকেই ভোল পাল্টে ফেলেছেন
মুহূর্তেই। শুধু
বড় আমলারা নন জেলা উপজেলায়
ছোট বাচ্চা আমলারও অনেকে নিরপেক্ষ মুখোশ পরেছেন।
এক শিক্ষক দেখলাম ফেসবুকে বলেছেন, তিনি নাকি ছাত্রলীগের
কাউকে পাঠদান করাবেন না। ভালো কথা।
তার ঠিকুজী ঘাটতে গিয়ে দেখলাম, আওয়ামী
লীগ আমলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষিকের চৌদ্দ
গোষ্ঠী বিএনপি করে। দুর্নীতির মাধ্যমে
এভাবেই ‘রাজাকার’ আর বিএনপিকে লালন
করেছে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ। শো
বিজের যে সব তারকারা
মন্ত্রী এমপিদের গা ঘেঁষে সেলফি
তুলেছেন, তারা এখন ফেসবুকে
লম্বা স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। কোটা সংস্কারে বিপ্লব
দেখছেন। সরকারকে নসিহত দিচ্ছে। গত ১৫ বছরে
যেসব রাজাকারের বাচ্চা, সুবিধাবাদী মতলববাজরা সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এখন তারা জাতির
বিবেক বনে গেছেন। কোটা
আন্দোলন রাজাকার পুনঃউত্থানের আন্দোলনে রূপ নেয়। এতে
রাজাকারের বংশ এবং মনস্তাত্বিক
রাজাকাররাও যুক্ত হন। শিক্ষার্থীরা যে
অরাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা করেছিল, তা স্বাধীনতা বিরোধী
আন্দোলনে রূপ নেয়।
কোটা
নিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটিতেই শুরু
থেকে আমলাদের একটি বিতর্কিত ভূমিকা
ছিলো। ভুল পরামর্শ দিয়েছিলো।
বিশেষ করে ২০১৮ সালে
এক সাথে সব কোটা
বাতিল করে দেয়াটা ছিলো
সংবিধানের মৌলিক চেতনার পরিপন্থি। সেই সময় আমলারাই
সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘ মাথা ব্যাথায় মাথা
কেটে ফেলে’ সমস্যার সমাধানের জন্য। আর সেকারণেই সমস্ত
কোটা বাতিল হয়েছিলো। তখন আমলারা কেন
কমিশন গঠনের সুপারিশ করেনি? আমলাতান্ত্রিক পরামর্শে প্রস্তুতকৃত পরিপত্রটি নিয়ে রিট পিটিশনটি
ছিলো একটি যৌক্তিক আবেদন।
কারণ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা না করলেও এই
রিট পিটিশন হয়তো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নারীরা বা পিছিয়ে পরা
জনগোষ্ঠী করতেই পারতো। এখন শিক্ষার্থীরা সব
কোটা বাতিলের কথা বলছে না।
সংস্কারের দাবি করেছে। আমলারা
এভাবেই সরকারকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করছে, ভুল পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশেষ করে পেনশন স্কিম
নিয়ে সংকট আমলাদের সৃষ্টি।
এই সংকট আওয়ামী লীগকে
জানিয়ে দিলো সরকার পরিচালনায়
রাজনীতিবিদদের ড্রাইভিং সীটে বসতে হবে।
আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতায় হোঁচট খেতে হবে।
কোটা
সংস্কার আন্দোলনের থেকে আরেকটি যে
সতর্ক বার্তাটি হলো, ছাত্রলীগকে এখনই
থামাতে হবে। ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ি
নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিলো নানা
কথাবার্তা। ছাত্রলীগের সীমাহীন ঔদ্ধত্য বিভিন্ন জায়গায় তাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য ইত্যাদি
নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা।
বিভিন্ন স্থানে তাদের অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে বিস্তর চর্চা
হয়েছে। কিন্তু তারপরও ছাত্রলীগকে সরকার সামাল দেয়নি। আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ছাত্রলীগ।
এবার কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগের
ছেলেরা যেভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিটুনি খেয়েছে তা নজীরবিহীন। ২০০১
সালে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হল
দখল করে ছাত্রদলও ছাত্রলীগকে
এভাবে পেটানোর সাহস পায়নি। ছাত্রলীগ
তার ইতিহাসে এরকম লজ্জা জনক
অবস্থানে কখনো পড়েছে কিনা
আমার জানা নেই। আর
এটির কারণ হলো
ছাত্রলীগ সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক ধারণা। সহজ সরল ভাষায়
বললে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ছাত্রলীগ সম্বন্ধে একটি ঘৃণা তৈরি
হয়েছে। আর এই ঘৃণা
বোধ থেকেই শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে প্রতিহত করেছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে
দিয়েছে। এটি অন্যায্য, এটি
অন্যায়। বিভিন্ন ছাত্রলীগের নেতার সাথে যে বর্বরোচিত
আচরণ করা হয়েছে আমি
তার সমালোচনা করছি। কিন্তু এটাও সত্যি এটি
একদিনে তৈরি হয়নি। এই
ঘটনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যদি ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান করে, ছাত্রলীগকে ঢেলে
সাজানোর উদ্যোগ নেয় সেটি হবে
সবচেয়ে ভালো কাজ। এই
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ হয়তো একটি
নতুন পরিশুদ্ধ ছাত্রলীগের নবযাত্রা শুরু করতে পারবে।
এঘটনার আরেকটি দিক হলো ছাত্রলীগের
ভেতর অনুপ্রবেশকারী এবং হাইব্রিডরা। যারা
সুযোগ সন্ধানী, সুযোগ পেলেই যারা দল ত্যাগ
করে, মতলববাজি করে। আন্দোলনের মাঝপথে
অনেক ছাত্রলীগ পদত্যাগ করার ঘটনা নজিরবিহীন।
ছাত্রলীগের যে আদর্শের চর্চা
হয় না। এঘটনাগুলো তার
প্রমাণ। ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানোর বার্তা
দিলো এই সংকট।
কোটা
সংস্কার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর সাংগঠনিক অবস্থা ফুটে উঠেছে। আওয়ামী
লীগ যে পুলিশ এবং
প্রশাসন ছাড়া অক্ষম, রাজপথে
দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখে না কোটা
সংস্কার আন্দোলনে তা দগ্ধ ঘাঁ
এর মতো করে ফুটে
উঠেছে। আওয়ামী লীগের এরকম ভগ্ন দশা
আগে কখনো ছিলো কিনা
আমার জানা নেই। কোটা
আন্দোলনে যখন জামায়াত-শিবির-ছাত্রদল রাজপথে বেরিয়ে এসেছে তখন আওয়ামী লীগের
সুবিধাবাদী মতলববাজরা সটকে পড়েছে। কিছু
নেতা-কর্মী রাস্তায় গিয়ে ছাত্র শিবির
আর ছাত্র দলের হাতে মার
খেয়েছে আর কেউ কেউ
পালিয়ে গেছে। ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী
লীগের কিন্তু অযোগ্য, অর্থলোভী নেতা ছাড়া যে
আর কিছু নেই তা
প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকার রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করার মতো নেতা-কর্মীর সংকট এবার সংকটে
দৃশ্যমান। নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী
লীগে বিভক্তি ছিলো। টানা ক্ষমতায় থাকার
কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বীকার করেছেন যে, আওয়ামী লীগের
ভেতর কোন্দল থামেনি। নিজেরা নিজেরা কোন্দল করা আওয়ামী লীগের
যে একটি নিয়মিত ব্যাপার
হয়ে দাড়িয়েছে। এর ফলাফল কি
হতে পারে কোটা সংস্কার
আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের বেহাল দশা তার একটি
উদহারণ মাত্র। দলকে কোন্দল মুক্ত
করে ত্যাগী পরীক্ষিতদের রাজপথে লড়াই করতে পারে
এমন কর্মীদের সামনে না আনলে সামনে
দলটির সংকট আরো বাড়বে।
কোটা
সংস্কার আন্দোলনের আরেকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে।
বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে আওয়ামী
লীগ। ৭৫ বছর পার
করা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির পাশে কেউ নেই।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্ক নেই। যেসমস্ত টেলিভিশন,
সংবাদ পত্র, মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে চাটুকারিতায় মুখরিত হন তারাই সরকারের
বিরুদ্ধে সানাই বাজিয়েছে। শো বিজের সুন্দরীরা
হঠাৎ কোটার জন্য হাহাকার করছেন।
যেসমস্ত লেখক, বুদ্ধিজীবীরা এটা-সেটা পাওয়ার
আশায় সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেন-দরবার করেন
তারা নিরপেক্ষ হয়ে গেছেন। যেসমস্ত
আমলারা আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় আওয়ামী
লীগ হয়ে গিয়েছিলেন তারা
একেবারে নির্বাক, নিশ্চুপ হয়ে পাথরের মূর্তির
রূপ ধারণ করেছেন। নিরপেক্ষ
হয়ে ঘটনা যাচাই বাছাই
না করেই সরকারকে আসামীর
কাঠগড়ায় দাঢ় করিয়েছে। সবকিছু
মিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে
সবার অবস্থান ছিলো অনেকটাই গা
বাঁচিয়ে চলার মতো। পুলিশ,
প্রশাসন কেউই সরকারের জন্য
উজাড় করে দিয়ে দায়িত্ব
পালন করেনি। আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট সঙ্গীরা দূরে
থেকে তামাশা দেখছে। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে
১৪ দলের নেতাদের
নিয়ে বৈঠক করেন। তার
আগে অভিমান দূরে রেখে ১৪
দলের নেতাদের সক্রিয়
দেখা যায়নি। এতো একা কবে
ছিলো আওয়ামী লীগ? বন্ধুহীন আওয়ামী
লীগকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির ঐক্যে নেতৃত্ব দিতে হবে আওয়ামী
লীগকেই।
ছাত্র শিবির এই আন্দোলনের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলো। এই আন্দোলনটি আসলে ছাত্র শিবিরের গর্ভজাত একটি সন্তান । আর সেকারণেই কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বিরোধী দলকে যতোই অবজ্ঞা করা হোক, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হোক বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এখনো শক্তিশালী । যেকোন সময় তারা ডাল পালা মেলতে পারে। বাংলাদেশে ৭৫’র পর থেকে রাজাকারের যে রক্তবীজ রোপিত হয়েছে তা এখন মহীরুহের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পরেছে। এবং এদের প্রতিহত করার জন্যই যে সাংস্কৃতিক চেতনা এবং মনোজাগতিক উৎকর্ষতা অর্জন করানো দরকার ছিলো তা করতে পারেনি টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগে সংস্কৃতির চর্চা নেই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা মুখে বলে জনবিরক্তির কারণ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রস্ফুটিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অঙ্গনে যে মেধা ও মননে আবহ তৈরি করা দরকার সেটি করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে। হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন, মুক্ত চিন্তাকে বাঁধা দানের প্রবণতার ফলে ধর্মান্ধতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতাকে প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হয়েছে। আর একারণেই রাজাকারের বংশধরদের উত্থান ঘটেছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এখন সারাদেশে জাল বিস্তার করেছে। বিএনপিকে নিয়ে যে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য আওয়ামী লীগের নেতারা করেছে এই ঘটনায় তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন আওয়ামী লীগকে একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি এই সতর্ক বার্তা অনুধাবন করতে পারে তাহলেই তাদের মঙ্গল।
সৈয়দ
বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
১৭ জুলাই থেকে দেশে যা হয়েছে তা কোনো আন্দোলন না। এ ঘটনাকে এক কথায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমি মনে করি, এটি উন্নয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ধ্বংসস্তূপে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পিত সন্ত্রাস। কোনো শিক্ষার্থী তো নয়ই, ন্যূনতম বিবেকবান মানুষের পক্ষে এ ধরনের বীভৎসতা ঘটানো সম্ভব নয়। যারা এটা করেছে তাদের লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশকে ধ্বংস করা। প্রশ্ন হলো, কারা এটা করতে চায়? এটি কি শুধু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, জঙ্গি এবং বিএনপির নাশকতা? আমি অন্তত তা মনে করি না। বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্রশিবির, জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অবশ্যই এই জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু হুট করে তারা এত ক্ষমতাবান কীভাবে হলো? কোথায় এত টাকা-পয়সা, অস্ত্রশস্ত্র পেল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে নির্মোহভাবে। আর সে কারণেই এ আন্দোলনের শুরু থেকে এর গতি প্রবাহ এবং সময়কাল বিশ্লেষণ জরুরি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে কোটাবিরোধী প্রচারণার উৎসকাল নব্বই দশক। ’৯০-এ এরশাদের পতনের পর দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে। বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে সহযোগিতা করে জামায়াত। এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমণি গোলাম আযম প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করে। জামায়াত মজলিসে শূরার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী এবং ’৭১-এর নরঘাতক গোলাম আযমকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের আমির ঘোষণা করে। ওই মজলিসে শূরায় আরেকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’সহ অযৌক্তিক সব কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব নেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করে। এই ২০ দফার মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে মেধাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ৩২ বছর ‘কোটা সংস্কার’ নিয়ে কাজ করছে ছাত্রশিবির। ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জামায়াত যখন লণ্ডভণ্ড, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীরা আরও গভীরভাবে কাজ শুরু করে। বিশেষ করে, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ ছাত্রশিবির এবং জামায়াতকে নতুন করে পরিকল্পনা সাজানোর পথ দেখায়। ছাত্রশিবির তার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়। আধুনিক জীবনাচার, তরুণদের আগ্রহগুলো রপ্ত করানো হয়। দাড়ি, টুপি ছেড়ে আধুনিক বেশভূষায় অভ্যস্ত হয় শিবির। দ্রুতই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশে যেতে শুরু করে। মেধাবী, জনপ্রিয়, বন্ধুবৎসল তরুণদের মধ্যে কোটা নিয়ে অসাম্য তুলে ধরতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে কোটা সংস্কার শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার নিয়ে প্রথম ছাত্র বিস্ফোরণ হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত পদক্ষেপ নেন। আন্দোলন থামাতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। সুস্পষ্টভাবেই এ সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসময় আমলারা ‘মাথা ব্যথায় মাথা কেটে ফেলা’র সহজ সমাধান দিয়েছিল। আমলাতান্ত্রিক সমাধানের এটাই হলো সবচেয়ে বড় ব্যাধি। আমলারা একটি সমস্যা ধামাচাপা দিতে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি করেন। ২০১৮ সালে যদি কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী এবং এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি স্থায়ী সমাধান করা হতো তাহলে হয়তো বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। যাই হোক, ২০১৮ সালের ওই সরকারি পরিপত্রের পর কোটা আন্দোলন বন্ধ হয়। ছয় বছর দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ হয়েছে কোনো রকম কোটা ছাড়াই। বছর তিনেক পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন করা হয়। এই রিট পিটিশন এত দূর গড়ালো কেন? ওই রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস কি তখন এখনকার মতো অবস্থান নিয়েছিল? না নেয়নি। এমনকি, হাই কোর্টের রায়ের পরও আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল যদি দ্রুত আপিল বিভাগে গিয়ে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চাইতেন, তাহলেও আন্দোলন এত দূর গড়াতো না। ধাপে ধাপে ছিল উপেক্ষা এবং উদাসীনতা। সবাই যেন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হতে সহায়তা করেছেন। অথবা পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধিই করতে পারেননি। ২০১৮ সালের আন্দোলনের তীব্রতা বুঝতেই পারেননি ক্ষমতাসীন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। হাই কোর্টের রায়ের পরই কোটা আন্দোলন সংগঠিত হতে শুরু করে। বিক্ষিপ্তভাবে যখন আন্দোলন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়, তখনই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সুযোগ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কিছু নেতার দম্ভ, দায়িত্বহীনতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। টানা চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের কারও কারও মধ্যে কিছু জনবিচ্ছিন্নতার মারাত্মক ব্যাধি বাসা বেঁধেছে। সবকিছুকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, আত্মতুষ্টি, অহংকার দলের কিছু নেতাকে মোটামুটি ‘মানসিক প্রতিবন্ধীতে’ পরিণত করেছে। এসব নেতা মনে করেন, সবকিছু করবেন প্রধানমন্ত্রী। কিছু বাঁচাল নেতার কথাবার্তা জনবিরক্তি থেকে জনক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব নেতা মনে করেন তারা অমর, অবিনশ্বর। এরা আওয়ামী লীগ সংগঠনের যেমন বারোটা বাজিয়েছেন, তেমনি দেশকে ফেলেছেন সংকটে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, কোটা আন্দোলন যখন দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে তার আগেই প্রধানমন্ত্রী শুরু করেন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থা, অর্থপাচার এবং কিছু ব্যক্তির সীমাহীন দুর্নীতি এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের কারণে অর্থনৈতিক সংকট গভীর হতে থাকে। অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান একটি সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। এ সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তির লুটপাটের খবর বেরোতে থাকে গণমাধ্যমে। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের ‘আলাদিনের চেরাগ’ কাহিনি গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করে। সরকারের বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ হিসেবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন বেনজীর। এসব পদে থেকে তিনি রীতিমতো লুণ্ঠন করেছেন। আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিপুল সম্পদ জব্দ করে। কিন্তু সরকারের ভিতর থাকা বেনজীরের দুর্নীতির দোসরদের সহযোগিতায় বেনজীর দেশত্যাগ করেন। বেনজীরের পর তোলপাড় শুরু হয় এনবিআরের সদস্য মতিউরকে নিয়ে। ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার কাণ্ডে বেরিয়ে আসে মতিউরের রত্ন ভাণ্ডারের খবর। মতিউরের পরিবারের হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্য গোটা দেশে রীতিমতো ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। এরপর থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে নানা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কেচ্ছাকাহিনি। দুর্নীতি দমন কমিশন একের পর এক সম্পত্তি জব্দ শুরু করে। দুর্নীতিবাজদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকে। কিন্তু বেনজীরের মতো মতিউরও ‘অদৃশ্য মানব’ হয়ে যান। দেশ ছাড়েন মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী সবাইকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে আছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধে সরকারের মধ্যেই যেন দুটি পক্ষ। এক পক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আরেক পক্ষ দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে তাদের পালাতে সহযোগিতা করে। দুর্নীতি নিয়ে সরকারের ভিতর চলছে দ্বৈতদ্বন্দ্ব। এর মধ্যেই চীন থেকে দেশে ফিরে দুর্নীতি নিয়ে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি’র ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। গত ১৪ জুলাই চীন সফরের ওপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এ সময় শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের জানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। বলেন, ‘আমার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক।’ পরে জানা যায়, ওই পিয়ন হলেন জাহাঙ্গীর। নোয়াখালীর চাটখিল থেকে হতদরিদ্র অবস্থায় ঢাকায় আসেন। শেখ হাসিনার ফাই ফরমায়েশ খাটতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জাহাঙ্গীর হয়ে যান প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী, এমপি এমনকি আমলারাও জাহাঙ্গীরকে সমীহ করতেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানার পর গত বছরই তাকে বাদ দেন। নিষিদ্ধ করেন গণভবনে। কিন্তু তারপরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে তাঁর পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার তথ্য জাতিকে জানান, যখন পিএসসির এক গাড়িচালকের শত কোটি টাকার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তুলকালাম চলছে। বছরের পর বছর ওই ড্রাইভার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আবেদ আলী এবং জাহাঙ্গীর যেন দুর্নীতির বৃত্ত পূরণ করেন। প্রমাণ হয়ে যায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ড্রাইভার-পিয়ন পর্যন্ত দুর্নীতির ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরিস্থিতি এমন যে, সরকারের মাথাটি কেবল ঠিক আছে। যাকে দুর্নীতি স্পর্শ করেনি। আর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতির ক্যান্সার। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন যে, ‘এসব দুর্নীতিবাজকে গ্রেপ্তার করলে সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয় না। আমি এ ধরনের দুর্নীতির তথ্য জাতিকে জানাতে ভয় পাই না।’ আমার বিবেচনায় ওই সংবাদ সম্মেলনে এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য। এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট একটি বার্তা দিয়েছিলেন। এর ফলে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা এবং সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা সহযোগীরা বুঝেছে পরিস্থিতি ভালো নয়। বাঁচার উপায় হিসেবে কোটা আন্দোলন এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের ওপর তারা ভর করে।
প্রধানমন্ত্রীকে ওই (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে কোটা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের চেয়ে চাটুকারিতাই বেশি হয়। অনেকে সাংবাদিকতা ভুলে আওয়ামী লীগের কর্মীর মতো মন্তব্য করেন, পরামর্শ দেন। ‘কোটা’ নিয়ে যে দুটি প্রশ্ন করা হয়েছিল, তা ছিল বর্ণনাধর্মী, মন্তব্যসূচক। রাজাকারের নাতি-পুতি আর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হলে কাকে চাকরি দেবেন?-এটা কোনো প্রশ্ন হতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার এখতিয়ার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের। এরকম মতলবী প্রশ্নেরও বিচক্ষণ উত্তর প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতার সন্তান। কাজেই তিনি তো বলবেনই মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিই এক্ষেত্রে চাকরি পাবে। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা কখনো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলেননি। কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত হয়ে গেল। তিলকে তাল বানানো হলো। রাতের মধ্যে অদৃশ্য ইশারায় মিছিল বের করল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো। এই আন্দোলন যেন ‘রিমোট কন্ট্রোল’ চালিত আন্দোলন। এক ইশারায় নাচন শুরু হলো সর্বত্র। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ক্যাম্পাসগুলোতে ঢুকে পড়লো ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। তাদের লক্ষ্য কোটা সংস্কার নয়, আবাসিক হল দখল। ছাত্রলীগের ‘সোনার ছেলেরা’ বুঝতেই পারেনি কী হচ্ছে। বেধড়ক মার খেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কহীন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এরপর সারা দেশে শুরু হলো তাণ্ডব।
গত রবিবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। জাতীয় সংকট নিরসনে আপিল বিভাগের এই অসাধারণ এবং সাহসী ভূমিকা বাংলাদেশের আইনের শাসনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে আপিল বিভাগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংকটের সমাধান করেছে। কোটা সংস্কার নিয়ে যারা আন্দোলন করেছেন তাদের এ রায়ের বিরোধিতা করার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু আমার মনে হয় না, এত দ্রুত এই আন্দোলন থেমে যাবে। সংকট থেকে সরকার হয়তো বেরিয়ে আসবে, তবে সময় লাগবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সরকারের দুর্বলতাগুলো উন্মোচিত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অনেকে সুযোগ নেবে। নানা ইস্যুতে সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করবে। ভাঙা বেড়ার সন্ধান পেলে যেমন ‘শিয়াল’ বারবার বাড়িতে হানা দেয়, তেমনি দুর্বৃত্তরা সুযোগ খুঁজবে।
প্রশ্ন হলো, সরকার তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের আগে খুঁজে বের করতে হবে, এই বিপুল সন্ত্রাসী ও সহিংসতার মূল কারিগর কারা? নেপথ্যের ‘গডফাদার’ কে? এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যের নীলনকশা কার? এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল কোটা আন্দোলন থেকেই। কিন্তু মেট্রোরেলে হামলা, বিটিভি ভবনে হামলা, সেতু ভবন, দুর্যোগ ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার চিত্রনাট্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের রচিত নয়। এ ধরনের তৎপরতা চালানোর জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ এবং পেশাদারিত্ব লাগে। কাজেই ১৮ থেকে ২০ জুলাই সারা দেশে যে তাণ্ডব হয়েছে তা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়। এটা পেশাদার সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত অপকর্ম।
আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছে। বিএনপির একাধিক শীর্ষনেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব ভাঙচুরের সঙ্গে গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। বিএনপি এবং জামায়াতের কয়েক লাখ কর্মী কোটা আন্দোলনের ফায়দা লুটতে ঢাকায় ঢুকে ছিল। তারা আন্দোলন বেগবান করেছে। সহিংসতার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। গুজব ছড়িয়েছে। পুলিশের ওপর ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা চড়াও হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এ পরিকল্পনা ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের পক্ষে প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। নাশকতা পরিচালিত হয়েছে প্রশিক্ষিত কমাণ্ডের মাধ্যমে। এমন এক বা একাধিক ব্যক্তি এ সন্ত্রাসী পরিকল্পনায় জড়িত যিনি পুলিশের দুর্বলতা জানেন, পুলিশের কৌশল সম্পর্কে অবহিত। ঢাকা শহরের স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলো তার নখদর্পণে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে যিনি প্রচুর জ্ঞান রাখেন। সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজগুলো খুঁটিয়ে দেখলে প্রমাণ মিলবে অনেক কিছুরই। যেমন বিটিভিতে যখন আক্রমণ হয়েছে তখন দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে লড়াই করছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং ভাড়াটে বাহিনী। এদের মধ্যে থেকে প্রশিক্ষিত কিছু তরুণ পুলিশের ফাঁক গলে বিটিভিতে ঢুকে পড়ে এবং হামলা চালায়। একই ঘটনা লক্ষ্য করেছি সেতু ভবন এবং দুর্যোগ ভবনেও। এরা কারা? এখানেই আমি এই নারকীয় তাণ্ডবের সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাই। এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত দুর্নীতিবাজ সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। কিন্তু দেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। তার সাঙ্গপাঙ্গ আছে সর্বত্র। বেনজীর এক সময় ঢাকার পুলিশ কমিশনার ছিলেন। র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন, পুলিশ প্রধান ছিলেন। পুলিশ বাহিনীর ভিতর তার নিজস্ব লোকজন এখনো আছে। তার চেয়েও বড় কথা তিনি পুলিশের দুর্বলতা জানেন, জানেন কীভাবে তাদের চাপে ফেলা যায়। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে জঙ্গি দমন করতে গিয়ে তিনি অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। অনেককে বাঁচিয়েছেন। কাউকে কাউকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই নেটওয়ার্ক তার অজানা নয়। সরকারকে উৎখাত করতে পারলে তার ‘দুর্নীতি’ নিয়ে চর্চা হবে না। তিনি নিরাপদ হয়ে যাবেন। এ ভাবনা থেকে এ আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা কি সরকার উড়িয়ে দিতে পারবে? বেনজীর আহমেদের যেসব ঘটনা ও অপকর্মের কাহিনি সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে তাতে নিঃসন্দেহে তাকে ‘গডফাদার’ বলা যায়। এ নারকীয়তার গডফাদার বেনজীরসহ দুর্নীতিবাজরা নয় তা কে হলফ করে বলতে পারবে?
এ তাণ্ডবে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এত টাকা খরচ করবে তা আমি বিশ্বাস করি না। এরকম অর্থ খরচ করতে পারলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই তারা করত। এ রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসে এ সময় আলোচিত দুর্নীতিবাজ বেনজীর, মতি, জাহাঙ্গীরের বিনিয়োগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
নরসিংদী কারাগারে হামলা হয়েছে। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান কে? প্রত্যেকটি ঘটনার যোগসূত্র খুঁজতে হবে, সমীকরণ মেলাতে হবে। শুধু ‘বিএনপি-জামায়াতের কাজ’ বলে সকাল-সন্ধ্যা কাকের মতো চিৎকার করলে আসল শত্রুকে চিহ্নিত করা যাবে না। ভবিষ্যতে আবার সরকার উৎখাতের চেষ্টা হবে আরও ভয়ংকরভাবে। তাই এখনই সাবধান। আসল শত্রু চিহ্নিত করতে হবে সবার আগে।
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়ে সারা দেশে যে তাণ্ডব হয়েছে তা অবিশ্বাস্য, অনভিপ্রেত এবং দুর্ভাগ্যজনক। এই তাণ্ডবকে একমাত্র একাত্তরের নৃশংসতার সাথেই তুলনা করা যায়। বেছে বেছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন স্মারক চিহ্ন। বিটিভি, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো নির্মাণগুলোতে বেছে বেছে হামলা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানিয়েছেন যে, ‘যারা নাশকতার সাথে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন যে, তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে এবং আইনের আওতায় নেয়া হবে। প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিরাও একই রকম বক্তব্য দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন আমার পরিচয়। আমি মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে এই টেলিভিশনে আমি নিউজ রিপোর্টিং শুরু করি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার ‘পরিপ্রেক্ষিত’ অনুষ্ঠান চালু হয়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনধর্মী এই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবার দুই গুগ পরেও এখনও মানুষ ঐ অনুষ্ঠানকে মনে রেখেছে। আমার সাংবাদিকতা জীবনে পূর্ণতার নাম ‘পরিপ্রেক্ষিত’। পরিপ্রেক্ষিত আমাকে তারকা খ্যাতি দিয়েছে। একারণেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছে আমি সব সময় ঋণী। বিটিভি আমার আবেগের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা, আমার সত্তার অংশ। সেই বিটিভি যখন পুড়ছিল তখন আমি আবেগ সামাল দিতে পারিনি। ৭১ এর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী, রাজাকারাও বিটিভিতে আগুন দেয়নি। প্রায় ২৫ ঘণ্টা বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ ছিলো। এখনও রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি পৈশাচিকতার চিহ্ন বহন করে আছে। শুধু বিটিভি কেন? গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বাংলাদেশ জুড়ে টার্গেট নাশকতা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে লুট হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। মেট্রোরেল আমাদের গর্বের পরিবহণ ব্যবস্থা। অল্প সময়ের মধ্যে এই গণ পরিবহনটি আমাদের সবার প্রিয় বাহনে পরিণত হয়েছে। এবার হায়নাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলো মেট্রোরেল। তিন দফায় হামলা হয়েছে মেট্রোরেলের উপর। মেট্রোরেলের উপর কোন সাধারণ নাগরিক হামলা করতে পারে, আমি বিশ্বাস করি না। একমাত্র যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যাদের জন অসহ্য তারাই এমন ন্যাক্কারজনক কাণ্ড করতে পারে। কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সেতু ভবনে, দুর্যোগ ভবনে কিংবা অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় এভাবে হামলা করতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বাংলাদেশে যা হয়েছে তা কোন আন্দোলন না, শ্রেফ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই আন্দোলন কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে কোনো ছাত্র আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন। উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। নব্য রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির নতুন প্রজন্ম এই অপকর্ম করেছে। ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিতরা তাদের প্রতিশোধ গ্রহণের মিশনে নেমেছিলো। এজন্যই তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে। বাংলাদেশ এরকম ভয়ংকর সময়ের মুখোমুখি আগে কখনও হয়নি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন, কোভিড হাসপাতালের মতো জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়নি। যেসব স্থাপনা স্বৈরাচার বা তার দোসরদের নিয়ন্ত্রিত কেবল সেই সব প্রতিষ্ঠানের উপর হামরা চালানো হয়েছিল। কর্নেল মালেক, ব্যারিস্টার হাসনাত, আদেলের মতো স্বৈরাচারের দোসরদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছিল ৯০ এর আন্দোলনে। এটি ছিলো সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনেও ভাঙ্গচুর, অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ঐসব কোন ঘটনার সঙ্গেই গত ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের তাণ্ডবের তুলনা করা যায় না। এই দুই দিন হয়েছে রীতিমতো গুপ্ত হামলা, পরিকল্পিত নাশকতা এবং উন্নয়নের চিহ্ন মুছে ফেলার বীভৎস জিঘাংসা। এটি ছিলো ৭১ এর পরাজিত শক্তির প্রতিহিংসার প্রকাশ।
অবশেষে কারফিউ জারি করা হলো। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামানো হলো সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার ঢাকা সহ সারাদেশে যে তান্ডব হয়েছে তার প্রেক্ষিতে সরকারের সামনে কোন বিকল্প ছিলো না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির এই আন্দোলন ছিনতাই করে। যেভাবে সরকারী স্থাপনা গুলো আক্রমণ করা হয়েছে, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তা মধ্য যুগীয় পৈশাচিকতা। যারা বাংলাদেশের অস্তীত্ব বিশ্বাস করেনা, এদেশের অগ্রযাত্রায় যারা ঈর্ষান্বিত, এটি তাদের পক্ষেই করা সম্ভব। এটা কোন আন্দোলন না রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এটি কঠোর ভাবে দমন করতেই হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এমনটি হবার কথা ছিলো না। কেন এমন সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো?
১৭ জুলাই থেকে দেশে যা হয়েছে তা কোনো আন্দোলন না। এ ঘটনাকে এক কথায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমি মনে করি, এটি উন্নয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ধ্বংসস্তূপে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পিত সন্ত্রাস। কোনো শিক্ষার্থী তো নয়ই, ন্যূনতম বিবেকবান মানুষের পক্ষে এ ধরনের বীভৎসতা ঘটানো সম্ভব নয়। যারা এটা করেছে তাদের লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশকে ধ্বংস করা। প্রশ্ন হলো, কারা এটা করতে চায়? এটি কি শুধু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, জঙ্গি এবং বিএনপির নাশকতা? আমি অন্তত তা মনে করি না। বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্রশিবির, জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অবশ্যই এই জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু হুট করে তারা এত ক্ষমতাবান কীভাবে হলো? কোথায় এত টাকা-পয়সা, অস্ত্রশস্ত্র পেল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে নির্মোহভাবে। আর সে কারণেই এ আন্দোলনের শুরু থেকে এর গতি প্রবাহ এবং সময়কাল বিশ্লেষণ জরুরি।