এডিটর’স মাইন্ড

সব দোষ সরকারের!

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাত ৯টার দিকে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেখলাম গুলির মতো মেসেজ। একটা বই পড়ছিলাম। মেসেজের টুংটাং শব্দে নজর দিলাম। কী এমন হলো যে, সবাই সব ছেড়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিতে মরিয়া হয়ে গেল। বই বন্ধ করে, ফোনে চোখ রাখলাম। দেখি ফেসবুক বন্ধ নিয়ে রীতিমতো আর্তনাদ। সরকার ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে, ফেসবুকে ঢোকা যাচ্ছে না, এ নিয়ে রীতিমতো হাহাকার। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, সরকার কেন ফেসবুক বন্ধ করবে? দেশে কী এমন পরিস্থিতি হলো যে ফেসবুক বন্ধ করতে হবে? টেলিভিশন অন করলাম। ওমা, দেখি ‘মেটা’র সার্ভার ডাউন হওয়র কারণে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রাম সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ‘মেটা’কে দোষ দেবে কে? সব দোষ সরকারের।

আকারে ইঙ্গিতে কেউ কেউ বোঝাতে চাইল সরকারই ‘ফেসবুক’ বন্ধ করে দিয়েছে। এক বিশাল বুদ্ধিজীবী যেন সব জানেন। কী অবলীলায় বেইলি রোডের দুর্ঘটনার সঙ্গে ফেসবুক বন্ধের ঘটনা মেলালেন। তার কল্পনা শক্তিতে আমি মুগ্ধ। রাতের মধ্যেই সত্য জানা গেল, ফেসবুক বন্ধে সরকারের কোনো হাত ছিল না। এটা বিশ্বব্যাপী একটা প্রযুক্তি বিভ্রাট। কিন্তু এই ছোট্ট একটা ঘটনা অনেক কিছু প্রমাণ করে দিল। বাংলাদেশের মতো জনসংবেদনশীল দেশগুলোতে নাগরিকদের সঙ্গে সরকারের এক অবিশ্বাসের আলো-আঁধারি খেলা চলে। নাগরিকরা তাদের যে কোনো সমস্যার জন্য সরকারকে দায়ী করে। যে কোনো ‘মুশকিল’ সরকারই ‘আসান’ করে দেবে, এমন প্রত্যাশা করে। কারণ এ দেশগুলোতে সরকার অনেক ক্ষমতাবান। তাদের ব্যাপ্তি সর্বত্র বিরাজমান।

হাসপাতাল সেবা থেকে ব্যবসা, বিয়ে থেকে মৃত্যু, সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ দেশে ব্যবসা করতে, টেন্ডার পেতে, চাকরি এবং পদোন্নতির জন্য ক্ষমতাবানদের সুনজরে থাকতে হয়। সরকারি দল মানেই ক্ষমতাবান। জনতুষ্টির আশায় সরকারই জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতির মস্ত মস্ত বেলুন ওড়ায়, যা পারবে না, তাও করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। নির্বাচনে জিততে দেশের জনগণকে দুধে-ভাতে রাখার অঙ্গীকার করে। সরকার গঠন করে, মন্ত্রী, এমপি হয়ে রাজনীতিবিদরা যখন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে না, তখন জনগণ বিশ্বাস হারায়। এভাবেই রাজনীতির প্রতি মানুষ অনাগ্রহী হয়। সাধারণ মানুষ তাদের সব ভোগান্তির জন্য সরকারকেই দায়ী করে। বাংলাদেশে বিষয়টি আরও জটিল এবং স্পর্শকাতর। এখানে একশ্রেণির মানুষ আছেন যারা মনে করেন, তাদের জীবনে সবকিছু ঠিকঠাক করে দেওয়ার দায়িত্ব এককভাবে সরকারের। একজন নাগরিক চান তার সন্তান সেরা স্কুলে পড়বে। যদি দেশে সেরা স্কুলে তার সন্তান ভর্তি হতে না পারে, তাহলে ‘সরকার দায়ী’।

একজন অভিভাবক তার সন্তানের জিপিএ ৫ নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। এজন্য সব কোচিং সেন্টারে নিয়ে যান প্রিয় সন্তানকে, এসব কোচিং সেন্টারে যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঘটলে দোষ সরকারের। সব অভিভাবক কোচিং ব্যবসায়ের সমালোচনা করেন। আবার কোচিং বন্ধ করলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে যান। বলেন, সরকার কি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করবে? শিক্ষায় সৃজনশীলতা নেই বলে যারা হতাশা প্রকাশ করেন, তারাই আবার সৃজনশীল শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা গুজব ছড়ান। পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হলে অধিকাংশ অভিভাবক বিশ্বাস করেন, সরকারের গাফিলতির জন্যই তার সন্তানের শিক্ষাজীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। একজন মানুষ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সর্বোচ্চ সেবা চান। কিন্তু এজন্য পয়সা খরচ করতে রাজি নন।

সরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ সেবা না পেলে স্রেফ সরকারই দায়ী। এরকম ঘটনা প্রতিটি ক্ষেত্রে। সম্প্রতি বেইলি রোডে আগুন এবং তার প্রেক্ষাপটে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের কথাই ধরা যাক। বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পর সরকারকে তুলাধুনা করার লোকের অভাব হলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা। টকশো-বাগীশ থেকে শুরু করে বেকার, সবাই সরকারকে প্রায় খেয়ে ফেলে অবস্থা। সরকারের সমালোচনা করে রীতিমতো চামড়া ছিলে লবণ লাগানো হলো। সরকারের দোষ কী?Ñএকটু বোঝার চেষ্টা করলাম। অফিসের আড্ডায়, টকশোতে, সংবাদপত্রের পাতায় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এরকম অবৈধভাবে যেখানে সেখানে রেস্টুরেন্ট চলে কীভাবে? অনুমোদনবিহীনভাবে, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দোকান, শপিং মল হয় কীভাবে? ফায়ার ব্রিগেড কী করে, রাজউক তো দুর্নীতিতে সেরা, সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দেয় কীভাবে—ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। একজন টকশোতে বললেন, আমরা যারা ঢাকায় বাস করছি তারা যেন এক জ্বলন্ত উনুনে বসে আছি। এটা চলতে দেওয়া যায় না। একজন বললেন সরকার ব্যর্থ। অবিলম্বে সরকারকে কঠোর হতে হবে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ, শপিং মল, ভবন বন্ধ করে দিতে হবে।

একজন বললেন, সরকারের লোকজনই এসব রেস্তোরাঁর মালিক, তাই সরকার এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। এত তীব্র সমালোচনা, উপদেশ আর পরামর্শের পর কে চুপচাপ বসে থাকে! সরকারের সব সংস্থা, যাদের দায়িত্ব এসব অনিয়ম তদারকি করা, তারা জেগে উঠল। রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার ব্রিগেড নানা সংস্থা ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো অভিযান। অভিযানে বহু রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হলো। কারও ফায়ার ব্রিগেডের অনুমোদন নেই, কারও রাজউকের নকশার অনুমোদন নেই, কেউ সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স না নিয়েই ব্যবসা করছে। কিছু কিছু অভিযানে দেখা গেল রেস্তোরাঁগুলো এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে, আরেকটি বেইলি রোড ট্র্যাজেডি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি ভাবলাম দেরিতে হলেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার এ উদ্যোগ টুপিখোলা অভিনন্দন পাবে। জনগণ খুশি হবে। সমালোচকরা সরকারকে বাহবা দেবে। কোথায় কী, অভিযান শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোনা গেল আর্তনাদ। আবার তীব্র সমালোচনা শুরু হলো সরকারের বিরুদ্ধে।

এবার সরকারের অপরাধ কী বোঝার চেষ্টা করলাম। একজন বললেন, রোজার আগে এভাবে অভিযান তো রেস্তোরাঁ ব্যবসার সর্বনাশ করবে। রেস্টুরেন্ট মালিকরা সংবাদ সম্মেলন করে বললেন, ‘এই ব্যবসা বন্ধ করে দোকানের চাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে আসব।’ একটি টেলিভিশনে সংবাদ শিরোনামে বলা হলো ‘হ-য-ব-র-ল অভিযান’। কেউ কেউ বলছে, এসব অভিযান করে সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হলো। কেউ বলল, অভিযানের নামে চাঁদাবাজি চলছে। আমি হতবাক। সরকার তাহলে করবে কী? অভিযান না করলে সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় আর অভিযান করলে দেশ ধ্বংস হয়ে যায়! সব দোষ সরকারের। এই অভিযান তো একটি উদহারণ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরকম অবস্থা।

কিছুদিন ধরে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। বিভিন্ন রাস্তা পরীক্ষার্থীদের গাড়িতে সয়লাব। রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে। তীব্র যানজট। আপনি বলবেন, ভাই রাস্তার ওপর এভাবে গাড়ি পার্ক করে রেখেছেন, সাধারণ মানুষ তো কষ্ট পাচ্ছে যানজটে। উত্তর আসবে, ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে, গাড়ি রাস্তায় রাখব না তো কি সরকারের মাথায় রাখব? স্কুলের সামনে সরকার পার্কিং রাখেনি কেন? কী তাজ্জব কথা? এর মধ্যে সরকার এলো কোথা থেকে? যে ভদ্রলোক তিন ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি রেখে তীব্র যানজট সৃষ্টি করলেন, তিনিই পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ফেরার সময় যানজটে নাকাল হয়ে, সরকারকে গালি দেবেন। বলবেন, কীসব বানাইছে এলিভেটেড এক্সপ্রেস, মেট্রোরেল খালি পয়সা চুরি, দুর্নীতি। যানজট তো এক ফোঁটাও কমেনি। অথচ তার জন্য যে এ রাস্তাটাই যানজট তা তাকে কে স্মরণ করিয়ে দেবে। আপনি যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করবেন, পুলিশ এসে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করলেই সর্বনাশ। সরকারের সমালোচনায় মুখর হবেন। বলবেন আপনি নির্যাতিত। যানজট নিরসনে আপনার কোনো দায়িত্ব নেই। আপনি ট্রাফিক আইন মানবেন না, কিন্তু সরকারকে ম্যাজিক করে শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে হবে।

আপনি সরকারের রাজস্ব নীতির সমালোচনা করবেন। সরকার ঋণ নিয়ে দেশকে দেউলিয়া করে ফেলল বলে হাহাকার করবেন। আবার নিজে আয়কর ফাঁকি দেবেন, ভ্যাট ফাঁকি দেবেন। সরকারের পাওনা ট্যাক্স দিতে গড়িমসি করবেন। ট্যাক্স বাড়িয়ে সরকার জনগণকে জুলুম করছে বলে অভিযোগ করবেন। সব দোষ সরকারের। আপনি উন্নয়ন চান, কিন্তু ট্যাক্স দিতে রাজি নন। আপনি আইনের শাসন, ন্যায়বিচারের কথা বলবেন। অভিযোগ করবেন, আইন সবার জন্য সমান নয়। ওপরতলার মানুষরা আইনের ঊর্ধ্বে—এমন কথা বলে সরকারের সমালোচনা করবেন। আবার ড. ইউনূসের মতো ওপরতলার মানুষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের তদন্ত হলে আপনি হৈহৈ করে উঠবেন। বলবেন, সরকার কি পাগল হয়ে গেল? ড. ইউনূসের মতো লোককে আদালতপাড়ায় চরকির মতো ঘোরাচ্ছে। এ দেশে গুণীদের মান-ইজ্জত বলে কিছু থাকল না, এরকম বক্তব্য রেখে আপনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। সব দোষ সরকারের। তাহলে ড. ইউনূস, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?

আপনি কথায় কথায় বিদেশের উদাহরণ দেবেন। সেখানে নিয়মনীতির প্রশংসা করতে করতে আপনি মুখে ফেনা তুলবেন। কিন্তু দেশে আপনি নিয়মনীতি মানবেন না। হাসপাতালে সিটের জন্য তদবির করবেন। চাকরি পেতে ঘুষের থলি নিয়ে ঘুরবেন। সরকারি অফিসে গেলে প্রভাবশালী পরিচিতের নাম ভাঙাবেন। এমনকি ব্যাংকেরও একটু পরিচিতি থাকলেই লাইনে দাঁড়াবেন না। চলে যাবেন ম্যানেজারের খাসকামরায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনি টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে কান্নাকাটি করবেন। কিন্তু দাম বেশি এজন্য কোনো পণ্য কেনা বাদ দেবেন না। আপনি চান সবকিছু হোক আপনার মতো করে। আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী। আপনি যা খুশি করবেন, বাধা দিলেই দোষ সরকারের।

কিন্তু আরেকজন যা খুশি করলে আপনি ক্ষেপে যাবেন। আপনি মনে করবেন, সবকিছু ঠিকঠাক করার দায়িত্ব শুধুই সরকারের। স্রেফ সরকারের। কিন্তু নাগরিক হিসেবে কি একবার ভাবেন, আপনার কিছু দায়িত্ব আছে? সরকারের সমালোচনার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা কি একটু দেখবেন? যে রেস্টুরেন্টে গেলেন, তা ঠিকঠাক কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব কি আপনারও না। যে হাসপাতালে যাচ্ছেন সেটা বৈধ কি না, তা দেখা আপনার নাগরিক দায়িত্ব। যানজটের সমালোচনা করার আগে আপনি ট্রাফিক আইন মানছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করবেন না? সব দোষ সরকারের ঘাড়ে চড়ানোর আগে, আপনি নাগরিক হিসেবে আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেন কি না, তা একটু ভেবে দেখবেন?

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com


সরকারের   হাসপাতাল  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের সাজা প্রায়শ্চিত্ত, বিএনপির মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?

আরও পড়ুন: কুড়ি বছর পর আবারো আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভক্ত, কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ দল গোছাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে একটি ছিল উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলায় প্রার্থী না করার আহ্বান জানায়; কিন্তু দলের ওই নির্দেশনা মানেননি অনেকেই। যেসব মন্ত্রী, এমপির স্বজনরা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের দৃষ্টি সেদিন ছিল গণভবনে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত গণভবনে বৈঠকে উপজেলা প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, সাংগঠনিক বিষয় নিয়েই কোনো আলোচনা হয়নি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। একজন সংবাদকর্মী প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার মর্মার্থ হলো, এখনই চটজলদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আওয়ামী লীগ কোনো শাস্তির সিদ্ধান্তই চটজলদি নেয় না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তা অনুমোদন করে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কোনো নেতাকর্মী সংগঠনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে প্রথমে তাদের কারণ দর্শানো হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে সবকিছু পর্যালোচনা করে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

কিন্তু বিএনপিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় এক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবে, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে। কয়েক বছর ধরেই বিএনপি শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। উপজেলা নির্বাচনেও প্রথম দফায় ৭৩ জন, পরবর্তী সময়ে আরও ৬০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। কিন্তু শাস্তি প্রদানের একটি প্রক্রিয়া থাকা দরকার। সবার সামনে খুন করলেও, পুলিশ যদি অপরাধী ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গুলি করে, সেটা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এটাকে অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থেকে বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার।

আরও পড়ুন:  আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

কিন্তু দলেই প্রতিনিয়ত বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন করা হচ্ছে। যে কোনো অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। কিন্তু বিএনপি কিছুদিন ধরে যে গণবহিষ্কারের উৎসব করছে, তা কি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে? যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের কি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল? তারা কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছেন? কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থায়ী কমিটিতে কি গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে? উপজেলায় যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের কাউকে ন্যূনতম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। দপ্তর থেকে সেসব হতভাগাকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেমন গর্হিত, অনাকাঙ্ক্ষিত, ঠিক তেমনি এই বহিষ্কার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। অথচ দলের ভেতর চলছে অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম। বিএনপির জন্য অবশ্য ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভ্যাস জন্মগত। ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। তিনি অবৈধ প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরপর যারা তার জন্য ন্যূনতম হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতো, তাদের বিচার ছাড়াই জিয়া নির্মমভাবে হত্যা করতেন। কেন্দ্রীয় কারাগারে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ সৈনিককে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) তাহেরকে এরকম বিচারের নামে প্রহসন করেই হত্যা করা হয়েছিল। কাজেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। জিয়ার মৃত্যুর পর বেগম জিয়া এবং এখন তারেক জিয়াও সেই চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।

গণতান্ত্রিক চিন্তা থেকে দেখলে, বিএনপির গণবহিষ্কার সমর্থন যোগ্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এটি করতে পারে না। আওয়ামী লীগ যেভাবে একজন নেতা বা কর্মীকে শাস্তি দেয়; সেটিই সঠিক। কিন্তু এর বিপরীতে কোন ব্যবস্থা বেশি কার্যকর, দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে পারে; সে তর্ক হতেই পারে। বিএনপির এক নেতা বলেছিলেন, দলে শৃঙ্খলা রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে অন্যরা শিক্ষা পাবে। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহস পাবে না। এ কঠোর অবস্থান নাকি দলকে শক্তিশালী করবে। সত্যি কি তাই? এর জবাব পাওয়া যায় ১ মে প্রকাশিত ‘দৈনিক কালবেলায়’। ‘বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—‘বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে।’ কী তাজ্জব কথা! রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শুনেছি, কমিটি ও পদ-বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বিএনপি এখন রাজনীতিতে ‘বহিষ্কার বাণিজ্য’ শুরু করল। নেতাদের অভিনব উপার্জনের এই পথ আবিষ্কারের জন্য দলটির শীর্ষ নেতাকে পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। অতীতে এরকম অনেক নেতাকে দেখা গেছে, যারা দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাদের দলে মহাসমারোহে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি কখন বিএনপিতে থাকেন আর কখন বহিষ্কৃত হন, সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কথাই ধরা যাক। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারালেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন।

আরও পড়ুন: আদর্শবানরা ক্ষমতায় বিনয়ী হন, অযোগ্যরা বদলে যায়

কিন্তু ২০০১ সালে আবার বীরদর্পে ফিরে আসেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নানা বাণিজ্যে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এক-এগারোর সময় বিএনপিতে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র প্রয়াত আবদুল মান্নান ছাড়া সবাই বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। দুষ্ট লোকেরা বলে, মান্নান ভূঁইয়া বেঁচে থাকলে তিনিও আবার বিএনপিতে ফেরত আসতেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা অলি আহমদদের মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নেতারা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে বিএনপিতে ফেরত যাননি; কিন্তু তাদের দলে ফেরাতে কম চেষ্টা হয়নি। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপিতে ‘বহিষ্কার’ আর ‘সাধারণ ক্ষমা’র লুকোচুরি খেলা চলছে। এ যেন শুধু যাওয়া-আসার খেলা। কে কখন দল থেকে ছাঁটাই হচ্ছেন, কে দলে ফিরছেন, কেউ জানেন না। একই অপরাধের জন্য একজনকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যখন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে, তখন একই অপরাধে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। বিএনপিতে গঠনতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে দল। যার ফলে সংগঠনে অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং হতাশা দানা বেঁধেছে। চরম পন্থা যে একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক শক্তিকে ক্ষয় করে বিএনপি তার প্রমাণ। বিএনপিতে মৃত্যুদণ্ড তাই ক্রমেই অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বহিষ্কার’ অস্ত্র ব্যবহার করে কদাচিৎ। লতিফ সিদ্দিকীর মতো গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অপরাধ না করলে, আওয়ামী লীগ এই চরম শাস্তি প্রয়োগ করে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা কাপুরুষতা করে অথবা লোভে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল, শেখ হাসিনা ফিরে এসে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি। দলে তাদের ধীরে ধীরে অপাঙক্তেয় করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আবদুল মান্নান কিংবা মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। এক-এগারোতে যারা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেছিল, তাদের বিএনপি স্টাইলে গণবহিষ্কার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট যে চার নেতা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাদের ২০০৯ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জাঁদরেল নেতারা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আলংকারিক পদে জায়গা পেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন। প্রয়াত মুকুল বোস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো তারকা নেতাদের বহিষ্কার না করে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। তাদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। দলে থেকেও তারা গুরুত্বহীন, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হন। কর্মীদের উপেক্ষা আর টিপ্পনী সহ্য করে তাদের দল করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে তারা অপমানিত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিল তিল করে তাদের সাজা দেওয়া হয়। এই শাস্তি সহ্য করতে না পেরে মান্না, সুলতান মনসুর, আবু সাইয়িদের মতো নেতারা দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগের পর তারা রীতিমতো রাজনৈতিক উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। আওয়ামী লীগের প্রায়শ্চিত্ত নানা মেয়াদে। অপরাধের গুরুত্ব এবং মাত্রা বিবেচনা করে প্রায়শ্চিত্তের সময় নির্ধারণ করা হয়। অনেককে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন প্রয়াত মুকুল বোসের প্রায়শ্চিত্তকালীন সময় শেষ হলে, তাকে উপদেষ্টা পরিষদে ফিরিয়ে আনা হয়। লঘু অপরাধে অনুশোচনার শাস্তি ভোগ করা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এখন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আবার সাবের হোসেন চৌধুরী প্রায়শ্চিত্ত শেষ করে এখন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।

আরও পড়ুন:  প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি

২০০৯ সালে মনোনয়ন না পাওয়া প্রয়াত খ ম জাহাঙ্গীর পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্তির কয়েকটি তাৎপর্য আছে। প্রথমত, এই শাস্তির ফলে নেতাদের আত্মোপলব্ধির সুযোগ বটে। তারা তাদের ভুল এবং বিভ্রান্তি উপলব্ধির সুযোগ পান। ফলে তারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, এর ফলে দলের অন্য নেতারা একটি সতর্ক সংকেত পান। চূড়ান্ত সুবিধাবাদ এবং আদর্শহীনতা একজন রাজনৈতিক নেতার ক্যারিয়ার কীভাবে গিলে খায়, তার উদাহরণ সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চর্চা হয়। অন্য কেউ দলের এবং নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের পরিণাম উপলব্ধি করেন। তৃতীয়ত, এর ফলে দলের প্রধান নেতার প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সাজার কৌশলের পার্থক্য দল দুটির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগে কোন্দল আছে, আতঙ্ক নেই। দলে দ্বন্দ্ব, বিভক্তি আছে, কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই। সুবিধাবাদী আছে, আদর্শহীনতা আছে; কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি নেই। প্রতিপক্ষ হীন রাজনীতির মাঠে ‘কোন্দল’ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তৎপর রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপির চরম শাস্তির কৌশল নেতাকর্মীদের আতঙ্কের ঘরে বন্দি করেছে। সারা জীবন দলের জন্য অবদান একটি ভুলে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দলে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মতো। দলে সবাই কুণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। গণতন্ত্র চর্চার বদলে ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলেছে। যোগ্যতার বদলে চাটুকারিতা, তোষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে বিএনপি সংগঠনটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে।

শুধু রাজনীতি নয়, কোনো ক্ষেত্রেই চরম শাস্তি সমাধান নয়। আর সেই শাস্তি যদি উপযুক্ত বিচার ছাড়াই হয়; তাহলে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, ঠিক একই কারণে, একটি ভুলেই দল থেকে বহিষ্কার মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল। গণতান্ত্রিক ধারা বিশ্বাস করলে চরম অপরাধীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তার কথাও শুনতে হবে। একটি গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট কায়দায় চলতে পারে না।


সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com

 


আওয়ামী লীগ   বিএনপি   জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আদর্শবানরা ক্ষমতায় বিনয়ী হন, অযোগ্যরা বদলে যায়

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন। যেহেতু কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্যোগকে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই এমন একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করা সমীচীন নয়, শোভনও নয়। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী আমাকে বললেন, রাষ্ট্রপতিকে প্রধান অতিথি করতে চাই। তুমি যোগাযোগ কর। আমি বঙ্গভবনে যোগাযোগ করলাম। রাষ্ট্রপতি চিকিৎসা শেষে মাত্র যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছেন। একান্ত সচিব বললেন, ‘আমি দেখছি।’ দুদিন পর সময় পাওয়া গেল। আমি এবং সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গেলাম বঙ্গভবনে। রাষ্ট্রপতি হবার পর এটা ছিলো আমার তৃতীয় সাক্ষাৎ। তিনবারের কোন বারেই তার আন্তরিকতার ঘাটতি পাইনি। দেশে সর্বোচ্চ পদে যাবার পরও তিনি সেই হাসিখুশী, বন্ধুসুলভ, প্রাণবন্ত, নির্ভেজাল মানুষ। সদ্য চিকিৎসা শেষ করে তিনি দেশে ফিরেছেন। জরুরী রাষ্ট্রীয় কাজ ছাড়া কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের অনুরোধ তিনি ফেললেন না। সচিবকে ডেকে একটা তারিখ ঠিক করতে বললেন। সেই থেকে এই আয়োজনের ব্যস্ততা। অবশেষে ৩০ এপ্রিল একটা সফল এবং গোছানো অনুষ্ঠান করলো ক্রিয়েটিভ মিডিয়া। অনুষ্ঠান শেষে ক্লান্তিতে শরীর ছেড়ে দিয়েছিল। রাতের খাবারের পর সোফায় শরীর ছেড়ে দিয়ে আধো ঘুমে টেলিভিশন সংবাদ দেখার চেষ্টা করছি। রাত বাজে সাড়ে দশটা। এমন সময় রাষ্ট্রপতির ফোন। আমি বেশ বিস্মিত হয়েই ফোন ধরলাম। রাষ্ট্রপতি বললেন ‘বোরহান খুব সুন্দর অনুষ্ঠান করেছেন। ধন্যবাদ।’ আমি আপ্লুত, হতবিহম্বল। রাষ্ট্রপতি বললেন, ‘অনুষ্ঠানে আপনাকে খুঁজলাম। পেলাম না। দেখা হলো না, তাই ফোন করলাম।’ আমি জানালাম পর্দার পিছনে থেকে অনুষ্ঠান তদারকি করছিলাম। এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তিনি ফোন রাখলেন। দেশের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তির বিনয়, উদারতা মুগ্ধ করার মতো। আজকাল এই আচরণ অভাবনীয়। আমার জন্য এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। 

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর সম্প্রতি পূর্ণ করেছেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে বঙ্গভবনে অভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। মোঃ সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি হওয়াটাই ছিলো এক চমক এবং বিস্ময়কর ঘটনা। নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবেন, এনিয়ে নানা আলোচনা ছিলো। বিভিন্ন রথী মহারথীদের নাম সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে কোথাও মোঃ সাহাবুদ্দিনের নাম ছিলো না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হবার পর গুলশানে আমি নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি আমি রাষ্ট্রপতি হবো।’ আমাকে তার বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন এভাবে ‘পরদিন পাবনা যাবো। এজন্য সেলুনে গেছি, চুল কাটাতে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ফোন করলেন। জানতে চাইলেন, কি করছি। আমি জবাব দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন আমার ব্যাংকে কোন লোন আছে কিনা, ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া ইত্যাদি।’ তিনি বললেন, ‘তখনও আমি ভাবিনি, এরকম কিছু হচ্ছে।’ 

একটা কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোঃ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্য সেই সময়টা ছিলো কঠিন, অনিশ্চয়তায় ভরা। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানী, বিরোধী দলের আন্দোলন, সুশীলদের চক্রান্ত। সব কিছু মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, সেটিই ছিলো এক বড় প্রশ্ন। এরকম পরিস্থিতি সব সময়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলের দরজা খুলে দেয়। চক্রান্ত ডাল মেলা মেলে। বাংলাদেশে অবৈধ ক্ষমতা দখলে প্রায়ই বঙ্গভবন হয় ষড়যন্ত্রের আঁতুড় ঘর। ২০০৭ সালের এক এগারো যার সর্বশেষ উদহারণ। সুশীলদের পক্ষ থেকে ‘নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য’ কাউকে রাষ্ট্রপতি করার আহ্বান ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো চাইছিলো এমন কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে যার মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেটানো যায়। 

আওয়ামী লীগের জন্য নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছিলো অগ্নি পরীক্ষা। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করে আওয়ামী লীগ যে ভুল করেছিল তার মাশুল চরম ভাবে দিতে হয়েছিল দলটিকে। কে নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন, এনিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই ছিলেন অন্ধকারে। এরকম এক সময় আলোচনার বাইরে থাকা মোঃ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি করার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। এটি ছিলো আচমকা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আসন্ন চক্রান্ত মোকাবেলার জন্যই বেছে নিয়েছিলেন এমন এক ব্যক্তিকে যিনি বিশ্বস্ত, বিচক্ষণ এবং আদর্শের প্রশ্নে আপোষহীন। মোঃ সাহাবুদ্দিন তার জীবনে কোন দিন আদর্শচ্যুত হননি। জাতির পিতার ডাকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ন্যক্কারজনক ঘটনার পর প্রতিবাদ করেছেন। রুখে দাঁড়িয়েছেন। কারাভোগ করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তবে আদর্শের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ছিলো পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের সময়। ডাক সাইটে অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা চেয়েছিলেন পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগকে প্রশ্রয় দিতে। তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে কলংকিত করার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। মোঃ সাহাবুদ্দিন তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও নন। একজন সদস্য মাত্র। দায়িত্ববানরা যেকোন পরিস্থিতিতেই আদর্শের প্রশ্নে অটল হিমালয়ের মতো দাঁড়াতে পারেন তার প্রমাণ সে সময় রেখেছিলেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। দুদকের কমিশনার থেকে একাই তিনি রুখে দেন ষড়যন্ত্র। কিন্তু এনিয়ে তিনি হৈ চৈ করেননি। আত্ম অহংকারে বেসামালও হননি। আমাকে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি আমার দায়িত্ব। কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য এটি আমি করিনি।’ সারাজীবন এভাবে নীরবে, নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই মানুষটি। আদর্শের জন্য সংগ্রাম করেছেন কোন প্রাপ্তির প্রত্যাশা ছাড়াই। মোঃ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কেন্ডিক প্রসাদ ষড়যন্ত্রের মুখ বন্ধ করে দেন শেখ হাসিনা। যারা মোঃ সাহাবুদ্দিনকে ন্যূনতম চেনে তারা জানেন, আর যাই হোক নীতির প্রশ্নে তাকে এক চুলও টলানো যাবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য প্রয়োজনে তিনি জীবন দেবেন। 

আমি মনে করি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শেখ হাসিনার দূরদর্শী, বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত ছিলো একটি টার্নিং পয়েন্ট। এর মাধ্যমে নির্বাচন বিরোধী ষড়যন্ত্র জোট হতচকিত হয়ে যায়। দায়িত্ব নিয়ে মোঃ সাহাবুদ্দিন নির্বাচন কেন্ডিক উত্তাপ সামাল দেন ঠান্ডা মাথায়। তার অভিভাবকত্বে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। একবার ভাবুন তো, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের সময় ভীরু, কাপুরুষদের কেউ যদি রাষ্ট্রপতি হতেন, তাহলে কি এভাবে নির্বিঘ্নে সব কিছু হতো? সংশোধিত শ্রম আইনে স্বাক্ষর না করে তিনি বুঝিয়েছেন বঙ্গভবন দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় কথা মোঃ সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার একজন যোগ্য অভিভাবক হিসেবে একবছরে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ক্ষমতার দম্ভ তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। রাষ্ট্রপতির সর্বোচ্চ পদ তার বিনয়, সৌজন্যতাকে ম্লান করতে পারেনি। এখনও তিনি যেন সেই প্রাণখোলা মানুষটি। কিন্তু নীতির প্রশ্নে অটল। ৩০ এপ্রিলের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি মহামূল্যবান একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন ‘শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক নয়, আজকের বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাই হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ।’ এই বার্তাটি তিনি সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান। আমি মনে করি এই নির্দেশনাটি মহামূল্যবান। এটিই এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রধান করণীয়।  

মোঃ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হবার পরও ঠিক আগের মতোই আছেন। জনবিচ্ছিন্ন হননি। নিরাপত্তার শৃংখল থেকেও তিনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের সূতোটা কাটেননি। এই জীবনে তো বহু মানুষ দেখলাম, যারা ক্ষমতা পেলে এমন দম্ভ দেখান যে, মনে হয় সারাজীবন এরকম ক্ষমতাবানই থাকবেন। ক্ষমতাহীন অবস্থায় যারা বুকে টেনে নিতেন, ক্ষমতা পেয়েই তারা অচেনা মানুষ হয়ে যান। এমন ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। যারা অযোগ্য, চাটুকার, মতলববাজ তারাই ক্ষমতা পেয়ে দিশেহারা হন। অতীত ভুলে যান। উপকারীকে এড়িয়ে চলেন। কৃতজ্ঞহীন এক অমানবিক মানুষে পরিণত হন। এদের একজনের গল্প বলি।  

তিনি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে হতাশায় মুষড়ে পরলেন। প্রায় প্রতিদিন আমার অফিসে আসতেন। তার পরিবারের কাছে কিভাবে তিনি ছোট হলেন তার বিবরণ দিতেন কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে। দুপুরে আমার অফিসেই খাবার টেবিলে মনোনয়ন না পাওয়ার বেদনায় আক্রোশ ঝাড়তেন মুরগীর রান চিবিয়ে। শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করলো না, এনিয়ে তার কি গোস্বা। কিছুদিনের মধ্যেই খবর এলো তাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হচ্ছে। এক বিকেলে উচ্ছ্বাসিত ভাবে এলেন অফিসে। প্রধানমন্ত্রী তার ফাইল অনুমোদন করেছেন। এখন রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই সরকারি আদেশ জারী হবে। রীতিমতো ঘামছেন। রাষ্ট্রপতি তখন যুক্তরাজ্যে। বিভিন্ন জন তাকে নানান তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছেন না, ফলে তার অস্থিরতাও কমছে না। তার এই অবস্থা দেখে আমি সরাসরি ফোন করলাম রাষ্ট্রপতিকে। তিনি যুক্তরাজ্যে আছেন জেনেও। তিনি ফোন ধরে বললেন, ‘বোরহান আমি হাসপাতালে, আমার টেস্ট চলছে, জরুরী কিছু? আমি ঐ উপাচার্যের ফাইল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘আমি একটু আগেই ফাইলে স্বাক্ষর করেছি।’ আমার এই ধৃষ্টতা এবং বাড়াবাড়িতে তিনি এতটুকু বিরক্ত হলেন না। বরং নতুন উপাচার্যকে অভিনন্দন জানালেন। একজন মানুষ কতটা খাটি, নির্ভেজাল এবং আন্তরিক হলে এটা সহ্য করে। দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তির এই বিনয়ের কারণ তিনি আদর্শবান, যোগ্য। আর যে ব্যক্তি এমপি না হতে পেরে উপাচার্য হলেন, তিনি কদিন পর বিরাট মানুষ হয়ে গেলেন। তার কথা বার্তা, আবার আচরণে মুহূর্তে অন্যরকম হয়ে গেল। আমি তার কাছে আবর্জনা হয়ে গেলাম। 

আমার এক অনুজ প্রতিম সাংবাদিক দেশ টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফারুক আমাকে এক বিকেলে ফোন করলেন। অনুরোধ করলেন, ঈদের অনুষ্ঠানে নতুন উপাচার্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটা সাক্ষাৎকার নিতে চায়। আমি যেন তাকে বলে দেই। আমি উপাচার্যকে ফোন করলাম। তিনি ফোন ধরলেন না। আগে যিনি দিনে কয়েকবার ফোন করতেন। ফোন না পর্যন্ত বার বার ফোন করেই যেতেন, তিনি আমার ফোন রিসিভ না করাতে আমি এতোটুকু দুঃখিত হইনি। ভাবলাম নিশ্চয়ই ব্যস্ত। উপাচার্য বলে কথা। নিশ্চয়ই ফ্রি হলে ফোন করবেন। কিন্তু তিনি ফোন ব্যাক করলেন না। পরদিন বিকেলে আবার ফারুকের অনুরোধ। এবার আমি ফারুককে রেখেই উপাচার্যকে ফোন করলাম। ফোন ধরলেন অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে। বললেন, ‘যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমি ভীষণ ব্যস্ত।’ আমি একটু বিস্মিত হলাম। ধাতস্থ হয়ে ফারুকের প্রস্তাব বললাম। আমি যেন মহা অন্যায় করেছি। তিনি বললেন, ‘এসব এখন হবে না। আমি ব্যস্ত।’ আরো কিছু কথা শোনার পর আমি বললাম ‘ভাগ্যিস আপনি শুধু উপাচার্য হয়েছেন, মন্ত্রী এমপি হননি।’ কদিন আগে দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ক্রোড়পত্রে মাষ্টার হেডে প্রধানমন্ত্রীর ছবিই বাদ দিয়েছেন। উপাচার্য হয়েই তিনি নিরপেক্ষ হবার জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই মাইনাস করলেন? অযোগ্যরা ক্ষমতায় গেলে এভাবেই সম্ভবত বদলে যায়, অহমিকার এক মুখোশ পরে। এই ব্যক্তি একা না। এরকম ব্যক্তির সংখ্যাই বেশী ক্ষমতা যাদের মাথা খারাপ করে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে। এর কারণ তারা ক্ষমতা লোভী, অযোগ্য। রাষ্ট্রপতি হলেন একজন অসাধারণ সাধারণ মানুষ। ক্ষমতা যার মৌলিকত্ব, অকৃত্রিম আন্তরিকতা কেড়ে নিতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তিনি যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি গত এক বছরে কাজ দিয়েই তা প্রমাণ করেছেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। 
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন যে, ১৪ দল বিলুপ্ত হয়নি, ১৪ দল আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফ জানিয়ে দিলেন, খুব শীঘ্রই তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। 

প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন যে, ১৪ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক নিয়মিত ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ১৪ দলের নেতাদেরকে উল্লসিত করেছে। তীব্র তাপদাহে যেন তাদের কাছে এক স্বস্তির বৃষ্টি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকরা এতিম হয়ে পড়েছিল। তারা কোথাও পাত্তা পাচ্ছিল না। মন্ত্রিসভাতে যেমন ১৪ দলের কাউকে রাখা হয়নি, ঠিক তেমনই সংরক্ষিত নারী আসনে যে ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেখানও ১৪ দলের কোন প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। ১৪ দলের নেতাদের এ বার নির্বাচনে বড় ধরনের ভরাডুবি ঘটেছে। হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশার মতো ১৪ দলের হেভিওয়েট নেতারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। এরপর ১৪ দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ১৪ দলের নেতারা সেই সময় থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি। এর মধ্যে ১৪ দলের বৈঠক নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলেও শরিকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং ১৪ দলের অন্তত তিনজন নেতা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ১৪ দল শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।

২০০১ সালে নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এই ১৪ দলীয় জোট গঠন করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর ১৪ দলের সদস্যদেরকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল। সেই সময় দিলীপ বড়ুয়া মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে গঠিত মন্ত্রিসভাতেও ১৪ দলের নেতা রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুকে রাখা হয়েছিল। এরপর থেকেই ১৪ দলের শরিকদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

এবার নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তিক্ততা সৃষ্টি হয় এবং তিক্ত অবস্থা রেখেই আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের জন্য মাত্র ৬টি আসন দেয়। শেষপর্যন্ত জোটের স্বার্থে ১৪ দল নির্বাচনে ওই কয়েকটি আসন নিয়ে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সেখানে ১৪ দলের অধিকাংশ নেতার বিপুল ভরাডুবি হয়। বিশেষ করে হাসানুল হক ইনু, ফজলে হোসেন বাদশা এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিপর্যয় ১৪ দলকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়। এমনকি শিরীন আখতারকে পরবর্তীতে সংরক্ষিত আসনের এমপি করা হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলেও জাসদের নেতারা দাবি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিরীন আখতারও সংরক্ষিত কোটায় এমপি হতে পারেননি। এরকম অবস্থায় ১৪ দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং হতাশা ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করলেন যে, তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বসবেন। 

তিনি বলেছেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার পর তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ১৪ দলের এই বৈঠকের নেতাদেরকে উল্লসিত করেছে। তারা এখন আশায় বুক বেঁধে আছেন। 

১৪ দলের নেতারা আসলে কর্মীহীন, অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে লতাপাতার মতো জড়িয়ে থেকে তারা কোন রকম অস্তিত্ব রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগ যদি তাদের থেকে ছাতা সরিয়ে নেয় তাহলে এই দলগুলো মৃত্যু ঘটবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ তাদেরকে জীবিত করার যেন মহৌষধ দিলেন।

১৪ দল   আওয়ামী লীগ   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

কমে গেল কাদেরের দাপট?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমন একজন নেতা যিনি ওবায়দুল কাদেরের এই সিদ্ধান্ত মানেননি। সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি ধানমণ্ডি ৩ নম্বর কার্যালয়ে গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের তোপের মুখে পড়েন। ওবায়দুল কাদের তাকে বলেন, আপনি তো দলের কোন সিদ্ধান্তই মানেন না। কিন্তু তার পরও শাজাহান খান তার ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে রাখেন এবং দলের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন আশঙ্কার মধ্যেই তিনি উপজেলা নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির সংবাদ সম্মেলনের পর দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের যে সিদ্ধান্ত তার মধ্যে দুস্তর ফারাক রয়েছে। ওবায়দুল কাদের যেভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন বাস্তবতা তা নয়। ওবায়দুল কাদের যত গর্জেছেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ তত বর্ষেনি। আর একারণেই এখন ওবায়দুল কাদেরের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।


এমনিতেই আওয়ামী লীগে বেশ কিছুদিন ধরে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির বাইরে অন্য কোন নেতার কথা তৃণমূলের আওয়ামী লীগ বা মাঠ পর্যায়ের নেতারা মোটেও কর্ণপাত করেন না। তাদেরকে খুব একটা আমলে নেন না। তারপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে কথা। তিনি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সেই ক্ষমতাবান ব্যক্তি যখন বলছেন, সকলে ধরে নিয়েছিল যে, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং ওবায়দুল কাদের এটিকে শেখ হাসিনার নির্দেশনা বলেই অভিহিত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা একরামুল করিম চৌধুরী, শাজাহান খান এবং ড. রাজ্জাকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন এবং তাদের স্বজনদেরকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই তিনজনের কেউই ওবায়দুল কাদেরের কথায় কর্ণপাত করেননি। 

ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা অমান্য করে তারা প্রার্থী হওয়ার পর এখন দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের অবস্থানই এখন আর সঠিক নেই। ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। অথচ ওবায়দুল কাদের একাধিক গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, ৩০ এপ্রিল যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই হয়নি। তাহলে কী ওবায়দুল কাদের বাড়িয়ে বলেছেন? 


কেউ কেউ দাবি করেন, যেহেতু একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সেহেতু ওবায়দুল কাদের বিষয়টিকে বড় করে দেখেছেন এবং তিনি নিজেই উপজেলা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। কারণ তার নির্বাচনী এলাকায় যদি একরামুল করিমের সন্তানও উপজেলা চেয়ারম্যান হয় তাহলে তার এলাকায় আধিপত্য কমে যাবে। আর একারণেই হয়তো তিনি বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই মনে হয় যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বিষয় নিয়ে গর্জে ছিলেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিষয়টিকে অতটুকু গুরুত্বতর মনে করেন না। বরং তার প্রধান আগ্রহের ব্যাপার হলো উপজেলা নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা সবসময় যা বলেন সেটিরই পুনঃউচ্চারণ করেন এই বক্তব্যটি ঠিক না। শেখ হাসিনা আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একই রকম বক্তব্য রাখেননি। আর এর ফলে ভবিষ্যতে ওবায়দুল কাদেরের হুশিয়ারি বা নির্দেশনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কতটুকু শুনবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন তাহলে কী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দাপট কমে গেল?




ওবায়দুল কাদের   আওয়ামী লীগ   সাধারণ সম্পাদক  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

কুড়ি বছর পর আবারো আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন তিনি হুমকি দিচ্ছেন, প্রতিদিন তিনি সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন, হুশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা আসলে দলের নির্দেশনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এই নির্দেশনা মানছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান ওবায়দুল কাদেরের নয়, এই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত তাঁর তার বক্তব্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেল যে, একমাত্র প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালককে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছেন। অন্য কেউই ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেননি। ওবায়দুল কাদের এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা বারবার ঘোষণা করছেন। 

আগামীকাল ৩০ এপ্রিল দলটির কার্যনির্বাহী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এবং এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল ৩০ এপ্রিলের দিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। ৩০ এপ্রিল কি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ধোঁকা খাবে? যারা ক্ষমতাবান মন্ত্রী-এমপি সংসদ সদস্য তারা তাদের সন্তানদেরকে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী করার ফলে তারা কি শাস্তি পাবেন? নাকি এবারেও তারা পার পেয়ে যাবেন? ৩০ এপ্রিল কি আওয়ামী লীগের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হবে, নাকি ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগ আবারো ধোঁকা খাবে। 

আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলছেন, ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের যারা সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন, যারা স্বজনপ্রীতি করেছেন, যারা ভাই, ভাতিজা, স্ত্রী, কন্যা, পুত্র, শ্যালককে প্রার্থী করেছেন তাদেরকে লাল কার্ড দেখানো হবে। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বলছেন যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেহেতু কঠোর বার্তা দিয়েছেন সেহেতু তার কাছে নিশ্চয়ই ‘ট্রাম্প কার্ড’ আছে। আর এই এই ট্রাম্প কার্ড দেখানো হবে ৩০ এপ্রিল। দলের সিদ্ধান্ত যারা লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই এমন কথাও বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। 

আওয়ামী লীগের জন্য ৩০ এপ্রিল দিনটি অত্যন্ত প্রতারণামূলক এবং ধোঁকা খাওয়ার দিন হিসেবেই পরিচিত। ঠিক কুড়ি বছর আগে এই ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগ ধোঁকা খেয়েছিলো। তখন পাদপ্রদীপে ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল। ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে ফেলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ৩০ এপ্রিলের আগে প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে আসতেন এবং কিভাবে সরকারের পতন হবে সেবিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিতেন। ৩০ এপ্রিলের আগে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং সে কর্মসূচি গুলোর মাধ্যমে সরকার পতনের কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ৩০ এপ্রিল ম্যাজিক দেখাবেন বলেই বারবার ঘোষণা করছিলেন। তার কাছে ট্রাম্প কার্ড আছে এমন বক্তব্য তিনি রেখেছেন একাধিকবার। কিন্তু ৩০ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কিছুই হয়নি বরং আওয়ামী লীগই অসম্মানিত হয়েছে। 

সাধারণ মানুষের কাছে ঐতিহ্যবাহী এই দলটি হাস্যকর হয়েছে। ৩০ এপ্রিলের গ্লানি আওয়ামী লীগকে বহুদিন বহন করতে হয়েছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ৩০ এপ্রিল নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কম টিটকারি করেনি। আবার একটা ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাগ্য নির্ধারণের দিন। এবারও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই পাদপ্রদীপে। ৩০ এপ্রিল যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে নাকি ৩০ এপ্রিল আবারো আওয়ামী লীগ ধোঁকা খাবে। গত কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের মধ্যে বিশৃঙ্খল একটা অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে সবাই নেতা হয়ে গেছেন, কেউ কাউকে মানছেন না। তবে একটা আশার ব্যাপার ছিলো। সকলে মনে করতেন যে, আওয়ামী লীগের সভাপতি ঐক্যের প্রতীক। তাকে সকলে মানেন এবং তার কথার কেউ অবাধ্য হবেন না। 

২০০৭ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ এবং কোন্দলকে প্রশ্রয় দেয়া হতো একটি চিন্তা থেকেই। সেটি হলো আওয়ামী লীগে যে যত গ্রুপই থাকুক না কেন, যে যত পক্ষই করুক না কেন তারা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পক্ষে। শেখ হাসিনা যা বলবেন সেটি তারা মানবেন। শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা। আর বিভক্ত বিভিন্ন গ্রুপগুলো তাকিয়ে থাকতো শেখ হাসিনার দিকে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ আনুগত্য বা আস্থা স্রেফ কথার কথা। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতারা যেটি বলেন সেটি আসলে বাস্তবে করেন না। শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করেন। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করেন। আর এটিই আওয়ামী লীগের জন্য শঙ্কার এবং উদ্বেগের বিষয় বলে আমি মনে করি। কারণ যদি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকেও নেতারা অমান্য করে তাহলে দলের অস্তিত্বই চ্যালেঞ্জের মুখে পরে। আওয়ামী লীগ আসলে এবার সে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। 

২০১৮ সালের নির্বাচনের পরেই আওয়ামী লীগের ভিতর একটা ‘ফ্রি স্টাইল’ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। যে যার মতো, যেমন খুশী বক্তব্য রেখেছিলেন এবং সে বক্তব্যের কোন জবাবদিহিতাও ছিল না। একজন স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও কেন্দ্রীয় সদস্যকে গালাগালি করেছেন, একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি সমালোচনার তীর ছুড়েছেন। এটি আওয়ামী লীগে হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক ব্যাপার। ২০১৮ এর পর স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ মুখোমুখি হয়েছে, হানাহানি করেছে, একে অন্যকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছে। এঘটনাগুলো যখন নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে তখনও আওয়ামী লীগের নেতারা নির্লিপ্ত ছিলেন। সারাদেশেই আওয়ামী লীগ দুই তিন ভাগে বিভক্ত। এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছে। দলের পক্ষ থেকে তাদের কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি। যার ফলে আওয়ামী লীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল। 

২০২৪ এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে সিদ্ধান্তটি ছিলো, দলের প্রতীক না পাওয়া ব্যক্তিরা দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারবে। আর এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত এখন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি-কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো এই বিভক্তি এবং কোন্দলগুলো দূর করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বারবার নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এমনকি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা করেও এ ব্যাপারে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে যে, এই কোন্দল এবং বিভক্তি কমেনি। বরং বেড়েছে। এই কোন্দল বিভক্তি থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কিন্তু এর ফলে দেখা গেল আরেক সমস্যা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নিজ নিজ এলাকায় জমিদারতন্ত্র কায়েমের মিশনে নেমে পরলো। তারা তাদের নিজেদের ভাই-ব্রাদার আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থী করে এলাকাগুলোতে পরিবারতন্ত্র কায়েমের মিশনে ঝাপিয়ে পরেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি একারণেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে কোন মন্ত্রী এমপি তার আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী করতে পারবেন না। 

ধারণা করা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তের প্রতি সকলে সম্মান দেখাবেন। সকলে না দেখাক অন্তত যারা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতা, যারা মন্ত্রিত্বে আছেন কিংবা তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন। তারা নিজেদের স্বার্থকে কিছুটা হলেও সংকুচিত করবেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ভাই, সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থীতা থেকে সরে আসার অনুরোধ প্রত্যাখান করেছেন। তার মানে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তারা শ্রদ্ধা করেন না, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মানেন না। তারা দলকে বিকশিতও করতে চান না। এধরনের ব্যক্তিরাই যে আওয়ামী লীগে এখন প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে সেটি বোঝার জন্য পন্ডিত হবার দরকার নেই। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটি এসেছে, আওয়ামী লীগ এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এবং দলের স্বার্থ পরিপন্থি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার বলছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ৩০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল আসলে কি হবে? ৩০ এপ্রিল কি কুড়ি বছর আগের মতো আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ধোঁকা খাবে? 

২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল যেমন আওয়ামী লীগের অগণিত তৃণমূলের কর্মীরা অন্ধকারে ছিল। কি হবে তারা জানতেন না। তাদের জন্য কোন নির্দেশনা ছিলো না। রাজপথে নামার জন্য তাদেরকে কোন আহ্বান জানানো হয়নি। তারা বুঝতে পারেননি যে, কিভাবে সরকারের পতন ঘটবে এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতের পতন ঘটেনি। ঠিক তেমনি এবারের ৩০ এপ্রিলও আওয়ামী লীগের অগণিত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অন্ধকারে। তারা জানেন না ওবায়দুল কাদের কি ব্যবস্থা নিবেন এবং আদৌ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন কিনা। কারণ এর আগেও দেখা গেছে যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করেছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন তাদের খুব কম লোকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবারেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাবান, স্বার্থান্বেষী এবং স্বজনপ্রীতি করা নেতাদের কাছে আওয়ামী লীগ কি পরাজিত হবে, নাকি সত্যি সত্যি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগ কী ঘুরে দাড়াবে নাকি তৃণমূল প্রতারিত হবে। এই প্রশ্নটি এখন সবার সামনে বড় হয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ যদি এই সমস্ত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগের ভিতরে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যা ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা হলেন আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক, শেখ হাসিনা হলেন আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তার নির্দেশই যদি নেতারা অমান্য করেন তাহলে তাদের নেতৃত্বে থাকা উচিত? 

একটা কথা খুব স্পষ্ট, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য না। আওয়ামী লীগ যদি কঠোরভাবে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে তাহলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল মুখ থুবড়ে পড়বে, সাংগঠনিক শক্তি হারাবে আওয়ামী লীগ। সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নাজুক অবস্থা নগ্নভাবে প্রস্ফুটিত হবে। যদি আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তাহলেই দলটি ঘুরে দাড়াবে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে সহায়তা দিচ্ছে। দেশে কোন বিরোধী দল নেই। সেই কারণে আওয়ামী লীগ একটা স্বাচ্ছন্দ্য অবস্থায় আছে এবং কোনরকম চাপ অনুভব করছে না। কিন্তু যদি সংগঠন না থাকে, সংগঠন যদি এরকম হতশ্রী অবস্থায় চলে যায় তাহলে দুর্বল সংগঠন নিয়ে আওয়ামী লীগ কী টিকে থাকতে পারবে। এই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগকেই খুঁজতেই হবে।  

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন