এডিটর’স মাইন্ড

রাজনীতির জোয়ার-ভাটা

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৭ নভেম্বর, ২০২১


Thumbnail রাজনীতির জোয়ার-ভাটা

আজ ২৭ নভেম্বর। শহীদ ডা. মিলন দিবস। ১৯৯০ সালের এই দিনটিতে হালকা শীত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বসে অনার্স ফাইনালের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সবকিছু স্বাভাবিক, শান্ত। আচমকা কয়েকটি গুলির শব্দ। কৌতূহলী হয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরোলাম। এরপর আবার কয়েকটি  গুলি। হঠাৎ আতঙ্ক। ইতস্তত ছোটাছুটি। মিনিট কয়েক গোলাগুলির পর শুরু হলো মিছিল। কেউ ঠিকঠাক মতো বলতে পারছে না। ঘটনা টিএসসি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝামাঝি রাস্তাজুড়ে। খানিক পরই ‘ধর ধর’ চিৎকার। তারপর  মিছিল। মুহূর্তেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ল বিক্ষোভ। মিছিল করতে করতেই জানলাম বিএমএর (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) দুই নেতা ডা. মিলন ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের সশস্ত্র ক্যাডাররা গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হন ডা. মিলন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। ডা. মিলনের মৃত্যু যেন স্ফুলিঙ্গের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে দেয় সারা ঢাকায়, সারা দেশে। এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয় দোকানপাট। অফিস-আদালত থেকে মানুষ বেরিয়ে আসে। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ঘোষণা করেন। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল রাজধানী। ‘এক দফা এক দাবি এরশাদ তুই কবে যাবি’। এই একটি স্লোগান সর্বত্র। এরশাদ কি তখনো জানতেন তার শাসনকালের আয়ু আর মাত্র সাত দিন? ২৬ নভেম্বর এরশাদের একান্ত অনুগত মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মুন্সীগঞ্জের এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘দেশে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। এরশাদ আরও ১০ বছর ক্ষমতায় থাকবেন’।  ডা. মিলনের মৃত্যু এক লহমায় সবকিছু বদলে দেয়। ৪ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অচল ছিল। অনেক নাটক হয়েছে পর্দার আড়ালে। কিন্তু এমন আচমকা আন্দোলনে এরশাদের নয় বছরের সাজানো বাগান ভেঙে যাবে তা কেউই ভাবতে পারেনি। এটাই হলো বাংলাদেশ। এ হলো জোয়ার-ভাটার দেশ। সকালে নদীর ঘাটে যেখানে নৌকা ভেড়াবেন, দুপুরে দেখবেন ভাটার টানে সে নৌকা চলে গেছে বহুদূর। দুপুরে নদীর বিরান বালু সন্ধ্যায় জোয়ারে স্রোতের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী যেমন এ দেশে সকাল-বিকাল রূপ পাল্টায়, এ দেশের মানুষের মনও ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যায়। ষড়ঋতুর এই দেশে কখন যে মানুষ আবেগে কান্না করে আর কখন যে রুদ্ররোষে সবকিছু তছনছ করে কেউ জানে না। অনিশ্চয়তা এবং নাটকীয়তাই এ দেশের রাজনীতির চরিত্র। এর প্রধান কারণ হলো জনগণের আবেগ। এ দেশের জনগণ যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বিস্ফোরণ। কখন যে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠবে কেউ জানে না।

এরশাদের পতনের পর সবাই জানত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতারা মন্ত্রিত্বের দফতর ভাগ-বাটোয়ারায় মশগুল। কিন্তু ওই নির্বাচনের ফলাফল হলো অন্যরকম। এরশাদের পতনের পর আওয়ামী লীগের কজন নেতা ভেবেছিলেন তাঁরা নির্বাচনে হেরে যাবেন? বিএনপি জয়ী হলো ’৯১-এর নির্বাচনে। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন। তখন কি বেগম জিয়া জানতেন ২০২১ বাংলাদেশে আসবে? তখন কি বেগম জিয়া জানতেন তাঁকে এরশাদের চেয়েও করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাঁর শয্যাপাশে থাকবে না তাঁর পুত্র, পুত্রবধূরা। তিনি কি জানতেন তাঁর দলের নেতারা তাঁর জন্য কিছুই করবেন না। শুধু তামাশা দেখবেন?

এরশাদের পতনের পর বেগম জিয়া সুযোগ পেয়েছিলেন গণতন্ত্র, সুশাসন এগিয়ে নেওয়ার। রক্তাক্ত রাজনীতির কবর রচনার। প্রতিহিংসার রাজনীতি উপড়ে ফেলার। বেগম জিয়া যদি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিণতি আঁচ করতেন তাহলে হয়তো তিনি রাজনীতির নতুন যুগের সূচনা করতেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতেন। মাগুরা, মিরপুরের উপনির্বাচনে কারচুপি করতেন না।

’৯১-এর নির্বাচনের পর বাংলাদেশে কজন ভেবেছিল শেখ হাসিনা ১৮ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করবেন। ’৯১-এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেই বলতে শুনেছি, শেখ হাসিনা থাকলে আওয়ামী লীগ চিরকাল বিরোধী দলেই থাকবে। আজ যাঁরা শেখ হাসিনাকে অজস্র উপাধিতে ভূষিত করেন তাঁরাই সেদিন শেখ হাসিনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ’৯৬-এ  আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার চেহারা সুরত পাল্টে গেল। আওয়ামী লীগের অনেকে এমন আচরণ করলেন যে আর কোনো দিন তাঁরা বিরোধী দলে যাবেন না। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনের ফল হলো উল্টো। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের উত্থান ঘটল। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিএনপি ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে মনোযোগী হলো। জনগণের ভোট নয়, অন্য কৌশলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এক আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠল। সে সময় বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যেসব মন্তব্য করেছিলেন, তা যদি তাঁরা এখন পড়েন তাহলে নিজেরাই লজ্জা পাবেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য ৪২ বছর অপেক্ষা করতে হবে’। বেগম জিয়ার চেয়ে এক কাঠি সরস ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক জিয়া। তৃণমূলের এক কর্মী সমাবেশে তারেক জিয়া বলেছিলেন, ‘অক্টোবর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কবর রচিত হয়েছে। এখন এর জানাজা পড়াতে হবে।’ বিএনপি-জামায়াত সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্য ছিল আরও কুৎসিত, অরুচিকর।

বিএনপি আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য কী না করেছে? প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে বিধান সংশোধন করেছে। নিশ্চিত হতে চেয়েছে বিচারপতি কে এম হাসানই যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন। দেড় কোটি ভুয়া ভোটার করেছে। নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে আজ্ঞাবহদের দিয়ে। আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। জজ মিয়ার নাটক সাজিয়েছে। সারা দেশে নির্বিচারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হবিগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হলেন। হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনলে তাঁর প্রাণটা হয়তো বাঁচত। কিন্তু তাঁকে হেলিকপ্টার দেওয়া হয়নি। বেগম জিয়া যদি জানতেন তাঁর জীবনে এমন দিন আসবে, তাহলে হয়তো সেদিন তিনি এমনটা করতেন না। গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করা হলো। টঙ্গীতে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হলো। মুমূর্ষু রক্তাক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ঢাকায় আনতে বিলম্ব হলো দুই ঘণ্টা। বেগম জিয়া যদি ঘুণাক্ষরেও তাঁর ভবিষ্যৎ জানতেন তাহলে নিশ্চিত তিনি এ রকম অমানবিক কাণ্ড হতে দিতেন না। ক্ষমতা নিশ্চিত করতে বেগম জিয়া মইন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। কিন্তু সেই মইন উ আহমেদই বেগম জিয়ার গোটা পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়ালেন! আওয়ামী লীগ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে বলে ২০০১ সালে বিএনপির যেসব নেতা উল্লাসনৃত্য করেছিলেন তাঁরাই এখন ফেরারি। এমনটাই বাংলাদেশ।

মাঝেমধ্যে মনে হয়- মানুষ যদি তার ভবিষ্যৎ দেখতে পেত তাহলে এ হানাহানি, প্রতিহিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধ অনেকখানি কমে যেত। মানুষ যদি তার ভবিষ্যৎ জানত তাহলে হয়তো ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, মিথ্যাচার অনেকটাই কমে যেত। কিন্তু আবার অন্যভাবে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, মানুষের পরিণতি তার কাজেরই ফল। মানুষ যা করে তা-ই তার ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করে। আজ আপনি যা করবেন আগামীকাল তার ফলই আপনি ভোগ করবেন। কেউ তার কাজের ফলাফল দেখে যায়, কেউ দেখে না।

জিয়া যদি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল না করতেন। খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত না মেলাতেন। নির্মমভাবে তাহেরকে ফাঁসিতে না ঝোলাতেন (অথবা হত্যা না করতেন)। তাহলে আজ হয়তো তিনি এভাবে ইতিহাসে ধিকৃত হতেন না।

এরশাদ যদি তাঁর ওয়াদা রক্ষা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতেন তাহলে এ দেশের ইতিহাস অন্য রকম হতো।

বেগম জিয়া যদি জানতেন এ দেশে তাঁর ও তাঁর পুত্রের বিচার হবে। দুর্নীতির মামলায় তাঁকে জেল খাটতে হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতেও তাঁকে শেখ হাসিনার করুণার ওপর নির্ভর করতে হবে তাহলে ১০ বছরের ক্ষমতায় তিনি অন্যরকম হতেন। অনেক মানবিক, সহানুভূতিশীল হতেন। যারা ক্ষমতায় গেলে ভবিষ্যতের কথা ভাবে না বেগম জিয়া তাদের জন্য এক বড় শিক্ষা। তাই সুসময়ে মানুষকে শান্ত থাকতে হয়। ক্ষমতাবান মানুষকে হতে হয় সংযত। কাউকে ছোট করতে হয় না। মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হয়। ইতিহাসের পাতায় পাতায় আমরা দেখি যারা উদ্যত হয়েছেন, মানুষকে অসম্মান করেছেন, জনগণকে অবজ্ঞা করেছেন তাঁরা এর পরিণতি ভোগ করেছেন। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো ইতিহাস থেকে কেউ শেখে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭২ বছরের পুরনো দল। যুগে যুগে এ দলের নেতা-কর্মীরা নিগৃহীত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। আর সে কারণেই বোধহয় আওয়ামী লীগকেই এ দেশের মানুষ প্রাণভরে দিয়েছে। দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। এ সৌভাগ্য অন্য কোনো রাজনৈতিক দল পায়নি। তাই আওয়ামী লীগকে এ দেশের মানুষ অনেক দায়িত্বশীল, মানবিক ও সংযত দেখতে চায়। বিএনপি, জাতীয় পার্টি যা করেছে আওয়ামী লীগ তা করবে না, এটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। কিন্তু ইদানীং আওয়ামী লীগের কারও কারও কথা এবং কাজ অযাচিত অহমিকায় ভরপুর। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার কথাবার্তা, আচার-আচরণে মনে হয় আওয়ামী লীগের আগে দেশে কেউ ছিল না, আওয়ামী লীগের পরেও কেউ থাকবে না। আওয়ামী লীগ আজন্ম ক্ষমতায় থাকবে এমন অবাস্তব চিন্তার প্রকাশ্য রূপ দেখা যায় আওয়ামী লীগের কারও কারও মধ্যে। আওয়ামী লীগে অনেক রথী-মহারথী তৈরি হয়েছেন ইদানীং। এঁদের বেসামাল কাজ ও কথাবার্তায় বিস্মিত জনগণ। কেউ কেউ যেন গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের কথাই ধরা যাক। সরকারের কেউ কেউ যেন চাইছেন শিক্ষার্থীরা খেপে উঠুক। আন্দোলনে ঝাঁপ দিক। সারা জীবন দেখে এলাম শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়া। এখন কেন এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ করতে হবে? এটা তো সহজেই সমাধান করা যায়। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে আন্দোলন করছেন। দায়িত্বশীলরা তামাশা দেখছেন। ভাবখানা এই- কর দেখি কত দিন আন্দোলন করতে পারিস। জিনিসপত্রের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। গণপরিবহনে চলছে নৈরাজ্য, দেখার কেউ নেই। সারা দেশে খুনোখুনি শুরু হয়েছে, বন্ধের আন্তরিক উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কিছু নেতা জনগণকে শাসাচ্ছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেশের বেশ কয়েক জায়গায় আধা-পাতি নেতা জনগণকে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই’। যে দলটি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এত রক্ত দিল, এত আন্দোলন করল সেই দলের সিকি-আধুলি নেতারা এ করম অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কীভাবে? আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার আচার-আচরণে মনে হয় ভোট লাগবে না, জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা মূল্যহীন। সেদিন এক নেতা বললেন, ‘আওয়ামী লীগকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না’। ওই নেতার কথার প্রতিফলন দেখা যায় বাস্তবে। আওয়ামী লীগের অনেকেই এখন মনোনয়ন পেতে যত কসরত করেন, ভোট পেতে তা করেন না। দলের মনোনয়ন পেলেই হলো, এমন একটি রোগ আওয়ামী লীগে ভয়াবহভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। মনোনয়ন পেয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ব্যাধিতে আক্রান্ত আওয়ামী লীগ। যে দলের মহান নেতা জনগণকে সম্মান করতেন সবচেয়ে বেশি। যে দলের বর্তমান নেতা জনগণের কল্যাণে সবকিছু উৎসর্গ করেছেন সেই দলের খুচরা-পাতি নেতারা কথায় কথায় জনগণকে পিটিয়ে শায়েস্তা করতে চান।

একটু মিলিয়ে দেখুন ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি নেতারা যে ধারায় আওয়ামী লীগকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন, এখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সেই একই ভাষায় কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ জনগণকে পিষে ফেলতেও চান। ভয় দেখান। চোখ রাঙান। সদ্যবহিষ্কৃত গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের এক অডিও শুনলাম। এভাবে জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতা করতে পারেন, ভাবতে শিউরে উঠি। আওয়ামী লীগের অনেকে গত ১৩ বছরে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছেন। গাড়ি হয়েছে, বাড়ি হয়েছে, বিদেশে টাকার খনিও হয়েছে। এঁরা আওয়ামী লীগের অতীত জানেন না। আওয়ামী লীগের ত্যাগের ইতিহাস জানেন না। গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিস্ময়কর পরিবর্তন হয়েছে। এঁরা নিজেদের জনগণের সেবক ভাবেন না, জনগণের প্রভু ভাবেন। আওয়ামী লীগে কেউ কেউ মনে করেন তারাই শুধু প্রথম শ্রেণির নাগরিক, বাকিরা ক্রীতদাস। আওয়ামী লীগে কারও কারও ধারণা- ২০১৪ কিংবা ২০১৮-এর মতো বারবার তাঁরা বিপুলভাবে বিজয়ী হতেই থাকবেন। জনগণ বুড়ো আঙুল চুষবে। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই আওয়ামী লীগাররা জানেন না এ দেশটা জোয়ার-ভাটার। এ দেশের নদ-নদীর মতোই মানুষের মন। এক নিমেষেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এরশাদ ’৯০-এর নভেম্বরে জানতেন না ডিসেম্বরে তাঁর ভাগ্যে কী ঘটবে। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে বেগম জিয়া জানতেন না ২০০৭-এর জানুয়ারিতে তাঁর জন্য দীর্ঘ অন্ধকার টানেল অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগ কি জানে কাল কী ঘটবে?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ভিসা নিষেধাজ্ঞা: প্রশাসনের মধ্যে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রথম পর্যায়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের মধ্যে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল টেলিফোনে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন যে, কারা কিভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলেন। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য এক ধরনের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার যে প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ব্যক্তি ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এক ধরনের ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে বিচার বিভাগের কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার পর বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের ভয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং তারা সামনে কি হয় এই নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ভাষণের পর নিউইয়র্কের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। 

তিনি এটিও বলেছেন যে, বাংলাদেশে যারা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধা প্রদানের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের উদ্বেগ কতটুকু নিরসন করতে পারবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলা ইনসাইডার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে দেখেছে যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রাজনীতিবিদদের ওপর অনেক কম পড়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। বরং তারা মনে করছে যে, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে মাথায় রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনে আরও চাপ দেবে, এটাকে মাথায় নিয়েই কাজ করতে হবে। 

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই অবস্থানটি সঠিক ছিল। কিন্তু মাঝখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন ব্যক্তিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যে নাটক করেছিল সেটি সরকারের জন্য ক্ষতিকারক হয়েছে বলে তারা মনে করেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বরং কঠোরভাবে নির্বাচনের রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে ভিসা নীতির যে প্রভাব প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর পড়েছে সেই প্রভাব নিরসন না করতে পারলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে বলে তারা মনে করছেন। 

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্বীকার করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন সামনের দিনগুলোতে এক ধরনের অস্বস্তিতে কাটাবে এবং ভিসা নীতির ভয়ে সাধারণ কাজ করতে গিয়ে আতঙ্ক বোধ করবে। এর প্রভাব পড়বে প্রশাসনের ওপর। নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বিরোধী আন্দোলন আরও চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়াতে হবে এবং সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে। তা না হলে এই ভিসা নীতির আতঙ্ক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করবে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   ভিসা নীতি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আগামী ১০০ দিন বাংলাদেশে কি ঘটতে পারে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যৎ গণনা আমার কাজ না। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে কি ঘটতে পারে কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও এখন বলা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ । হয়তো তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের একটি ধারণা পাওয়া যেতেই পারে। ১০০ দিনের মধ্যে দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? সেরকম একটি নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। অফিসে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অজানা এক গন্তব্যে বাংলাদেশ।

নির্বাচন হবে কিনা, তা যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। তেমনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগামী ১০০ দিন কতগুলো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু’দলই রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চাইছে। মাঠের দখলের লড়াই এখন দৃশ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত এখন শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপির শক্তি এবং নেতৃত্বের দক্ষতার উপর নির্ভরশীল নয়। পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই দেশের নির্বাচন এবং রাজনৈতিক গতি প্রবাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই যেমন ধরা যাক, বেগম জিয়ার অসুস্থতা। কাগজে কলমে এখনও বেগম জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন। যদিও তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আছেন গত পাঁচ বছর ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে ৭৮ বছর বয়সী এই প্রবীন মানুষটি নানা রোগ শোকে আক্রান্ত। হাসপাতালে আছেন বেশ কিছুদিন ধরে। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে আছেন তিনি এবং তার দল। দুটি দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে কারান্তরীণ ছিলেন দুই বছরের বেশি সময়। সরকারের বিশেষ বিবেচনায় তিনি কারাগার থেকে ‘ফিরোজায়’ গেছেন বটে। কিন্তু নানা শারীরিক সমস্যা তাকে রীতিমতো গ্রাস করে ফেলেছে। বিএনপি নেতারা মাঝে মধ্যেই বলেন ‘বেগম জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’ তার উন্নত চিকিৎসার দাবী বেশ পুরনো। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এনিয়ে সরকারের কাছেও দেন দরবার করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এব্যাপারে সরকার সায় দেয়নি। অনেকেই বেগম জিয়ার শেষ পরিণতির অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের মধ্যেই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। বেগম জিয়ার কিছু হলে দেশে কি হবে? আগামী ১০০ দিনের মধ্যে কি বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটবে? জীবন-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। কিন্তু নির্বাচনের আগে যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটে তাহলে দেশের পরিস্থিতি কি হতে পারে? অনেকেই মনে করেন এরকম অবস্থায় বিএনপির কর্মীরা প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন। বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা ভাঙ্গচুর, জ্বালাও পোড়াও ঘটিয়ে দেশে সৃষ্টি করতে পারে এক অশান্ত পরিবেশ। ঘেরাও, সন্ত্রাসী তান্ডব করে দেশে তৈরী হতে পারে এক অরাজক পরিস্থিতি। সরকার সেরকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা তা নিয়েও অনেকে শংকিত। নির্বাচনের আগে এরকম একটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা দেশে সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করতে পারে। নির্বাচনও বাধাগ্রস্থ করতে পারে। একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে বলে অনেকের ধারনা। তবে আশাবাদী মানুষরা এনিয়ে শঙ্কিত নয় নানা কারণে। বেগম জিয়াকে যখন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তখনও অনেকে শংকিত ছিলেন। অনেকেই মনে করেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। তেমন কিছুই শেষ পর্যন্ত হয়নি। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ে বেগম জিয়া দোষী সাব্যস্ত হন। দন্ড কার্যকর করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তখন বিএনপির অচল করে দেয়ার হুমকি কাজে দেয়নি। বেগম জিয়ার অনাকাঙ্খিত কিছু হলে, এবারও বিএনপির নেতা-কর্মীরা কতদূর কি করতে পারে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। কেউ কেউ মনে করেন চার/পাঁচদিন বড়জোড় এক সপ্তাহের একটা ঝড় তুলবে। তারপর সব কিছু ঠিকঠাক হবে। ঠিক হোক না হোক বাংলাদেশের আগামী ১০০ দিনের অনিশ্চয়তার যাত্রায় বেগম জিয়া একটা বড় ‘এক্স ফ্যাক্টর’। 

বেগম জিয়ার মতোই ড. ইউনূস ইস্যুও আগামী ১০০ দিনের অভিযাত্রার গতিপথ পাল্টে দিতে পারে যে কোন সময়ে। যেভাবে শ্রম আদালতে মামলা এগুচ্ছে তাতে ড. ইউনূসের রায় যে নির্বাচনের আগেই হবে তা  মোটামুটি নিশ্চিত। শ্রমিকদের এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে শান্তিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবীদকে কারাগারে যেতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়ার মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা নন। তার বিরাট দল, বিশাল কর্মী বাহিনীও নেই। কিন্তু বেগম জিয়ার চেয়েও ড. ইউনূস অনেক বেশি প্রভাবশালী। ড. ইউনূস ইস্যুতে ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট অবস্থান নিয়েছে। শতাধিক নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। হিলারী ক্লিনটন এবং বারাক ওবামার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ড. ইউনূস ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এমনিতেই গত দুবছর ধরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট সম্পর্ক নানা অস্বস্তি এবং টানাপোড়েন চলছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা কি কি করবে তার তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, সহায়তা কমানোর হুমকি, সামরিক সহায়তা হ্রাস সহ নানা হুমকি আর ধমকের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এক বাঁচাল পররাষ্ট্র মন্ত্রী একাই বেসামাল কথা বলে কূটনীতির মাঠকে কর্দমাক্ত করে ফেলছেন। এই অবস্থায় ড. ইউনূস ইস্যু কি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ নিয়ে যাবে? কিছুদিন ধরেই সরকার প্রধান বলছিলেন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাকে হয়তো ক্ষমতায় দেয়তে চায় না।’ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন ‘এখানে কেউ কেউ তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ যুক্তরাষ্ট্র যে তার স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে এটা প্রমাণিত সত্য। বাংলাদেশে যেমন আমেরিকার অনেক স্বার্থ আছে, তেমনি ড. ইউনূসের ব্যাপারে তাদের আছে আলাদা আবেগ এবং পক্ষপাত। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনায় কি ঘি ঢালবে ড. ইউনূস ইস্যু? বাংলাদেশে আগামী ১০০ দিনের ঘটনা প্রভাব কোন দিকে মোড় নেবে তা অনেকটা নির্ভর করে ড. ইউনূসের মামলার রায়ের উপর। 

১০০ দিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়? এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সম্পূরক প্রশ্নও জুড়ে দেয়া যায় যুক্তরাষ্ট্র যা চায় সব সময় কি পায়? আগামী ১০০ দিনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েনের পরিণতিও বোঝা যাবে। 

দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, পিয়াজ আলুর মূল্য নির্ধারণ করে আরেকটা অযোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। ঐ দামে কোথাও এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্তারা নির্লজ্জের মতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছে। মানুষ ফুঁসে উঠছে। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন, বিরোধী দল নয় সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ। গত ১৫ বছর মানুষ খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতার পালা বদল, কিংবা বিরোধী দলের দাবী দাওয়া বিষয়ে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে স্বপ্ন দেখতো। ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতো। কিন্তু পঁচা শামুকে পা কাটার মতো, ডেঙ্গু, দ্রব্যমূল্য, দূর্নীতি সরকারের উপর জনগনের আস্থা নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক হলো এসব সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেবল অযোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন না। অসত্য বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। সংকটকে পাত্তা দিচ্ছেন না। অশান্ত, ক্ষুদ্ধ জনগণ কি করতে পারে, তা বাংলাদেশ বহুবার দেখেছে। নির্বাচনের আগে জনগণকে তাঁতিয়ে তুলতে অনেকেই চাইবে। সরকারের ভেতর কিছু অর্থব, দায়িত্ব জ্ঞানহীনরা সেই অস্ত্রই যেন তুলে দিচ্ছে বিরোধী পক্ষের হাতে। দেশে স্যালাইনের হাহাকার, দেখার কেউ নেই। মশা নিয়ন্ত্রণের নামে নজিরবিহীন জালিয়াতি এবং লুণ্ঠনের পরও কেউ কেউ দাঁত কেলিয়ে হাসেন। বাজারে আগুন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী এবং সচিবের বক্তব্য মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এসব ঘটনা বিস্ফোরণ সৃষ্টি করতে পারে। আগামী ১০০ দিনে এসব প্রতিকূলতার দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে সরকারকে। বিএনপি এখন এক দফা দাবীতে আন্দোলন করছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দলটির টানা কর্মসূচী রয়েছে। বিএনপি নেতারা অক্টোবরের মধ্যে আন্দোলনকে একটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু একা বা নাম সর্বস্ব কিছু সঙ্গী সাথীকে নিয়ে আন্দোলন করে বিএনপি এক দফা আদায় করতে পারবে, এটা বিএনপির নেতারাও বিশ্বাস করেন না। বিএনপি তাদের আন্দোলনের সাফল্যের জন্য এসব এক্স ফ্যাক্টরের উপরই নির্ভরশীল। বেগম জিয়ার কিছু হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে, বিএনপির একদফা আদায় সহজ হবে। কিংবা ড. ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপর চূড়ান্ত নাখোশ হবে। বাংলাদেশের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা দেবে। শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বন্ধ করবে। ব্যস। এক দফা আদায়ের পথ সুগম হবে। এরকম সব যদি, তবে, কিন্তুর উপর ভর করে বিএনপি আন্দোলন করছে। তাই জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি থেকে বিএনপির কর্মীরা হতাশ হন। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী যখন গ্রামের চাওয়ালার মতো শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষায় সেলফির গল্প শোনান, তখন তারা উজ্জীবিত হন। তাই ১০০ দিনে দেশের বা বিএনপির গন্তব্য নির্ধারণে ক্ষমতা বিএনপির নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে চারপাশের ঘটনা প্রবাহের উপর। বিএনপি না পারলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিন্তু ঠিকই পারে ১০০ দিনের ঘটানা প্রবাহের গতিপথ নির্ধারণ করতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। সংবিধান সম্মুন্নত রাখা। সংবিধান অনুযায়ী এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি নির্বাচন। আগামী ১০০ দিনে এই লক্ষ্যে অবিচল থেকে দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে দলটিকে। এজন্য প্রথম এবং প্রধান কাজ জনগণের আস্থা অর্জন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু তার মন্ত্রী সভা এবং চারপাশে কিছু ব্যক্তির চেহারা দেখলেই সাধারন মানুষ ইদানিং ক্ষুদ্ধ হয়ে যায়। আগামী  ১০০ দিনের জন্য এসব অনাকাঙ্খিত ভাঁড় এবং দূর্বৃত্তদের ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। সরকারের ভেতর থেকে বা সরকারের সুবিধাভোগী ১০০ জনকে বাদ দিলেই সরকারের চেহারাটা আবার চমৎকার হবে। এসব অযোগ্য চাটুকার লুটেরাদের ভার এখন আর কোন ভাবেই সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না। 

দলেও একটা শুদ্ধি অভিযান করতে হবে। হাইব্রিড, উদ্বাস্তু, শেকড়হীনদের সরিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসাতে হবে জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম, মির্জা আযমের জনপ্রিয় নেতাদের। প্রকৃচি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা হঠাৎ বনে যাওয়া নাদুস নুদস জনবিচ্ছিন্ন নব্য নেতাদের ঘরবন্দী করতে হবে। ত্যাগী পরিক্ষীত দিতে হবে রাজপথের দায়িত্ব। জনগণের কাছে যেতে হবে পরিচ্ছন্ন নেতাদের। টিন চোর, কাবিখা চোর, নিয়োগ বাণিজ্য করা, টেন্ডারবাজ, মুখোশধারী রাজাকারদের বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে পরিচ্ছন্ন, বিতর্কহীন, কলুষমুক্ত প্রার্থীদের। তাহলেই মানুষ আশাবাদী হবে। ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ভোট উৎসবে যোগ দেবে। আসলে ১০০ দিন পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কিনা তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের উপরই। আওয়ামী লীগ কি পারবে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন অর্থপাচারকারী, ব্যাংক লুটেরা, সিন্ডিকেট, দূর্নীতিবাজ, অযোগ্য, অর্থব চাটুকার, মুখোশধারী রাজাকারদের হাত থেকে দল এবং সরকারকে মুক্ত করতে। তাহলেই বন্দরে নিরাপদে নৌকা ভিড়বে। 


সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

প্রাক পর্যবেক্ষণের পরেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচনের পরিবেশ কতটুকু আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি প্রতিনিধি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর যৌথভাবে স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানা গেছে। নানা কারণে এই প্রতিনিধি দলের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান বারবার পুনরুক্ত করছে। 

আগামী নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা চায়। আর এরকম নির্বাচন যদি না হয়, নির্বাচনকে যদি বাধাগ্রস্ত করা হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এমন ঘোষণা আসছে। তবে নির্বাচনের আগেও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিনিধি দল আসছে সেই প্রতিনিধি দলের রিপোর্ট এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। এই প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল যদি সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটা অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তাহলে তারা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাবে। আর যদি তারা দেখে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ সম্ভব নয় তাহলে তারা সরকারকে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাতে পারে। পাশাপাশি এই প্রতিনিধি দল যদি পর্যবেক্ষণ করে দেখে যে, নির্বাচনের পরিবেশ সংঘাতপূর্ণ এবং এখানে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই তাহলে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত অবস্থান কি হবে তা নির্ভর করছে এই স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের রিপোর্ট এর ওপর। এই রিপোর্টটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল এসে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং একটা মতামতের চেষ্টা করবেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতগুলো সরাসরি অবস্থান রয়েছে। তারা সরাসরি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সরাসরি সমর্থন করতে পারে না। তারা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যস্থতাও করতে পারে না। তবে বাংলাদেশে যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় এটি তাদের প্রত্যাশার জায়গা। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত তারা মনে করছে, এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছে, যদি এক তরফা নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অস্ত্রগুলো আছে সেই অস্ত্রগুলো প্রয়োগ করবে। এখন দেখার বিষয় পর্যবেক্ষণ দল ঢাকায় এসে কি মনোভাব নিয়ে যান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   ভিসা নীতি   প্রাক পর্যবেক্ষণ দল  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

পাঁচ বিষয়ে অনড় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সমঝোতায় পৌঁছতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। সেখানে তারা বিভিন্ন মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলেট এর সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়াও পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক করেছেন। উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক কূটনৈতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই সমস্ত কোন বৈঠকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত হচ্ছে না। তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করছে না। যে সমস্ত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনড় রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো নির্বাচনে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো। এই জন্য রাজনৈতিক সংলাপ দরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের রাজনৈতিক সংলাপে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। সংলাপ প্রক্রিয়ার জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবতীর্ণ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা রাজনৈতিক সমঝোতাকে স্বাগত জানায় এবং রাজনৈতিক সংলাপের প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে। 

২. ড. ইউনূস ইস্যু: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারী মামলার কার্যক্রম গুলোর স্থগিত চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি উজয়া জেয়া সরাসরি ভাবে পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার এমন একটি মন্তব্য করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের পক্ষ থেকে। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সেই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূস ইস্যুতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। 

৩. মানবাধিকার ইস্যু: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদিলুর রহমান খান এবং অধিকার সহ অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেনি। বরং মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল সংবেদনশীল এবং যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে এবং এই ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন ছাড় দেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। 

৪. নিখোঁজ ৭০ জনের ব্যাপারে তদন্ত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ৭০ জন নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। এই ৭০ জনের ব্যাপারে সঠিক তথ্য তারা নির্বাচনের আগে নিশ্চিত করতে চায়। আর এ ব্যাপারেও তারা কোন ছাড় দিতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। 

৫. সাইবার সিকিউরিটি আইন: সাইবার সিকিউরিটি আইনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিপন্থী। এই আইনের বিষয়েও তারা কোনো ছাড় দিতে রাজি না। তারা মনে করে, এ ধরনের আইন  সরকারের বাতিল করাই উচিত। 

এইসব বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে মতদৈত্যতা সেই মতদৈত্যতার জায়গা থেকে ২ দেশ এখনও একটা সম্মানজনক সমঝোতার জায়গায় আসতে পারেনি।

বাংলাদেশের নির্বাচন   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   নিউইয়র্ক   পররাষ্ট্রমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আরও যারা যাচ্ছে তৃণমূল বিএনপিতে

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বিএনপি থেকে একঝাঁক নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছে—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপির ভিতর। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেতারা নন, বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী নেতারা এমনকি বিভাগীয় জেলা পর্যায়ের নেতারাও তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতারা এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের একটি বিরাট অংশ তৃণমূল বিএনপিতে যেতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। 

সংশ্লিষ্ট গুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন—এমন গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল সময় পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন—এমন কোথাও শোনা যাচ্ছে। খুলনার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুও তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন এমন দাবি করছেন তৃণমূল বিএনপির নেতারা। এছাড়াও বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান সহ বেশ কয়েকজন নেতার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান এবং এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে তাদের সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির যোগাযোগ করা হচ্ছে। এই সংখ্যা দুইশো ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দেখা গেছে, তারাও স্বীকার করেছেন যে তাদের সাথে এখন যোগাযোগ বাড়ছে। হঠাৎ করেই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক কেন বেড়ে গেল—এই নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির একটি অংশ বলছে যে, বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে চায় এমন নেতারা মনে করছেন যে আগামী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো অবস্থাতেই অংশগ্রহণ করবে না। আর এ কারণেই তারা তৃণমূল বিএনপিতে যেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাকেই নিরাপদ মনে করছেন। এই নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করবেন এমনটি প্রত্যাশা করছেন। 

অন্যদিকে যে সমস্ত বিএনপির নেতারা বেশি আত্মবিশ্বাসী তারা বলছেন যে, এটা আসলে সরকারের পাতানো ফাঁদ। সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়াই করতে চায়। বিভিন্ন মহলের কাছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে চায়। আর এ কারণেই তৃণমূল বিএনপিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি থেকেই নয় বরং এরকমও গুঞ্জন রয়েছে যে বিকল্প ধারা তৃণমূল বিএনপিতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এমনকি কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে এলডিপি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারে—এমন গুঞ্জনও রয়েছে। তবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তারা কেউই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কথা স্বীকার করেননি। 

তারা বলেছেন, এটা নোংরা অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার। এই মুহূর্তে বিএনপি ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো অভিপ্রায় নেই। কিন্তু বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ বেড়েছে এবং এই যোগাযোগের প্রধান কারণ হলো তাদেরকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করা। তৃণমূল বিএনপি শক্তিশালী হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের একটি পথ পরিষ্কার হয়ে যায় এবং নির্বাচনে যারা বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থানে আছে তাদের অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়—এমন ভাবনা থেকেই তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক বাড়বে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন মহল। এমনকি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে যে কয়েকজন নির্বাচিত হয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্তত একজন তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করবেন—এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে তৃণমূল বিএনপিতে কতজন, কিভাবে যোগদান করেন।


তৃণমূল বিএনপি   নির্বাচন   বিএনপি   বিএনপি থেকে বহিস্কৃত   সরকার   শওকত মাহমুদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন