ইনসাইড আর্টিকেল

বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের শেষ সপ্তাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ০৭ অগাস্ট, ২০১৮


Thumbnail

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের।

এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে রহীম শাহ সম্পাদিত শাহরিয়ার ইকবাল এর ‘বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের শেষ সপ্তাহ’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে।

বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের শেষ সপ্তাহ

শাহরিয়ার ইকবাল

পৃথিবীতে মাঝে মাঝে এমন একেক জন ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়, যাঁদের দূরদর্শিতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বে সম্রাট অশোক, সম্রাট আকবর, কন্সটেইনটাইন, কামাল আতাতুর্ক, আহমদ শোয়েকার্ন, গামাল নাসের, লেনিন, মাও সেতুং, মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

কোনো না কোনো ইতিহাসবিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগান্ত সৃষ্টিকারী নেতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা আজকের আলোচনা, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটি বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। তিনি বাঙালি জাতিকে তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি জাতীয় পতাকা ও একটি সংবিধান উপহারের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানি বন্দীশিবির থেকে ফিরে এসে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। একটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠনে যখন তিনি ব্যস্ত, ঠিক সে সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল ঘাতক কর্তৃক সপরিবারে নিহত হন।

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতিরূপে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শাসনযন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। জাতীয় জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর হস্তক্ষেপ ছিল অনিবার্য। বাংলাদেশের জনজীবনের তিনি ছিলেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙালি জাতির অপরিসীম নির্ভরশীলতার পরিচয় বহন করে। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সরকারি অবস্থান কেন্দ্র গণভবনে প্রতিদিন ভিড় জমাত বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শত শত মানুষ। কেউ তাঁর কাছে যেত সাহায্যের জন্য। কেউবা সামান্য অনুগ্রহ লাভের আশায়। মন্ত্রীরা যেতেন পরামর্শের জন্য, আমলারা নির্দেশ গ্রহণের জন্য। কখনো আবার বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎপ্রার্থী হতেন স্বীয় দেশের সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের কোনো শুভেচ্ছাবাণী নিয়ে। কখনো আবার বিদেশী মন্ত্রীরা আসতেন পরামর্শের জন্য।

একবার মধ্যরাতে রাষ্ট্রাচারের (প্রটোকলের) সকল নিয়ম ভঙ্গ করে মিসর ও আলজেরিয়ায় দুই রাষ্ট্রপ্রধান আনোয়ার সাদাত ও হুয়ারি বুমেদিন ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে উপস্থিত হলেন। উদ্দেশ্য, স্বাধীন বাংলাদেশের অভিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার জন্য পরামর্শ করা। আরও এসেছিলেন যুগোস্লাভিয়ার মহানায়ক জোসেফ ব্রজ টিটো। উদ্দেশ্য একই। এই নতুন দেশটির নেতা শেখ মুজিবকে একবার নিজ চোখে দেখা ও পরামর্শ করা এবং পরিশেষে সকল প্রকার সহায়তার আশ্বাস প্রদান। এমনি আরও অনেক নেতা এসেছিলেন সে সময়ের বাংলাদেশে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গাউ হুইটলাম, আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান মোহাম্মদ দাউদ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোও লোভ সামলাতে না পেরে একদিন সদলবলে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর অতি সাধের মুসলিম বেঙ্গলের মাটিতে। উল্কার বেগে এসে ভুট্টো সাহেব দেখলেন তাঁর কল্পনার ‘মুসলিম বেঙ্গল’ সত্যি সত্যিই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। যার অবিসংবাদিত নেতা তাঁর সেই চির চেনা মুখ- শেখ মুজিব।

এহেন ব্যক্তি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর তাই গণভবনে ছিল অসংখ্য লোকের ভিড়। বঙ্গবন্ধু সবার সঙ্গে অবাধে দেখা করতেন। মানুষের ধারণা হয়েছিল যে, বঙ্গবন্ধু সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। কিন্তু ধীরে ধীরে রাষ্ট্রাচারের প্রয়োজনে গণভবনে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হলো। গণভবনের পশ্চিম গেটে কিছুটা নিরাপত্তার ব্যবস্থা হলো। তখনও এসএমসএফ-এর জন্ম হয়নি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হত। বঙ্গবন্ধুর কাছে দিনের কোনো একসময় সেই তালিকা উপস্থাপন করা হত। তালিকাটি তাঁর অনুমোদন লাভের পর সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনের গুরুত্ব অনুযায়ী সাক্ষাতের তারিখ ও সময় দেওয়া হত। আজ এ কথা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে; কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রায় প্রত্যেক সাক্ষাৎপ্রার্থীর নাম পড়ে শোনানোর সময় তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেও সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়ে দিতেন। সমগ্র বাংলাদেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তের মানুষ দর্শনপ্রার্থী হতেন। তিনি তাদের অধিকাংশের নাম জানতেন। এমন স্মৃতিশক্তি পৃথিবীর খুব কম মানুষের থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো সাক্ষাৎপ্রার্থী তাঁর সামনে আসার পর তিনি তার বাবা মা ভাইয়ের কথা তাকে বলতেন এবং তাকে জানাতেন ৮/৯বছর আগে তিনি তাদের গ্রামে সাংগঠনিক সফরে গিয়েছিলেন এবং সেই গ্রামের কোনো ব্যক্তি তাকে ক্লান্ত অবস্থায় প্রাণের উষ্ণতা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। এ কথা শোনার পর অনেক দর্শনপ্রার্থী অভিভূত হয়ে যেতেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তখন নানা সমস্যা ও সীমিত সম্পদ। কিন্তু তার মাঝেও গণভবনে যে সকল নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছিলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতেন। যে সকল কর্মকর্তা সে সময় গণভবনে কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, সর্বজনাব এইচ টি ইমাম, ড. আবদুস সাত্তার, আবদুর রহিম, মনোয়ারুল ইসলাম, কর্নেল জামিল, মশিউর রহমান, ড. ফরাসউদ্দিন, সৈয়দ রেজাউল হায়াৎ, ড. সৈয়দ আবদুস সামাদ, ড. ফজলুল হাসান ইউসুফ, আবদুল করিম, নূরুল ইসলাম, আবদুল তোয়াব খান, আবদুল মালেক, মকবুল হোসেন, মাহফুজুস সোবহান, সৈয়দ আমিনুর রহমান এবং আরও অনেকে।

বঙ্গবন্ধু সরকারি বাসভবনে বাস করতেন না। তিনি নিজ বাসস্থান হতে গণভবনে আসতেন প্রতিদিন সকাল ৯টায়। সকালে একটি ছোট অথচ সুসজ্জিত হাউজ গার্ডদল তাকে অভ্যর্থনা জানাতো। সে সময় গণভবনের পিছনের প্রশস্ত দরজা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপরে যেতেন। তারপর সেই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হত। হাউজ গার্ডদের অভিবাদন গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী দোতলায় তাঁর অফিসে কাজ আরম্ভ করতেন। সে সময় প্রায় প্রতিদিন সকালে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন পররাষ্ট্র সচিব ফখরুদ্দিন আহমদ। অতঃপর আসতেন ডিআইজি স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এরপর আরম্ভ হত দিনের কাজ। তাঁর জীবনের শেষ সপ্তাহের দৈনিক কর্মসূচি থেকে তাঁর দৈনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে একটা ধারণা করা সম্ভব হবে।

১. বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট ১৯৭৫/২১ শ্রাবণ ১৩৮২, ২৮ রজব ১৩৯৫ সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ৫.৩০ মিনিটে ও সেইদিন সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩৮ মিনিটে। ঐদিন রাষ্ট্রপতির কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ:

সকাল ৯.৩০টা এটিনি সতার, সু্ইজারল্যান্ডের মাননীয় রাষ্ট্রদূত কর্তৃক পরিচয়পত্র পেশ।

সকাল ১০.৩০ টা মাননীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী।

সকাল ১১ টা মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুপুর ১২ টা মাননীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

বিকেল ৫.৩০ টা শ্রী সমর সেন, ভারতের মাননীয় হাইকমিশনার।

সন্ধ্যা ৬.১০ টা জনাব কাজী মোজাম্মেল হক, এমপি।

১.৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতি প্রতিদিন গণভবন কমপ্লেক্সের বাসভবনে যেতেন। সেখানে স্নানের পর দুপুরের আহার করতেন। এ সময় ব্যক্তিগত বাসস্থান হতে তাঁর দুপুরের খাবার পাঠানো হত। দুপুরের আহার ছিল অতি সাধারণ। তিনি কই মাছ অধিক পছন্দ করতেন দুপুরে। আহারের পর কিছুটা বিশ্রাম নিতেন। এ সময় ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করতেন। তাদের বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার মধ্য দিয়ে তিনি দেশের হালহকিকত সম্পর্কেও একটি স্বচ্ছ ধারণা পেতেন। বিকেল ৪টায় তিনি হাঁটতেন গণভবন প্রাঙ্গনে। এরপর লেকের ধারে যে ঘাট ছিল সেখানে বড় কালো চেয়ারগুলোর একটিতে তিনি বসতেন। এ সময় গণভবন লেকে প্রচুর মাছ ছাড়া হয়েছিল। মাছকে খাবার দেওয়া হতো। কখনো তিনি নিজ হাতে মাছের খাবার ছিটিয়ে দিতেন। সিঁডির কাছে মাছের ভিড় জমত। এরূপ মাছের খেলা দেখতে বঙ্গবন্ধু অদ্ভুত আনন্দ পেতেন। বিকেলে এই লেকেরে ধারে কোনো কোনো সময় মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা আসতেন। এ সময়টায় যেহেতু বঙ্গবন্ধু অনেকটা রিল্যাক্সড মুডে থাকতেন, সেজন্য অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেই অনির্ধারিতভাবে আসতেন তাঁর সঙ্গে নানা রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য। আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান ও আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাঝে মাঝে এ সময় আসতেন তাঁর সঙ্গে নানা রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য। বঙ্গবন্ধু সাধারণত রাত ৯টা পর্যন্ত গণভবনে থাকতেন। অতঃপর কোনো পূর্বনির্দিষ্ট সাক্ষাৎপ্রার্থী না থাকলে ব্যক্তিগত বাসস্থানে যেতেন। সে সময় প্রতি সোমবার বিটিভিতে একটি বাংলা ছায়াছবি দেখানো হত। তখন এ দেশে ভিসিআর আসেনি। সেজন্য সোমবারের বাংলা ছায়াছবিটি দর্শকেরা আগ্রহভরে দেখতেন। গণভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন ঐ ছবিটি দেখার সুযোগ পান সেজন্য বঙ্গবন্ধু সোমবার ৮টার আগেই বাসায় চলে যেতেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও একটি ছোট নীল রঙের টয়োটা গাড়ি ব্যবহার করতেন জ্বালানি তেলের সাশ্রয়ের জন্য। এই ছোট গাড়িটি বিমানের ট্রান্সপোর্ট পুল হতে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

২. ৮ আগস্ট ১৯৭৫/২২ শ্রাবণ ১৩৮২/২৯ রজব ১৩৯৫ ছিল শুক্রবার।

সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ০৫.৩০ মিনিটে ও সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩৮ মিনিটে। দিনের কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ :

সকাল ১০-০০টা প্রথম ও দ্বিতীয় কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানদ্বয়। সকাল ১০-৩০টা মাননীয় রেলওয়ে প্রতিমন্ত্রী। সকাল ১১-৩০টা মাননীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎমন্ত্রী। বিকেল ৫-৩০টা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান।

আমার যতদূর মনে পড়ে, সেদিন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল। তিনি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার শেষ বন্দর, নৌ ও জাহাজ চলাচলমন্ত্রী ছিলেন।

উল্লেখ্য, দিনের কর্মসূচিতে উল্লেখ না থাকলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব আসতেন। তারা একান্ত সচিবদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতির কর্মব্যস্ততা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পরই কোনো জরুরি নথি নিয়ে আসতেন। ড. সৈয়দ আবদুস সামাদ ছিলেন উপসচিব (নথি)। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যে নথিগুলো রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্যে আসত সেগুলো ড. সামাদ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ও নির্দেশের জন্য উপস্থাপন করতেন।

৩. শনিবার ৯ আগস্ট ১৯৭৫/২৩ শ্রাবণ ১৩৮২, ৩০ রজব ১৩৯৫। সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ০৫.৩২ মিনিটে ও সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩৫ মিনিটে। এদিন সাক্ষাৎপ্রার্থী ছিলেন:

সকাল ১০-০০টা ড. স্যামস্টিট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি।

সকাল ১১-০০টা প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধান।

বিকেল ৬-০০টা জনাব জিল্লুর রহমান, এমপি, বাকশালের সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য।

সন্ধ্যা ৬-১৫ মি. এটর্নি জেনারেল।

৪. সোমবার ১১ আগস্ট ১৯৭৫/২৫ শ্রাবণ ১৩৮২, ২ শাবান ১৩৯৫। সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ০৫:৩২ মিনিটে ও সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩৬ মিনিটে।

সকাল ১১-৩০টা জনাব গিয়াস উদ্দীন সাক্ষাৎ করেছিলেন।

বিকেল ৬-৩০ জনাব আযহারুল ইসলাম, দ্বিতীয় কর্মকমিশন।

৫. মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ১৯৭৫/২৬ শ্রাবণ ১৩৮২, ৩ শাবান ১৩৯৫। সূর্যোদয় হয়েছিল ০৫.৩২ মিনিটে ও সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩৫ মিনিটে। সেদিন সাক্ষাৎপ্রার্থী খুব কম ছিল।

সকাল ১০.০০ টায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী।

বিকেল ৬-০০ টায় এ এফ এ হোসেন, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট।

৬. বুধবার ১৩ আগস্ট ১৯৭৫/২৭ শ্রাবণ ১৩৮২, ৪ শাবান ১৩৯৫। সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ৫.৩৩ মিনিটে ও সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩১ মিনিটে । দিনের কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপঃ

সকাল ১১-০০টা জনাব এম আর সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্রে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত।

বিকেল ৬-০০ টা জনাব মওদুদ আহমদ বার এ্যাট-ল`।

বিকেল ৬-৩০ টা জনাব এম.এ. রব (চাঁদপুর)

৭. বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ১৯৭৫/২৮ শ্রাবণ ১৩৮২, ৫ শাবান ১৩৯৫। সূর্যোদয় হয়েছিল সকাল ০৫.৩৩ মিনিটে ও সূর্যাস্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ১৮.৩১ মিনিটে। এদিনের কর্মসূচিতে দেখা যায় তিনি বেশ ব্যস্ত ছিলেন। কর্মসূচিতে ছিল।

সকাল ৯.৪৫ মি. প্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার (দক্ষিণ কোরিয়া) মহামান্য রাষ্ট্রপতি পার্ক চুং হির মাননীয় বিশেষ দূত।

সকাল ১০-০০ টা নৌবাহিনী প্রধান।

সকাল ১০-৩০ টা মাননীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রী।

১১-০০টা মাননীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিমানবাহিনী প্রধান।

১১-৩০টা জনাব আতাউর রহমান খানের দুই কন্যা।

বিকেল ৫-৪৫ টা মাননীয় উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিকেল ৬-০০ টা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বঙ্গবন্ধু সকাল ১১টায় আমাকে বলেন যে, জনাব আতাউর রহমান খান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন। তিনি কেমন আছেন জানার জন্য তার কন্যাদের যেন আসতে অনুরোধ করা হয়। আমি টেলিফোনে জনাব আতাউর রহমান খানের বাসায় যোগাযোগ করি। তার দুই কন্যা বেলা ১১-৩০টায় রাষ্ট্রপতির কক্ষে প্রবেশ করেন। বঙ্গবন্ধু নিজ কন্যার মতোই তাদের সঙ্গে সস্নেহে কথা বলেন এবং তাদের বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেন । এদিন বঙ্গবন্ধুকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল। কিন্তু তথাপি তিনি জনাব আতাউর রহমান খানের কন্যাদের সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলেছিলেন।

এই দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু যখন লেকের ধারে বসেছিলেন এবং মাছের জন্য খাবার ছড়ানো হচ্ছিল, সে সময় (প্রায় ৪টা) অনির্ধারিতভাবে এসে উপস্থিত হলেন তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর । তাকে একটি চেয়ারে বসতে বলেন বঙ্গবন্ধু এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় বালক রাসেল লেকে সাঁতার শিখছিল। কিছুক্ষণ পর রাসেল ভেজা কাপড়ে এসে দাঁড়াল। তার সঙ্গে ছিলেন সাঁতার প্রশিক্ষক একজন নায়েব সুবাদার। বঙ্গবন্ধু রাসেলকে বলেন যে, ইনি তোমাকে সাঁতার শেখাচ্ছেন, সেজন্য তাকে তোমার কিছু উপকার দেওয়া উচিত। কিছুক্ষণ পর তাহেরউদ্দিন ঠাকুর প্রস্থান করেন এবং শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোকাম্মেল হক আসেন। পরের দিন বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা । শিক্ষা সচিব বঙ্গবন্ধুকে একটি মানপত্র দেখান। এটি পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাঁর সম্মানে পাঠ করবে। কিছুক্ষণ পর পানিসম্পদ-মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতও এসেছিলেন। পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে অভ্যর্থনা দেওয়ার সময় যে সকল বক্তৃতা হবে সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী।

এ সময় রাষ্ট্রপতির অত্যন্ত স্নেহভাজন দুজন কর্মকর্তা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছিলেন। এরা হলেন মনোয়ারুল ইসলাম ও ফরাসউদ্দিন। তাঁদের সম্মানে সেদিন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের কর্মকর্তারা একটি নৈশভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাত প্রায় ৮টার সময় বাসায় চলে গেলেন। যাওয়ার সময় একান্ত সচিব রেজাউল হায়াৎ ও আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, ১৫ আগস্ট সকালে আমরা যেন তাঁর বাসস্থানে সরাসরি যাই। সেখান থেকে তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে আমাদের। এদিন আমরা গণভবনে রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা অনেক রাত পর্যন্ত নৈশভোজের আনন্দ উপভোগ করেছিলাম। আমরা রাত প্রায় ১১টায় গণভবন ত্যাগ করি । পরে শুনেছি, সেদিন রাতে গণভবনের সামনের লেক এভিনিউতে অন্ধকারে বসে মেজর (পরে লে. কর্নেল অব.) আবদুর রশিদ। তিনি ভাবছিলেন কেন এই কর্মকর্তারা গণভবন থেকে বেরুচ্ছে না। আমরা সবাই রাত ১১টায় নিজ নিজ বাসস্থানে যাওয়ার পর কর্নেল (অব.) রশিদ নিশ্চিত হয়ে তার দোসরদের জানিয়েছিলেন গণভবনের কর্মকর্তারা বাসায় ফিরেছে।

আমি এ সময় সোবহানবাগ মসজিদের উল্টো দিকে সরকারি কোয়ার্টারে একটি ফ্লাটে থাকতাম।

১৫ আগস্ট শুক্রবার সকালে প্রায় পৌনে ৫টায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার ফ্লাটের বারান্দায় গিয়ে দেখি রাস্তায় (মিরপুর সড়ক) দুটো সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে আছে মসজিদের সামনে। এ সময় আমি একটি টেলিফোন পাই । অপরপ্রান্ত থেকে কর্নেল জামিল আমাকে জিজ্ঞাসা করেন মসজিদের সামনে তুমি কী দেখছ। আমি বেশ ভীত হয়ে বলি, জামিল ভাই, আমি মসজিদের সামনে ট্যাঙ্ক দেখছি। আমার ভাল মনে হচ্ছে না। আপনি জেনারেল শফিউল্লাহকে বলুন। (কর্নেল) জামিল ভাই তখনই ফোন রেখে দিলেন। এর পাঁচ মিনিট পর আমি ফরাসউদ্দিনের ফোন পাই। তিনি জানতে চান, জামিল ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন কিনা এবং কী কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর (কর্নেল) জামিল ভাই তার লাল রঙের প্রিন্স গাড়িটি নিজেই চালিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনে ৩২ নম্বরের দিকে গেছেন। ফোন রাখার পরই আমি আবার বারান্দায় গিয়ে দেখি জামিল ভাইয়ের লাল প্রিন্স গাড়িটি সোবহানবাগ মসজিদের সামনে থামিয়েছেন সবুজ বেরেট পরা একজন অফিসার। পরে জানতে পেরেছিলাম এই অফিসারই সেই মেজর নূর।

[রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে নেওয়া। (পৃষ্ঠা- ৭২ থেকে ৭৮)]

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন