ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলা ভাষা’র উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail ‘চর্যাগীতিকোষ’ বা ‘চর্যাপদ’।

বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসাম রাজ্যের বারাক উপত্যকার রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। ৩০ কোটি স্বদেশি ভাষাভাষী এবং আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪ কোটি মানুষের ভাষা বাংলা। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৪ কোটি বাঙালির এই মুখের ভাষার শুরুটা খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরেরও আরও পেছনে।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারে বাংলা ভাষার স্থান ৪র্থ ও বিশ্বে ৬ষ্ঠ এবং বিশ্বব্যাপী মোট ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যানুসারে বাংলা ভাষা ৭ম বৃহত্তম ভাষা। বিশ্বের ৩৪০ মিলিয়ন বা ৩৪ কোটিরও বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তবে এই ভাষার সৃষ্টির আদি রহস্য কি? 

জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যোগাযোগের সহায়ক হিসেবে নানা মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। তন্মধ্যে ভাষা মন ও মননের ভাব প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ  উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। 

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ‘মনুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তারই নাম ভাষা।’ 

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দ সমষ্টিকে ভাষা বলে।’ 

মুহাম্মদ আব্দুল হাই এর মতে, ‘এক এক সমাজে সকল মানুষের অর্থবোধক ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা।’

ভাষা গবেষক সুকুমার সেন এর মতে, ‘মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি সমষ্টিই ভাষা।’

ভাষা প্রসঙ্গে ড. মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা মানুষে মানুষে সম্পর্ক স্থাপনের প্রধানতম সেতু, সামাজিক ক্রিয়া-কর্ম নির্বাহের অপরিহার্য মাধ্যম, সভ্যতার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ভাষা সাহিত্যের বাহন, ভাবের আধার, আবেগের মুক্তিপথ, চিন্তার হাতিয়ার।’

বিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী স্টার্টেভান্ট বলেন, ‘A language is a system of arbitrary vocal symbols by which members of a social group co-operate and interact.’

মূলত, ভাষা হলো বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি ও ধ্বনি সমষ্টি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি  আবেগ, অনুভূতি অর্থাৎ মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারে। 

বাংলা ভাষা’র উদ্ভব

বাংলা ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রে। সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তির কিংবদন্তি থাকলেও বাংলা ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন, বাংলা মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে এসেছে।

ইন্দো-আর্য হল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা উপবিভাগের একটি প্রধান শাখা, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রের পূর্বাঞ্চলীয় ধরন। প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জির মতে, বৈদিক এবং সংস্কৃত উপভাষাগুলোকে প্রাচীন ইন্দো-আর্য যুগের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর মধ্যে আছে পালিসহ প্রাকৃতের বিভিন্ন রূপ, যেগুলো পাওয়া যায় সম্রাট অশোক এবং থেরাবাদ বৌদ্ধ কাননের শিলালিপিতে।

বাংলা ভাষা ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ইন্দো-ইউরোপীয় (Indo-European) এই ভাষা পরিবারের এমন নামকরণের কারণ হচ্ছে এই পরিবারের ভাষাগুলোর সীমা একদিকে ভারত অন্যদিকে ইউরোপ। বাংলা ভাষা ইন্দো-ইরানীয় ভাষার শাখা থেকে উৎপত্তি।

ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষাগুলো সাধারণত ১০টি শাখায় বিভক্ত: ১. ইন্দো-ইরানীয় ২. আর্মেনীয় ৩. গ্রীক ৪. আলবানীয় ৫. ইটালীয় ৬. সেলটিক ৭. জার্মানীয় ৮. বাল্টো-শ্লাভীয় ৯. আনাতোলীয় এবং ১০. তুখারীয়।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি দল প্রথমে ইরান ও পরে ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে এই ভাষা দুটো অঞ্চলে প্রসারিত হয়। এই শাখার মধ্যে ইরানীয় ভাষায় প্রাচীন ভাষার গঠন সংরক্ষিত থাকায় এবং পরবর্তীকালে সংস্কৃত ভাষার প্রাচীন কাঠামো ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষা পুনর্গঠনে বিশেষ সহায়তা করে।

ভাষা গবেষক সুকুমার সেনের মতে, ভারতীয় আর্য  ভাষার প্রাচীন নমুনা ঋগ্বেদে সংরক্ষিত। ঋগ্বেদের রচনাকাল ১২০০ খ্রিস্টাব্দ। আর্যগণ ভারতে আসতে শুরু করে আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই তিনশ’ বছরে তারা ভারতে অবস্থান করে যে ভাষা ব্যবহার করত, তাই প্রত্ন-ভারতীয় আর্য ভাষা বা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা। এই ভারতীয় আর্য ভাষা থেকেই আধুনিক ভারতের বাংলাসহ বহু আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব হয়েছে। বাংলাকে তাই ভারতীয় আর্য ভাষার এক সুদূর বংশধর বলা যায়।

আজ পর্যন্ত ভারতীয় আর্য ভাষার জীবনকাল প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর। এই সাড়ে তিন হাজার বছরের ইতিহাস তিনটি পর্বে বিভক্ত: ১. প্রাচীন ভারতীয় আর্য ( ১৫০০-৬০০ খ্রিস্টাব্দ) ২. মধ্য ভারতীয় আর্য (৬০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং ৩. নব্য ভারতীয় আর্য (১০০০খ্রিষ্টাব্দ-বর্তমান)।

এখন গবেষকদের মতানুসারে, প্রাচীন ভারতীয় ভাষাকে সাধারণত সংস্কৃত ভাষা বলা হয়। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি পর্যায় বা পর্ব রয়েছে।  পর্ব ১. বৈদিক ভাষা ও সাহিত্য এবং পর্ব ২. সংস্কৃত। সংস্কৃত ভাষা  চারশ খ্রিস্টাব্দে প্রচলিত ছিল। ঋগ্বেদের প্রাচীনতম শ্লোক এক হাজার খ্রিস্টাব্দে রচিত বলে অনুমান করা হয়। পরবর্তীকালে ঋগ্বেদের শ্লোকের ব্যাখ্যা এবং ভাষার সংরক্ষণশীলতার জন্য ঋগ্বেদের ভাষা সংস্কারের  প্রয়োজনীয়তা থেকে সংস্কৃতের জন্ম হয়। সংস্কৃত ভাষা চারশ’ খ্রিস্টাব্দে প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ভারতে ব্যবহৃত শুদ্ধরূপ ‘সংস্কৃত’র পাশাপাশি কথ্যভাষা ‘প্রাকৃত’ও প্রচলিত ছিল। তৎকালীন প্রচলিত ভারতীয় ভাষাকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়: ১. বৈদিক সংস্কৃত (১২০০-৮০০ খ্রিস্টাব্দ) ২. ধ্রপদী সংস্কৃত (প্রচলিত রূপ ৪০০ খ্রিস্টাব্দ শতকে) এবং ৩. প্রাকৃত। বৈদিক ও ধ্রুপদী সংস্কৃতকে প্রাচীন ভারতীয় এবং প্রাকৃতকে মধ্য ভারতীয় স্তরে ফেলা যায় (৬০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ)।

মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষাকে সাধারণত প্রাকৃত ভাষা বলা হয়। যদিও প্রাকৃত বলতে কেবল একটি নির্দিষ্ট ভাষারূপকেই বোঝায় না। আনুমানিক ষষ্ঠ শতকই প্রাকৃতের উদ্ভব বলে মনে করা হয়। প্রাকৃত ভাষার দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে তিনটি পর্ব বা পর্যায়ের কথা বলা হয়।  ক. আদি পর্ব- পালি খ. মধ্য পর্ব-প্রাকৃত গ. অন্ত পর্ব-অপভ্রংশ। 

মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার প্রথম স্তরের একটি ভাষারূপ হল পালি। পালি শব্দটি সিংহলি বৌদ্ধ পণ্ডিত বুদ্ধদেব ঘোষ যে ভাষায় তাঁর বাণী সাধারণত মানুষের মধ্যে প্রচার করেছিলেন, সেই ভাষাকে পালির প্রাথমিক রূপ বলা যেতে পারে। পালি ভাষা হল সংস্কৃত ও প্রাকৃতের মাঝামাঝি স্তর। পালি ভাষার ব্যাকরণ সংস্কৃতের চেয়ে অনেক সহজ। পালিকে অনেক ভাষাতাত্ত্বিকগণ প্রাকৃতেরই প্রাথমিক রূপ বলে মনে করেন। 

প্রাকৃত ভাষা কতকগুলো শাখায় বিভক্ত ছিল। যথা: মাহারাষ্ট্রী, শৌরসেনী, অর্ধমাগধী, মাগধী ও পৈশাচী। মগধ অঞ্চলের প্রাকৃতকে মাগধী বলা হতো। মাগধীর মধ্যে কিছুটা কৃত্রিমতা ছিল। অশ্বাঘোষের নাটকে মাগধীর ব্যবহার দেখা যায়। অর্ধমাগধী ব্যবহার করত মূলত জৈনরা। একে জৈনপ্রাকৃতও বলা হয়। প্রাকৃতের শেষ পর্বের দুটি স্তরকে পৃথকভাবে দেখব-  একটি অপভ্রংশ এবং অপর স্তরটি অবহট্ঠ বা অপভ্রংশ। 

একথা আজ সর্বজনস্বীকৃত যে, বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে অপভ্রংশ-অবহট্ঠ থেকে। কিন্তু অপভ্রংশেরও আঞ্চলিক বিভিন্নতা ছিল। সরাসরি প্রাকৃতের মধ্য স্তর থেকে যে বাংলার উদ্ভব হয়নি একথা সকলেই মানেন। 

স্যার জর্জ গিয়ারসন বলেছেন, বাংলা এসেছে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। এই মতটি সাধারণভাবে প্রচলিত। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বাংলার উদ্ভব হয়েছে গৌড়ীয় অপভ্রংশ থেকে। আর এক দল বলেন, বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা, অন্যভাবে সংস্কৃতই বাংলা ভাষার জননী।

মাগধী প্রাকৃতের পরের ভাষারূপ হল মাগধী অপভ্রংশ বা অবহট্ঠ এবং এ থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি। এ কথা গিয়ারসন, সুনীতিকুমার ও সুকুমার সেনও বলেছেন। অনুমান করাই যায় এই রকম একটি বিবর্তন- সূত্র: মাগধী প্রাকৃত >> মাগধী অপভ্রংশ ও অপভ্রষ্ট >> মৈথিলি, ওড়িয়া, অসমিয়া, বাংলা। সেক্ষেত্রে  বলাই যায়, সুনীতিকুমার, সুকুমার সেন ও দ্বিজেন্দ্রনাথ বসুর অনুসরণে যে, মাগধী অপভ্রংশই বাংলা ভাষার জননী।

প্রথম সহস্রাব্দে বাংলা যখন মগধ রাজ্যের অংশ ছিল, তখন মধ্য ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলোর বেশ প্রভাব ছিলো বাংলায়। এই উপভাষাগুলো মাগধী প্রাকৃত নামে পরিচিত আর এটিই ছিলো আধুনিক বাংলা, বিহার ও আসামের লোকেদের কথ্য ভাষা। এই ভাষারই বিবর্তিত রূপ অর্ধ-মাগধী প্রাকৃত, যেখান থেকে প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিকে উদ্ভব হয় অপভ্রংশের। অতঃপর কালক্রমে এই অপভ্রংশ থেকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে জন্ম হয় বাংলা ভাষা।

বাংলা ভাষা’র উপভাষা

কথ্য বাংলায় আঞ্চলিক ভিন্নতার রেশ ধরে গঠিত হয় উপভাষা। ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জি পূর্ব মাগধী ভাষার উপভাষাগুলোকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত করেছেন; রাঢ়ি, বঙ্গিয়া, কামরূপী এবং বরেন্দ্রী। দক্ষিণ-পশ্চিমের রাড়ী বা নদীয়া অঞ্চলের উপভাষা আধুনিক প্রমিত কথ্য বাংলার ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের অনেকাংশে প্রচলিত উপভাষায় পশ্চিমবঙ্গের বচন ব্যবহৃত হয়।

বাংলার কিছু ধরন চাটগাইয়া এবং চাকমার স্বরের সাথে বিবর্তিত। রংপুরী, খরিয়া থার, এবং মাল পাহাড়িয়া পশ্চিমী বাংলা উপভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও আলাদা ভাষা হিসাবে ধরা হয়। একইভাবে উত্তর বাংলার উপভাষার সাথে মিল থাকলেও হাজং একটি পৃথক ভাষা।

১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার প্রমিতকরণের সময় বাংলার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল ব্রিটিশ অধীন কলকাতা শহর। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয় ক্ষেত্রেই যেটি প্রমিত রূপ হিসেবে গৃহীত হয়েছে, তা মুলত নদীয়া জেলার পশ্চিম-মধ্য উপভাষার উপর ভিত্তি করে।

প্রায় ১৩০০ বছরের দীর্ঘ বিবর্তনে বাংলা ভাষার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রচুর পরিমাণে দেশিয় এবং বিদেশি শব্দ। বহু শতাব্দীর পর ১৯ শতকে এসে রাজা রাম মোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের হাতে বাংলা চূড়ান্ত রূপ পায়। আজ বাংলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি স্বতন্ত্র ভাষা। 

বাংলা ভাষা’র বিবর্তন

বাংলা ভাষা বিবর্তনের পর্যায়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে; পুরাতন, মধ্য এবং আধুনিক বাংলা। পুরাতন বাংলা ছিল ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার পুরোহিত এবং পণ্ডিতদের সাহিত্যকর্মের ভাষা। এই সময়ের সাহিত্যের খুব কম চিহ্নই এখন অবশিষ্ট রয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীনতম নিদর্শনের মধ্যে একমাত্র চর্যাপদ পাওয়া যায়। এটি বৌদ্ধধর্মের ওপর ভিত্তি করে কবিতার একটি সংকলন, যা অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।

চতুর্দশ শতকে বাংলায় শুরু হয় মুসলমানদের সালতানাত। সালতানাত বাংলাকে এই অঞ্চলের সরকারি দরবারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাংলার স্থানীয় ভাষায় পরিণত হয় বাংলা। 

ষোড়শ শতকে মুঘলরা বাংলা দখল করলে বাংলা ভাষার সাথে যোগসাজশ ঘটে ফার্সি ভাষার। বর্তমান বাংলা ভাষার আধুনিক রূপটি পাওয়া যায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের সময় বাংলার নদীয়া অঞ্চলে কথিত উপভাষায়। এই ভাষাটির দুটি ভাগ; শুদ্ধ এবং চলিত। এগুলোর ভিত্তি গড়েছে প্রধানত মাগধী প্রাকৃত এবং পালিসহ তুর্কি, পর্তুগিজ, ফার্সি ও ইংরেজি।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা করার দাবিতে বাংলা ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে লালন করে। ফলে ১৯৭১ এ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।


চর্যাগীতিকোষ   চর্যাপদ   বাংলা ভাষা   উদ্ভব   ক্রমবিকাশ   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন