ইনসাইড আর্টিকেল

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতি, সঠিক ইতিহাস সময়ের দাবি

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

কোন সত্যকে গোপন রাখা যায় না। আর ইতিহাস গোপন রাখা তা-তো অসম্ভব। অসত্য ইতিহাসের প্রভাব সুদূর প্রসারি। নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাসে কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে ইতিহাস রচনার প্রবণতা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রবর্তকদের অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে নেই, চলছে আলোচনা-সমালোচনা যুক্তি-যুক্তি খণ্ডন। ইতিহাস হলো একটি জাতির দর্পন। ইতিহাস অসচেতন জাতি কোন দিন প্রকৃত দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে ঊজ্জীবিত হতে পারে না। আজকের দুর্বিষহ-বিষাক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ হলো ইতিহাস বিকৃতির নির্যাস। বিকৃত ইতিহাস নিয়ে টেকসই জাতি গঠন করা যায় না। তাই প্রকৃত ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরাই সমসাময়িক ইতিহাসবোদ্ধাদের কর্তব্য। 

যুগে যুগে বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও বিকৃত হয়েছে। বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশিত দু’টি নিবন্ধে জাতির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতির কিছু নিদর্শন এবং প্রকৃত সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। খুঁটিবিহীন ঘর যেমন টিকে থাকে না, তেমনই বিকৃত ইতিহাসও টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাসে যার যা অবদান তাকে সেই স্বীকৃতি দিতেই হয়, দেয়া উচিৎ। কিন্ত যারা ইতিহাস রচনা করেন তারা অনেকেই ইতিহাস লেখেন না, রাজনৈতিক নীতি ও দর্শন থেকে ইতিহাস রচনা করেন। ফলে রাজনৈতিক ঘটনা প্রাবহে প্রকৃত সত্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষন পাওয়া যায় না। মিথ্যার গেড়াকলে চাপা পড়ে থাকে অনেক অজানা সত্য ইতিহাস। যে কারণে আমাদের জাতীয় এবং রাজনৈতিক ইতিহাস অসম্পূর্ণ অথবা বিকৃত হয়ে যায়।

মানুষ নিজেকে প্রাণী জগৎ থেকে আলাদা করেছে তার ভাষা দিয়ে। যদি কোনো সুগঠিত ভাষা না থাকতো তাহলে বন্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়তো। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার দাবিতে কয়েকটি জাতি-গোষ্ঠীর ছোটখাটো আন্দোলনের কথা শুনা যায়। কিন্তু ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা বিরল। এটি কেবল বাংলা ভাষার জন্যই ঘটেছে।

পোলিশ জাতি তাদের ভাষার জন্য জীবন দিয়ে তার মান ধরে রেখেছে; আর বাংলাদেশের মানুষ ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। পৃথিবীর ভাষাসমূহের মাঝে বাংলা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ভাষা। এ ভাষায় প্রায় ৩৪ কোটি মানুষ কথা বলে থাকেন। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বেশ কিছু এলাকায় বাংলা ভাষাভাষী লোক রয়েছে। এছাড়া রয়েছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরো কিছু প্রবাসী বাংলাভাষী।

চর্যাপদের পালি ভাষা ছিল বাংলা ভাষার আদিরূপ। নেপালে খুঁজে পাওয়া চর্যাপদের ওপর গবেষণা করে তাত্ত্বিকগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের যাত্রা শুরু হয় ৬৫০ খ্রীষ্টাব্দে, এর পর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলা ভাষা আজ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট ভাষাগুলোর একটি। ১২০৩ সালে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী গৌড়ের রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় মুসলমানগণ স্বাভাবিক নিয়মেই বাংলা ভাষাকে সবিশেষ মর্যাদা দান করেন। ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজরা পলাশীর প্রান্তরে বাংলার সর্বশেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে ক্ষমতা নিলে, মুসলিমরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। সে সময় বাংলা ভাষা চর্চা থেমে যায়, শুরু হয় ইংরেজী চর্চা।

বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ বছরের সময়কালে বাংলা ভাষা স্বীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলো। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সময়টিকে বাংলা ভাষার স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য যে অসামান্য প্রয়াস মুসলিম শাসকগণ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় টিকে থাকা প্রচারক ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণ (সমাজ সংস্কারক) করেছেন,- তা একটি অনন্য উদাহরণ। এর ফলে বাংলা ভাষা ব্যাপক জনগণের ভাষা হিসেবে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

কবি আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ মতানুসারে, ‘বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে মর্যাদা পায় মুসলিম শাসকদের সময়ে। পাল রাজাদের পরাজিত করে সেনদের শাসন চালু হলে বাংলাকে কোনঠাসা করে রাখা হয়। বাংলায় পূজা-পার্বণ পরিচালনা ও গীতা-মহাভারত চর্চা বন্ধ করে দেয়া হয়। বলা হয় বাংলায় এসবের চর্চা যারা করবে তাদেরকে নরকে স্থান পেতে হবে।’

ইতিহাসবিদদের মতে, ১২০৩-১৭৫৭ পর্যন্ত মুসলমানগণ বাংলা শাসন করেন। তাদের আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পায়। ফার্সির পাশাপাশি বাংলার ব্যাপক চর্চা হয়। এরপর ১৭৫৭ সালে পলাশীর আক্রমনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম শাসনের অবসান হলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয় বাংলা। এ সময় বাংলার কোন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছিল না।

উপমহাদেশের জনগণ এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং শুরু হয় স্বাধীকার আন্দোলন, ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত দুটি দেশের জন্ম হয়। অনেকেই দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় বলেও দাবি করে থাকেন। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুটা ভাষা আন্দোলন থেকেই। বায়ান্নের তীব্র আন্দোলন হতে বাঙালি নিজেকে পাকিস্তান থেকে পৃথক ভাবতে শুরু করে।

১৯১৮ সালে ভবিষ্যৎ স্বাধীন ভারত উপমহাদেশে ভাষা কি হবে- তা নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচনা সভা হয়। রবীন্দ্রনাথ হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। সভার মাঝেই কবির প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধীতা করেন ভাষা গবেষক ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন হিন্দি-উর্দু থেকে বাংলা ভাষার স্থান অনেক উঁচুতে। বাংলা ভাষায় অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা থেকে সুগঠিত। হিন্দু-উর্দু থেকে বাংলায় শব্দ সংখ্যা বেশি, তাই মনের ভাব সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায়। সভায় ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ’র বক্তব্যে হইচই পড়ে যায়।

১৯২১ সালে ব্রিটিশদের কাছে লিখিত প্রস্তাব করা হয়, ‘ভারতের রাষ্ট্র ভাষা যাই হোক, তবে বাঙালিদের ভাষা হবে বাংলা।’ পরবর্তী কোনো এক সময়ে মহাত্মা গান্ধী ঘোষণা দিলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রভাষা হবে হিন্দি।’ হিন্দিকে সমগ্র ভারতের ভাষার দাবি ওঠার পর থেকে ভারতের মুসলমানরা ক্ষেপে যায়। তাদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার। উপমহাদেশে তখন ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল। হিন্দি হিন্দুদের ভাষা- অন্যদিকে উর্দু-আরবি মুসলমানদের ভাষা- এই ধরনের মতবাদ ছিল। কাজেই অনেকেই মনে করেন ভারত এবং পাকিস্তান- এই দুটি দেশের সৃষ্টি হয় ধর্মীয় মতবাদ অনুসারে।  

তাই ধর্মীয় মতবাদের উপর দেশভাগের পর পাকিস্তানিরা উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য বাঙালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিবাদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য গঠন করা হয় প্রথম ভাষা আন্দোলনের সংগঠন তমদ্দুন মজলিস। ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ইসলামী সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ। মূলত এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ইসলাম পন্থীরা দিলেও বামপন্থীরা ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্বকে কুক্ষিগত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।

১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষার দাবি আদায়ের লক্ষে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’- শিরোনামে প্রথম পুস্তিকা প্রকাশ করে তমদ্দুন মজলিশ। বাংলার কিছু মানুষ চাইতো এদেশের রাষ্ট্রভাষা হোক উর্দু। এতে উর্দু যারা ভালো জানে তারা লাভবান হবে, চাকরিতে সুবিধা পাবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাষার দাবি আদায়ের কথা বলার দুটি কারণ ছিল। প্রথমটি ভাষা প্রেম। দ্বিতীয়টি উর্দু না জানলে তাদের উচ্চ পড়াশোনা সব বিফলে যাবে। তাই ভাষার জন্য আন্দোলন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না।

ভাষা সৈনিক অলি আহাদ বলেন ‘একথা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে, আমাদের জাতীয় জীবনে ইতিহাস বিকৃতির ডামাডোলে সত্য আজ বিসৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা আর বিকৃত ইতিহাসই আজ জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। খলনায়ক নায়কে পরিণত হচ্ছে।’ (সূত্র: অলি আহাদ রচিত- জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫)।

ভাষা আন্দোলনের সংগঠক গাজিউল হক ঢাকা ডাইজেস্ট-এ ১৯৭৮ সালের জুন মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন,‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে এবং তা দু’দিক থেকে। এক দিকে কিছু নতুন দাবিদারকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে  এবং অন্যদিকে কারো কারো নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তাধারার কাঠামোতে ফেলার জন্য এ মহান আন্দোলনের ইতিহাসকে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকে।’ (সূত্র: ঢাকা ডাইজেস্ট , জুন- ১৯৭৮)।

এম আর মাহবুব-এর ভাষ্যমতে, ‘ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশেষ অবদান রয়েছে। আজন্ম মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব এবং পরবর্তী সময় আইন সভার সদস্য হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে গেছেন এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষীদের দাবির কথা বলে গেছেন।’

ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও বইপত্রে অনেক তথ্যকে বাদ দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করে দেখানো হয়েছে।

অথচ ভাষাসৈনিক অলি আহাদ তাঁর ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ হতে ১০ মার্চ ঢাকায় আসেন।’

গাজীউল হক লিখেছেন, ‘১১ মার্চের হরতাল কর্মসূচিতে যুবক শেখ মুজিব এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, এ হরতাল ও কর্মসূচি তার জীবনের গতিধারা নতুনভাবে প্রবাহিত করে।’  (সূত্র : ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গাজীউল হক, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪।)

এছাড়াও অলি আহাদের দু’ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। আমরা তরুণ প্রজন্ম কোনটা বিশ্বাস করব? সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করা এতো কষ্ট কেন? অলি আহাদের কথায় ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তিনি কেন তা স্বীকার করতে চান না। এ এক বড় ইতিহাস!

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর ভারতের মাদ্রাজে অবস্থিত সিআইএসআর (CISR- The Christian Institute for the study of Religion and society, Bangalore)- থেকে প্রকাশিত একটি বই-  ‘Profile of Bangladesh’-এ  প্রফেসর আনিসুজ্জামানের একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়। সেখানে তিনি ‘The Language controversy’- শিরোনামে লেখেন, ‘For the last twenty three years and half, two basic factors have been at work in the lives of the East Bengal: (1) The urge for secular, democratic and just social order and (2) The growing sense of identity based on their language and culture, Not only were these two forces complimentary, but they also often reinforced each other. A conflict on the cultural plane assumed the nature of a democratic movement or struggle for a secular order. The state language movement of 1948, for instance was also the being of the politics of dissent and the controversy over the acceptance of Tagore in the cultural tradition of the country was, in fact, a conflict between the communists and the forces of secularism.’

এ শুধু প্রফেসর আনিসুজ্জামানের নয়, বরং অধিকাংশ তথাকথিত বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করে কৃতিত্ব হাইজ্যাক করার হঠকারী কাজটি করেছেন এবং যুগ যুগ ধরে করছেন। অথচ পাকিস্তান রাষ্ট্রটি স্বাধীন হওয়ার মাত্র পনের দিনের মাথায় তমদ্দুন মজলিস নামক একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান জন্মলাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে।

তমদ্দুন মজলিসের জন্মের সময়ে আবুল কাসেমের সম্পাদনায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’- শীর্ষক একটি পুস্তিকাও বের হয়। এতে আবুল কাসেম, কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল মনছুর আহমদ- এর তিনটি প্রবন্ধ স্থান পায়। এই বইয়ের ভূমিকায় আবুল কাসেম চারটি প্রস্তাব দেন।

 ১. বাংলা ভাষাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা, আদালত ও অফিসাদির ভাষা।

২. পাকিস্তনের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা হবে ২টি: বাংলা ও উর্দু।

৩. পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের প্রথম ভাষা বাংলা, দ্বিতীয় ভাষা উর্দু এবং তৃতীয় ভাষা থাকবে ইংরেজি। এবং

৪.  শাসন কাজ ও বিজ্ঞান শিক্ষার সুবিধার জন্য আপাতত কয়েক বছরের জন্য ইংরেজি এবং বাংলা- দুই ভাষাতেই পূর্ব পাকিস্তনের শাসনকাজ চলবে।

সে সময় ভাষা আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। যার প্রথম আহবায়ক ছিলেন তমদ্দুন মজলিস নেতা অধ্যপক নূরুল হক ভুইয়া। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তৎকালীন রাজনীতিবিদদের আচরণ সম্পর্কে আবুল কাসেম বলেন, ‘এই পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিসের পক্ষে আমরা এককভাবে আন্দোলনটিকে আগাইয়া নিয়ে যাইতেছিলাম। এই আন্দোলনকে সাহায্য করিবার জন্য আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে যাই। মুসলিম লীগ ইহাকে মোটেই আমল দেয় নাই, কংগ্রেস কর্মীরা ইহার নাম শুনেই আতকে উঠেন। ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে কম্যূনিষ্ট পার্টির যে বিরাট অফিস ছিল, তাহাতে একদিন কম্যূনিষ্ট পার্টির এক মিটিং ছিল। কমরেড মুজাফফর আহমদ উক্ত বৈঠকে নেতৃত্ব করিতেছিলেন, সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ হইতে আমি কয়েকজন কর্মীসহ তাহাদের নিকট উপস্থিত হইলে তিনি পার্টির পক্ষ হইতে আমাকে জানাইয়া দেন- এই আন্দোলনকে সমর্থন করা তাহাদের পক্ষে সম্ভব হইবে না। শুধু তাই নয় , তিনি মেমোরেন্ডামে দস্তখত করিতেও অস্বীকার করেন। বামপন্থী ছাত্র ফেডারেশনও ইহাতে যোগদান করিতে অস্বীকার করে।’

বামদের ব্যাপারে অধ্যাপক আবুল কাসেমের বক্তব্য, ‘বস্তুত কম্যূনিস্টরা এই আন্দোলনের জন্য কোনো চেষ্টাই করে নাই। এই সুবিধাবাদীগণই নাজিম-মন্ত্রিসভাকে কায়েদে আজমের সম্মুখে আমাদের আন্দোলন ও উদ্দেশ্যের অপব্যাখ্যার সুযোগ দান করিয়াছে; অতি প্রগতিশীলরা ছাত্রদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি করিয়া ছাত্রদের ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করিয়া নৈরাশ্যের মধ্যে ফেলিয়া দেয়।’ (সূত্র: একুশের সংকলন, ১৯৮০)।

অপরদিকে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ছিনতাই হয়ে গেছে বলে দাবি করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতির মহড়া চলছে বলে তারা মনে করেন। জামায়াতের আমির মকবুল আহমদ বলেন,‘বামেরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ছিনতাই করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সনদের (সার্টিফিকেট) মতো নতুন নতুন ভাষাসৈনিক জন্ম নিচ্ছে। ভাষা আন্দোলন হয়েছিল তমদ্দুন মজলিশের মাধ্যমে। এটি ছিল ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত সংগঠন। ওই আন্দোলনকে সম্মান জানাতে সর্বস্তরে বাংলা চালু করা এবং ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির ভিতকে শক্ত করতে হবে। ভাষা আন্দোলনের কারণে গোলাম আজম তিনবার কারাভোগ করেছিলেন। চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। আর কেউ ওই আন্দোলনে এতবার কারাভোগ করেননি। আজ যাঁরা বড় বড় ভাষাসৈনিক তাঁরা গ্রেপ্তার হননি। সে সময় যারা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরা সবাই তমদ্দুন মজলিশের সদস্য ছিলেন। দলগতভাবে কোনো আন্দোলন হয়নি।’ (সুত্র: দৈনিক সংগ্রাম)।

বামপন্থী নেতা জনাব মো. তোয়াহা ঢাকা ডাইজেস্ট- এর এক সাক্ষাৎকার এ বলেন, ‘এ সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বপক্ষে ইশতেহার বিলি করতে গিয়ে ছাত্ররা চকবাজারে জনতা কতৃক ঘেরাও হন। ছাত্ররা উত্তেজিত জনতার সম্মুখে অসহায় অবস্থায় পতিত হন। এ সময় তৎকালীন ডাকসুর জিএস গোলাম আজম সাহস করে এগিয়ে যান। তিনি চিৎকার করে জনতার উদ্দেশ্যে বলেন- ভাই আমরা কি বলতে চাই -তা শুনবেন তো- এ বলেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলে পূর্ব পাকিস্তানের কি উপকার হবে তার ওপর একটি বক্তৃতা দিয়ে জনতাকে শান্ত করেন।’

মোহাম্মদ তোয়াহা গোলাম আজমকে ‘রাষ্ট্রভাষা-বাংলা চাই’ আন্দোলনের অন্যতম নেতাতে পরিণত করেছেন। এইভাবে যুগে যুগে বিকৃত হয়েছে বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। এই জাতির দূর্ভাগ্য এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল কালক্রমে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত সত্য ইতিহাস জাতির সামনে, পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন সময়ের দাবি।


ভাষা আন্দোলন   ইতিহাস বিকৃতি   অমর একুশে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

প্রেম মানে না বয়সের গণ্ডি

প্রকাশ: ০৭:৫৬ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রেমের কোনো বয়স হয় না। গল্প, উপন্যাস ও বাস্তব জীবনে এর আগে বহুবার তা প্রমাণ হয়েছে। আরও একবার সে কথা মনে করিয়ে দিল নিউইয়র্কের বাসিন্দা হ্যারল্ড টেরেন্স (১০০) ও জেনি শার্লিনের (৯৬) প্রেমকাহিনি। তাদের এই প্রেম পরিণতিও পেতে চলেছে। কিছু দিন পরেই দুজনে সংসার পাতবেন। তারই প্রস্তুতি চলছে।

হ্যারল্ড বিমানবাহিনীতে কাজ করতেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পড়াশোনা চলাকালীন বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হ্যারল্ড। তখন হ্যারল্ডের বয়স ২০। চাকরি সূত্রে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। কয়েক বছর সেখানেই ছিলেন। হঠাৎই ইংল্যান্ড ছেড়ে যাযাবর হয়ে যান।

ইউক্রেন, বাগদাদ, তেহরানসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে কাজ করতে থাকেন। বেশ কয়েক বছর এভাবে চলার পর জীবনে থিতু হতে চান তিনি। তাই আবার আমেরিকায় ফিরে আসেন। নিজের মাটিতে ফিরে নতুন জীবনও শুরু করেন। সংসার পাতেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু থেলমার সঙ্গে।

বছর দুয়েকের মধ্যে দুই সন্তান আসে। স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে কাজে ফেরার ইচ্ছা ছিল না হ্যারল্ডের। কিন্তু স্ত্রীর জোরাজুরিতেই আবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যারল্ড চলে যাওয়ার পর সংসার ও সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়ে থেলমার ওপর। দায়িত্ব পালনে অবশ্য কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। সন্তানরাও বড় হয়ে নিজেদের মতো জীবন গুছিয়ে নেয়।

জীবনের অধিকাংশ সময় পরিজনদের সঙ্গ পাননি। জীবনের শেষটা এমন হোক, তা চাননি হ্যারল্ড। তাই ২০২১ সালে চাকরি থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।  কিন্তু নিয়তিতে যা লেখা থাকে, তার অন্যথা হওয়ার জো নেই। হ্যারল্ড বাড়ি ফেরার মাসখানেকের মধ্যে মারা যান থেলমা। দুই ছেলে কাজের সূত্রে ভিন দেশে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার একা হয়ে যান বৃদ্ধ হ্যারল্ড। তার এই নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাৎই আলাপ জেনির সঙ্গে। জেনি অবিবাহিত ছিলেন। মনের মতো কাউকে পাননি, তাই সংসারও পাতা হয়নি। ৯৬ বছর বয়সে হ্যারল্ডের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর জেনির মনে হয়েছিল, এই মানুষটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

তাই সময় নষ্ট না করে নিজেই মনের কথা খুলে বলেন হ্যারল্ডকে। একা থাকতে আর কে চায়! তাই আর দেড়ি করেননি, জেনির সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলো হেসেখেলে কাটিয়ে দিতে চেয়ে আবার নতুন করে শুরু করেন।


প্রেম   বয়স   গণ্ডি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গায় যেভাবে থাকে মানুষ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

এইতো কয়েকদিন পূর্বেও ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার ফলে নাভিশ্বাস উঠেছিল সারা দেশের মানুষের। সারা দেশব্যাপী হিট অ্যালার্ট জারি করা থেকে শুরু করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা- কত কিছুই না হয়েছে এই তীব্র তাপদাহের কারণে। তবে পৃথিবীতে এমন স্থানও রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা থাকে ১২৭ ডিগ্রী ফরেনহাইট।

স্থানটি হচ্ছে ডেথ ভ্যালি। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্থানটি কতটা ভয়ংকর। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানের মধ্যে অন্যতম স্থান এটি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের তকমা অর্জন করে ডেথ ভ্যালি। সবচেয়ে উষ্ণতম মাসের রেকর্ড হিসেবে, ওই বছরের একটানা চার দিন ১২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ধরা পড়ে। যা তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড।

ডেথ ভ্যালি ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদা সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে তাপমাত্রা বিরাজ করে ডেথ ভ্যালির মরুভূমিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম উষ্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতে কেবল কয়েকটি মরুভূমি আছে। যেখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রায় শীর্ষে পৌঁছায়।

ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট। পার্কের কমিউনিকেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানে এখন যেরকম গরম পড়েছে, আমরা সবাই আমাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। আপনি যখন বাইরে যাবেন, মনে হবে যেন আপনার মুখে অনেকগুলো হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস এসে পড়ছে।’

তিনি আর বলেন, ‘এখানে এত গরম যে, আপনার গায়ে যে ঘাম হচ্ছে তা আপনি টেরই পাবেন না। কারণ খুব দ্রুত এটি বাষ্প হয়ে উবে যাচ্ছে। ঘামে যখন কাপড় ভিজে যায়, সেটা টের পাওয়া যায়, কিন্তু গায়ের চামড়ায় ঘাম শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে।’

ডেথ ভ্যালি এক বিস্তীর্ণ মরুভূমি। মাঝে মাঝে বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাজ্য নেভাডা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের উষ্ণতম জায়গা হওয়ার পরও এই জায়গাতে থাকে কয়েকশ’ মানুষ। মিজ স্টুয়ার্ট তাদের একজন।

মিজ স্টুয়ার্ট বলেন, গ্রীস্মের সময় তাদের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটে। তবে অনেকে পাহাড়ের দিকে চলে যায়, যেখানে তাপমাত্রা একটু কম। যখন লোকে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন এটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নীচে নামলে সেটাকেই মনে হয় খুব ঠান্ডা।

ডেথ ভ্যালির লোকজনের বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এটি তাদের ঘর ঠান্ডা রাখে। কাজেই ঘুমাতে অসুবিধা হয় না। তবে বিদ্যুৎ যদি চলে না যায়। যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে, তখন সবাই সারাক্ষণ এয়ারকন্ডিশনিং চালিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়।

ডেথ ভ্যালির বেশিরভাগ মানুষ থাকেন এবং কাজ করেন ফার্নেস ক্রীকে। এখানেই সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই জায়গাটা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৮০ ফুট নীচু একটা বেসিনের মতো। চারিদিকে উঁচু এবং খাড়া পাহাড় দিয়ে ঘেরা।

জেসন হেসার এই ফার্নেস ক্রীকেই থাকেন। তার আসল বাড়ি মিনেসোটাতে। কাজ করেন এখানকার একটি গলফ কোর্সে। এটি বিশ্বে সমুদ্র সমতল থেকে সবচেয়ে নীচু কোনো গলফ কোর্স। সামরিক বাহিনীর এই সাবেক সদস্য বলেন, ‘আমি দুবার ইরাকে ছিলাম। যদি ইরাকে থাকতে পারি, তাহলে ডেথ ভ্যালিতেও থাকা যায়।’

জেসন গলফ কোর্সে কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটার একটু আগে এবং দুপুর একটা পর্যন্ত কাজ করে যান। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জানিয়েছে, যখন গরম আরও বেশি পড়বে, তখন আমাদের আরও ভোরে কাজ শুরু করতে হবে। একেবারে ভোর চারটায়। আর সেই ভোরেও কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় ১০০-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৭ হতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।’

হেসার এখানে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। তিনি তার কাজটা বেশ পছন্দ করে ফেলেছেন। আরও কয়েক বছর তিনি এখানে থাকার পরিকল্পনা করছেন। অবসরে তিনি গলফ কোর্সে গলফ খেলতে পছন্দ করেন। তবে সেজন্য উঠতে হয় বেশ সকালে এবং খেলা শুরু করতে হয় সকাল সাতটায়। কারণ এরপর গরম খুবই অসহনীয় হয়ে উঠে।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসেছি, তখন তাপমাত্রা বেশ ভালোই ছিল। শর্টস আর পোলো শার্ট পরে একটা কোল্ড বিয়ার বা কোল্ড সোডা। আপনার সাথে যদি ঠান্ডা পানীয় থাকে, আপনাকে আগে সেটা পান করে নিতে হবে। নইলে গলফের মাঠ থেকে ফিরে কিন্তু দেখবেন সেটা আর ঠান্ডা নেই। আর আগে পান করে নিলে গলফ খেলাটাও জমে ভালো।’

ক্রিসটোফার বার্ট আবহাওয়া বিষয়ক ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। ১৯১৩ সালে ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রা নিয়ে কেন এই সংশয়, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ঐ এলাকার আশেপাশের অন্যান্য এলাকার রেকর্ডের সঙ্গে এটি মিলছিল না। ফার্নেস ক্রীকের তাপমাত্রা আশে-পাশের এলাকার চেয়ে প্রায় দু্ই বা তিন ডিগ্রি বেশি ছিল।

কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, ডেথ ভ্যালির চেয়েও হয়তো বেশি গরম পড়ছে বিশ্বের আরো অন্য কোনো জায়গায়। কিন্তু আবহাওয়ার ওপর যারা নজর রাখেন, তারা এই দাবিকে গুরুত্ব দেন না। কারণ এসব জায়গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো আবহাওয়া কেন্দ্র নেই।


তীব্র তাপদাহ   গরম   ডেথ ভ্যালি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন