‘তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,- শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো- দানবের মত চিৎকার করতে করতে- তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,- ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো।- রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।- তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা- অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের উপর।’- কবি শামসুর রহমানের কবিতার চরণগুলো শিরায় শিরায় ধমনীতে ধমনীতে শিহরণ তুলে মনে করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের সেই ভয়াল ২৫ শে মার্চের কালোরাত্রির কথা।
অপারেশন সার্চলাইট, ২৫ শে মার্চ ১৯৭১। পৃথিবীর বুকে নৃশংসতম এক গণহত্যার নাম। বাঙালি যখন তার অধিকারকে আঁকড়ে ধরেছিল, বর্বর পাকিস্তানিরা তখনই বুঝতে পেরেছিল কোনো কিছু দিয়েই এই জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তাই একাত্তরের সেই রাতে শুরু করে জঘন্যতম গণহত্যা। যা জন্ম দেয় মুক্তিযুদ্ধের। শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম।
আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক ভয়াল বিভীষিকাময় রাত নেমে এসেছিল। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালী জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আটক হওয়ার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তিনি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকেই সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তা সম্প্রচার শুরু করে ২৬ মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেতারের চট্টগ্রামের কয়েকজন কর্মী শহর থেকে অনেকটা দূরে নিরাপদ জায়গা হিসেবে কালুরঘাটে বেতারের ছোট্ট একটি কেন্দ্রে তাদের প্রথম অনুষ্ঠান করেন। ওই অনুষ্ঠানেই স্বাধীনতার সেই ঘোষণা প্রথম সম্প্রচার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার পরিস্থিতি ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের ঘটনা ২৭ মার্চে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ হয়। দিল্লির দ্য স্টেটসম্যান-এর খবর ছিল, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে শেক মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।’
ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার রাত ১০টা ৩০মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করবেন এবং সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সারাদেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সকল সিটি কর্পোরেশনগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’
পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হল আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।
ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
২৫শে মার্চ কালো রাত স্বাধীনতা ঘোষণা বঙ্গবন্ধু অপারেশন সার্চলাইট
মন্তব্য করুন
হঠাৎ করেই রাজনীতিতে গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মার্কিন ‘‘ভিসা নীতি’’ ও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সব একসাথে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকেই। বিষয়টিকে যে যার মতো করে তাদের পক্ষে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। যে কোন কারণেই হোক হঠাৎ রেমিটেন্সের বাহুল্যকে রাজনীতির নেতিবাচক অর্জন বিবেচনা করে সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলতে চাচ্ছেন বিরোধী দল।
তাদের আগ্রহ ও জিজ্ঞাসা “ভিসা নীতি” ঘোষণার পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেন এতো রেমিটেন্স? রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধির বিপরীতে তাদের এই আচরণ জাতির জন্য দুঃখজনক। “কলা ছিললা কেনো? বুজাইয়া দেও”- এর মতো রিজার্ভ কমে গেছে, রেমিটেন্স প্রবাহ নিম্নমুখী বলে এতদিন যারা গলা শুকাচ্ছিল এখন রেমিটেন্স বাড়ল কেন? আওয়ামী লীগ সরকার জবাব চাই ? অবনমনেও জবাব চাই, বৃদ্ধিতেও জবাব চাই।
এবার আসুন রেমিটেন্স বৃদ্ধির কারণসমূহ বিশ্লেষণে যাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স সেশন শুরু হয় ফেব্রুয়ারি- মার্চে। এ বছর চাইল্ড ক্রেডিট এর আওতায় যাদের ১টি সন্তান রয়েছে তারা প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার ডলার চাইল্ড ক্রেডিট কর্মসূচির আওতায় ডলার হাতে পেয়েছে এপ্রিল-মে মাসে। সুতারাং যাদের ২টি সন্তান তারা প্রায় ১৬-১৮ হাজার ডলারের উপরে পেয়েছে। যার ফলে একটি বিরাট অংকের অর্থ হাতে এসেছে কয়েক লক্ষ আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের। এক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে- ইনডিপেন্ডেন্ট কন্ট্রাকটর : যেমন ট্যাক্সি বা উবার ড্রাইভার বা ফুড ডেলিভারি-তে আমাদের দেশের অনেক প্রবাসীরাই জড়িত, কাজের স্বাধীনতা আছে এবং আয়ও ভালো। এই পেশায় জড়িতদের আয় ২০২০-২১ এর পেনডেমিকের কারণে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে গিয়েছিল, কিন্তু ২০২২-২০২৩ সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে ব্যাপকভাবে। সুতারাং যারা ২০২০-২০২১-এ পেনডেমিকের কারণে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেনি তাদের জন্য অতিরিক্ত টাকা পাঠানোর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফলে রেমিটেন্স বৃদ্ধির এটা একটা কারণ হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ব্যাংকের সুদের হারে উর্ধ্বগতি : পূর্বে ট্যাক্স সেশন বা ইনসেন্টিভ এর সময়ে বাঙালি অভিবাসিরা সাধারণত এই এককালীন পাওয়া অর্থ বিনিয়োগ করতো-বাড়ি, প্রোপার্টি ও গাড়ি ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক বিনিয়োগে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাংক সুদের হার প্রায় ২/৩ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২০-২০২১ এ বাড়ি বা প্রোপার্টি কেনার জন্য নেওয়া ঋণের সুদের হার ছিলো সর্বোচ্চ ৩%, যা আজকে এই মুহূর্তে প্রায় ৭%-৮% শতাংশ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং নতুন প্রোপার্টি বা বিজনেস-এ যাদের আগ্রহ ছিলো তারা “ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে”। এখানে বলা দরকার, এই ব্যাংক সুদের হার কবে আবার কমবে বা আদৌ কমবে কিনা- তা নিয়ে বিশ্লেষকদের পরিষ্কার কোন ধারণা নাই। তারল্যের সংকট ও হঠাৎ করে বড় বড় ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সঞ্চয় সেদেশে নিরাপদ মনে করেছে না কেউ কেউ-কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সেই বিবেচনায় অতিরিক্ত সঞ্চয়ের অর্থ দেশে পাঠাচ্ছে হয়তো অনেকেই। ২০২৩ সালে ডলারের দাম কপালের উপরে গিয়ে ঠেকেছে, সরকারি বৈধ চ্যানেলে প্রতি ডলারের দাম প্রায় ১০৮টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে যা সকল সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। রেমিটেন্সে প্রণোদনা : বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে সংগ্রহের আগ্রহ তৈরিতে সরকারের ইনসেন্টিভ নীতিমালা দারুণভাবে উৎসাহ যুগিয়েছে। যার ফলে ডলারের উর্ধ্বমূল্য এবং সেই সাথে ২.৫% ইনসেন্টিভ চাঙ্গা করেছে প্রবাসীদের বৈধ প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ায়।
“ডলারের” মুদ্রা বাজারের নেতৃত্ব ধরে রাখার বিষয়ে সংশয়, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে স্যাংশন এর পরিপ্রেক্ষিতে মুদ্রা বাজারে রাশিয়া ও চায়না নতুন নীতিমালা গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারকে বাদ দিয়ে নিজেদের মুদ্রা “রুবল ও ইউয়ান”-এ লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেয় এই বিশাল দেশ দুটো, পাশাপাশি ভারতও “রুপিতে” আমদানি রপ্তানি নিয়ে ভাবছে। সেই ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্য যদি সফলতা পায় তবে “ডলারের মুদ্রা” বাজারের নেতৃত্বে না থাকার কথাও ভাবছে অনেকে, ফলে হঠাৎ করে ডলারের দর পতন হলে প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থে টান পড়বে। এই আশঙ্কায়ও কিছু অতিরিক্ত ডলার আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
প্রকৃতপক্ষে বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগ সরকারের সকল অর্জনকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার এই ব্যাধি যে জাতীয় উন্নয়নে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তার কোন চেতনা নাই পথভ্রষ্ট জাতীয়তাবাদীদের। একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন, জাতীয় রাজনীতিতে অতিমাত্রায় ক্ষমতালোভী উচ্চাশার পথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে? তা নির্ণয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা আসলেই লজ্জার। বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা- চরম ভুল হিসেবে গণ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রকে প্রতিপক্ষ বানানোর ভুল সিদ্ধান্তের ফলে আজ এই অর্জন- “মার্কিন স্যাংশন”। যার ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্বাচীন রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবে যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক।
রাষ্ট্রের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক অর্থপ্রবাহ এবং রিজার্ভকে সস্তা রাজনীতির রোষানলের শিকার করা হচ্ছে অসচেতনভাবে। তবে এখানে বলা যেতে পারে বিএনপির প্রাইওরিটি কি? দেশের উন্নয়ন না রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া? হোক না তাতে দেশের ক্ষতি, রাষ্ট্রের ক্ষতি, জনগণের দুর্ভোগ। এগুলোতো তাদের বিবেচনায় নাই, বিবেচনায় নাই দেশের সাধারণ মানুষ। কমে যাক রেমিটেন্স, রিজার্ভ ফুরিয়ে যাক, উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাক, আইন শৃংখলার অবনতি হোক, করোনায় লক্ষ লক্ষ মানুষের লাশ পড়ে থাকুক রাস্তায়-তবুও ক্ষমতায় আসতে হবেই তাদের। যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা এ্যাম্বাসি কর্তৃক ওয়াশিংটন ডিসির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠিতে উল্লেখিত চরম ভয়ংকর সন্ত্রাসী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ১৪ বছর আগে নিষিদ্ধ হওয়া ভিসা নীতির আওতায় প্রথম বাংলাদেশী “তারেক জিয়াকে” ক্ষমতায় আনতেই হবে, এটাই তাদের আজকের জাতীয়তাবাদ। অথচ আজকের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে চায়। কোনো অপশক্তির হুংকারে ভীত নয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনগণ। জনগণের সদিচ্ছায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশ-বিদেশি কোনো প্রতিবন্ধকতা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমরা মনে করি।
লেখক: উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি, রাজনৈতিক কর্মী
মন্তব্য করুন
হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণ করলে সেটির পরিণাম যে নির্মম হয় সেটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। পঁচাত্তরে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ড, এরপর ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের প্রধান সুবিধাভোগী জেনারেল জিয়াউর রহমান একের পর এক ক্যূ-পাল্টা-ক্যূ, হত্যাকাণ্ড, মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি, চাকরিচ্যুতি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে চেষ্টা করেছেন তার পথ ধরেই নিজেও নির্মমভাবে নিহত হন। আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী
জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। জিয়া পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেননি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নানা সময় বিভিন্নভাবে সেনা-অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীর একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ সেই সময়ে ঘটে চলেছিল নিয়মিতভাবেই।
বলা যায়, এমন পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সামরিক বাহিনীর একদল অফিসারের হামলায় নিহত হন দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান। ছয় বছর আগে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সামরিক বাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই তিনি দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। এর পরের বছরগুলিতে তাকে উৎখাতের জন্য বিভিন্ন সময় সামরিক বাহিনীতে চেষ্টা করা হলেও তাঁর অনুগত সেনা অফিসার এবং সদস্যরা সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাগুলি দমন করেন।
কিন্তু ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান নিহত হন সেনা অফিসারদের হামলাতেই। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে তখন যে সেনা অফিসাররা ছিলেন তাদের অনেকেই জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও ঘটে যায় এই হত্যাকাণ্ড। প্রশ্ন ওঠে, অনুগত অফিসাররাই কি জিয়াকে হত্যা করেছিলেন? নাকি তার অনুরাগী অফিসারদের ব্যবহার করে অন্য কোনো গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থের জন্য হত্যা করেছিল তাকে?
এই হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের প্রভাবশালী অফিসাররা কয়েকদিন চট্টগ্রামে কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখলেও ঢাকা সেনা সদর এবং দেশের অন্যান্য সেনানিবাস তাদের সঙ্গে নেই এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতেই তাদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসি বা ডিভিশনাল কমান্ডার জেনারেল আবুল মঞ্জুর তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দ্রুতই ধরা পড়ে যান এবং তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরিয়ে এনেই হত্যা করা হয়। বলা হয়, উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যরা তাঁকে হত্যা করেছে।
জেনারেল মঞ্জুরকে বিচারের সম্মুখীন না করে এভাবে হত্যা করা অনেক প্রশ্ন আর সন্দেহের জন্ম দেয় স্বাভাবিকভাবেই। জিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় যে সেনা অফিসারদের তাদের অনেকেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। চট্টগ্রাম কারাগারে গোপনে এবং খুব তাড়াহুড়ো করে বিচারের পর ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসি দেওয়া হয়, অনেককে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয় আরও বেশ কিছু অফিসারকে।
সত্তরের দশকের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অফিসাররা একাধিকবার জিয়াকে উৎখাতের চেষ্টা করেন। ১৯৮০ সালে দুই মুক্তিযোদ্ধা অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিদারুল আলম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুন্নবী খানের মাধ্যমেও এই অফিসাররা জিয়ার বিরুদ্ধে সেনা-অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। নুরুন্নবী খান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়ার নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্সের একটি বাহিনীতে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন। জিয়ার বিরুদ্ধে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানসমূহের কোনোটাই অবশ্য সফল হয়নি।
এমন জটিল এক পরিস্থিতিতেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সফরের সময় শেষ রাতে এক সামরিক হামলায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে মঞ্জুরের অধীনস্থ সেনা অফিসাররা এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই হত্যাকাণ্ডের পর মেজর জেনারেল মঞ্জুরকেই এই পরিস্থিতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।
৩০ মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ওপর আক্রমণ চালানো হবে তা কি জেনারেল মঞ্জুর জানতেন? সেই সময় চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায়, যেদিন রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম পৌঁছান তখন তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জেনারেল মঞ্জুর বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। মঞ্জুর কেন আসেননি সে ব্যাপারে জিয়া চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অন্য একজন উর্দ্ধতন সেনা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেসও করেন (এই প্রসঙ্গে আবার অন্য বর্ণনায় জানা যায়, রাষ্ট্রপতি জিয়াই নাকি জেনারেল মঞ্জুর যেন বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে না আসেন সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন)।
মন্তব্য করুন
২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি এদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সশস্ত্রবাহিনী থেকে এ অবধি ১,৮৩,৩৭৮ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত হয়েছেন।শান্তি রক্ষায় কাজ করার সময় নিহত হয়েছেন ১৩৯ জন,আহত হয়েছেন ২৪০ জন।২০২২ সালে এসে আমরা সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৬৩২৪ জন সদস্যকে শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত দেখতে পাচ্ছি। এ ভেতর নারী সদস্য রয়েছেন ৩৭১জন। বর্তমানে ৯টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্য কাজ করছেন।উল্লেখ্য, সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৪৩টি দেশে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি কতটা গুরুত্ববহ।
২. শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়ার আক্রমণের শিকার ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুপস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭৫ বছর পূর্ণ করল। এদিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল পুরুষ-নারীকে শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারী মনোভাব বজায়, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মানপূর্বক স্মরণ করা হয়। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
আগেই উল্লেখ করেছি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পূর্ণ করেছে ৭৫ বছর। পক্ষান্তরে জাতিসংঘের অধীনে চলতি বছর বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৩৫ বছর পূর্ণ করল(১৯৮৮-২০২৩)। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুদ্ধরত সিরিয়াতে একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে শান্তি রক্ষায় মুসলিম দেশগুলোর সাথে তাঁর সরকারের বন্ধুত্ব স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা প্রশংসিত হয়েছেন দেশ-বিদেশে। যেমন, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা কোভিড-১৯(২০২০-২০২১)মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অব্যাহত ও নিবেদিতভাবে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, শান্তিরক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের ‘নারী, শান্তি ও সুরক্ষা’ বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মূল কৌশলের একটি।এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই গৌরবের। এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সেসময় বলেছিলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্রবাহিনীর অংশগ্রহণের ব্যাপক সুযোগ করে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি আর সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সে দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সবাই বিশ্বশান্তি বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। সে আলোকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’ প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিভিন্ন দেশের জাতিগত সংঘাত মোকাবেলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বিচিত্র দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সেবায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা অনুকরণীয় দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হচ্ছেন।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বড় অংশ এবং পুলিশ ও অন্যান্য সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। ‘দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা’- এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। এখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বায়েজিদ সরোয়ার লিখেছেন ‘কম্বোডিয়া’, ‘কুর্দিস্তানের দিনগুলি’ লিখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস। আরো অনেকের গ্রন্থ রয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ নিয়ে। ফলে শান্তি মিশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এদেশে ‘সামরিক সাহিত্যে’র একটি ভিন্ন ধারা সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৪৩টিতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্য
মন্তব্য করুন
সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। পুরাতন ঢাকার ধূপখোলা বাজারে রাস্তার পাশে তিতাস গ্যাস পাইপলাইন লিকেজ থেকে বিষ্ফোরণে পাশ্ববর্তী দোকান ও বাড়িঘরে আগুন লেগে শিশু, নারীসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন।
গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বিকালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের ৮ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো থেকে বিষ্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ এলাকায় Dhaka-Narayangonj-Demra (DND, ডিএনডি) Paddy field project এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত একটি পাকা মসজিদের নীচে থাকা গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানী ঢাকা ৪ ও ৫ এবং নারায়নগঞ্জ-৪ নির্বাচনী এলাকার পাশাপাশি বেশকিছু এলাকা নিয়ে গঠিত ডিএনডি প্রকল্প এলাকায় অবহেলায় পড়ে থাকা ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের মধ্যকার বিশাল বিলে অব্যবহৃত জমিতে ধান চাষের আওতায় আনার জন্য ১৯৬২ সালে জাপানের অর্থনৈতিক সহায়তায় চারিদিকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ধানক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য এই বাঁধের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা খাল খনন করা হয়। কিন্তু মেগাশহর ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট আবাসন সংকট মোকাবেলায় ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁচাপাকা অসংখ্য বাড়ীঘর নির্মাণ হতে থাকে। ধানক্ষেতের আইল ধরে নিজেদের সুবিধামত রাস্তা তৈরি করা হয়। প্রথমে কাঁচা রাস্তা, পরে ইট বিছানো রাস্তা, সর্বশেষ পাকা রাস্তা। চারিদিকে নির্মিত বাঁধ এর লেবেল থেকে প্রায় ১৫-২০ ফুট নীচে ধানক্ষেতে গড়ে উঠে অপরিকল্পিত জনবসতি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এই সকল অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা আবাসিক বাড়িঘরের বাসিন্দাদের জ্বালানী চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে ঐ সকল অপরিকল্পিত রাস্তায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করেছে। চারিদিকে রয়েছে উঁচু বাঁধ। ফলে গভীর নলকূপে উত্তোলিত নিত্যদিনের ব্যবহার্য পানি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অপরিকল্পিত বসতি ও রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকলে সমর্থ্য অনুযায়ী যে যার বাড়িতে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে থাকে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন রাস্তাঘাট, অলিগলি গুলো মেরামতের নামে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে থাকে। সর্বশেষ, ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে স্থানীয় রাস্তা ও তার শাখা-প্রশাখাসমূহ উঁচু করে চারিদিকে নির্মিত ডিএনডি প্রকল্পের বাঁধের সমান উচ্চতায় আনা হয়। ফলে গত দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর পূর্বে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যে পাইপলাইন স্থাপন করেছিল, লৌহনির্মিত সেই পাইপলাইন সমূহ প্রায় ১৫-২০ ফুট মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়।
রাস্তাসমূহ মেরামতের পূর্বে, কদমতলীর অনেক জলমগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্যাস পাইপলাইন থেকে বুঁদ বুঁদ করে গ্যাস নির্গত হতে দেখা গিয়েছিল। এবিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরেজমিনে তদন্ত করে এই সমস্যা নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট এলাকার কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় ১৫-২০ ফুট মাটির নীচের পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ২ ফুট মাটির নীচে ২ ইঞ্চি ব্যাসের নতুন পাইপলাইন স্থাপন করে অনুমোদিত প্রত্যেক গ্রাহককে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। ঐ নতুন সংযোগপ্রাপ্ত গ্রাহকদের তরফ থেকে বর্তমানে তেমন কোন অভিযোগ না থাকলেও, ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার বৃহৎ এলাকায় ২০-২৫ বছর পূর্বে স্থাপিত তিতাস গ্যাস পাইপলাইনে সংযুক্ত গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। বাড়িতে অপ্রতুল গ্যাস সরবরাহের অভিযোগতো রয়েছেই। এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যাসের চুলার সুইচ অন করার পর প্রথমে পানি নির্গমন হয়, পরে খুবই ক্ষীণ চাপে গ্যাস পাওয়া যায়। রান্নার কাজে ভোগান্তির শেষ নেই। অনেক বাড়ীতে লাকড়ির চুলা বা কেরোসিনের চুলায় রান্না করতে হয়। যদিও গ্যাস বিল নিয়মিত করে যাচ্ছে গ্রাহকগন।
এমনি পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস পূর্বে কদমতলী থানার ৫৩ নং ওয়ার্ডের হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোডের বাসিন্দারা স্থানীয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অফিসে গিয়ে উপরোক্ত অভিযোগ দায়ের করলে, ১৫-২০ বছর পূর্বে স্থাপিত ২০-২৫ ফুট মাটির নীচের ধ্বংস প্রাপ্ত পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো খুঁজতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে মাটি খুড়তে শুরু করে। ২০-২৫ ফুট মাটির নীচের পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন খুঁজতে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পুকুর খনন করেও পাইপে ফুটো বা ফাটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঐ সকল এলাকায় চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, স্থানীয় বাসিন্দারা, একই এলাকায়, ইতিপূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে গৃহীত প্রকল্পের ন্যায় পুরাতন পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে দুই ফুট মাটির নীচে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার পরামর্শ দেন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কর্তৃপক্ষ পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন খুঁজতে রাস্তায় পুকুর খননের কাজ বন্ধ করলেও নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার কাজ অদ্যাবধি শুরু করেননি।
২৫-৩০ বছর পূর্বে স্থাপন করা লোহার তৈরি পাইপগুলোর টেম্পার নষ্ট হওয়া এবং ১৫-২০ ফুট নিচে মাটির চাপে ঐ পাইপলাইন গুলো ফেটে যাওয়া বা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই ফেটে যাওয়া স্থান বা ছিদ্র দিয়ে পানি বা কাঁদা ঢুকে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া ২৫-৩০ বছর পূর্বের স্বল্পসংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দার চাহিদা অনুযায়ী যে ব্যাসার্ধের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছিল, পরবর্তিতে প্রয়োজনের তাগিদে সেই একই পাইপলাইন থেকে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত সরু পাইপলাইনে সক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত সংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের চাপও কমেছে।
এমতাবস্থায়, ফেটে যাওয়া বা ফুটো হওয়া গ্যাস পাইপলাইন থেকে নির্গমিত গ্যাস থেকে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া গ্রাহকদের যথাযথ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস সরবরাহে নিশ্চিত করতে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বাতিল করে অধিক ব্যাসার্ধের নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা সময়ের দাবী।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
“ডলারের” মুদ্রা বাজারের নেতৃত্ব ধরে রাখার বিষয়ে সংশয়, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে স্যাংশন এর পরিপ্রেক্ষিতে মুদ্রা বাজারে রাশিয়া ও চায়না নতুন নীতিমালা গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারকে বাদ দিয়ে নিজেদের মুদ্রা “রুবল ও ইউয়ান”-এ লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেয় এই বিশাল দেশ দুটো, পাশাপাশি ভারতও “রুপিতে” আমদানি রপ্তানি নিয়ে ভাবছে। সেই ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্য যদি সফলতা পায় তবে “ডলারের মুদ্রা” বাজারের নেতৃত্বে না থাকার কথাও ভাবছে অনেকে, ফলে হঠাৎ করে ডলারের দর পতন হলে প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থে টান পড়বে। এই আশঙ্কায়ও কিছু অতিরিক্ত ডলার আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। জিয়া পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেননি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন।
শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়ার আক্রমণের শিকার ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুপস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭৫ বছর পূর্ণ করল।
গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বিকালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের ৮ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো থেকে বিষ্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ এলাকায় Dhaka-Narayangonj-Demra (DND, ডিএনডি) Paddy field project এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত একটি পাকা মসজিদের নীচে থাকা গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
একটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসছে। রোববার সকাল নাগাদ এটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টির নামের বানান ও উচ্চারণ বিভ্রান্তিতে পড়েছে দেশের মিডিয়া জগত। মোচা, মোকা, মোখা, মকা, মখা, মউকা ইত্যাদি নামে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন দরকার ? আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের আসল নাম কোনটি ? নাকি সবই সঠিক ?