ইনসাইড বাংলাদেশ

জিয়া পরিবারের দুর্নীতি ফাঁস করেন সাবেক একান্ত সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:০৭ পিএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭


Thumbnail

এ এইচ এম নূরুল ইসলাম। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে একটি সাক্ষাৎকার দেন নূরুল ইসলাম, যেখানে তাঁর কথায় উঠে আসে বেগম জিয়ার ছেলে ও স্বজনদের অসখ্য দুর্নীতির কথা। একই সঙ্গে জানা যায় এসব দুর্নীতির কথা জেনেও বেগম জিয়া নিশ্চুপ ছিলেন। নূরুল ইসলামের ওই সাক্ষাৎকার পরে ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’। এ এইচ এম নূরুল ইসলামের সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকারের চুম্বক কিছু অংশ বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো:

প্রশ্ন: টানা পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক দুর্নীতির তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা এবং এর ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। ওই বছরগুলোর মধ্যে তিন বছর আপনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করেছেন। আপনার মন্তব্য কী?

এ এইচ এম নূরুল ইসলাম: প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের জন্য এর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এরপরও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ছাড়া কোনো মন্ত্রীরা দুর্নীতি করতে পারে না। জোট সরকারের গত পাঁচ বছরে দুর্নীতির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেছে। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ যদি বিপদে পড়লে তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতো অপর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গম কেনা, বেসামরিক বিমান চলাচাল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যন্ত্রাংশ কেনা, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পিলার ও ট্রান্সফরমার কেনা এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের গ্যাসক্ষেত্র বরাদ্দ। এই বিষয়গুলো দেশের গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এখানে সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের সর্বস্তর থেকে বিষয়গুলো ঢাকবার চেষ্টার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে।

গত পাঁচ বছরে সরকার সংশ্লিষ্ট চার ধরনের মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। প্রথমত, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকর্তারা। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনরা যারা অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন (সামাজিক চাপ)। তৃতীয়ত, সংসদ সদস্যরা (রাজনৈতিক চাপ)। চতুর্থত ও শেষ, পেশাদার লবিস্ট, সুবিধাভোগী এবং দালালরা (আর্থিক প্রভাব)।

চারটি শ্রেণির মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিল?

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও স্বজনরা। বেগম জিয়ার (বড়) ছেলে তারেক রহমান প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আসতেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর একজন রাজনৈতিক সচিব তাঁর (তারেকের) এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতেন। ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বড় কোনো ক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়দের আনাগোনা বাড়তো। বড় অংকের কেনাকাটায় তারা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করতেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংরক্ষিত অংশেও তাঁদের যাতায়াত ছিল। বেগম জিয়ার সাবেক ব্যক্তিগত সচিব সাইফুল ইসলাম ডিউক তাঁদের সহায়তা করতেন। সেও প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর কোন স্বজনের সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল?

একটি পরিত্যাক্ত গ্যাসক্ষেত্র কানাডার কোম্পানি নাইকোর কাছে বরাদ্দের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাতায়াত বাড়ে তারেক রহমানের। এছাড়া পায়শই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসতো বেগম জিয়ার ছোট ছেলে অরাফাত রহমান, বোনের ছেলে শাহরিন ইসলাম তুহিন, ভাই সৈয়দ ইস্কানদার ও দেবর এবং আরেক ভাই শামীম ইস্কানদার।

গত পাঁচ বছরের দুর্নীতি হাওয়া ভবনের নাম কখনো এসেছে?

পাঁচ বছরে অনেক দুর্নীতি ও অনিয়ম ঘটেছে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিবের মাধ্যমে, যাঁরা হাওয়া ভবনের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্কে রেখেছেন এবং সেখান থেকে সমর্থন ও সহায়তা পেয়েছেন।

ক্ষমতায় গিয়ে খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন হারিস চৌধুরী ও মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। গত পাঁচ বছরের দুর্নীতিতে তাঁদের ভূমিকা কী?

প্রথম জন হাওয়া ভবনের স্বার্থ উদ্ধার করতো। বিভিন্ন খাতে লবিংয়ে যুক্ত ছিলেন তিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই লবিং হতো। আর বড় ছেলের ইচ্ছাপূরণ করতেন তিনি। দ্বিতীয় জন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে তিন বছর কাজ করেছেন। তাঁর সম্পদ যেভাবে বেড়েছে তা বৈধভাবে তিনি আয় করতে সক্ষম নন। ধারণা করা হয়, তাঁর প্রদর্শিত সম্পদের চেয়ে অপ্রদর্শিত সম্পদের পরিমাণই বেশি। আর বিশেষ গোষ্ঠির মানুষের অবৈধ অর্থ রাখার ব্যবস্থা করেন তিনি। বিষয়গুলোর তদন্ত হলে অনেক কিছুই জানা যাবে।

জোট সরকারের বড় কোনো দুর্নীতির কথা মনে আছে?

২০০২-২০০৩ সালের গম কেলেঙ্কারি উল্লেখযোগ্য। ওই কেলেঙ্কারিতে সরকারের বড় অংকের ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় খাদ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং বগুড়ার এমপি হেলালুজ্জামানের নাম আসে। তারেক জিয়ার অন্যতম সহযোগী হেলালুজ্জামান। তারেক বগুড়ায় গেলেই সবসময় পাশে থাকতেন হেলাল। গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় ওই ঘটনায় কয়েক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও রাজনীতিবিদরা থেকে যান বহাল তবিয়তে। হাওয়া ভবনের প্রভাবেই বেঁচে যান রাজনীতিবিদরা। দুর্নীতির বিষয়টি এখানে পরিষ্কার ভাবে প্রমাণিত।

দুর্নীতির অভিযোগ এলে প্রধানমন্ত্রী কী চাপ প্রয়োগ করতেন?

হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে, দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতেন প্রধানমন্ত্রী। আর কোনো মন্ত্রী দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলে অন্যান্যরা তাঁর সমর্থনে এগিয়ে অসতো।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দুর্নীতি?

আমাদের সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল চুক্তভিত্তিক নিয়োগ ও বদলি নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। সরকার সবসময় চিন্তা করেছে কাকে নিয়োগ দেওয়া হলে দুর্নীতি ও অনিয়মে সর্বোচ্চ সহায়তা পাওয়া যাবে। আইন ও নিয়মের বাইরে গিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী যোগ্যাতা নেই এমন অন্তত ২০০ কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সুশাসনের স্বার্থে বিষয়গুলোর তদন্ত হওয়া উচিত।

সরকারি সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগও গণমাধ্যমে এসেছে?

সরকারের দুর্নীতির আরেকটি খাত ছিল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ এবং সরকারি বাড়ি, জমি ও সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে বিক্রি। একটি ঘটনা আমি মনে করতে পারি। লিরা ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পিভিসি পাইপ তেরি করতো। টঙ্গিতে ১০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল। তবে মাত্র দুই কোটি ৮০ লাখ টাকায় ওই জমি প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিক্রি করা হয়। ওই সময় টঙ্গিতে বিঘাপ্রতি জমির দাম ছিল নূন্যতম এক কোটি। এই হিসেবে ওই জমির দাম হয় ১৮ কোটি। কিন্তু ১০ বিঘা জমি সহ, প্রতিষ্ঠানের সবকিছু বিক্রি করা হয় মাত্র দুই কোটি ৮০ লাখ টাকায়। কে এস আলমগীর নামে এক ব্যক্তি এটি কেনেন। হারিস চৌধুরী নিজে চুক্তি সম্পন্ন করতে উঠে পড়ে লাগেন। অনেক সরকারি সম্পত্তি বিক্রিতে তাঁকে বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়।

নামমাত্র মূল্যে সরকারি সম্পদ বিক্রির আরেকটি ক্ষেত্র ছিল গুলশানের পরিত্যক্ত বাড়ি। সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে। অধিকাংশ বাড়িই কেনে জোট সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি বাড়ির জন্য দুই থেকে তিনটি আবেদন পড়তো। এ বিষয়ে তদন্ত করলেই সবকিছু বেরিয়ে আসবে।

অনিয়মের মাধ্যেমে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হতো। এ বিষয়ে কোনো উদাহরণ?

গ্লোবার অ্যাগ্রো ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) দায়িত্বে ছিল সাত বছর। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের দরপত্র অনুযায়ী কাজটি দেওয়া হয় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য। আর ওই প্রতিষ্ঠানেরও এমন কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আমার মনে আছে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য লবি করতে আরাফাত রহমান কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসেছিল। একবার বাদ দিয়েও পরে আবার প্রতিষ্ঠানটি কাজ দেওয়া হয়।

ছেলেদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া কেমন হতো?

২০০৩ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান হংকংয়ে যান। তাঁর সঙ্গে ছিল ছয়-সাতজন বন্ধু। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরাফাত রহমান কোনোর বিষয়ে হংকংয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল একেএম আতিকুর রহমানকে অবহিত করে। কিন্তু তাঁর বন্ধুদের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। রাষ্ট্রদূত তাই আরাফাতের বন্ধুদের ব্যাপারে জানতেন না। হংকংয়ের ইমিগ্রেশন আরাফাত রহমানকে দ্রুত ভিসা দিলেও তাঁর বন্ধুদের ভিসা আটকে যায়। আরাফত রেগে মেগে তাঁর মাকে ফোন করে। বেগম জিয়া আতিকুর রহমানকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তবে এরই মধ্যে ২৫ বছর সরকারি চাকরি করায় তাঁকে বরখাস্ত করা যাবে না বলে জানায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে আরাফাত রহমানকে বলে কয়ে কর্মকর্তারা আতিকুর রহমানকে হংকংয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তবে পরে আবার কোনো কারণ ছাড়াই আতিকুর রহমানের পদোন্নতি আটকে দেন বেগম জিয়া।

কোনো বিশেষ ঘটনার কথা কি মনে আছে?

সরকারের ক্রয় কমিটির মাধ্যমে টেলিটকের যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দুবার প্রত্যাখ্যান হলে প্রধানমন্ত্রী অস্থির হয়ে পড়েন। তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক ছেলে। তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিতে গেলে বিষয়টি আদালতে নিয়ে যায় সর্বনিম্ন দরদাতা। আদালত বিষয়টি সমাধানে পদক্ষেপ নেয়। আর বরাদ্দকৃত বাজেটের চেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার দেওয়া মূল্য ছিল বেশি। তাই বাজেটও বাড়ানো হয়। দুবার পত্যাখ্যানের পর তৃতীয়বার বিষয়টি ক্রয় কমিটির বৈঠকে ওঠে। তবে পরে আইনি জটিলতার আশঙ্কায় ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাত্র দুজন জ্বালানি মন্ত্রী এ কে এম মোশারফ হোসেন এবং অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান।

বৈঠকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে, আমি একটি নোট সংযুক্ত করি। সেখানে আমি লিখেছিলাম, দুর্নীতি দমন কমিশন এরই মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে মামলা করেছে। নোটটি দেখেই আমার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কে মামলা করবে?’ প্রধানমন্ত্রী হারিস চৌধুরীকে বলেন, নোটটি সরিয়ে নিতে। এখনো আমি ওই নোটটি পাইনি।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

মামুনুলকে ঘিরে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হবে ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন হেফাজতের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। আজ সকাল ১০টায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী নেতা। 

মামুনুল হক হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পরই হেফাজত পাল্টে যেতে শুরু করে। উগ্র ভারত বিরোধিতা, সরকার বিরোধী অবস্থান এবং জঙ্গিবাদকে লালন করে মামুনুল হক সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের অবস্থান গ্রহণ করতে শুরু করেন। তার কারণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নানা রকম অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। 

মামুনুল হক যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পর হেফাজতকে উগ্রবাদী ধারা এবং সরকার বিরোধী একটি অবস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে দেশে নতুন করে উগ্র মৌলবাদীদের মেরুকরণ ঘটতে থাকে। এরকম বাস্তবতায় ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে মওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। খবর পেয়ে হেফাজত ও স্থানীয় কর্মীরা রিসোর্টে গিয়ে ভাংচুর চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। রয়েল রিসোর্টের সেই ঘটনার পর একাধিক মামলা হয় এবং এই সমস্ত মামলার প্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৮ এপ্রিল ২০২১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

পরে ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করা হয় এবং একই সাথে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রদ্রোহিতা সহ অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এই সমস্ত মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর অবশেষে আজ মুক্তি পেলেন এই বিতর্কিত সাবেক হেফাজত নেতা।

মামুনুল হকের মুক্তির পর কতগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। মামুনুল হকের একটি কর্মীবাহিনী রয়েছে। তার কিছু উগ্র জঙ্গীবাদী সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। আজ যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান তখনই দেখা যায় যে, তার কর্মী সমর্থকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন রকম স্লোগানও দিয়েছেন। 

এখন প্রশ্ন হল, মুক্তির পর মামুনুল হক কী করবেন? কেউ কেউ মনে করছেন যে, মামুনুল হকের মুক্তি আপস সমঝোতার অংশ হিসেবে হয়েছে। মামুনুল হক এখন আগের মতো সরকার বিরোধী, জঙ্গি বিরোধী অবস্থানে যাবেন না। কিন্তু যারা মামুনুল হকের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে অবহিত আছেন, তারা জানেন যে, তিনি জামাতপন্থী এবং হেফাজত ইসলামকে একটি উগ্র সরকার বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিকশিত করার জন্য তার একটি মহা পরিকল্পনা ছিল এবং সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি হেফাজতে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময় তার কর্মকাণ্ড ছিল রাষ্ট্রবিরোধী এবং প্রতিহিংসা মূলক। আর একারণেই সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়েছিল। 

মামুনুল হকের মত উগ্ৰ ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা কখনোই সরকারের পক্ষে শক্তি হতে পারে না। মামুনুল হক যদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতাও করেন সেটি তার বাঁচার কৌশল হিসেবে। কিন্তু তার রাজনৈতিক ধারাই হলো সাম্প্রদায়িক উগ্র ধর্মান্ধ এবং ভারত বিরোধী। আর একারণেই মামুনুল হক মুক্তির পর হয়তো কিছু সময় নিবেন। কিন্তু আবার নতুন করে সংগঠিত হয়ে তিনি যে সরকারের বিরুদ্ধেই আবার ষড়যন্ত্র করবেন এ ব্যাপারে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন রকম সংশয় নেই।

মামুনুল হক   হেফাজত   মৌলবাদী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

অর্থনীতি সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।

বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।

বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।

কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।

অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।

ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।


অর্থনীতি   হাসান মাহমুদ আলী   আয়শা খান   আওয়ামী লীগ   সরকার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন পোশাক শ্রমিক

প্রকাশ: ০৭:৩৬ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পোশাক শ্রমিক হজরত আলী (২২)।

শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের রেফা মনিকে (১৮) বিয়ে করেন তিনি। হজরত আলী সাদুল্লাপুর উপজেলার রফিকুল আকন্দ ও সালমা বেগম দম্পতির ছেলে।

জানা গেছে, হজরত আলীর জন্মের পর থেকে রফিকুল আকন্দ ও সালমা বেগম স্বপ্ন বুনেন যে ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে করাবেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে আকাশ পথে গিয়ে বিয়ে করেন তিনি। এ সময় বর-কনের বাড়িতে হেলিকপ্টার দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় করেন।

হেলিকপ্টারে চড়ে বর আসায় মেয়ের বাবা এনমামুল হক বলেন, আমরা গর্বিত যে জামাই হেলিকপ্টার চড়ে আমাদের মেয়েকে নিতে এসেছে।

এ বিষয়ে বরের বাবা রফিকুল আকন্দ ও মা সালমা বেগম জানান, হজরত আলী ছাড়া আমাদের আর কোনো ছেলে নেই। ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে করানোর স্বপ্ন ছিল। আজ সেই ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে হচ্ছে।

হেলিকপ্টার   পোশাক শ্রমিক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শনিবার থেকে ট্রেনের নতুন ভাড়া, কোন রুটে কত

প্রকাশ: ০৭:০৭ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত আগামীকাল শনিবার (৪ মে) থেকে কার্যকর হচ্ছে। ফলে প্রায় সব রুটের ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে।

সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন তালিকা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হবে ৭৭৭ টাকা।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ১৫০ ও ২৮৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ১৬০ ও ৩০৫ টাকা।

ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩৪০ ও ৬৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৪০৫ ও ৭৭১ টাকা।

ঢাকা-নোয়াখালী রুটে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৭৫ ও ৫২৪ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩১০ ও ৫৯৩ টাকা।

ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩২০ ও ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩৭৫ ও ৭১৯ টাকা।

ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২০ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭২ টাকা।

ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০০ ও ৯৫৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২৫ ও ১১৯৬ টাকা।

ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-রংপুর রুটে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪২৫ ও ৮১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৫১২ ও ৯৭৫ টাকা।

ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫১০ ও ৯৭২ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৪৫ ও ১২৩৭ টাকা।

ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৯৫ ও ৯৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২০ ও ১১৮৫ টাকা।

ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৮০ ও ৯২০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬০০ ও ১১৫০ টাকা।

ঢাকা-ভূঞাপুর রুটে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৬০ ও ৪৯৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৯৫ ও ৫৭০ টাকা।

ঢাকা-দেওয়াগঞ্জ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২৫ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭৬ টাকা।

এ ছাড়া শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার বাদে সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে এসি সিট ও বার্থ এবং প্রথম শ্রেণির সিট ও বার্থ আসনের ভাড়াও আনুপাতিক হারে বেড়েছে।

এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে প্রদত্ত রেয়াত প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করা হবে।

ট্রেন   বাংলাদেশ রেলওয়ে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ইলিশের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেল বিজ্ঞানীরা

প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের অন্ত্রের অণুজীবসমূহের গঠন ও বৈচিত্র্য উদঘাটন করে এক অনন্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধ্যান পেয়েছেন গবেষকরা। সর্বদা রোগমুক্ত মাছ হিসেবে ইলিশের যে গৌরব রয়েছে, যার প্রকৃত রহস্য এই উপকারি ব্যাকটেরিয়া-মনে করেন গবেষকরা।

বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই) এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের ইলিশের অন্ত্রে অনন্য এই প্রোবায়োটিকের সন্ধান পান গবেষকরা। মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ মাছের অন্ত্রে এই নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়।

গবেষকদের দাবি, উপকারী এই প্রোবায়োটিক বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহার করা গেলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বর্তমানে মৎস্যচাষে মাছ রোগমুক্ত রাখতে বিপুল পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, যা মাছকে রোগমুক্ত রাখলেও জলজ বাস্তুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি করে। এ ধরনের উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার জলজ প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে মৎস্য চাষে নতুন বিপ্লব আনতে পারে।

গবেষকরা জানান, সমুদ্র থেকে নদীতে বিচরণকারী ইলিশ মাছ কখনো রোগাক্রান্ত হয়েছে, এমন কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন নেই। সুতরাং অত্যাধুনিক মেটাজিনোমিক্স দ্বারা আবিষ্কৃত অনন্য নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিায়ার শনাক্তকরণ, ইলিশের রোগপ্রতিরোধিতা এবং অন্যান্য অনন্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিজ্ঞানীদল মনে করে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে প্রোবায়োটিক হিসেবে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহারে সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।

গবেষণাদলের প্রধান বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই)’র অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এই গবেষণায় শনাক্তকৃত ব্যাকটেরিয়াসমূহের মধ্যে ল্যাকটোকক্কাস, মরগানেলা, এন্টেরোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, শিওয়েনেলা, পেডিওকক্কাস, লিওকোনস্টক, স্যাক্কারোপোরা এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস উল্লেখযোগ্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হিসেবে তাৎপর্য বহন করে। এই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলি বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক এবং নদীর বাস্তুতন্ত্রে বিচরণকারী ইলিশের অনন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাদ ও ফিটনেসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত ড. এম. নাজমুল হক বলেন, এই গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার (সাইনোবাকা, সায়েনোকক্কাস, গেমাটা সেরেনিকক্কাস, স্যাক্কারোপলিস্পোরা এবং পলিনেলা) শনাক্তকরণ যা পূর্বে কোনো মিঠাপানি বা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিতে রিপোর্ট করা হয়নি। সমষ্টিগতভাবে, এই গবেষণায় রিপোর্ট করা ইলিশ মাছের ব্যাকটেরিয়োম এবং শ্রেণিবিন্যাস পর্যবেক্ষণের বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আরও ব্যাপক গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে।

গবেষণা প্রবন্ধটি উচ্চ ইমপ্যাক্ট বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাময়িকী প্লস ওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং এদের আপেক্ষিক সংখ্যা নির্ণয় করেন। তারা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আবাসস্থল যথাক্রমে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহীতে বসবাসকারী ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার কৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলি এবং স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করে ইলিশের অন্ত্রে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান।

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এ দেশের একটি ভৌগোলিক নির্দেশক (এও) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এটি একটি আইকনিক ফ্ল্যাগশিপ প্রজাতি হিসেবে বিখ্যাত। স্বতন্ত্র্য এবং ব্যতিক্রমী স্বাদের কারণে ইলিশ মাছের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মূল্য এবং দেশ ও বিশ্বব্যাপী এর সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক আন্তঃসীমান্ত প্রজাতি হিসেবে পরিচিত।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও, ইলিশ অপরিসীম আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। ইলিশ মাছের মোট বার্ষিক মূল্য ১৪, ৯৫০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১.১৫ শতাংশেরও বেশি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ৪ মিলিয়ন মানুষের জীবিকার উৎস এই ইলিশ মাছ। এর বাইরে আনুমানিক ২.৫ মিলিয়ন ব্যক্তির বিস্তৃত ভেলুচেইনের সঙ্গে জড়িত। এই অতি চাহিদাসম্পন্ন এবং দামি মাছটি বাংলাদেশের সামগ্রিক মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রাখে।

ইলিশ   উপকারী ব্যাকটেরিয়া  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন