নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বেগম জিয়াকে। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন বেগম জিয়াকে এই পরামর্শ দেন। বেগম জিয়া এ ব্যাপারে চিন্তা করবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, বেগম জিয়া যদি সংলাপের জন্য টেলিফোন করেন তবে তা হবে ২০১৩ এর অক্টোবরের ঘটনার মধুর প্রতিশোধ। বেগম জিয়া কয়েক দফা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংলাপের আহ্বান জানান। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এধরনের সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। কম্বোডিয়া থেকে দেশে ফেরার পর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একবার আলোচনার জন্য যে ঝাড়ি খেয়েছি, আর না।’ উল্লেখ্য,২০১৩র অক্টোবরে আন্দোলনরত বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের উদ্যোগ নেন। প্রায় সব রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নিলেও বিএনপি অংশ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী ২৩ অক্টোবর বেগম জিয়াকে টেলিফোন করে গণভবনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। বেগম জিয়া ওই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে তীব্র ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন। বেগম জিয়ার কিছু শব্দচয়ন ছিল একদম নিম্নরুচির। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাখ্যান করায় দেশে-বিদেশে বেগম জিয়া ব্যাপক সমালোচিত হন। এমনকি দলের মধ্যেও এই অসৌজ্যনতা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। এমনকি বিএনপি পন্থী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ মনে করেন, ‘ওই এক টেলিফোনেই শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচনের সুযোগ হাতের নাগালে পান। প্রাজ্ঞতায় তিনি বেগম জিয়াকে পরাজিত করেন।’
গত দুই বছর ধরে বিএনপি আগামী নির্বাচনের জন্য সংলাপ এবং সমঝোতার কথা বলছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম জিয়া অন্তত ৮টি বিভিন্ন বক্তব্য়ে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ জবাবে স্পষ্ট করে বলেছে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই।
এরকম পরিস্থিতে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো ড. মাহাবুবউল্লাহ, ড. জাফরুল্লাহ সহ আরও কয়েকজন এই প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথমে বেগম জিয়া মৃদু আপত্তি করলেও পরে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটাকে বিবেচনায় নিয়েছেন বলেই জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার এরকম সৌজন্যতা, রুচিবোধ ও শিষ্ঠাচার নেই। একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেটাই যে তিনি জানেন না, তাতো ২০১৩ তেই আমরা দেখেছি। এখন তিনি ফোন করে কী বলবেন। ক্ষমা চাইবেন নাকি ঝগড়া করবেন?’আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি এবার নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে। টেলিফোন করলে সেটা হবে নাকে খত দেওয়ার প্রথম ধাপ।’
Read in English- http://bit.ly/2BlWCu6
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।