নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ১০ জানুয়ারী, ২০১৮
রায় পর্যন্ত অপেক্ষা নয়, রায়ের আগেই রাজপথে আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। আর এবারের আন্দোলন হবে ঢাকা কেন্দ্রিক। লন্ডন থেকে বার্তা এসেছে, বেগম জিয়ার আদালতে যাবার পথে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবস্থান নিতে হবে। আগামীকাল ১১ জানুয়ারি বেগম জিয়ার আদালতে যাবার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে কেন্দ্রীয় নেতারা অবস্থান নেবেন বলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। নেতারা অবস্থান নিলে কর্মীরাও থাকবে। বিএনপির চিন্তা হলো এভাবেই মামলার রায়ের আগেই রাজপথ দখলে রাখা। মামলার রায় হবার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাকে অচল করে দেওয়াই বিএনপির লক্ষ্য।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে। এই মামলায় বেগম জিয়া দণ্ডিত হতে পারেন, এমনটাই আশঙ্কা করছে বিএনপি। বিএনপির ধারণা এর মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, আইন ও বিচার তাঁর নিজস্ব গতিতে চলছে। এখানে সরকারের কোনো হাত নেই।
সরকার যা-ই বলুক, বিএনপি আবার রাজপথেই যাচ্ছে। তবে, বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন রাজপথে অবস্থান নিলেও তাঁদের আন্দোলন সহিংস হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমরা সমঝোতার মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। কিন্তু সরকারই আমাদের আন্দোলনের পথে ঠেলে দিচ্ছে।’ তিনি বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ১৪ টি মামলা সচল এবং দেশজুড়ে আবার বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই সরকার এসব করছে।’
গত সোমবার বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত স্টাফ দলের শীর্ষস্থানীয় নেত্রীবৃন্দকে টেলিফোন করে বলেন, বেগম জিয়ার আদালতে যাওয়া ও আসার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে নেতৃবৃন্দকে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। গুলশানে বেগম জিয়ার বাসভবন থেকে বকশী বাজারের আদালত পর্যন্ত রাস্তায় মোট ১১ টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে এইসব পয়েন্টে নেতারা কর্মীদের নিয়ে দাঁড়াবেন। সিনিয়র নেতারা যাবেন আদালতে।
বিএনপি মনে করছে, এরকম অবস্থানের ফলে পয়েন্টে গুলোতে জনসমাগম বাড়বে। এখান থেকেই গড়ে উঠবে আন্দোলন। বিএনপি বলছে, রায়ের পর কিছু হবে না, যা করার রায়ের আগেই করতে হবে। তবে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছে, বিএনপির আন্দেলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির চেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বাংলা ইনাসাইডারকে বলেছেন, গত কিছু দিন ধরেই বিএনপি চেয়ারপারসনের আদালতে যাবার পথে কিছু সংখ্যক মানুষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এটাকে মোকাবেলা করেছে। ভবিষ্যতেও এরকম অবস্থান বা বাধাদান করার চেষ্টা সরকার মোকাবেলা করবে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ ঢাকাবাসীর জানমাল রক্ষার সব উস্কানিকেই প্রতিহত করবে।’
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।