নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদেও রাষ্ট্রপতি থাকতে আগ্রহী। রাষ্ট্রপতি নিজের অভিপ্রায়ের কথা তাঁর ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এখনো নতুন রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের ব্যাপারে আগামী নির্বাচনের হিসেব-নিকেশ অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে জানা গেছে।
আইন ও বিচারমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বিদ্যমান জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের ভোটে। তাই আওয়ামী লীগ যাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করবে, তিনিই রাষ্ট্রপতি হবেন। নির্বাচন কমিশন আগামী ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রথম বৈঠক করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে এবং দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তিনটি বিষয় বিবেচনা করছেন। প্রথমত, নতুন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে সংকট, বিএনপির নির্বাচন বর্জন ও হুমকি সর্বোপরি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা হবে অভিভাবকের। তাই, প্রধানমন্ত্রী এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি পদে চান যিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন আবার আওয়ামী লীগের স্বার্থ দেখবেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের মতো ডিগবাজি দেবেন না।
দ্বিতীয় বিবেচনার বিষয় হলো, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। এবার যিনি রাষ্ট্রপতি হবেন, তার অভিভাবকত্বতে বাংলাদেশ জাতিরপিতার জন্মশত বার্ষিকী পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা হলো, বছরব্যাপী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির পিতার জন্মদিন পালন।
এজন্য প্রধানমন্ত্রী এমন একজন রাষ্ট্রপতি চান যিনি এই সময়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে রং ছড়াতে পারবেন।
তৃতীয় বিবেচনার বিষয় হলো, বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী পালিত হবে ২০২১ সালে। নতুন রাষ্ট্রপতির অভিভাবকত্বে। আন্তর্জাতিক ভাবে একটি মর্যাদার বার্তা দিতে চায় এবছর বাংলাদেশ। এজন্য এমন একজন রাষ্ট্রপতি চান প্রধানমন্ত্রী যিনি বিশ্ব সভায় বাংলাদেশকে আলোকিত করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই তিন বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়া নিশ্চিত নয়। আবার তিনি বিবেচনার বাইরেও নন। রাষ্টপতির পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। এসব আলোচনায় আবদুল হামিদের পাশাপাশি আরও অন্তত তিনটি নাম এসেছে। এগুলো হলো, প্রধানমন্ত্রীর আন্তুর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভি, স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন, এবং জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তবে রাষ্টপতির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন প্রধানমন্ত্রী হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছেন, এখন তিনি যাচাই-বাছাই করছেন। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে তাঁর সিদ্ধান্ত পরখ করছেন।
Read in English- http://bit.ly/2DqXOdr
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জেলা প্রশাসক সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।