ইনসাইড বাংলাদেশ

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পূর্ণ ভাষণ

প্রকাশ: ০৬:০৭ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২


Thumbnail জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পূর্ণ ভাষণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে তিনি এই ভাষণ দেন।

পাঠকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পূর্ণ ভাষণ হুবহু তুলে ধরা হলো-

বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম,

মাননীয় সভাপতি, আসসালামু আলাইকুম এবং শুভ অপরাহ্ণ

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আশ্বাস দিচ্ছি সাধারণ পরিষদের পুরো অধিবেশন জুড়েই আমার প্রতিনিধিদল আপনাকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দিয়ে যাবে। একইসঙ্গে আপনার পূর্বসূরি জনাব আব্দুল্লাহ শহিদকে অভিনন্দন জানাই। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে আমি সাধুবাদ জানাই জাতিসংঘকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আরও প্রাণবন্ত করে তোলার লক্ষে তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির জন্য।

এবছরের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য- ‘‘একটি সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ: আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাসমূহের রূপান্তরমূলক সমাধান”। জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা, সংঘাত, কোভিড-১৯ এর মহামারীর মত একাধিক জটিল ও বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহ আজ জর্জরিত। এবারের প্রতিপাদ্যটি এ সকল মোকাবেলায় এবং আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে শান্তিপূর্ণ টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এই লক্ষ অর্জনের জন্য আমাদের এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

জনাব সভাপতি,

যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মত বৈরী পন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সংকটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধানে নিরূপণ করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।

জনাব সভাপতি,

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়”। বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকে এই প্রতিপাদ্য-উদ্ভূত জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এই মহান পরিষদে জাতির পিতা তাঁর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য তা এই উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে, একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশই আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার ফল আস্বাদন করতে পারব এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব। সুতরাং আমরা স্বাগত জানাই সেই সকল প্রচেষ্টাকে যার লক্ষ বিশ্ব উত্তেজনা হ্রাস করা, অস্ত্র প্রতিযোগিতা সীমিত করা, এশিয়া আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর প্রত্যেকটি স্থানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি জোরদার করা।”

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বক্তব্য এখনও সমভাবে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বাস করতেন যে, শান্তি হলো বিশ্বের সকল নারী-পুরুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিরূপ। যুদ্ধের ফলে মানবজাতি বিশেষ করে শিশু ও নারীরা চরম কষ্ট ভোগ করে। কত মানুষ রিফিউজি হয়ে পড়ে।

সভাপতি মহোদয়,

বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারী শুরু থেকে এক সংকট মোকাবেলায় আমরা মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছি। প্রথমত, মহামারী সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ করতে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করেছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছি এবং তৃতীয়ত, আমরা জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি। এসব উদ্যোগ মহামারীজনিত মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করেছে। মহামারী থেকে আমাদের নিরাপদ উত্তরণের মূল চাবিকাঠি হলো টিকা। এই টিকা সরবরাহের জন্য আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর কোভ্যাক্স ব্যবস্থা এবং আমাদের বন্ধুপ্রতীম সহযোগী দেশগুলোকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে আমরা টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি।

জনাব সভাপতি,

একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ ও সামাজিক সম্প্রীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপির হিসাবে আমাদের অবস্থান ৪১তম। বিগত এক দশকে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২০.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর আগে, আমরা টানা তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মহামারি চলাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আমাদের মতো অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু বদ্বীপে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

জনাব সভাপতি,

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত এক দশকে সাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছি। আমাদের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২১ জনে এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু হার ১৭৩ জনে নামিয়ে এনেছি। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের অধিক।

আমরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি, যাতে সমাজের কেউ পিছিয়ে না থাকে। স্বামী-পরিত্যক্তা নারী, বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গ এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

উন্নত ভৌত অবকাঠামো মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সেজন্য আমরা নদীর তলদেশের টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমসহ টেকসই বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করছি। আমাদের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করবে এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। এই সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে।

জনাব সভাপতি,

মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর ভাঙার একটি দুষ্টচক্র আমরা অতীতে দেখেছি। আমাদের এখনই এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি থাকাকালে আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোস্পারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করি, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে ঝুঁকির পথ থেকে জলবায়ু সহনশীলতা ও জলবায়ু সমৃদ্ধির টেকসই পথের দিকে নিয়ে যাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কিত আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা এবং নীতিগুলো জেন্ডার সংবেদনশীল করে তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাচ্ছি।

জনাব সভাপতি,

অভিবাসীরা এখনও তাঁদের অভিবাসন যাত্রায় অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। তাঁরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব এবং সংহতি বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন’ এবং এর অগ্রগতি ঘোষণা আমাদের এ বিষয়ে একটি চমৎকার রোডম্যাপ দিয়েছে। বর্তমান এসব জটিল বৈশ্বিক সংকট অনেক উন্নয়নশীল দেশে বিগত কয়েক দশকের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের অনেকের কাছেই একটি অধরা স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং কৃষিসহ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলোতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রয়োজন। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, কীভাবে নিত্যনতুন প্রযুক্তি বিশ্বকে দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলছে। এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারে সকলের ন্যায্য এবং সমান সুযোগ পাওয়া অপরিহার্য। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন অবশ্যই দূর করতে হবে।

বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পথে। তবে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকট আমাদের টেকসই উত্তরণের পথে গুরুতর প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। আমাদের উন্নয়নের অংশীজনদের কাছে বর্ধিত এবং কার্যকর সহযোগিতার আহ্বান জানাই। এ বিষয়ে দোহা কর্মসূচিকে আমরা স্বাগত জানাই।

জনাব সভাপতি,

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পর সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করি। সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘের কনভেনশনের বিধানগুলির কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এ বিষয়ে যেকোনো দুর্বলতা উত্তরণের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং জাতীয় এখতিয়ারের বাইরের অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক আইন যা ‘‘বিবিএনজে” নামে পরিচিত, সেটি প্রণয়নে আরও তৎপর হওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোকে আমি আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।

জনাব সভাপতি,

পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারসহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ২০১৯ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক ঐতিহাসিক চুক্তি অনুস্বাক্ষর করি। আমরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে আসছি। আমাদের শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে আমরা বর্তমানে শীর্ষস্থান অবস্থান করছি।

শান্তিরক্ষাসহ জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান, নারী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি টেকসই সমাজ গঠন করতে এ সকল অঞ্চলের জনগণকে তাঁরা সাহায্য করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন।

আমরা বিশ্বাস করি, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান ব্যতীত টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণে কমিশনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমরা সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বহুমাত্রিক অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারী, শিশু, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে আমরা জিরো টলার‍্যান্স নীতি গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনোরূপ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে দেই নাই। এছাড়া সাইবার অপরাধ এবং সাইবার সহিংসতা মোকাবিলা করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমি সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাই।

জনাব সভাপতি,

একটি দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি সামগ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় অধিকার ও কল্যাণ সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনি বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছি। দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য বিনামূল্যে আবাসন প্রদানের লক্ষ্যে ‘আশ্রয়ণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ১৯৯৭ সাল থেকে আমার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বিগত ১৮ বছরে প্রায় ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিনামূল্যে। অব্যাহত গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে।

জনাব সভাপতি,

অধিকৃত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। ১৯৬৭ সালের পূর্বে সীমান্তের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান ও রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে নির্ধারণ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।

জনাব সভাপতি,

আমি এখন আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবো মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দিকে। গত ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিমাত্রিক এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায় নাই। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দুরূহ করে তুলেছে। আমি আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করছে। মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এই সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে তা এই উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

জনাব সভাপতি,

কোভিড-১৯ মহামারি হতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো- যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। এই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘসহ আমাদের অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাস্তবিক ও অত্যাবশ্যক সংস্কার করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আরও কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়। আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের মত বৈশ্বিক প্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধান খুঁজতে আগ্রহী। তবে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ব্যতীত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশু ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব- যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।

জনাব সভাপতি,

আমি এখন এক নিদারুণ ট্রাজেডির কথা বলব। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা, বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, একই সঙ্গে আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। আমার ছোট তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফট্যানেন্ট শেখ জামাল, তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রী পারভিন জামাল, আমার ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, আমার ফুফা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা ১৩ বছরের বেবি সেরনিয়াবাত, ১০ বছরের ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত এবং আমার ফুপাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, তাদেরকেও হত্যা করা হয়। বিগ্রেডিয়ার জামিল, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানসহ ঘাতকেরা ১৮ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট আমার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং আমি জার্মানিতে ছিলাম। তাই ঘাতকের হাত থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে আমাদের থাকতে হয়েছিল। ১৯৭১ সাল, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী ৩০ লক্ষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে, দুই লাখ মা-বোনের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। আমি তাদের সকলকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। ১৯৭১ সালে আমার পিতাকে গ্রেপ্তার করার পর পাকিস্তানের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আমার মা, দুই ছোট ভাই শেখ রাসেল ও শেখ জামাল, আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাকে গ্রেফতার করে একটি একতলা স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িতে রাখা হয়। আমার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ওই বন্দীখানায় জন্মগ্রহণ করে। আমাদের ঘরে কোন ফার্নিচার দেওয়া হয়নি। সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা ছিলনা। দৈনন্দিন খাবার পাওয়ারও ছিল অনিশ্চয়তা।

কাজেই, যুদ্ধের ভয়াবহতা, হত্যা, গুম, সংঘাতে মানুষের যে কষ্ট দুঃখ দুর্দশা হয় ভুক্তভোগী হিসেবে আমি তা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, মানবকল্যাণ চাই, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। আমার আকুল আবেদন, যুদ্ধ অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ। আসুন সবাই একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একটি উত্তম ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যাই। আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, উন্নত জীবন পায়।

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ, খোদা হাফেজ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

জাতিসংঘ   প্রধানমন্ত্রী   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

জামালপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি


Thumbnail জামালপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন

সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের পেশাগত সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কারনে কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত, ষ্ট্যান্ড রিলিজ ও বাপবিবোতে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে এবং ১৬ দফা দাবিতে অনিদিষ্টকালের জন্য জামালপুরে দ্বিতীয় দিনের মত কর্মবিরতি করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। 

 

আজ সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে দেশব্যাপী কর্মবিরতির অংশ হিসেবে শহরের বেলটিয়া এলাকায় জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সামনে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মবিরতি শুরু করে।

 

কর্মবিরতি চলাকালে অনন্ত কুমার দাস, হাবিবুর রহমান, হামিদুর রহমানসহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের পেশাগত সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কারনে ৬ এজিএমকে সাময়িক বরখাস্ত, ষ্ট্যান্ড রিলিজ এবং বাপোবিবোতে সংযক্তি করার প্রতিবাদ করে পদ-পদবী ও পদমর্যাদার বৈষম্য, চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগকে স্থায়ী করা, পদোন্নতির সুযোগ রাখা, ছুটি ভোগের সুবিধা, ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনাসহ ১৬ দফা দাবি তুলেন।

 

তারা বলেন, পদোন্নতি, চাকুরী স্থায়ী না হওয়াসহ নানা সমস্যায় তাদের পারিবারিক জীবনেও এর প্রভাব পড়ছে, এসব কারনে অনেকে তাদের সাথে আত্মীয়তা পর্যন্ত করতে চায়না। তাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য দূরীকরণে এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন তারা। 


পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি   কর্মবিরতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

জামালপুরে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে চালক নিহত


Thumbnail

জামালপুরের মাদারগঞ্জে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে সাইদুর রহমান (৪০) নামে ট্রাক চালক নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ট্রাকের সহকারী এনামুল হক (১৮)। সোমবার (৬ মে) সকালে উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামের ভাই ভাই ব্রিকসে ইট পোড়ানোর জন্য ট্রাকটি কয়লা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো। গত রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ওই ইট ভাটায় যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। কয়লাবাহী ট্রাকটি ইট ভাটার কাছাকাছি এসে পৌছালে হঠাৎ উল্টে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাক চালক সাইদুর রহমান নিহত হয় ও আহত হয় ট্রাকের সহকারী এনামুল হক। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।


আরও পড়ুন: রাজধানীর ২০ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট


মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। নিহত ট্রাক চালক সাইদুর রহমানের বাড়ী মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে, আহত সহকারী এনামুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামে। নিহতের স্বজনদের সংবাদ পাঠানো হয়েছে তারা এসে পৌছালে মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।


কয়লাবাহী   ট্রাক   নিহত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

রাজধানীর ২০ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশ: ০২:৫০ পিএম, ০৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামী ১৬ বা ১৭ জুন ঈদুল আজহা উদযাপন করবে বাংলাদেশের মুসলমানরা। কোরবানির এই ঈদকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই শুরু হয়েছে পশু বেচা-কেনা। এবার রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ২০টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সারুলিয়ায় স্থায়ী মার্কেটের পাশাপাশি ১১টি অস্থায়ী হাটের আয়োজন করবে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গাবতলীতে স্থায়ী হাট ব্যবহারের পাশাপাশি ৯টি অস্থায়ী হাট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১১টি অস্থায়ী হাট বসাতে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া সারা বছরজুড়েই সারুলিয়ায় হাট বসে দক্ষিণ সিটি এলাকায়। এটি তাদের স্থায়ী হাট।

এবারের ১১টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে আছে..

১। উত্তর শাহজানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা

২। ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা

৩। পোস্তাগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা

৪। মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা

৫। লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা

৬। দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা

৭। ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা

৮। আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ

৯। সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা

১০। রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা

১১। শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা

ডিএনসিসির যেসব জায়গায় হাট বসতে যাচ্ছে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গাবতলী স্থায়ী হাট ছাড়াও এবার আরও ৯টি অস্থায়ী হাট বসাবে সংস্থাটি। সে লক্ষ্যে তারা হাটগুলোর ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে

এবারের অস্থায়ী হাটগুলো মধ্যে রয়েছে..

১। ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা (ভাটারা সুতিভোলা)

২। কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা

৩। উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা

৪। বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, এল, এম, এন এবং আশপাশের জায়গা

৫। মিরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা

৬। মোহাম্মাদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা

৭। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউউট সংলগ্ন খালি জায়গা

৮। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া বেপারীপাড়া রাহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের জায়গা

৯। খিলক্ষেত থানার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পাড়ার খালি জায়গা


রাজধানী   সিটি কর্পোরেশন   পশুর হাট   কোরবানি ঈদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাবনায় ছাত্রলীগের পদযাত্রা

প্রকাশ: ০২:৪৯ পিএম, ০৬ মে, ২০২৪


Thumbnail ফিলিস্তিনের গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের পদযাত্রা। সোমবার সকালে পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কে।

ফিলিস্তিনের গণহত্যা বন্ধ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাবনায় জেলা ছাত্রলীগের পদযাত্রা ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (০৬ মে) সকাল ১১টার দিকে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে থেকে ছাত্রলীগের উদ্যোগে পদযাত্রাটি বের হয়। আলিয়া মাদ্রাসা,বড় ব্রীজ   শহরের ট্রাফিক মোড় ঘুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রা।

আরও পড়ুন: স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা

পরে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ, সাধারণ সম্পাদক মীর রাব্বিউল ইসলাম সীমান্ত সহ ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

বক্তব্য অবিলম্বে ফিলিস্তিনের গণহত্যা বন্ধ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি জানান বক্তারা।


ছাত্রলীগ   ফিলিস্তিন   পদযাত্রা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

২৪ উপজেলায় ব্যালট পেপার যাচ্ছে কাল

প্রকাশ: ০২:৪৩ পিএম, ০৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। এবার ভোটের আগের দিন (৭ মে) অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ১০টি জেলার ২৪টি উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সোমবার (৬ মে) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে প্রকাশিত নির্বাচন পরিচালনা-২ (অধিশাখা) এর উপসচিব আতিয়ার রহমানের সই করা ওই চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ৮ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী, চর রাজিবপুর, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং, আজমিরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর, সরাইল, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ, রাঙামাটি জেলার রাঙামাটি সদর, কাউখালী, জোড়াছড়ি, বরকল, বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, আলীকদম, খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই, শাল্লা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দা উপজেলা পরিষদের ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের আগের দিন নির্বাচনী মালামালের সঙ্গে ব্যালট পেপার প্রেরণের জন্য নির্বাচন কমিশন অনুমতি দিয়েছেন।

ওই চিঠিতে সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অপরদিকে, ৮ মে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের সাধারণ নির্বাচনে ২২টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

সে অনুযায়ী সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কাজীপুর, পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, বেড়া, যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, ইন্দুরকানী, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর, হরিরামপুর, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, জামালপুর জেলার জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ী, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ভোট ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট ৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে।


উপজেলা নির্বাচন   ব্যালট পেপার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন