কোমলমতি হাফেজদের কচি-কণ্ঠে বেজে উঠল পবিত্র কোরআনের সুর। বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সিলেট এবং ময়মনসিংহ আলোকিত হয়ে ওঠে কচিকাচা পবিত্র মুখগুলোর ঝলকে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় মেগা রিয়েলিটি শো’টি আয়োজন করেছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে একযোগে দুই বিভাগে প্রাথমিক বাছাইপর্বের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। উভয় বিভাগে ৩০ জন করে মোট ৬০ জন পেয়েছেন ‘ইয়েস কার্ড’।
সারা দেশে বিভিন্ন মাদরাসার অনুর্ধ্ব-১৫, পূর্ণ (৩০ পারা) হাফেজরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। হাফেজদের সম্মাননা জানানোর অংশ হিসেবে এই আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী রমজান মাসে। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নকে দেয়া হবে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া দ্বিতীয় পুরস্কার ৭ লাখ, তৃতীয় পুরস্কার ৫ লাখ, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার ২ লাখ টাকা করে। প্রত্যেককে সম্মাননাও দেয়া হবে। সেরা দশের বাকি ৫ জনও পাবেন আর্থিক পুরস্কার এবং সম্মাননা।
পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও ঢাকা বিভাগের দুই অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে অডিশন। এর মধ্যে মেঘনা (কুমিল্লা) ও চট্টগাম বিভাগে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। খুলনা ও ফরিদপুরে (পদ্মা) অডিশন হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি, বরিশালে অডিশন হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ জোনে যথাক্রমে আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেটে হাফেজদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি :
এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর ৭টা থেকে সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ও অডিটোরিয়াম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে হাফেজদের উপস্থিতিতে। অডিশনে অংশ নিতে ভোর থেকেই সিলেট বিভাগের চারটি জেলা থেকে আসা হাফেজদের ঢল নামে। সিলেট শহরের বিভিন্ন মাদরাসা থেকেও আসেন হাফেজরা। উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রতিযোগী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা নাম নিবন্ধন করেন। হাফেজদের পদচারণায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা সিলেট নগর একটু আগেভাগেই মুখর হয়ে ওঠে।
প্রতিযোগিতায় নিবন্ধনের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী শাহ মঞ্জুরুল হাকিম আয়ান বলেন, এখানে ১২টি বুথে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। শেষে ৩ শতাধিক হাফেজ অডিশনের জন্য উত্তীর্ণ হন। সেখান থেকে প্রথম পর্বের অডিশন শেষে ইয়েসকার্ড পান ৩০ জন হাফেজ।
ইয়েস কার্ড হাতে পেয়ে ৯ বছরের হাফেজ নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমার ওস্তাদ এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন আমাকে। ইনশাহআল্লাহ আমি চূড়ান্ত পর্বেও বিজয়ী হবো।’
রাহিয়ান হোসেনের বয়সও ৯ বছর। তিনিও ‘কুরআনের নূর’ মেগা প্রতিযোগিতার ইয়েস কার্ড পেয়েছেন। তার ওস্তাদ আয়েশা সিদ্দিকা ইন্টারন্যশনাল তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. ইমরান বলেন, ‘রাহিয়ান আমার ছাত্র। সে কোরআনের হাফেজ। বসুন্ধরা গ্রুপের এ আয়োজনের কথা শুনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে। শুকরিয়া, সে প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে ইয়েস কার্ড পেয়েছে। ইনশাহআল্লাহ সে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়ও বিজয়ী হবে।’
সিলেটের কাজির বাজার মাদরাসার হাফেজ ফয়সল আহমদ (১৫) আহমদ বলেন, ‘এ রকম বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। নিবন্ধনের জন্য অনেকক্ষণ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি।’
তাহফিজুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসা সিলেট শাখার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ ইবনে বাশার (১২) অডিশন শেষে জানালেন, ‘সুন্দর আয়োজন। আমি অডিশন দিয়ে এসেছি। সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে। আমাদের মাদরাসা থেকে পাঁচজন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন।’
মো. আদনান শরীফ এসেছেন জামিয়া মোহাম্মদীয়া দারুসুন্নাহ কুলাউড়া মাদ্রাসা থেকে এসেছেন, ১২ বছর বয়সেই কোরআন শরীফ মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন। তিনি জানান, হাফেজদের সম্মানে এতবড় আয়োজন হবেন কখন ভাবেননি। প্রথমবারের মত এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খুবই খুশি সে।
সিলেটের অডিশনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদীস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী, শায়খুল হাদীস মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম এবং মুফতি আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা।
ময়মনসিংহেও সফল আয়োজন :
ময়মনসিংহ বিভাগেও সকাল থেকে শুরু হয় জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাইপর্ব। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন সামনে রেখে সাজ সাজরব বিরাজ করছিল আগে থেকেই ময়মনসিংহ নগরীতে। জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় নিবন্ধন কার্যক্রম। সকাল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে ভিড় করেন প্রতিযোগী এবং তাদের শিক্ষকরা। ময়মনসিংহ নগরী ছাড়াও বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় ৩০০ প্রতিযোগী এতে অংশ নেন। সাতটি বুথে ১৪ জন বিচারক প্রাথমিকভাবে তাদের বাছাই করছেন। অডিশনের পরে এদের মধ্য থেকে ৩০ জনকে বাছাই করা হয়।
প্রতিযোগিতার সমন্বয়ক হাফেজ মাওলানা ক্বারী আবু সালেহ মো. মুসা বলেন, ঢাকা থেকে অতিথিরা এসেছেন। ময়মনসিংহের বিশিষ্ট আলেম-উলামারাও প্রতিযোগিতায় আছেন।
প্রতিযোগিতায় আসা সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার দাপুনিয়া জামিয়া তালেব আলী মাদরাসার হাফেজ রুহুল আমীন বলেন, প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপনা ভালো। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে তিনজন অংশ নিচ্ছে।
বখশীগঞ্জ তাহফীজুল কোরআন মাদরাসা থেকে এসেছে আটজন। প্রতিযোগীরা জানান, তাদের এখানে এসে বেশ ভালো লেগেছে। তারা ভালো করার জন্যই এসেছে। আশা করছে তারা বিজয়ী হবে।
হালুয়াঘাট উপজেলার নুরুল ক্বলম ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে চারজন এসেছে। ছেলেরা বিজয়ী হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ময়মনসিংহের অডিশনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ বেতারের ক্বারী এমদাদুল ইসলাম এবং ক্বারী লিয়াকত হোসেন।
মন্তব্য করুন
সুশীল ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বদিউল আলম মজুমদার আদিলুর রহমান খান
মন্তব্য করুন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার (১৫ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, “গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। তিনি (ডোনাল্ড লু) বলেছেন, ইউএস অত্যন্ত টায়ারডলেসলি (অক্লান্তভাবে) কাজ করছে যাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন- ‘তারা আশাবাদী’।”
‘আমরা বলেছি, গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, নিরীহ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু’, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমি বলেছি, টেলিভিশনে যখন এগুলো দেখি, তখন টেলিভিশন দেখা কন্টিনিউ করতে পারি না। সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনিও একমত যে, সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য টায়ারলেসলি কাজ করছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে ডোনাল্ড লুকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।’
‘আমাদের আলোচনা সেই লক্ষ্যেই হয়েছে। একক দেশ হিসেবে আমাদের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। আমি ডোনাল্ড লু’কে অনুরোধ জানিয়েছি, বাংলাদেশে ৪০টি আইটি ভিলেজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে যাতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়ায়। যদিও কিছু বিনিয়োগ তারা এরইমধ্যে করেছে।’
হাসান মাহমুদ ডোনাল্ড লু ফিলিস্তিন গাজা
মন্তব্য করুন
রাজধানী ঢাকায় যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (১৫ মে) বনানীতে বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে আয়োজিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি (তিন চাকার) যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঢাকার মধ্যে অটোরিকশা বন্ধে সম্মতি জানান।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ভয়াবহ ব্যাপার যখন রিকশাচালকরা দুই পা ওপরে উঠিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। অনেক প্রতিবন্ধী আছেন যারা চোখে কিছুটা কম দেখেন তারাও এই রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সিদ্ধান্তে আসা দরকার যে ঢাকায় ইজি বা অটোরিকশা চলবে না। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সভায় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানী ওবায়দুল কাদের অটোরিকশা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করছেন। দু’দিনের সফরে প্রথম দিনে তিনি বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পিটার ডি হাসের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ছিল একটি বড় ধরনের চমক। অতীতে দেখা গেছে, যে কোন মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করলেই একগুচ্ছ সুশীলের সঙ্গে বৈঠক করতেন। সেই সুশীলরা সকলেই পরিচিত ছিল। এর আগেও ডোনাল্ড লু, আফরিন আখতার বাংলাদেশ সফর করে যে সমস্ত সুশীলদের সাথে দেখা করেছিলেন এবার তাদেরকে এড়িয়ে গেছেন।
গত দুই বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে সমস্ত কর্মকর্তারা এসেছিলেন তারা বাংলাদেশের সুশীল সমাজের যে সমস্ত প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, বদিউল আলম মজুমদার, ড. স্বাধীন মালিক, ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ আন্দোলনের নেত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান, তৃতীয় মাত্রার বিতর্কিত উপস্থাপক জিল্লুর রহমান, মতিউর রহমান, নুরুল কবিরের মত ব্যক্তিদেরকে। যারা সকলেই আওয়ামী বিরোধী এবং বিএনপি পন্থী হিসেবে পরিচিত। এদের কেউ কেউ স্বাধীনতাবিরোধীও বটে। এই সমস্ত বিরোধী পক্ষের সুশীলদেরকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক করত এবং এই ধরনের বৈঠকগুলোর পরে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম বিষোদগার করা হত।
তবে এবার ডোনাল্ড লুর বৈঠকে এই সুশীলদের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে বড় পরিবর্তন বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। গতকালের বৈঠকে যে সমস্ত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওম্যান সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার কর্মী মহম্মদ নুর খান, চাকমা সার্কেলের রানী ও মানবাধিকার কর্মী ইয়ানিয়ান, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংগঠক সোয়ানুর রহমান, তরুণ সংগঠক মাহমুদা আক্তার মনীষা।
এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি সুশীল প্রতিনিধি দল যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সুশীল পরিবর্তন কেন এ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বদিউল আলম মজুমদার, আদিলুর রহমান খান ও জিল্লুর রহমানের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার না হওয়াটাকে অনেকে বিস্ময়কর মনে করছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নীতিতে তার অবস্থান পাল্টেছে। বাংলাদেশ কৌশল পরিবর্তন করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মার্কিন নীতিও পরিবর্তন হয়েছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বাংলাদেশের বাজারে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান থাকে সে জন্য দেশটির তৎপরতা লক্ষণীয়। ডোনাল্ড লু সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকেও মার্কিন কম্পানিগুলোর অর্থছাড় বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
সবকিছু মিলিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কাজ করতে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারনেই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে যারা তাদের মিত্র ছিল সেই মিত্রদেরকে পরিবর্তন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন সুশীলদের সঙ্গে সম্পর্ক করছেন। যারা এতদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে গলাবাজি করত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণই যাদের দায়িত্ব ছিল তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছে। আর এটি বোধহয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু হয় তাদের শত্রুর দরকার হয়না।
ডোনাল্ড লু সুশীল সমাজ বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি আছেন যাদেরকে মনে করা হয় তারা মার্কিনপন্থী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে তারা গর্ব অনুভব করেন। কথায় কথায় মার্কিন দূতাবাসে যান। সেখানে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজে মিলিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলে তারা তার চেয়ে তিন ধাপ গলা উঁচিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোন ভালবাসা নেই, প্রেম নেই, আগ্রহ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং নীতি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করাই যেন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এই সমস্ত সুশীলদেরকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফোন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করছেন। দু’দিনের সফরে প্রথম দিনে তিনি বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পিটার ডি হাসের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ছিল একটি বড় ধরনের চমক। অতীতে দেখা গেছে, যে কোন মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করলেই একগুচ্ছ সুশীলের সঙ্গে বৈঠক করতেন। সেই সুশীলরা সকলেই পরিচিত ছিল। এর আগেও ডোনাল্ড লু, আফরিন আখতার বাংলাদেশ সফর করে যে সমস্ত সুশীলদের সাথে দেখা করেছিলেন এবার তাদেরকে এড়িয়ে গেছেন।