বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত এক সময় সারাবিশ্বের দৃষ্টান্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৩’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্র নানা উপায়ে প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা দিচ্ছে, প্রণোদনা দিচ্ছে। কাজেই সম্মিলিতভাবে প্রাণিসম্পদ খাতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রাণিসম্পদ খাত যত জোরদার হবে দেশের অর্থনীতি তত জোরদার হবে। দেশের অর্থনীতি যত জোরদার হবে, অবকাঠামো উন্নয়নসহ দেশের সবক্ষেত্রে উন্নয়ন তত নিশ্চিত হবে। নানাভাবে এ সেক্টর আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশাল ভূমিকা রাখছে। এই সেক্টর বিকশিত হওয়ায় বেকারত্ব দূর হচ্ছে, কর্মোদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে, গ্রামীণ অর্থনৈতিক সচল হচ্ছে। এভাবে প্রাণিসম্পদ খাত দেশের অন্যান্য সব খাতকে অতিক্রম করে বহুমুখী ভূমিকা রাখছে। অদূর ভবিষ্যতে আরো ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অপ্রতিরোধ্য গতি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি। এক সময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কম ছিল, মাতৃমৃত্যু-শিশু মৃত্যুর হার ব্যাপক ছিল, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। এ জাতীয় একটি বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ খাতের অসাধারণ অবদান রয়েছে। এ অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি খাত তথা বেসরকারি উদ্যোক্তারা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। ফলে একটা বিস্ময়কর উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।’
প্রাণিসম্পদ খাতের সাম্প্রতিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণিচিকিৎসায় মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে, দেশে আন্তর্জাতিকমানের প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে, গবাদিপশুর জন্য টোটাল মিক্সড রেশন খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে, করোনায় খামারিদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ নিয়ে মানুষের মধ্যে যেন একটা নতুন ধারণা সৃষ্টি হয় সেজন্য বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সব সময় প্রাণিসম্পদ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অতীতে গুরুত্ব না দিলেও দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এখন সবাই গুরুত্ব দেয়। অস্ট্রেলিয়া,ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ডসহ পৃথিবীর অনেক দেশ প্রাণিসম্পদকে ঘিরে উন্নয়ন করছে। সে অনুপাতে আমাদের এ খাতে অতীতে উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা,পলিসি এবং সহযোগিতার কারণে এ খাত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও সমৃদ্ধিতে, মানুষকে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো ভূমিকা পালন করছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম, এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট এফ এইচ আনসারী, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রাণিসম্পদ খাত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।