নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি টুক টাক আন্দোলন করছে। কিন্তু বেগম জিয়া কারাগারে যাবার আগে ও পরে যেসব বিএনপির নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির কোনো কর্মসূচি নেই। নেই কোনো বক্তৃতা, বিবৃতি। এমনকি তাঁদের কারাগার থেকে বেরিয়ে আনারও কোনো পদক্ষেপ বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। বেগম জিয়া দণ্ডিত হওয়ার আটদিন আগে গ্রেপ্তার হন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গয়েশ্বর এখনো জেলে আছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন হলেও সেখানে গয়েশ্বরের নাম অনুপস্থিত। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পরিবারের একজন সদস্য বলছিলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের জন্য কোনো কর্মসূচি দরকার নেই। কিন্তু বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আটক নেতাদের নাম উচ্চারিত হতে অসুবিধা কোথায়? গয়েশ্বরের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা গয়েশ্বরের মুক্তির ব্যাপারে কোনো আইনি উদ্যোগ নেননি। তাঁরা আক্ষেপ করেছেন, বিএনপি কোনো উদ্যোগ নেয় কিনা দেখার জন্য। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বেগম জিয়ার মুক্তির আগে অন্য নেতাদের মুক্তির কোনো উদ্যোগ তারা নেবেন না।
বেগম জিয়া কারান্তরীণ হবার আগেই আটক হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য তরিকুল ইসলামের দুই ছেলে, বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস সহ বেশ কিছু নেতাকর্মী । বিএনপির পক্ষ থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু এর সমর্থনে কোনো তালিকা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
দুদুর পারিবারিক সূত্র থেকে বলা হয়েছে, দলের পক্ষ থেকে নয় ব্যক্তিগত উদ্যেগে তারা জামিনের চেষ্টা করছেন। দুদুর পরিবারের একজন সদস্য দুঃখ করে বলেন,’দুদু গ্রেপ্তার হবার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কেউই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ তরিকুল ইসলামের দুই ছেলের ব্যাপারে বিএনপির কয়েকজন নেতা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তাঁদের মুক্তির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ বিএনপি এখনো নেয়নি।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির প্রায় দেড় হাজার কর্মী ৩০ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন। নেতাদের ব্যাপারে কিছু খোঁজ খবর নেওয়া হলেও, কর্মীদের খোঁজ নেয় না কেউই। ছাত্রদলের এক কর্মীর মা দুঃখ করে বলেছেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা। ছেলেটার জীবন ধ্বংস করল বিএনপি। অথচ দুঃসময়ে বিএনপির কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় নি।’ তিনি বলেন ‘মামলা চালাতেই পথের ফকির হয়ে গেলাম।‘ শুধু এই মা নয়, গত দশ বছরে আটক কর্মীদের পরিবারগুলোর একই অবস্থা। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের কোনো সাহায্য তো দেওয়াই হয় না, এমনকি খোঁজটাও নেয় না কেউ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বিএনপির কর্মসূচিতে এখন আর কর্মীরা নন একারণেই। কারণ কর্মীরা জানেন, গ্রেপ্তার হলে তাদের জন্য কেউ নেই। বিএনপির একজন কর্মী তাই দুঃখ করে বলছিলেন, ‘দল যদি দুঃসময়ে পাশে না থাকে, তাহলে আমরা কেন রাস্তায় যাব?’ ওই কর্মীর মতে ‘যে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির ব্যাপারেই গড়িমসি করে, সেই দল কর্মীদের মুক্তির জন্য কিছুই করতে পারে না।’
Read In English: http://bit.ly/2C6YCal
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।