নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০১ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
জামিন দেওয়ার পরও যদি বেগম খালেদা মুক্ত না হন, তাহলে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে। বিএনপির নেতৃবৃন্দকে লন্ডনে পলাতক দলের ভারাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এমন নির্দেশই দিয়েছেন। তবে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই ধাপে ধাপে আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু তারেক জিয়া এবং তাঁর অনুসারী তরুণ নেতারা চান একদফা আন্দোলন। এনিয়ে বিএনপিতে মতভেদ এখন তুঙ্গে। স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং তারেক জিয়া মুখোমুখি অবস্থানে।
সত্যায়িত কপি পাবার পর মঙ্গলবারই হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে। আপিল আবেদন শুনানির জন্য গৃহীত হলেই বেগম জিয়ার পক্ষে জামিনের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আশা করছেন রোববার নাগাদ তার জামিনের আবেদনের শুনানি হবে এবং তাঁকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দেওয়া হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য মঙ্গলবারই টেলিফোনে, লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। জানা গেছে, ব্যারিস্টার মওদুদ তারেক জিয়াকে আশ্বস্ত করেছেন যে রোববার বা সোমবার বেগম জিয়ার জামিন হবে। সূত্রমতে, তারেক জিয়া আশঙ্কা করছেন এই মামলায় জামিন পেলেও তাঁর মাকে অন্য মামলায় আটক দেখানো হতে পারে। তারেক লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারেক সবাইকেই বলেন, এই মামলায় জামিন হবার পরও যদি তাঁকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়, তাহলে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যেতে হবে। সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তিনি নেতাদের নির্দেশ দেন। অন্য সময়ে নেতারা তারেক জিয়ার সব কথা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিলেও, এবার তারা তারেক জিয়ার সঙ্গে একমত পোষণ করেননি। বরং, তারা বলেছেন, একদফা আন্দোলন করার জন্য দল এখনো প্রস্তুত নয়। তাঁরা এটাও বলেছেন আগের মতো হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি জনগণ পছন্দ করে না। স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই একমত পোষণ করেছেন যে, ধাপে ধাপে আন্দোলন করতে হবে। তারেক জিয়া দলের নেতাদের এই আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন বলেও একাধিক নেতা বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে দলের তরুণ নেতাদের সঙ্গেও তারেক জিয়া কথাবার্তা শুরু করেছেন। সিনিয়র নেতারা না চাইলে দলে তরুণরা, বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল পৃথক কর্মসূচি নেওয়ার চিন্তাভাবনা বরছেন বলেও জানা গেছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তারেককে জানিয়েছেন, জোর করে আন্দোলন করা যায় না। আন্দোলন পিটিয়ে কাঠাল পাকানোও নয়। মির্জা ফখরুল তারেককে বলেছেন, বাংলাদেশ পাল্টে গেছে। এখন আগের মতো করে আন্দোলন সম্ভব না। কিন্তু তারেক, বিএনপি মহাসচিবকে তিরস্কার করে বলেছেন, কেন আপনি কি করছেন ‘সবই জানি’।
বেগম জিয়ার মুক্তি যত বিলম্বিত হবে, ততোই বিএনপির ভাঙ্গন ত্বরান্বিত হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Read In English: http://bit.ly/2oh73Xg
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।