সিয়াম
সাধনার মাস রমজান। এরই মধ্যে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। কিন্তু দেশে দেশে এর বিপরীত চিত্রও
দেখা গেছে। রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে, আবার অনেক দেশে ব্যবসায়ী সমিতি কিংবা ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে দাম কমানো হয় পণ্যের, দাম
কমানো নিয়ে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে বাংলাদেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকার এবং ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করেও এই মূল্য নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে না। এর পেছনে রয়েছে
নৈতিকার স্খলন।
বিশ্বের
বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রায় ১৮০ কোটি মুসলমানের জন্য পবিত্র রমজান বয়ে আনে রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের বার্তা।
আত্মশুদ্ধি ও মহান আল্লাহর
নৈকট্য লাভের আশায় এই একমাস ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রমজান মুসলমানদের ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাস
হলেও দেখা যায়, অনৈতিকভাবে প্রতিবছর রমজান মাসে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যায়, বিষয়টি যেন একটি স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু
এর বিপরীত চিত্রের দেখা মেলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এসব দেশ রমজান উপলক্ষে বড় বড় চেইনশপ
থেকে শুরু করে ছোট দোকানে দেয় বিশাল বিশাল ছাড়। ক্রেতাদের কে কত বেশি
মূল্য ছাড় দিতে পারে সেটা নিয়ে চলে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় ছাড়ের মাত্রা কখনো কখনো ৫০ থেকে ৭০
শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায়। মূলত রোজাদারের অর্থকষ্ট লাঘবের পাশাপাশি অধিক সওয়াবের আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে এমন ছাড় দেন বিক্রেতারা। ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর ঘোষণা এবং সেগুলোর মূল্য তালিকা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
৮
শতাধিক পণ্যের দাম কমানো দেশ কাতার
রোজার
মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুত্তাকির গুণাবলি অর্জন করা। আর মুত্তাকির সার
কথা হচ্ছে, সর্বাবস্থায় আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত
রাখা। বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলা হয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ
দেশ কাতারে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ এপ্রিল থেকে
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে রমজান
শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগেই রমজান মাসে রোজাদারদের সেবায় ৮০০টিরও বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। গত ২৪ মার্চ
থেকে এ মূল্যছাড় কার্যকর
হয়েছে। ২৩ মার্চ এক
বিবৃতিতে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়
এ খবর জানিয়েছে। রমজান মাস শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের
সবাই এই সুবিধা ভোগ
করবেন। কাতারের সব বাজার ও
সুপারশপে সরকারের আদেশ কার্যকর থাকবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের
টুইটার ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে
অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ১৬০০১ নম্বরে কল করেও অভিযোগ
করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
দেশটির
সংবাদমাধ্যম কাতার ট্রিবিউন জানিয়েছে, রমজান উপলক্ষে মূল্য কমানো পণ্যসমূহের মধ্যে ময়দা, মধু, সিরিয়ল, কর্নফ্লেক্স, ইয়োগার্ট, দুধ ও ডেইরি সামগ্রী,
গুঁড়োদুধ, কন্ডেন্সড মিল্ক, পনির, ফলের রস, চিনি, কফি ও কফিজাত দ্রব্য,
খেজুর, মিনারেল ও বোতলজাত পানি,
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, পেপার ন্যাপকিন, ওয়াশিং পাউডার, ট্র্যাশ ব্যাগ, পেস্ট্রি, পাস্তা, চাল, শিম, হিমায়িত শাক-সবজি, মুরগির মাংস ও পোলট্রিজাত দ্রব্য,
মাংস, ডিম, টমেটো পেস্ট, চা, ঘি, ইস্ট, লবণ, ভোজ্য তেল, ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালী পরিচ্ছন্নতা
সামগ্রী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সৌদি
আরবে মূল্যছাড়ের হিড়িক
পবিত্র
মাহে রমজান উপলক্ষে সৌদি আরবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের বিভিন্ন সুপার মার্কেট মূল্যছাড় দেওয়া শুরু করেছে সৌদির বড় বড় চেইন
শপিংমল যেমন লুলু হাইপার মার্কেট, পান্ডা, ওথাইম, নেস্টু, আল মদিনা, সেন্টার
পয়েন্ট, তামিমি, ক্যারিফোর শপিংমলগুলো শুধু ছাড় ঘোষণা করেই বসে নেই। তাদের এই মূল্যছাড়ের খবর
ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম ফেইসবুকেও নানা রকমের মূল্যছাড়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের মাধ্যমে
কোন পণ্যে কত ছাড় এ
ব্যাপারে ক্রেতাদের জানানো হচ্ছে। ৫০% থেকে ৭০% ছাড় দিয়েছে অনেক শপিংমলে। রমজানকে সামনে রেখে মূল্যছাড়ের ঘোষণায় খুশি ক্রেতারাও।
রমজানে
শুধু পণ্যের মূল্যছাড়ই নয়, সৌদি সরকার এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয় বিশেষ সুবিধা।
রাতে কাজ এবং অন্যান্য সময়ের তুলনায় কর্মঘণ্টা কমানো হলেও বেতন-বোনাসে কোনো হেরফের হয় না। করোনাকাল
শেষে এবারের রমজানকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের রাস্তাঘাট আর শপিংমলগুলোতে করা
হয়েছে আলোকসজ্জা। মার্কেটগুলোতে শোভা পাচ্ছে ‘রামাদান কারিম’
লেখা সংবলিত রং-বেরঙের প্ল্যাকার্ড।
কয়েক
বছর ধরে সৌদি আরব রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সুপারশপে বিশেষ ছাড় দিয়ে প্যাকেজভিত্তিক আলাদা আলাদা কার্ড বাজারে ছাড়ে। এর মাধ্যমে রমজানে
ক্রেতারা কেনাকাটায় বৈচিত্র্যময় সুবিধা পান। এসব প্যাকেজে মাংস, মাছ, খেজুর, বাদাম ও মিষ্টিসহ ইফতার
এবং সাহরির জন্য আলাদা আলাদা খাবারসামগ্রী থাকে। রমজান বক্স, ইফতারসামগ্রী, সাহরির খাবার নামে এসব কার্ড পরস্পরে উপহার দেওয়ারও রীতি রয়েছে। অনেকে আবার দরিদ্রদের মধ্যে এসব কার্ড বিতরণ করেন, যেন তারা তাদের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে খাবার সংগ্রহ করতে পারেন।
আরব
আমিরাত নিত্যপণ্যের মূল্যছাড়
গত
২৩ মার্চ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি ঘোষণা করেছে, রমজান উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭০% ছাড়ে ভোগ্য এবং অ-ভোগ্য পণ্য
বিক্রি করবে। দেশটিতে রমজান শুরুর অন্তত দশদিন আগে থেকে এভাবে পণ্যের মূল্যছাড়ের রীতি চলে আসছে। কিন্তু করোনার কারণে বিগত দুই বছর সেভাবে তা মানা হয়নি।
এবার রোজার আগেই বিক্রেতারা হাজার হাজার ভোগ্য এবং অ-ভোগ্য পণ্যের
ওপর ব্যাপক ছাড় দেওয়ায় খুশি দেশটির বাসিন্দারা। আরব আমিরাতের কিছু প্রধান খুচরা বিক্রেতা যারা রমজানে বিশেষ ছাড় ৭০ শতাংশ কমানোর
ঘোষণা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন কোপ, শারজাহ কুপ, আল মায়া সুপার
মার্কেট, আমাজন, নুন, দানিউব হোমস ও প্যান এমিরেটস।
৭০ শতাংশ কমে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাংস, মুরগি, টিনজাত খাবার, ফল, সবজি, বিশেষ রমজানের পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য।
ভোগ্যপণ্যের
পাশাপাশি অ-ভোগ্য পণ্যের
ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত
ছাড় দেওয়া হয়েছে। যা আগে সেভাবে
দেওয়া হতো না। পুরো রমজান মাস এ সুযোগ মিলবে।
এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মুদি সামগ্রীর পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীতে ৪০ শতাংশ ছাড়
ঘোষণা করেছে। ছাড়ের আওতায় রয়েছে- স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিস। এগুলো অনলাইন-অফলাইন দুভাবেই কেনা যাবে।
মিসরের
খাদ্যমেলা ও ভ্রাম্যমাণ দোকান
পবিত্র
রমজান উপলক্ষে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ২৫ মার্চ দেশটির
চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশনের
সহযোগিতায়, সরকারের তত্ত্বাবধানে সপ্তাহব্যাপী এক খাদ্যমেলার আয়োজন
করা হয়। মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা মাদবৌলি। রমজান মাস সামনে রেখে ছাড়সহ খাদ্যসামগ্রী কেনার ব্যবস্থা করতে এই মেলার আয়োজন
করা হয়েছে। আরবি ভাষায় ‘রামাদান কারিম’
লেখা ব্যানার ও মিসরের ঐতিহ্যবাহী
রমজান লণ্ঠন দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যমেলায়
কয়েকশ’
প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানত রান্নার তেল, চাল, পাস্তা, মাংস, মুরগির মাংস, শাক-সবজি, ফল, বাদাম এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছে।
মেলায়
মিসরের সুপরিচিত খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যে মূল্য ছাড়ের বৈচিত্র্যময় অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে আসন্ন রমজান যেন সহনীয়ভাবে কাটাতে পারে দেশের মানুষ, এ লক্ষ্যে মেলার
আয়োজন করা হয়েছে। মেলা প্রসঙ্গে চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশনের
নেতা মোহাম্মদ আবদেশ ফারাহ বলেন, ‘মেলায় উপস্থিতি খুবই ভালো, বিক্রিও আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে। মিসরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গমের দাম বেড়ে গেছে। সংগত কারণেই গমজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে সহমর্মিতার
মাস রমজানকে সামনে রেখে মানুষকে কিছুটা আনন্দ ও স্বস্তি দিতে
এই আয়োজন করেছি।’
‘ওয়েলকাম
রমজান ফেয়ার’
নামে পরিচিত এই মেলা গত
কয়েক বছর ধরে কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গত দুই বছর
করোনার জন্য বন্ধ ছিল। মেলা উদ্বোধন করে মিসরের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেলায় বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে আমি দাম পর্যালোচনা করেছি। এখানে খুব বড় রকমের ছাড়
রয়েছে।’
কায়রোর এই মেলা শেষ
হলেও রমজান মাস এবং রমজানের পরে একই মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির জন্য দেশব্যাপী প্রায় আট হাজার বিশেষ
বুথ থাকবে। এ ছাড়া মিসরীয়
সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে মূল্যবৃদ্ধির বোঝা কমাতে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার জন্য ভ্রাম্যমাণ দোকান থাকবে।
ওমানে
মূল্যছাড় ও গুণমানে সতর্কতা
মধ্যপ্রাচ্যের
দেশ ওমানে রমজান উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পবিত্র রমজানে ওমানবাসী মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান মজুদ করা শুরু করেন রমজানের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। এই সময়ে ওমানের
অভিজাত শপিং সেন্টারগুলো রমজানের বিশেষ অফার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য গড়ে ২০ থেকে ৩০
শতাংশ কমানো হয়েছে ওমানে। ঘোষিত পণ্যের মজদু নিশ্চিত ও তা কোনোভাবেই
মূল্যছাড় বাদ দিয়ে বিক্রি করা যাবে না। এছাড়া জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মাস্কাট মিউনিসিপ্যালিটি খাদ্যসামগ্রীর গুণমান এবং স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ও সার্বিক নজরদারি
জোরদার করেছে।
মালয়েশিয়াতেও
কমেছে দাম
পবিত্র
রমজান উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় ছোট-বড় শপিংমলে মূল্যছাড়ের
নানা ঘোষণার ছড়াছড়ি দেখা যায়। দুই বছর বাদে এবারও তেমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এবারের রমজান উপলক্ষে দেশটির বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের দাম
কমেছে। ছাড় চলছে প্রসাধনী, পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যতেও। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার নির্দেশ দিয়ে খাবারের মান যথাযথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রমজান
উপলক্ষে পুরো মালয়েশিয়ায় পণ্যের মান ও দাম পর্যবেক্ষণ
করে প্রশাসন। আর সিটি করপোরেশন
বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে নজরদারি বাড়ায় এ মাসে। দেশটির
সুপারশপ জায়ান্ট, লুলু, মাইডিন, এনএসকে, এয়ন বিগ-এর মতো চেইন
শপগুলোতে নিয়মিত অনলাইন ও অফলাইনে চলছে
ছাড়ের বিজ্ঞাপন। এমনকি জনপ্রিয় অনলাইন শপ লাজাডা ও
শপির মতো সাইটগুলো রমজান উপলক্ষে দিয়েছে বিশেষ ছাড়। রমজান মাস ধর্মীয় রীতিনীতিতে পালন করতে অভ্যস্ত মালয়েশিয়ানরা। এ মাসে নামাজ
আদায়, রোজা রাখার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে পছন্দ করে তারা। রমজানের শুরু থেকেই নাইট ক্লাব, বার, মদের দোকানগুলোর ওপর আনা হয় বিধিনিষেধ। এমনকি
দিনে কোনো মুসলমান রেস্তোরাঁয় বসে খাবারও খেতে পারে না।
অন্যান্য
দেশের চিত্র
বিভিন্ন
দেশ তাদের ধর্মীয় উপলক্ষ কিংবা উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম কমোনার ঘোষণা দেয়। এসব উৎসব ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকায় ছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয় উৎসব। অবস্থাদৃষ্টে
মনে হয়, সাধারণ মানুষ বছরভর এ সময়টার জন্য
অপেক্ষা করেন। এ সময় তারা
সারা বছরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখে। অবাক করার বিষয় হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়; তবুও রমজান উপলক্ষে অনেক দেশে পণ্যসামগ্রীর দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
দক্ষিণ
কোরিয়ায় কোনো ধর্মীয় উৎসবের সময় দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ে না, রমজানও এর ব্যতিক্রম নয়।
রমজানের শুরুতে পণ্যে ছাড় দেওয়া ইউরোপের দেশগুলোতে রীতিতে পরিণত হয়েছে। রমজানের শুরুতে মুসলমানরা এ সুবিধা পান।
বিশেষ করে জার্মানিতে মুসলিম ব্যবসায়ীরা অভাবনীয় মূল্য ছাড় দিয়ে থাকেন। ফ্রান্সের মুসলিম ব্যবসায়ীরাও কম দামে জিনিসপত্র
বিক্রি করেন। শুধু মুসলিম দেশ নয়, আমাদের কাছের দেশ থাইল্যান্ডেও রমজান মাস উপলক্ষে মুসলমানসহ সবার জন্য পণ্যে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা তাদের আগের মুনাফা থেকে ছাড় দিয়ে ব্যবসা করেন। পণ্যের দাম না বাড়িয়ে সেখানে
কমিয়ে দেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী লাভবিহীন পণ্য বিক্রি করেন মাসজুড়ে। মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতি আর সহনশীলতা বাড়াতে
তারা এমন উদ্যোগ নেন।
বাংলাদেশের
চিত্র
রোজার মাস এলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কখন কীভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যায়, সে ভাবনায় যেন ওঁৎ পেতে থাকেন। সরকার সচেষ্ট থাকে পণ্যের দাম যেন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। এ জন্য আগেভাগেই পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে, এবারও তা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে সাধারণ ভোক্তাদের অনুকূলে থাকবে- সেটা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য প্রস্তুত থাকে ওইসব অসাধু ব্যবসায়ী। বাজারে পণ্যের সংকট তৈরি করে কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই দাম বাড়ানো হয়। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে এ সময়টাতেই চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বড় ব্যবসায়ী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবার প্রবণতা এই সময় বেশি লাভ তুলে নেওয়ার। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পবিত্র মাসে এমন অমানবিক কাজটি কেন হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। দেশে ব্যবসায়ীদের ৯০ ভাগেরও বেশি মুসলমান, মুসলমান হয়েও পুণ্যের মাসে অপুণ্যের এমন কাজ তারা কীভাবে করেন? এর প্রতিকার দরকার, দরকার রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ।
রমজান বিদেশ নিত্যপণ্য দাম বাংলাদেশ মূল্যছাড়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাপ্রধান মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া
মন্তব্য করুন
আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।
চীনের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এর একটি কন্টিনজেন্ট যৌথ মহড়ায় যোগ দিতে আগামী মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসবে। আর এই বিষয়ে গতকাল দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন যে, প্রতিবেশী দেশ কিংবা উন্নত এই ধরনের মহড়ার ওপর ভারত সবসময়ই দৃষ্টি রাখে।
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে সহায়তা করার জন্য যেমন তারা আশ্বাস দিচ্ছে, তেমনই নানা ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব নিয়েও চীন আগ্রহ দেখাচ্ছে।
চীনের সঙ্গে ভূরাজনীতিতে ভারতের কৌশলগত বিরোধ রয়েছে। এমন এক সময়ে চীন বাংলাদেশে এই যৌথ সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে যে সময় ভারতের নির্বাচন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এখন ভারতের নীতি নির্ধারক এবং সকলের দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে। আর একারণেই এখন চীনের এই সামরিক মহড়ার যৌক্তিকতা এবং এর প্রভাব এই উপমহাদেশের শান্তি এবং নিরাপত্তায় কীভাবে পড়বে তা নিয়ে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মালদ্বীপ হারানোর পর ভারতের এই অঞ্চলে কৌশলগত একমাত্র মিত্র হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নানা বাস্তবতার দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন এবং সেভেন সিস্টারে শান্তি ও অখণ্ডতা সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতও বাংলাদেশকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। গত নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। আর দুই দেশের সম্পর্ক ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যখন নতুন মাত্রায় উত্তীর্ণ হবে ভাবা হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, তিনি প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন ভারতে। আবার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরেও ভারতে যাওয়ার কথা। নির্বাচনের পরপর এরকম একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানানও হয়েছে। কিন্তু যখন দুই দেশের সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা স্পর্শ করছে তখন ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের চীনপ্রীতি এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ অমূলক নয় বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি প্রধান দেশেরই আগ্রহ রয়েছে।
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর চীনকে অনেক আগ্রাসী কূটনীতিতে দেখা যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এমনকি যে সমস্ত মন্ত্রীরা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত, তাদের সাথেও চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ নগদ অর্থ বা ঋণ এর দায় মেটানোর জন্য চীনের কাছে হাত পাততে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যে এতদিন ধরে ভারসাম্যের কূটনীতি রক্ষা করেছিল সেটি কতটা রক্ষা করতে পারবে সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর চীনের সাথে এই যৌথ সামরিক মহড়ার ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনদিকে যায় সেটাও দেখার বিষয় বলে অনেকে মনে করছেন।
বাংলাদেশ ভারত চীন ভূরাজনীতি সামরিক মহড়া
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকের পর পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি ছাড়াও একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম।
বাংলাদেশ একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের। দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি।
এদিন বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান আয়তন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজিকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগের এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।
এদিন বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমসটেক মোট ১.৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ড বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
নরসিংদীর শিবপুরে প্রেমিকার আত্মহত্যার শোক সইতে না পেরে প্রেমিক সিফাত (১৯) নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমিকার মৃত্যুর ১৯ দিন পর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিক সিফাত পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত ওই গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আত্মহত্যা করে প্রমাণ করে গেল আমারে কতটা ভালোবাসে। আমিও প্রমাণ করে দিমু তানহারে আমি কতটা ভালোবাসি। কারও সঙ্গে ভুল করে থাকলে মাফ করে দিও। আর দেখা হবে না সবাই দোয়া কইরো শান্তিতে থাকি কিংবা অশান্তিতে দুজন যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। আমার শেষ ইচ্ছা তানহার কবরের পাশে আমাকে কবর দেওয়া হোক।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। আর আমার কোনো কিছুর জন্য
তানহার পরিবার বা আমার পরিবার দায়ী না, এমনকি আমার কোনো ভাই-ব্রাদার বা বন্ধুও দায়ী
না। যা হবে আমার নিজের ইচ্ছেতে হবে। সত্যি বলতে আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নাই। আমাকে যদি
কেউ বাঁচিয়েও নেয় আমি পুনরায় আত্মহত্যার চেষ্টা করব। প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচানোর চেষ্টা
কইরো না। বেঁচে থেকে আর কি হবে, যার জন্য বাঁচার কথা ছিল সে তো আর নেই।’
সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আমারে কথা দিছিলো যদি বাঁচি তো একসঙ্গে বাঁচমু
আর যদি মরতে হয় তো একসঙ্গে মরমু। আমি তানহারে এই কথাটাই দিছিলাম। কিন্তু একটা চরিত্রহীন
জানোয়ার আমাদের সুখে থাকতে দিল না। ওদের অত্যাচারে তানহা আত্মহত্যা করল। এক প্রকার
তারা তানহারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল। জানোয়ারের পরিবারকেই আমি খুনি বলে দাবি করি।
আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে জানোয়ারের পরিবার স্বাধীনভাবে চলবে, ওদের কোনো সাজা হবে না।
আর অন্যদিকে আমার তানহা শেষ, আমি অর্ধেক শেষ আমার পরিবারও শেষ। আমি আর কষ্ট সহ্য করতে
পারছি না (প্রমাণ হয়ে যাক দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসতাম) আর আমি চরিত্রহীন জানোয়ারের
পরিবারের সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এমন সাজা দেওয়া হোক অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন
এমন না হয়। আর যেন কারও প্রাণ না ঝরে। কেউ যেন ব্ল্যাকমেইলের শিকার না হয়। আমার শেষ
একটাই ইচ্ছে- আমরা দুজনে সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম, বাস্তবে তা হলো না। তাই
আমার মৃত্যুর পর তানহার কবরের পাশে যেন আমার কবর দেওয়া হয়। আমি আঙ্গুররে মারছি শুধু
একটা কারণে, হেয় তানহার হাতে ধরছিল। তানহারে খারাপ প্রস্তাব দিছিল। আমি সহ্য করতে পারি
নাই। তাই হেরে কোবাইছি। আমরা প্রেম করছি এটাই কি অপরাধ ছিল। আমাদের জীবন শেষ করে দিল।
ভালো থাকুক আঙ্গুর আর আঙ্গুরের পরিবার।
এদিকে সিফাতের বাবা ইব্রাহিম জানান, প্রতিবেশী চাচাতো বোন খলিলের
মেয়ে তানহার (১৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমার ছেলে সিফাতের। গত ৩ এপ্রিল দিবাগত
রাত ২টার সময় তানহা ঘরের ভেতর থেকে আর সিফাত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় দেখে
ফেলে একই এলাকার রাজুর ছেলে আঙ্গুর (২৫)।
এ সময় আঙ্গুর তানহাকে কুপ্রস্তাব দেয়। সিফাত এতে নিষেধ করে। কুপ্রস্তাবে
রাজি না হওয়ায় আঙ্গুর সিফাতকে মারধর করে টাকা দাবি করে। পরে সে উত্তেজিত হয়ে আঙ্গুরকে
কুপিয়ে আহত করে। মারামারির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। লোকলজ্জায় গত ৬ এপ্রিল রাতে
তানহা নিজ ঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এসব বিষয়ে গ্রামীণ সালিস দরবার হওয়ার কথা ছিল। সালিস দরবারে আমাকে
ও আমার ছেলেকে এটা করবে ওটা করবে বলে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। দরবারে গেলে
জমির দলিল নিয়ে যেতে বলতো। এসব মানসিক চাপ সইতে না পেরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে
ছেলে সিফাত। আমি এর বিচার দাবি করছি।
শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ
উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো
হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
মন্তব্য করুন
আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।