বাংলাদেশে অবস্থান না করেও বাংলাদেশের বিভিন্ন আলোচিত ঘটনা এবং এসব আলোচিত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছে বিদেশে অবস্থানরত সাইবার সন্ত্রাসীরা। এইসব ভিডিও ফুটেজ এবং সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা কন্টেন্ট তৈরি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করে সরকার বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। এসব ভিডিও ক্লিপ এবং সিসিটিভি ক্লিপ বিভিন্ন সময়ে তারাই প্রথম ফাঁস করছে। তাই প্রশ্ন ওঠেছে, এসব তথ্য এতো অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে সংগ্রহ করছে এসব সাইবার সন্ত্রাসীরা এবং কারাই বা এসব ভিডিও ফুটেজ এবং সিসি টিভি ফুটেজ তাদের সরবরাহ করছে?
এসব ঘটনার অনুসন্ধানে এবার মাঠে নেমেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। তাছাড়াও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব ফুটেজ সরবরাহকারীদের ধরতে ব্যাপক নজরদারিতে মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্র বলছে, যারা এসব ফুটেজ সরবরাহ করছে, এসব ফুটেজ সরবরাহকারীদের শনাক্ত করে ধরতে পারলেই সাইবার সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভবপর হবে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালে বোট ক্লাব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান বিভাগের এডিসি গোলাম সাকলায়েন। বিপুল মাদকসহ পরীমনিকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় গোলাম সাকলায়েনকে ডিবি থেকে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (দাঙ্গা দমন বিভাগ, পশ্চিম) তাৎক্ষানিক বদলি করা হয়।
ওই সময় পরীমনি-সাকলায়েনকে নিয়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আসে। তবে ফুটেজটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পৌঁছানোর আগেই পৌঁছে যায় সাইবার সন্ত্রাসীদের হাতে। ফুটেজটি সাকলায়েনের সরকারি বাসভবনের ফুটেজ। সেখানে পরীমনি এবং সাকলায়েন এক সঙ্গে ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন। এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে সাকলায়েন ও পরীমনির ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একটি ভিডিও ভাইরাল করে সাইবার সন্ত্রাসীরা। এক মিনিটি ৫৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা গেছে, সাকলোয়েনের জম্মদিনে কেক কাটছেন তারা। পরে পরীমনি তাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। পরে সাকলায়েনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে দেখা যায় পরীমনিকে। ওই ভিডিওটি নেট পাড়ায় ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়। গত ১ আগস্ট সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি। সেখানেই ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন তারা।
সূত্র বলছে, দেখা গেছে ডিবি কর্মকর্তা সকলাইনের ভিডিও ক্লিপ এবং পরীমনির ওই কর্মকর্তার বাসায় যাওয়ার ভিডিও ক্লিপ খুব সহজেই আমেরকিায় অবস্থানরত একজন সাইবার সন্ত্রাসীর কাছে চলে গেল। যে বাসায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বসবাস করতেন- তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা, পুলিশ কম্পাউন্ড। পুলিশ কম্পাউন্ডে এমন একটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং সিসিটিভি ফুটেজ সাইবার সন্ত্রাসীদের কাছে পাঠানো, পুলিশের লোক ছাড়া সম্ভব নয়। ওই ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের পর পুলিশের দু’জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসর দেওয়া হয়। এখনও দেখা যাচ্ছে- বিভিন্ন ঘটনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর তথ্যগুলো খুব সহজেই চলে যাচ্ছে সাইবার সন্ত্রাসীদের কাছে। তারা এসব তথ্যগুলোকে বিকৃত করে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, নানা রকম রঙ মিশিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জানা গেছে, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে দেশবিরোধী অপপ্রচারের মাধ্যমে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ২২ ধারায় বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে ২৬ ও ৪৫ ধারায় লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়। কিন্তু মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগে মানুষ ভিন্ন ধরনের অপরাধ করতে থাকে- যা এই আইনে প্রতিকার দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রতিকার প্রদানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ প্রনয়ণ করা হয়।
সাইবার অপরাধ অনুযায়ী, প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা ১১ ধাপে এসব সাইবার অপরাধ করছে। যেমন: সহিংস উগ্রবাদ, গুজব, রাজনৈতিক অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ, গ্যাং কালচার, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, পাইরেসি, আসক্তি এবং নারীদেরকে ব্ল্যাকমেইলিং।
তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ রয়েছে। এই আইনের ৪ (১) ধারা মতে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহিরে কোনো অপরাধ সংগঠন করলে যদি এই আইনের অধীন দণ্ডযোগ্য হয়, তাহলে তিনি বাংলাদেশেই অপরাধ সংগঠন করেছেন বলে বিবেচিত হবে এবং এই দেশের আদালতে মামলা করা যাবে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী যারা দেশের বাইরে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ সংগঠিত করছে এবং যারা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ক্লিপ, সিসিটিভি ক্লিপ তাদেরকে সরবরাহ করছে- তারা উভয়েই সমান অপরাধী এবং তাদের উভয়কেই আইনের আওতায় আনা যাবে।
সূত্রমতে, সাইবার সন্ত্রাসীদের এসব তথ্য সরবরাহকারীদের আইনের আওতায় আনতে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। প্রশাসনে এবং সরকারে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে যারা হঠাৎ আওয়ামী লীগ হয়ে, অর্থাৎ নব্য আওয়ামী লীগ হয়ে বেশি বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে, মূলত তারাই এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করছে। তাদের কিছু ক্লু উদ্ধার করেছে সরকার এবং এই ক্লু উদ্ধার করার প্রেক্ষিতে সরকার তাদের গতিবিধি নজরে রাখছে এবং কারা কারা এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করছে, তাদের ট্র্যাক করা হচ্ছে। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সাইবার সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধ করতে চেষ্টা করছে সরকার।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, যারা এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের তথ্য দেয় এবং যারা তাদেরকে বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদেরকে যদি আইনের আওতায় আনা যায়, তাহলে বাংলাদেশ বিরোধী এবং রাষ্ট্র বিরোধী যে অপপ্রচারগুলো চালানো হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।
গোয়েন্দা নজরদারি সাইবার সন্ত্রাসী তথ্য সরবরাহকারী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৫০টি উপজেলায় এখন জনগণ ভোটের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫৯টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন গতকাল শেষ হয়েছে। সেখানেও এখন নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোল শুরু হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে কি না, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে কি না এবং উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে একদিকে যেমন জনগণের সংকট রয়েছে তেমনই নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই হামলার শিকার হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেপথ্যে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ। এঘটনায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী দুই প্রার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৯১১ জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাও দায়ের করেন। ফলে নির্বাচনের পর আনন্দের বদলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ওই ইউনিয়নে।