গত রোববার (১৪ মে) যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ ঢাকায় নিযুক্ত চার রাষ্ট্রদূতের বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা (এসকর্ট) প্রত্যাহার করে সরকার। অন্য দুই রাষ্ট্রদূত হলেন যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবেই বিদেশি এসব কূটনৈতিকদের বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা (এসকর্ট) প্রত্যাহার করেছে সরকার।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গত সোমবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশই বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দেয় না। আমরা তিন-চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে আসছি। সম্প্রতি অন্তত আরও ১২ থেকে ১৫ টি দেশের রাষ্ট্রদূত বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই সবাইকে সমানভাবে নিরাপত্তা দেয়া হবে। এজন্য চারজন রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, বাড়তি নিরাপত্তা প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া ভিত্তিতে বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকার এ ক্ষেত্রে বাধা দিবে না। তিনি জানিয়েছেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় তা কমানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। সড়কে চলাচলের সময় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এখন শুধু পুলিশের এসকর্ট থাকছে না। তবে অফিস ও মিশনের দায়িত্বে থাকবে পুলিশ। আর তারা যদি বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে চান, সেক্ষেত্রে আনসার থেকে তারা এ সার্ভিস ভাড়া করতে পারবেন।’
কিন্তু বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা বা (এসকর্ট) প্রত্যাহারের পর থেকেই কূটনৈতিক পাড়াসহ সরকার বিরোধীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা এবং অপপ্রচার। কেউ বলছেন, বিদেশি কূটনৈতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে ভিয়েনা চুক্তি মানছে না সরকার। ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী বিদেশি কূটনৈতিকদের সরকার নিরাপত্তা দিবে এটাই স্বভাবিক।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী সরকার কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু নিরাপত্তার নামে তাদের বাড়তি সুবিধা (এসকর্ট) দিতে কোনো দেশের সরকারই বাধ্য নয়। এছাড়া ভিয়েনা চুক্তির ৪১ নম্বর ধারার ১ নং উপধারায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি অন্য কোনো দেশে কূটনীতিকের মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করেন- তারা ওই দেশের আইন ও নীতি মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়া তারা ওই দেশের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কিন্তু সরকার বিরোধী চক্রের কুমন্ত্রণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন- যা ভিয়েনা কনভেনশকে অনুসরণ করে না। ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে বেশ কিছু দেশের কূটনীতিকরা ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের জন্য বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে একঘরে করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দায়িত্বহীনভাবে ছয় দেশের কূটনীতিকদের অতিরিক্ত প্রটোকল প্রত্যাহার করেছে সরকার। এতে সংকট সৃষ্টি হবে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতি করবে। এটা সুখকর কিছু বয়ে আনবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন তথ্য বিকৃতিকারী মাস্টারমাইন্ড। মূলত, কূটনেতিক তৎপরতার মাধ্যমেই তারা সরকার হঠানোর চেষ্টা করছিল। সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনের নামে কর্মসূচি দিয়ে হতাশ হয়েছে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো। যে কারণেই তারা রীতিমতো কূটনৈতিক পাড়ায় আনাগোনা শুরু করেছিল এবং কূটনৈতিকদের কাছে ধরনা দেওয়া শুরু করেছিল। তাই কূটনৈতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করায় তাদের আঁতে ঘা লেগেছে। কিন্তু ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনীতিকরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
অন্যদিকে মন্ত্রী, সচিব, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রটোকলের জন্য আনসার বাহিনী থেকে একটি প্রটোকল ইউনিট করা হয়েছে। ওই ইউনিট যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব কূটনীতিকেরও প্রটোকল দেবেন বলে গত সোমবার (১৫ মে) জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান।
সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
ভিয়েনা কনভেনশনের আলোকে কূটনৈতিক মিশন ও মিশন প্রধানের অধিকার ও কর্তব্য অুনসারে বেশ কয়েকটি ধারা নিম্নে তুলে ধরা হলো:-
১. ভিয়েনা কনভেনশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা বা আর্টিকেল ৯’এ বলা হয়েছে, যে কোনো দেশ ওই দেশে নিযুক্ত অন্য দেশের কূটনীতিককে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ বা অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করতে পারে।
২. ভিয়েনা চুক্তির ১১ ধারায় বলা হয়েছে, আলাদা কোন চুক্তি না থাকলে কূটনীতিক মিশনের কাজ বিবেচনায় মিশনের আকার যৌক্তিক হতে হবে।
৩.কূটনীতিকদের অফিস কোথায় হবে সে বিষয়ে চুক্তির ১২নং ধারায় বলা হয়েছে, কূটনীতিক মিশন প্রেরণকারী দেশ মিশনের জন্য বরাদ্দকৃত অফিস সীমার বাইরে অন্য কোন জায়গায় কোন অফিস স্থাপন করতে পারবে না।
৪. মিশনের অফিস এলাকায় বিদেশি কূটনীতিক মিশন প্রধানের অনুমতি ছাড়া গ্রাহক দেশের সরকারও প্রবেশ করতে পারবে না।
৫. কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে গ্রাহক দেশকেই।
৬. কূটনীতিক মিশনের প্রাঙ্গণ এবং তাদের যানবাহনে তল্লাসি, সেটি ব্যবহার, বাজেয়াপ্ত বা সংযুক্তি কোনো কিছুই করা যাবে না।
৭. কূটনীতিক মিশনের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার এবং কূটনীতিক ও তার পরিবারের সদস্যদের গৃহকর্মে ব্যবহৃত যে কোনো পণ্য আনা হলে- তা সব ধরণের শুল্ক ও করের বাইরে থাকবে।
৮.মারাত্মক কোনো অভিযোগ না থাকলে কূটনীতিক এজেন্টদের ব্যাগও তল্লাসি করা যাবে না।
৯.ভিয়েনা কনভেনশনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, কূটনীতিক মিশনের সব সদস্য ওই দেশের সবখানে স্বাধীন ও অবাধে চলাচল করতে পারবেন। শুধু জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে সংরক্ষিত এলাকায় তাদের প্রবেশ সীমাবদ্ধ হবে। সংরক্ষিত এলাকাতেও আগে থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন কূটনীতিকরা।
১০. চুক্তির ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, দাপ্তরিক কাজের জন্য মিশনের স্বাধীন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কূটনৈতিক কুরিয়ার, কোডেড বার্তা পাঠানোসহ যে কোনো ধরণের যোগাযোগ তারা করতে পারবেন। তবে ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটার বসাতে হলে অবশ্যই গ্রাহক দেশের সরকারের অনুমতি লাগবে।
১১. কূটনৈতিক কোন ব্যাগ খোলা বা আটক করা যাবে না। কূটনৈতিক কোন কুরিয়ারও গ্রেপ্তার বা আটকের আওতায় পড়বে না।
১২. ভিয়েনা কনভেনশনের ২৯ ধারা অনুযায়ী, বিদেশি কূটনীতিকদের আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না। তারা গ্রাহক দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার বাইরে থাকবেন। এমনকি তারা কোনো ঘটনায় সাক্ষ্য দিতে বাধ্য থাকবেন না।
১৩.চুক্তির ৪১ নম্বর ধারার ১ নং উপধারায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি অন্য কোনো দেশে কূটনীতিকের মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করেন তারা ওই দেশের আইন ও নীতি মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়া তারা ওই দেশের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
১৪. কূটনীতিকদের সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ- যা প্রেরক দেশ কূটনীতিক মিশনের উপর ন্যস্ত করবে- তা গ্রাহক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা এ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হতে হবে।
১৫. কূটনীতিকরা তাদের মিশন অফিসের প্রাঙ্গণ মিশনের কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবেন না।
১৬.মিশন, মিশন প্রধানের বাসভবন এবং তার গাড়িতে প্রেরক রাষ্ট্রের পতাকা এবং প্রতীক ব্যবহার করার অধিকার থাকবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৫০টি উপজেলায় এখন জনগণ ভোটের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫৯টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন গতকাল শেষ হয়েছে। সেখানেও এখন নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোল শুরু হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে কি না, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে কি না এবং উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে একদিকে যেমন জনগণের সংকট রয়েছে তেমনই নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই হামলার শিকার হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেপথ্যে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ। এঘটনায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী দুই প্রার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৯১১ জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাও দায়ের করেন। ফলে নির্বাচনের পর আনন্দের বদলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ওই ইউনিয়নে।