মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। গত ২৪ মে ঘোষিত এই ভিসা নীততে বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করে, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে এবং স্বাধীন মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্থ করা হয় তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। শুধু তাদেরকেই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও ভিসা বঞ্চিত করা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইনে ২১২ ধারা প্রয়োগ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা পর এখন পর্যন্ত তার মিত্ররা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির মতো কোনো নীতি তারা গ্রহণ করতে যাচ্ছে না। বরং তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি প্রাক পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে এবং প্রাক পর্যবেক্ষক দল যদি দেখে যে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তাহলে তারা নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নীতির মিল না থাকলেও কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পথেই যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কূটনীতিকরা বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত যে সিদ্ধান্তগুলো নেয় সেই সিদ্ধান্তগুলো তার মিত্র দেশগুলো নিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যরকম বিষয় যুক্ত রয়েছে। প্রচুর বাঙালি যুক্তরাজ্যে থাকে এবং যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বেশকিছু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এ কারণে যুক্তরাজ্য ভিসা নীতির মতো কঠোর ব্যবস্থায় যেতে পারবেনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ কমনওয়েলথ ভুক্ত একটি দেশ। এ কারণেই ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকগুলো শিথিলতা যুক্তরাজ্যকে রাখতেই হবে। আর এ কারণেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভিসা নীতির সাথে থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই দুটি দেশ না থাকলেও কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভিসা নীতির সাথে থাকবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের প্রশাসন, ব্যবসা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আত্মীয়-স্বজন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে না। তাদের একটি বড় অংশ কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতেও বসবাস করেন। সাম্প্রতিক সময়ের হিসেবগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কানাডায় থাকার প্রবণতা বেশি। তাছাড়া কানাডায় বেগম পাড়ায় বাংলাদেশিদের বিত্তের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি যেভাবে বাংলাদেশের এলিটদেরকে প্রভাবিত করেছে ঠিক তেমনিভাবে কানাডাও যদি একই রকম ভিসা নীতি গ্রহণ করে তাহলে সেটিও বাংলাদেশের বিত্তবানদেরকে প্রভাবিত করবে। প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে কিছুটা বিচলিত করবে বলে ধারণা করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পর এলিটদের তৃতীয় ঠিকানা হলো অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতে এখন প্রচুর সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের সন্তান-সন্ততিরা পড়াশোনা করেন। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া হলেও কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পথ অবলম্বন করবে। সাধারণত দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদেরকে ভিসা দেয় না বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সেই একই পথ অনুসরণ করে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির পথ কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।