প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা দিনভর নির্বাচন মনিটরিং করেছি। সকাল ৮টা থেকে শেষ পর্যন্ত। আমি বলবো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, আন্দমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। আধাঘণ্টা প্রবল বৃষ্টির কারণে কিছুটা ব্যাঘাত হয়েছে। তবে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন হয়েছে।
বুধবার (২১ জুন) বিকেলে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আমরা যে কারণে সন্তুষ্ট বোধ করছি, কোনো রকম অপ্রীতকর ঘটনা ঘটেনি। যেটা নির্বাচনে প্রত্যাশা থাকে, ভোটার অবাধে এসে ভোট দিতে পারেন কি-না, সেই প্রশ্নে আমরা বলবো তারা এসেছেন। অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার খবর আমরা পাইনি। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে নজর রাখছিলাম। সেখানে প্রতিবেদকরা অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো সংবাদ দেননি। আমরা মনে করি সার্বিকভাবে আজকের নির্বাচন ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে আনুমানিক ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ উপস্থিতি হয়েছে। সিলেটে কম-বেশি ৪৬ শতাংশ উপস্থিতি জানতে পেরেছি। কিছুটা হেরফের হতে পারে। বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনও ভালো হয়েছে। ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিল।
রাজশাহীতে এক নারী বারবার গোপন কক্ষে প্রবেশ করায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সেটা আমরা তদন্ত করবো। সিসি ক্যামেরায় আমরা দেখেছি, একজন নারী একাধিকবার ভেতরে যাচ্ছেন। ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আধাঘণ্টার মধ্যে জানতে পেরেছি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট তাকে তিনদিনের সাজা দিয়েছেন। এটা একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে যে, ম্যালপ্র্যাকটিসের (অসদাচরণ) জন্য সাজা হতে পারে। তবে সহাকরী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দেখলেন না কেন, আমরা সেটা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
সার্বিক মূল্যায়নের বিষয়ে সিইসি বলেন, সার্বিক মূল্যায়নটা হচ্ছে পাঁচটি নির্বাচন ভালো হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে উৎসাহিত করবে। ভোটারদের উৎসাহিত করবে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহবোধ করবেন। তারপরও ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে দেখবো।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চত করে কিছু বলবো না। জিনিসটা উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে, যারা রাজনীতিবিদ, প্রার্থী হবেন, ভোটার- সবার মধ্যে একটা ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা সৃষ্টি হতে পারে। ভোটপ্রদান ও ভোটগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, শতভাগ ভোট কখনোই নিশ্চিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও শতভাগ ভোট পড়ে না। ৫০ শতাংশ ভোট গুডএনাফ। ৬০-৭০ শতাংশ হলে এক্সিলেন্ট। আমরা চেষ্টা করে যাবো।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল রাজশাহী সিলেট সিটি নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।