রাজস্ব আদায়ে হাজার কোটি টাকা অতিক্রমের নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের একবিংশতম করপোরেশন সভায় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ মন্তব্য করেন।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এই সিটি করপোরেশনকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের কাউন্সিলরবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি, সফল হয়েছি। আমরা বিগত অর্থবছরে ১ হাজার ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছি। এর মাধ্যমে আমরা রাজস্ব আদায়ে হাজার কোটি টাকা অতিক্রমের নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছি। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট শোকরিয়া জ্ঞাপন করি।’
ঢাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করে চলেছে উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘যে সিটি করপোরেশন এক সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতো, পরিচালন ব্যয়ে ঘাটতি হতো, আপনাদের সকলের অব্যাহত কর্মপ্রচেষ্টায় আমরা সেই দৈন্য দশা অতিক্রম করেছি। আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়েছি। এর মূল কারণই হলো আমাদের ওপর ঢাকাবাসীর আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে আমাদের ওপর ঢাকাবাসীর প্রত্যাশাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী যে, ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পুরনে আমাদের সেই সক্ষমতা বাড়ছে। নতুন নতুন প্রতিকূলতাকে নজরে নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।’
বোর্ড সভায় সর্বসম্মতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬৭৫১.৫৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বোর্ড সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেওয়া হয়।
বোর্ড সভায় ১ জন কাউন্সিলরকে ‘শ্রেষ্ঠ কাউন্সিলর’ হিসেবে মনোনয়ন এবং ২ জন করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ‘শুদ্ধাচার পুরষ্কার’ প্রদান করা হয়।
করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদারকে ‘শ্রেষ্ঠ কাউন্সিলর’ হিসেবে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। শ্রেষ্ঠ কাউন্সিলর হিসেবে বাদল সরদারকে ৫০ হাজার টাকা, ১টি ক্রেস্ট ও ১টি সনদ প্রদান করা হয়েছে।
বোর্ড সভায় করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার, অঞ্চল-২ এর স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোহাং কামরুল হাসান এবং সংস্থাপন শাখার অফিস সহায়ক মো. মোস্তফাকে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদের ১ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ, ১টি ক্রেস্ট ও ১টি সনদ প্রদান করা হয়।
দক্ষিণ সিটির সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় বোর্ড সভায় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও কাউন্সিলরবৃন্দ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বোর্ড সভায় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, প্রধান প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মুনান হাওলাদার, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।