ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি। ঢাকামুখী সব বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার আটকে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পাশাপাশি ঢাকায় বিএনপির নেতাদের বাসাবাড়ি এবং হোটেলে হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির আজকের মহাসমাবেশ সামনে রেখে গত মঙ্গলবার রাত থেকে পুলিশের এসব তৎপরতা চলছে।
পুলিশের এই অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তত ৪৪৭ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির ৭৫ নেতা-কর্মীকে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির এই মহাসমাবেশ সামনে রেখে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে দেশের অন্যান্য জায়গাতেও। বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের তল্লাশির খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার আশপাশের তিন জেলা থেকে বুধবার রাতে ১১ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। তার আগের রাতে এই তিন জেলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছিল ১০।
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, মহাসমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক তৈরি করছে পুলিশ। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার বন্ধের অনুরোধ জানান। তবে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আশুরা উপলক্ষে এটা পুলিশের নিয়মিত অভিযান। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হোটেলে হোটেলে অভিযান
রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে মঙ্গলবার রাত থেকে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বুধবার রাতে নয়াপল্টনের দুটি হোটেলে প্রায় দুই ঘণ্টা অভিযান চালান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের সদস্যরা। সেখানকার একটি হোটেল থেকে বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ফেনী জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১৯ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া ডিবি লালবাগ বিভাগ বুধবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহসভাপতি মীর আশরাফ আলীকে (আজম) গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আশরাফ আলীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ পিটিয়ে তাঁর স্বামীর পা ও কোমর ভেঙে দিয়েছে। তাঁর ছেলে আইনজীবী পরিচয় দেওয়ার পর তাঁকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় তাঁর পুত্রবধূর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়।
পরে অবশ্য আশরাফ আলীর ছেলে মীর মুহতাসিম আলীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারের সময় বাসা থেকে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আশরাফ আলী।
আদালতে গ্রেপ্তারকৃত স্বজনদের ভিড়
গ্রেপ্তার বিএনপির নেতা-কর্মীদের আত্মীয়স্বজনেরা গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার পর থেকে প্রিজন ভ্যানে করে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের আদালতের হাজতখানায় আনতে শুরু করে পুলিশ। আদালতের ফটকে প্রিয়জন ভ্যান প্রবেশের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেখানে অপেক্ষারত ব্যক্তিরা প্রিজন ভ্যানের ভেতরে স্বজনদের দেখে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার পর প্রিজন ভ্যানে করে যখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছিল, তখন স্বজনেরা প্রধান ফটকের সামনে ছোটাছুটি করছিলেন। এ সময় প্রিজন ভ্যানে থাকা নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একজন শফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী। রাজধানীর জুরাইনে তাঁর ফার্মেসি রয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে শফিকুলের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শফিকুল দোকানে ছিলেন। পরে তাঁকে কদমতলী থানায় যেতে বলা হয়। তিনি রাতে থানায় গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মাহফুজা বলেন, ‘আমার স্বামী এখন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। অনেক আগে তিনি বিএনপির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হঠাৎ করেই আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।’ শফিকুলকে কদমতলী থানার পুরোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে গ্রেপ্তার বিএনপির অন্তত ২০ নেতা-কর্মীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা সবাই বলেছেন, পুলিশ হঠাৎ করেই বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে স্বজনদের গ্রেপ্তার করেছে। এতে এলাকায় গ্রেপ্তার–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ঢাকায় ঢুকতে পথে পথে তল্লাশি
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও কেরানীগঞ্জ থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানান, বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসায় পুলিশ।
সাভারের আমিনবাজার এলাকায় গাড়ি আটকে পুলিশকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে মাইক্রোবাস ও কার থামিয়ে ঢাকায় কোথায় যাচ্ছেন, কী প্রয়োজনে-এসব জিজ্ঞাসা করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় তল্লাশিচৌকি বসিয়ে একইভাবে যানবাহনের যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল বিকেলে কুমিল্লা থেকে আসা তিশা পরিবহনের যাত্রী কাউসার আলম বলেন, ঢাকায় আসার পথে তিন জায়গায় তাঁদের গাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এমন তল্লাশিতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।
রাজধানীর আরেক প্রবেশপথ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কদমতলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে তল্লাশিচৌকি বসায় পুলিশ। ঢাকা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশ থাকায় সেখানে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অঘটন না ঘটে, সে জন্য রাজধানীর প্রবেশমুখ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী ও হাসনাবাদ এলাকার যাত্রীবাহী যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ সময় সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান গতকাল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাত থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশ ও ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। অনুরোধ থাকবে, প্রশাসন যাতে এতে হস্তক্ষেপ না করে।
রাজধানী সমাবেশ তল্লাশি অভিযান গ্রেপ্তার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে নিয়ে ভাষায় লিঙ্গীয় বৈষম্য নারী পক্ষ নামে একটি সংগঠন সিরাজগঞ্জ ও পাবনার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রবিবার (১৯ মে') দুপুরে শহরের এস. এস রোডস্থ নর্থ টাউন রেস্তোরাঁয় প্রোগ্রাম ফর উইম্যান ডেভোলপমেন্ট (পি ডাব্লিউডি) সার্বিক সহযোগিতা ও নারীপক্ষ আয়োজনে ভাষায় লিঙ্গীয় বৈষম্য দিনব্যাপী মতবিনিময় সভার শুভ উদ্বোধন করেন নারীপক্ষ চেয়ার পারসন গীতা দাস।
মতবিনময় সভায় নারীপক্ষ চেয়ারপার্সন গীতা দাস বলেন, মানুষ কোনো ভালো কর্ম করলে তাকে বিশেষায়িত করা যায়। কিন্তু নারীরা নির্যাতিত হলেও তাদেরকে বিশেষায়িত করা হয়। যেমন ধর্ষণের শিকার হলে তাকে ধর্ষিতা, নির্যাতনের শিকার হলে নির্যাতিতা বলা হয়। অথচ ধর্ষণের শিকার, নির্যাতনের শিকার লিখলেও হয়।’ একজন নারীকে মানুষ হিসেবে দেখলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন কামরুন নাহার, ফেরদৌসী আখতার, পিডাব্লিউডি নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা জলি।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি চ্যানেল টুয়েন্টিফর সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক হীরুকগুণ, এনটিভি জেলা প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ইন্না, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সুজন সরকার, বৈশাখী টেলিভিশন সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সুজিত সরকার, দীপ্ত টিভির সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি শিশির, দীপ্ত টিভি পাবনা জেলা প্রতিনিধি শামসুল আলম সহ অনেকে।
মন্তব্য করুন
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলাম কামালের বিরুদ্ধে জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের শিবপুর বাজার এলাকা থেকে জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেন চেয়ারম্যার প্রার্থী সাইফুল ইসলাম কামাল।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপে আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যার প্রার্থী তানভীর ইসলাম বলেন, সাইফুল ইসলাম কামালের গুন্ডা সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত আমার কর্মী, সমর্থক, ভোটারদের ভয়ভীতি, হুমকী, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণবিধি সাইফুল ইসলাম কামাল বারবার লঙ্ঘন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘ঘোড়া নিয়ে প্রচার প্রচারণা করিনি। তবে আমি ঘেড়ার গাড়ি নিয়ে প্রচার প্রচারণা করেছি। এটাও যদি বিধি নিষেধ থাকে তাহলে এটাও পরিহার করবো।’
পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট ও রিটার্নিং অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় চেয়ারম্যান প্রার্থী এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি আমরা। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন