আজ বিএনপি তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে এলো। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস এবং সংঘাতময় হয়ে উঠল। বিএনপি গতকাল দাবি করেছিল, তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, নেতাকর্মীদেরকে কোন উস্কানিতে পা’ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু আজ ঘটল তার বিপরীত। বিএনপি হার্ড লাইনে চলে গেল। বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে রাজনীতিতে যেমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার তৈরি হয়েছে, তেমনি জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। সামনের দিনগুলোতে দেশে কী হতে যাচ্ছে? আবার কি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হবে দেশে? নাকি এই সংঘাতের লাগাম টেনে ধরতে পারবে সরকার?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকের এই ঘটনার পাঁচটি তাৎপর্য রয়েছে।
১. বিএনপির আজকের কর্মসূচি: এর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আরও সহিংস হয়ে উঠবে। আজকের কর্মসূচির সহিংসতা এবং বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বিএনপির মধ্যে যারা আগ্রাসী রাজনীতি করতে চান, যারা সরকারকে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার মাধ্যমে কোণঠাসা করতে চান, তারা আরও উৎসাহিত হবেন- এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিএনপির কর্মসূচি হবে আরও আক্রমনাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক। বিএনপি আবার সেই পুরনো পথে ফিরে যাবে।
২. আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক: আওয়ামী লীগ বারবার দাবি করছিল যে, বিএনপি আসলে একটা মুখোশ পড়ে আছে। তারা যতই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলুক, তাদের মূল পরিকল্পনা হলো অশান্তির সৃষ্টি করা। এতোদিন আওয়ামী লীগের এই বক্তব্য হালে পানি পাচ্ছিল না। কিন্তু আজকের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বক্তব্য একটা শক্ত ভিত্তি পেল।
৩. আন্তর্জাতিক মহলের নতুন হিসেব-নিকেশ: আন্তর্জাতিক মহল সব সময় বলছিল যে, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহবস্থান, আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কটের নিরসন। সেই জায়গাটিতে বড় হোঁচট খেলেন কূটনীতিকরা- যারা এতোদিন সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছিলেন, বিএনপির প্রতি একটি প্রচ্ছন্ন পক্ষপাত দেখাচ্ছিলেন, তারা এখন কিছুটা হলেও হতাশ হবে। এর ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণ নতুন গ্রুপ গ্রহণ করবে। কূটনৈতিক মহল যে কারণে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপিকে সমর্থন করেনি, ঠিক একই কারণে আবার বিএনপির পক্ষ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন।
৪. নির্বাচনের পথ সুগম হবে: এর ফলে বিএনপির উপর চাপ তৈরি হবে এবং দলীয় সরকারের অধীনে একটি সমঝোতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির উপর চাপ সৃষ্টি হবে। বিএনপির নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের ধারণা, এর ফলে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অবস্থানের যে নীতি অনুসরণ করেছিল, সেখান থেকে সরে আসবেন। বরং বিএনপির উপর এখন বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা হবে, তারা যেন নির্বাচনমুখী হয়।
৫. অগণতান্ত্রিক শক্তির উৎসাহিত হবে: বাংলাদেশের সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শক্তি, যারা নির্বাচন নয় বরং একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়, এক-এগারোর মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা কিছুটা হলেও এই ঘটনায় উৎসাহিত হবে। কারণ তারা মনে করছে, এর ফলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হবে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে, যেটি গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনিশ্চয়তার দিকে যাবে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
তবে অনেক কিছু নির্ভর করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপর। আওয়ামী লীগ যদি এই সময়ে দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আরেকবার ২০১৩-১৪ এর মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে পারে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। কারণ জনগণ, আন্তর্জাতিক মহল- কেউই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতাকে প্রকাশ্যে অন্তত সমর্থন দিতে পারে না।
বাংলাদেশ সংঘাত সংঘর্ষ বিএনপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।