নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ এর অশ্লীলতা ও ম্যানেজিং কমিটির অনিহায় ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। অপরদিকে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা স্কুলে যান না। গত ‘মে ও জুন’ মাসের বেতন পাননি স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। বেতন না পেয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। স্থানীয়দের দাবী প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে স্থায়ী ভাবে অপসারণ করা হোক। সেই সাথে ম্যানেজিং কমিটি পরিবর্তন চান তারা।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়- এলাকায় শিক্ষা বিস্তার ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারসোমবাড়ী হাটে মরহুম ওসমান গণি ১৯৬৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮৫ জন। এছাড়া শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ জন। শিক্ষা ও ফলাফলের দিক দিয়ে স্কুলটি উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয়। গত ২০১০ সালে জুন মাস থেকে আবু সাদাত শামীম আহমেদ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। তারপর থেকেই স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে।
অনৈতিক কারণে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার তাকে উত্তোমাধ্যম দেওয়া হয়েছিল। নারী কেলেঙ্কারী ও বেশ কিছু অনিয়মের কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তাকে স্কুল থেকে ২০১৪ সালে বের করে দিয়েছিল। প্রায় এক বছর স্কুলের বাহিরে থাকতে হয়েছিল।
গত ২০১৪ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন তার স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা। যোগদানের পাঁচমাস পর কমিটি নিয়ে দ্ব›দ্ব ও আর্থিক অনিয়মের কারণে তাকেও দেড় বছর স্কুলের বাহিরে থাকতে হয়েছিল। পরবর্তীতে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করে আবার স্কুলমুখী হোন তারা। তবে স্বামী-স্ত্রী কেউ নিয়মিত স্কুলে যান না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ.স.ম শফি মাহমুদ এর ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর এ কর্মকান্ড করে যাচ্ছিলেন তিনি। একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যান।

এক মাস আগেও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে স্কুলের সহকারি শিক্ষকরা মুখ খোলার সাহস পেতো না। কিন্তু গত ৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগে এ দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারপর থেকে নড়েচড়ে বসেছেন শিক্ষক ও এলাকাবাসী।

প্রধান শিক্ষক স্কুলে তার অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকান্ডের কারণে সাময়িক বহিস্কার। অপরদিকে স্কুলে যাননা তার স্ত্রী সহকারি প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা। স্কুলের সভাপতি আ.স.ম শফি মাহমুদ প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষিকার অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যেও স্কুলে যাননি বা শিক্ষকদের কোন খোঁজ খবর নেননি বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের। এমন পরিস্থিতিতে গত ‘মে ও জুন’ মাসের পাইনি স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারিরা।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহারা বানু বলেন- প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠে। ঘটনার পর দুই জনকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন প্রধান শিক্ষক বা সহকারি প্রধান শিক্ষক কেউই নাই। এ কারণে গত দুইমাস থেকে আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এভাবে যদি আরো কয়েকমাস বেতন বন্ধ থাকে আমাদের পরিবার নিয়ে চলা কষ্টকর হয়ে উঠবে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।

সহকারি শিক্ষক শামিমা সুলতানা ও রেশমা পারভীন বলেন- ঘটনার পর থেকে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ খুবই খারাপ। শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো স্কুলে আসেনা। অনেকেই স্কুলে আসতে অনীহা দেখাচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে আমাদেরও অফিস কক্ষে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য দরজায় তালা দিয়েছিল। পরে বুঝিয়ে আমার অফিসে প্রবেশ করি। সবাই চাচ্ছে একটা সুষ্ঠু সমাধান হোক।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিঠুন কুমার বলেন- শিক্ষা ব্যবস্থা ও সুনামের দিক দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান উপজেলার দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো। আবু সাদাত শামীম আহমেদ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে শুরু করে। তিনি ঠিকমতো স্কুলে আসতেন না। প্রাইভেট কার নিয়ে স্কুলে আসতেন। যেদিন স্কুলে আসতেন সেদিন তাকে স্কুলের বাহির থেকে কয়েকজন শিক্ষক ও অফিস সহকারি গিয়ে প্রটোকল দিয়ে নিয়ে আসতে হয়। তিনি যা করবেন আমাদের তা মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হতো।

এছাড়া সহকারি শিক্ষক রেজাউল করিম, জুয়েল হোসেন, মঞ্জুরুল আলম, হুমায়ুন কবির ও গৌতম কুমার মন্ডল একই কথা জানান। তারা জানান- উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যেও সভাপতি স্কুলে আসেননি। এমনকি আমাদের কোন খোঁজখবর নেননি।

স্বানীয় সোহেল রানা মিঠু বলেন, আবু সাদাত শামীম আহমেদ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করাসহ কটু কথায় শোনানো হয়। পরদিন আর ওই শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে চাইনা। পরে বুঝিয়ে তাদের স্কুলে পাঠানো হয়। এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। সভাপতির ছত্রছায়ায় বার বার অপরাধ করেও পার পেয়ে যান তিনি। ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষিকাকে স্কুল থেকে অপসারণের দাবী জানান তিনি।

এবিষয়ে স্কুলের সাময়িক বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া সহকারি প্রধান শিক্ষক পাপিয়া সুলতানার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ.স.ম শফি মাহমুদ এর বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষক ও এলাকাবাসীরা ক্ষিপ্ত। প্রায় ৫ বছর থেকে স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন তিনি। বর্তমান যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার সময়ও প্রায় দেড় বছর। এ সময়রে মধ্যে তিনি কখনো স্কুলে যান না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষিকার অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি স্কুলে যাননি।

এ বিষয়ে সভাপতি আ.স.ম শফি মাহমুদ বলেন- বিধি মোতাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা। স্কুলের বিষয়ে বুধবার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আলোচনার তারিখ পেছানো হয়েছে। নানান জটিলতায় গত দুই মাস থেকে কেউই বেতন পাননি। শিগগিরই সমস্যা সমাধান হবে। তবে প্রধান শিক্ষককে বহিস্কারের পর থেকে আমার স্কুলে যাওয়া হয়নি জানান তিনি।

বদলগাছী সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন- প্রধান শিক্ষক সাময়িক বহিস্কার রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন সহকারি প্রধান শিক্ষক। কিন্ত বর্তমানে নাজুক পরিস্থিতিতে তিনি স্কুলে যেতে পারছেন না। ম্যানেজিং কমিটিকে আলোচনার বসার জন্য বলা হয়েছিল। এ কারণে হয়ত বেতন এখনো হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আলোচনায় বসবো।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার (১৫ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, “গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। তিনি (ডোনাল্ড লু) বলেছেন, ইউএস অত্যন্ত টায়ারডলেসলি (অক্লান্তভাবে) কাজ করছে যাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন- ‘তারা আশাবাদী’।”

‘আমরা বলেছি, গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, নিরীহ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু’, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমি বলেছি, টেলিভিশনে যখন এগুলো দেখি, তখন টেলিভিশন দেখা কন্টিনিউ করতে পারি না। সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনিও একমত যে, সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য টায়ারলেসলি কাজ করছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে ডোনাল্ড লুকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।’

‘আমাদের আলোচনা সেই লক্ষ্যেই হয়েছে। একক দেশ হিসেবে আমাদের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। আমি ডোনাল্ড লু’কে অনুরোধ জানিয়েছি, বাংলাদেশে ৪০টি আইটি ভিলেজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে যাতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়ায়। যদিও কিছু বিনিয়োগ তারা এরইমধ্যে করেছে।’

রাজধানী ঢাকায় যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  বুধবার (১৫ মে) বনানীতে বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে আয়োজিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি (তিন চাকার) যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঢাকার মধ্যে অটোরিকশা বন্ধে সম্মতি জানান।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ভয়াবহ ব্যাপার যখন রিকশাচালকরা দুই পা ওপরে উঠিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। অনেক প্রতিবন্ধী আছেন যারা চোখে কিছুটা কম দেখেন তারাও এই রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সিদ্ধান্তে আসা দরকার যে ঢাকায় ইজি বা অটোরিকশা চলবে না। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

সভায় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।