চ্যানেল আইতে প্রচারিত ‘টক শো’ তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক ও পরিচালক জিল্লুর রহমানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। একই সাথে সেন্টার ফর গভর্নরস স্টাডিজের (সিজিএস) ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়েছে। জিল্লুর ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। এই দুই ব্যাংক হিসাব তলবের মধ্য দিয়ে জিল্লুরের আর্থিক স্বচ্ছতার একটি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। একদা বাসদ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আলী রিয়াজের বাংলাদেশে অনুগত ভৃত্যের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করা জিল্লুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই নানা রকম উস্কানিমূলক তৎপরতায় লিপ্ত। আর এই উস্কানিমূলক তৎপরতায় তার প্রধান উৎস হলো চ্যানেল আইতে প্রচারিত তার ‘তৃতীয় মাত্র’ অনুষ্ঠানটি।
চ্যানেল আই সব সময়ই আওয়ামী লীগের একটি ঘনিষ্ঠ চ্যানেল হিসেবে পরিচিতি দেয়ার চেষ্টা করে। চ্যানেল আইয়ের দুইজন পরিচালকের একজন একুশে পদক পেয়েছেন, আরেকজন স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। সেই চ্যানেলে তৃতীয় মাত্রা অুনষ্ঠানের মাধ্যমে অহরহ সরকারের বিরুদ্ধে বমি উগলানো হয় এবং এই দুই জনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা সম্ভব কি না?- সে প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই এসেছে। অর্থাৎ চ্যানেল আইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জিল্লুর, একদা বাসদের পরিত্যক্ত নেতা আজকের জিল্লুর রহমানে পরিণত হয়েছেন। চ্যানেল আই তাকে পরিচিতি দিয়েছে, ব্যাপকতা দিয়েছে। কিন্তু একের পর এক বিতর্কিত অনুষ্ঠানের পরও চ্যানেল আইয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেউ। সবচেয়ে ভয়ংঙ্কর কাণ্ড হলো, এক-এগারোর সময়ে এই জিল্লুর খুনি রশিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল। যে কোনো বিবেচনায় এই সাক্ষাৎকার প্রচারের জন্য চ্যানেল আই নিষিদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু চ্যানেল আই কখনও নিষিদ্ধ হয় না, সব সরকারের আমলেই তারা সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই থাকে।
শুধু তাই নয়, এই চ্যানেল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তারেক জিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েও সেটি ফলাও করে প্রচার করেছিল। ওই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। মতিউর রহমান চৌধুরীর মানবজমিন পত্রিকাটি সারাক্ষন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম তথ্য-উপাত্তের সত্য-মিথ্যা পসরা সাজায়। আর মতিউর রহমানকে নিয়েই চ্যানেল আই অনুষ্ঠান করে। চ্যানেল আই একদিকে যেমন জিল্লুর রহমান, মতিউর রহমানকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তোষামুদি করে একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক ইত্যাদি নানা কিছু হাতিয়ে নিচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, শুধু জিল্লুরের বিচার হবে? আর তার নাটের গুরুদের কিছুই হবে না? একটি পত্রিকা বা একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের অনুমতি ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান প্রচারিত হতে পারে-এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাহলে শুধু জিল্লুরের ব্যাংক হিসাব তলব করে কার লাভ? এটা কি লোক দেখানো?
কিছুদিন পূর্বে জিল্লুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। যারা এসব করছে, তারা কি আসলে জিল্লুর রহমানকে আরও নায়ক বানানোর জন্য করছে? জিল্লুর রহমানের ইমেজ বৃদ্ধির মিশনে কি আছে সরকারের কোনো কোনো মহল? ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অপপ্রচারে লিপ্ত। ডেভিড বার্গম্যানের স্ত্রী সারাহ হোসেন বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কথা বলেন। কোথায়, ডেবিড বার্গম্যানের স্ত্রীর তো ব্যাংক হিসাব তলব করা হচ্ছে না। আলী রিয়াজ বাংলাদেশে হরহামেশাই আসেন এবং বাংলাদেশের সরকারে বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তার কিছু কিছু কথাবার্তায় মনে হয়, তিনি যেন বিএনপির প্রধান পরামর্শক। আলী রিয়াজের বিরুদ্ধে-তো সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখি না!
যারা নাটের গুরু- তাদেরকে না ধরে, কেউ কেউ লাতাপাতা কাটছে, এটাও সরকারের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র কি না- তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ জিল্লুর রহমানের ব্যাংকে কি টাকা আছে, কি লেনদেন হয়েছে? -তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অজানা থাকার কথা না। জানার পরেও চিঠি দিয়ে ব্যাংক হিসাব তলব করা হলো- তাকে দৃষ্টি আকর্ষণে নিয়ে আসা। এই কাজটি করে এই জটিল সময়ে তাকে কি হিরো বানানো হচ্ছে কি না, সেটি দেখার বিষয়। জিল্লুর রহমানের ব্যাংক হিসাব যদি তলব করা হয়, তাহলে চ্যানেল আইয়ের কর্তাদের ব্যাংক হিসাব কেন তলব করা হবে না, কেন আলী রিয়াজের বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক হিসাব আছে কি না- তা খতিয়ে দেখা হবে না। কেন ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশে কত টাকা পাঠান- তা খতিয়ে দেখা হবে না?
এগুলো না করে, গাছের গোড়ায় না গিয়ে, শুধু ডাল কাটলে- তার ফলাফল কোনদিনই ইতিবাচক হয় না।
জিল্লুর রহমান ব্যাংক হিসেব তলব নাটের গুরু
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জেলা প্রশাসক সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।