চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ছয় দিনে বৃদ্ধ ও শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে সাতকানিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলায় চারজন, চন্দনাইশ উপজেলায় দুজন এবং আনোয়ারা,
রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায় একজন করে মোট তিনজনের মরদেহ পাওয়া যায়।
গত সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়
খবর নিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সাতকানিয়া থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, গত সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে
সাতকানিয়ায় যাদের মরদেহ পাওয়া গেছে, তারা হলেন- পৌরসভার কামাল উদ্দিনের ছেলে মো.
সাকিব (১৭), সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ফজল করিমের ছেলে হেলাল (৪৫), চরতী ইউনিয়নের মো.
সেলিমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (৪), একই ইউনিয়নের কবির আহমদের ছেলে আবদুর রহিম
(৪৫), নলুয়া ইউনিয়নের মনিন্দ্র লাল কারণের স্ত্রী শোভা কারণ (৯০), পৌরসভার আবদুর
রাজ্জাকের ছেলে মো. ইদ্রিস, পৌরসভার ডা. সৈয়দ আহম্মদের ছেলে বদিউল আলম (৬২), চরতী
ইউনিয়নের মো. সেলিমের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (৩), কাঞ্চনা ইউনিয়নের মো. আরিফের
মেয়ে সানজিদা আক্তার (৪) ও কালিয়াইশ ইউনিয়নের ফজল আহমদের ছেলে ইদ্রিস (৫৫)।
লোহাগাড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম জানান, লোহাগাড়ায় মোট চারজনের
মরদেহ পাওয়া গেছে। তারা হলেন- আমিরাবাদ ইউনিয়নের জুলফিকার আলী ভুট্টুর ছেলে
জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ (২২), একই ইউনিয়নের সামশুল ইসলামের ছেলে মো. সাকিব (২০) এবং
পদুয়া ইউনিয়নের কালু মিয়ার ছেলে আশরাফ মিয়া (৫৫) ও একই ইউনিয়নের রহিম বক্সের ছেলে
আবদুল মাবুদ (৫০)।
চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, গত ৯ আগস্ট উপজেলার
দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী এলাকা থেকে আনাস (১০) নামে এক শিশু এবং পরদিন তার দাদা
আবু সৈয়দের (৮৩) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, গত ৭ আগস্ট নালায় ডুবে যাওয়া নিপা পালিত (২০) নামে এক
কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ৯ আগস্ট রাউজান উপজেলার হালদার নদীর শাখা
খালে ডুবে যাওয়া শাহেদ হোসেন বাবু (৩৮) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া, গত ১১ আগস্ট আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড থেকে মো. খোকনের (৩৮) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তার বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নে।
চট্টগ্রাম বন্যা বৃদ্ধ-শিশু ১৯ জনের মৃত্যু
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।