ইনসাইড বাংলাদেশ

শেখ হাসিনাই ছিলেন প্রধান টার্গেট!


Thumbnail শেখ হাসিনাই ছিলেন প্রধান টার্গেট!

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি ভয়াল হামলার ঘটনা অত্যন্ত বিরল! এমন নৃশংশতম হত্যাকাণ্ড, লাখো লাখো মানুষের জীবনের ইতিকথার চিহ্ন এঁকে দেয়া, এমন ভয়াল হামলার ঘটনা খুব একটা আছে বলে আমার মনে হয় না। যুদ্ধে অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। এক পক্ষ অন্য পক্ষের মানুষদের হত্যা করে। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, বাংলাদেশের বা ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধে, রাশিয়া, চীন, আলজেরিয়ার কমিউনিস্ট যুদ্ধসহ বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা কিংবা গোত্রীয় যুদ্ধে অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দলীয় প্রধান এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমাবেশে প্রকাশ্য দিবালোকে ধরনের নৃশংসতম হত্যার হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই!

কিন্তু কেমন হত্যাকাণ্ড? কেমন নারকীয় হামলা?- জাতির কাছে এখনও প্রশ্নের পর প্রশ্ন জাগ্রত হতে থাকে আবডালে, অন্তরালে, প্রকাশ্যে। প্রশ্ন ওঠে, কেমন নৃশংসতম ভয়ানক হামলা? কেমন সেই রাষ্ট্র? কেমন সেই রাষ্ট্র্র প্রধান? কেমন সেই রাষ্ট্রের জননিরাপত্তা ব্যবস্থা? - এই মাতৃতূল্য স্বাধীন বাংলাদেশটা একটি সময় এমনই সন্ত্রাসের রাজত্বে ভয়ানক মৃত্যুর হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল। ওই মৃত্যুর হোলি খেলার একটি ভয়ানক, বিভিষিকাময়, ভয়াল দিন ২১ আগস্ট। 

আজ ভয়াল ২১শে আগস্ট। রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। আজ ২১ আগস্ট (সোমবার) নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৯তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে (২১ অগাস্ট) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়।    

গ্রেনেড হামলার ঘটনা প্রবাহ

২০০৪ সাল, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে  ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দুর্নীতি বিরোধী’- শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বাতাসে ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।

পরে জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়ে ঘাতকরা যে গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল, সেটি হচ্ছেআর্জেস গ্রেনেড’, যে গ্রেনেডগুলো একমাত্র পাকিস্তানেই উৎপাদন এবং ব্যবহার করা হয়। হামলাকারী খুনি চক্রের হামলায় ধরনের গ্রেনেড ব্যবহারের জন্য- তা অবশ্যই পাকিস্তান থেকেই আনতে হয়েছিল।  

প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা

সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ঐশ্বরিক কৃপায় নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভেদ করতে পারেনি। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে মানবঢালের ব্যারিকেট দিয়ে ঘিরে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ওই দিন ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব সুফিয়া বেগম।

গ্রেনেডের স্পিন্টারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন। হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানী ঢাকাকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ারশেল চার্জ করে। একই সঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতেজজ মিয়ানাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।


জজ মিয়া নাটক

নৃশংসতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মোড় ভিন্ন দিকে নিতে সাজানো হয়েছিলজজ মিয়া নাটক। কারা ফেঁদেছিলেন এই নাটক? যাকে জজ মিয়া সাজানো হয়েছিল, সেই মো. জালাল নিজেই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আর সিআইডি আমাকে জজ মিয়া বানিয়েছিল। আমার চোখের সামনেই তো আমি জজ মিয়া হয়ে গেলাম।

জজ মিয়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, গ্রেনেড হামলার পরদিন ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তড়িঘড়ি করে মামলা দুটি হস্তান্তর করেন সিআইডি পুলিশের কাছে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান জোট সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান। ২০০৫ সালের জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. জালালকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়। তাকে জজ মিয়া নাম দিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয়জজ মিয়া নাটক

দিনমজুর জজ মিয়াকে তার পুরো পরিবারের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার লোভ দেখায় সিআইডি। প্রস্তাবে রাজি হননি জজ মিয়া। এরপর জজ মিয়ার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। সিআইডির কথামতো না চললে জজ মিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ভয় দেখানো হয়। এতেও রাজি না হলে তাকে চোখ বেঁধে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যান জজ মিয়া। শেষ পর্যন্ত জজ মিয়া সিআইডির প্রস্তাবে রাজি হন। তার পরিবারকে আজীবন ভরণপোষণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সিআইডি কর্মকর্তা তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ এবং এসপি রুহুল আমিন। সিআইডির এই তিন কর্মকর্তাই জজ মিয়া নাটক ফেঁদেছিলেন বলে জানা গেছে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে পুরো ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। বেঁকে বসেন জজ মিয়া। ফাঁস করে দেন আসল ঘটনা। নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। সে সময় তদন্তে হুজি নেতা মুফতি হান্নান এবং তার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে আদালতের সম্মতিতে সিআইডি কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ এর দায়িত্ব পান। অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে কিভাবে তৎকালীন সরকার এই নৃসংশ ঘটনা ঘটাতে ক্ষমতার কেন্দ্রকে ব্যবহার করেছিলেন। এখানে একটি বিষয় সকলের কাছেই খটকা লাগতে থাকে যে কেবলমাত্র মুফতি হান্নানসহ তার সংগঠনকে আড়াল করাই তৎকালীন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং মূল উদ্দেশ্য ছিল আসল হোতাদের আড়াল করা।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হামলা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-হুজির জঙ্গিরা। মুফতি হান্নানের নির্দেশনায় ওই আক্রমণে সরাসরি অংশ নেয় প্রশিক্ষিত ১২ জঙ্গি। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। আহত হয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিন নেতা-কর্মী-সমর্থক। নারকীয় ওই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। পিন্টুর ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন এই আক্রমণের জন্য আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহ করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্রগুলো জানায়, মুফতি আবদুল হান্নানসহ গ্রেপ্তার হওয়া তাঁর ভাই হুজি নেতা মফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ বুলবুল (ঝিনাইদহ), শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল (সিলেট), মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডা. আবু জাফর (গফরগাঁও), জাহাঙ্গীর আলম (কুষ্টিয়া), হোসাইন আহমেদ ওরফে তামীম (ঝিনাইদহ), আরিফ হাসান ওরফে সুমন (ঢাকা), রফিকুল ইসলাম গাজী ওরফে সবুজকে (মাগুরা) জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া তাঁদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল ওই আক্রমণের মূল লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এটা ছিল আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে পরিকল্পিত বড় আঘাত।

রাজধানীর বনানীর ১৩ নম্বর সড়কের হাওয়া ভবন, মামলার অন্যতম আসামি জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ- আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারেরর উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির সরকারি বাসাসহ আটটি স্থানে বৈঠক করে ২১ আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র রচিত হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আদালতে মুফতি হান্নান বলেছেন, এর আগে ওই দিনই তিনি তখনকার উপমন্ত্রী পিন্টুর ধানমন্ডির বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবু তাহেরও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মাওলানা তাজউদ্দিন আক্রমণের জন্য তাঁর কাছে গ্রেনেড হস্তান্তর করেন এবং পিন্টু ২০ হাজার টাকা দেন মুফতি আহসান উল্লাহ কাজলের হাতে।

হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল আবু জান্দাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন। ২১ আগস্ট সকালে একই বাসায় উল্লিখিত সবাই এবং হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিতরা একত্র হন। সিদ্ধান্ত হয়, মোট ১২ জন হামলায় অংশ নেবে। এতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজল আবু জান্দাল। এরপর বাড্ডার ওই বাসায় তাঁরা সবাই একসঙ্গে জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খান। সেখানে তাঁরা সর্বশেষ বৈঠক করেন। মাওলানা সাইদ জিহাদবিষয়ক বয়ান করেন। তারপর মুফতি হান্নান হামলার জন্য নির্বাচিত ১২ জনের হাতে ১৫টি গ্রেনেড তুলে দেন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসরের নামাজের সময়ে সবাই যার যার মতো গিয়ে গোলাপ শাহ মাজারের কাছে মসজিদে মিলিত হয়। সেখান থেকে তারা সমাবেশে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহূত ট্রাকটির চারপাশে অবস্থান নেয়। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পর আবু জান্দাল প্রথম গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। তারপর অন্যরা একে একে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে যার যার মতো এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের পর এটিকেই সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ, যেখানে দিনের আলোতে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের ছত্রছায়ায় পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে সুপরিকল্পিত উপায়ে ঘটানো হয় নৃসংশ এই ঘটনা। দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটেছে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে আরেকটি কলঙ্ক মোচনের দিন হিসেবে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলবের ভূমিকায় থাকা তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দীনসহ ১৯ জনের প্রাণদণ্ডের রায় এসেছে।

তৎকালীন সরকারের নেপথ্য চালক এবং হাওয়া ভবনে বসে সরকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা তারেক রহমান এবং সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এই মামলার মোট আসামি ছিল ৫২ জন। এদের মধ্যে অন্য মামলায় জনের মৃত্যুদণ্ড কর্যকর হওয়াতে আসামির সংখ্যা ৪৯।

মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছে ৩৮ জন। বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর আগে যখন ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয় তখন ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ আরও অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরলে আদালতের সম্মতি পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গভীরভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সুন্দরভাবে এই ঘটনার নেপথ্যের চালকদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।

২০১১ সালে সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ৩০ জনের সবাই এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে বাবর, পিন্টু, তারেক, হারিছসহ অনেকের মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন সাজার মত রায় এসেছে। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এই মামলা নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। যদি এমনটা না করা হতো তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি এই মামলা থেকে ছিটকে পড়ত এবং আইনের শাসনেও ছেদ পড়ত।

কিন্তু ইতিহাসের ভয়াবহতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৯ বছর পার হতে চললেও, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ওই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা এখনও হাইকোর্টে ঝুলছে। যদিও বিচারিক আদালত ২০১৮ সালে মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। এরপর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই ভয়াল, নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ডেথ রেফারেন্স আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও পেপারবুক পড়া শেষ হয়নি। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অন্যান্য আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, দ্রুতই শেষ হবে মামলার আপিল ডেথ রেফারেন্স শুনানি। যার মাধ্যমে চলতি বছরই হাইকোর্ট থেকে রায় ঘোষণার প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

২১ আগস্ট স্মরণে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১১ টা ১৫ মিনিটে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


শেখ হাসিনা   ২১ আগস্ট   গ্রেনেড হামলা   প্রধান টার্গেট  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ছাত্রলীগ নেতাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

কক্সবাজার টেকনাফ হ্নীলা এলাকায় ফেসবুকে ছবি পোস্টে কমেন্ট করা নিয়ে তর্কের জেরে নাছির উদ্দীন নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এমন ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ৩টার দিকে টেকনাফ হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়া পল্লী চিকিৎসক সোহেলের চেম্বারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নাছির উদ্দীন হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই ঘটনার ভিডিও সোমবার (২৯ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

ভুক্তভোগী নাছির উদ্দীন বলেন, ‘কিছুদিন আগে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আজিম আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ করে পোস্ট করেন। সেটি আমার চোখে পড়লে তার পোস্টে আমি কমেন্ট সেকশনে প্রতিবাদ জানাই। এরপর সে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। আমি সেটি খুব সাধারণ ভাবেই নিয়েছিলাম।

আগামী বৃহস্পতিবার আমার ছোট বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে দাওয়াতের কার্ড নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ফিরছিলাম। আমি হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়া পল্লী চিকিৎসক সোহেলের চেম্বারের সামনে পৌঁছানো মাত্র ছাত্রদলের ১০-২০ জন আমার গতিরোধ করে মারধর করতে শুরু করে। আমাকে বাঁচানোর জন্য একজনও এগিয়ে আসেনি।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, একজন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে একটি স্টেশনের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার চেয়ে জঘন্য আর কিছু হতে পারে না। ঘটনা শোনার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। এ সময় অপরাধীরা পালিয়ে যায়। আমরা এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি’। 

এই বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনী বলেন, ‘আমি শুনেছি ফেসবুকে পোস্ট করা নিয়ে তর্কের জেরে এই ঘটনা ঘটে। আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল আমি নিজেই সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করব’।


ছাত্রলীগ   বৈদ্যুতিক খুঁটি   নির্যাতন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

থাইল্যান্ড সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন আগামীকাল

প্রকাশ: ০৮:১৬ এএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

থাইল্যান্ডের চার দিনের সফর নিয়ে আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (০২ মে) সকাল ১০টায় গণভবনে থাইল্যান্ড সফর পরবর্তী প্রেস কনফারেন্স করবেন।

গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় ছয় দিনের থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এর আগে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে ব্যাংককে পৌঁছান শেখ হাসিনা। ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫২ বছরে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ের প্রথম সফর ছিল এটি।

সফরের দ্বিতীয় দিন ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘের এশিয়া প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনইএসসিএপি) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।


থাইল্যান্ড সফর   প্রধানমন্ত্রী   সংবাদ সম্মেলন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

মহান মে দিবস

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক দিন মহান মে দিবস। আজ পহেলা মে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনটি সারা বিশ্বে একযোগে ‘মহান মে দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ঐ দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা করার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।  

মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টক শো সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শ্রমিক মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।’

মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। মহান দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের সব শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী আর্থসামাজিক উন্নয়নে শ্রমজীবী মানুষের কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শ্রমিকের অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন এবং নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করেন।

মে দিবসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বাণীতে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তাদের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, সমৃদ্ধি ও নিরাপদ জীবন কামনা করি।’

জেপির বিবৃতি: মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি—জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং দলের মহাসচিব ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের মেহনতি মানুষদের একই সঙ্গে বিশ্বের মেহনতি সব মানুষকেও আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে জেপির নেতৃদ্বয় বলেন, ‘মেহেনতি মানুষের শ্রম ও ঘামে আমাদের এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সংগ্রামের এক অনন্য দিন। আমরা এই দিনে বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি এবং তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্যের দাবির প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করছি। আমরা এই দিনে সব মেহনতি মানুষের সর্বাঙ্গীণ সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করছি এবং মহান মে দিবসে যারা আমেরিকার শিকাগোতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, সেই শহরের শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’

মহান মে দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিকসমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আজ বেলা ৩টায়  বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে এক শ্রমিক জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।


মহান   মে   দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

একটি দেশের আর্থসামাজিক দুরবস্থার দরুন শিশুশ্রমের আধিক্য দেখা যায়। বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বর্তমানে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১৭ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু নিয়োজিত রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২’ এ তথ্য পাওয়া যায়। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ৭ অনুযায়ী দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে সব সেক্টর থেকে শিশুশ্রম নিরসনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সব শিশুকে সরিয়ে আনার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে আছে দেশ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও‘র সংজ্ঞায় ৫ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত মানুষকে শিশু ধরা হয়। এরমধ্যে ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টা এবং ১৪ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করালে তাকে শিশু শ্রম বলা হয়।

২০২২ সালে বাংলাদেশ আইএলও সনদ অনুমোদন করে। আর তখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলা হয় ১৪ বছর পর্যন্ত কোনো শিশুকে শ্রমে নিযুক্ত করা যাবেনা। আর কোনো শিশুকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবেনা। কিন্তু বাংলাদেশে শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং ২০১৩-এর সংশোধন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। অথচ, আইনের এই বিষয়টিকে তোয়াক্কা না করে অনিয়মতান্ত্রিক শিশুশ্রম চলছে দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই। যা শিশু সুরক্ষা তথা শিশু অধিকারের পরিপন্থি। এখনও দেশের বহু বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুরা কাজ করছে। কাজ করছে হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে। এ ধরনের শ্রম বন্ধে সরকার নিতে পারছে না কোন কার্যকর উদ্যোগ। এ রকম অবস্থায় ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনে অনিশ্চয়তা রয়ে যাচ্ছে।


শিশুশ্রম   মে দিবস   শ্রমবাজার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও অবহেলিত প্রান্তিক নারী

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও, অবহেলিত প্রান্তিক নারীরা। কারণ দেশের একেক অঞ্চলের নারীদের জীবন সংগ্রামের ধরন একেক রকম। উপকূলীয় অঞ্চল, উত্তরাঞ্চল, এমনকি পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জীবনাচরণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন। অন্যদিকে প্রান্তিক নারীরা অভিবাসন শ্রমিক হয়ে অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন। তবে এখনো তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শহরের নারীরা এগিয়ে থাকলেও এখনো অবহেলিত গ্রামের প্রান্তিক নারীরা। গ্রামীণ নারীরা গৃহশ্রম, কৃষি-শিল্প খাতে কাজ করলেও তারা প্রত্যাশিত মর্যাদা ও স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত।

পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় যে পরিমাণ খাদ্য উত্পাদন হচ্ছে, তার ৮০ শতাংশ নারী উত্পাদন করছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা উত্পাদনে অনেক অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কৃষিতে নারীদের যে অবদান সেটি খুব ছোট করে দেখানো হচ্ছে। শিল্পকারখানায়ও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২.৬৮%; যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৬.৩%।

সূত্র জানায় ,কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পাঁচ দশকে মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের বড় ধরনের অবদান রেখেছেন তারা। পাকিস্তানকে যে সব ক্ষেত্রে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ, তার একটি হলো কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্যমতে, দেশের কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন। শস্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বীজতলা নির্মাণ, শস্য বাজারজাতের কাজ করছেন নারীরা। তারা ৩৫ থেকে ৪০ ধরনের কাজ করছেন। কিন্তু তার আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায় না। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের কৃষিতে ৪০ শতাংশ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু অর্থনীতিতে তাদের অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ। নারীদের উদ্যোক্তা হতে ব্যাংকঋণ প্রদানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এসব ব্যাংকের কর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যান না। ফলে প্রান্তিক নারীদের যে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, তা তারা পাচ্ছেন না।


শ্রমবাজার   প্রান্তিক নারী   মে দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন