২২ আগস্ট ১৯৭৫ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তৈরি বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণে বাংলাদেশেরও উল্লেখ রয়েছে। রবিনসনের স্বাক্ষরিত এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মিসেস গান্ধী ব্লিৎজ-এ প্রকাশিত নিবন্ধকে সংবেদনশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সফররত মার্কিন সিনেটর টমাস এফ ইগলটনের কাছে মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে সিআইএর জড়িত থাকার বিষয়ে ব্লিৎজ পত্রিকায় যে নিবন্ধ বেরিয়েছে, তা চাঞ্চল্যকর। মিসেস গান্ধীকে যখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তাঁকে কিছুটা বিব্রত বলে মনে হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী এই নিবন্ধ প্রকাশে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন, 'আমরা সংবাদক্ষেত্রটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।' বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে সিআইএর জড়িত থাকার বিষয়ে মিসেস গান্ধীর বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মিসেস গান্ধী দুবার উচ্চারণ করেন, 'আমাদের কাছে এমন কোনো খবর নেই।'
মার্কিন অধ্যাপক মার্কাস ফ্রান্ডা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ছিলেন। ১৯৭৫ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ফিল্ড স্টাফ প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, 'কিছু সময়ের জন্য হলেও মিসেস গান্ধী সুচিন্তিতভাবে নীরবতার নীতি অনুসরণ করেন। মোশতাককে ‘মার্কিন চামচা’ হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়াকে (সিপিআই) অনুমোদন দিলেও নিজে কিন্তু মুজিব হত্যায় সিআইএর সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো অভিযোগ তোলেননি ।
নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, সেন্সরশিপ সত্ত্বেও এই বিষয়ে ভারতীয় সংবাদপত্রে যা কিছু ছাপা হচ্ছে, তা সরকারের ‘রশি আলগা করে দেওয়ার নীতির ফসল।
'চিলির নাটের গুরু এখন ঢাকায়' বলে মুজিব হত্যায় বোস্টারকে দায়ী করেছিল পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া। আসলে জরুরি অবস্থার মধ্যেও, বিশেষ করে দিল্লি, বোম্বে ও কলকাতার পত্রপত্রিকায় মুজিব হত্যায় সিআইএর জড়িত থাকার বিষয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট ছাপা হয়। এ নিয়ে দেখা দিয়েছিল দিল্লি- ওয়াশিংটন সম্পর্কে টানাপোড়েন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী সিনেটর ইগলটন (১৯৬৮-৮৭ মেয়াদে মিসৌরি থেকে নির্বাচিত, ২০০৭ সালে মারা যান) পঁচাত্তরের ২১ আগস্ট দিল্লি সফরে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন, 'আপনি কি বিশ্বাস করেন যে মুজিব হত্যাকাণ্ডে সিআইএর হাত আছে?' ইন্দিরা একটি বাকা দুবার উচ্চারণ করেন, 'আমাদের কাছে তেমন খবর নেই।'
ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি স্যাক্সবির পাঠানো প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্লিৎজ নামে একটি পত্রিকা সিআইএকে দায়ী করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ব্লিৎজ-এ প্রকাশিত উক্ত নিবন্ধে বলা হয়, ঢাকায় সাহায্যকর্মীর নামে আসলে বিপুলসংখ্যক সিআইএর কর্মী ভিড় করেছে। পিটার বার্লে ছিলেন কলকাতার মার্কিন দূতাবাসের কাউন্সিলর। সিআইএর ছদ্মবেশী এজেন্ট। তাঁকে সম্প্রতি ঢাকায় পাঠানো হয়। এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'এই পত্রিকা চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী খবর ছাপে। আমার বিরুদ্ধেও লিখেছিল। কিন্তু আগস্টেই ব্লিৎজ ইন্দিরার বিশেষ সাক্ষাৎকার ছাপে। ভারতে ওই সময়ে জরুরি অবস্থা ছিল। সে কারণে মার্কিনরা সন্দেহ করত যে এসব খবর সেন্সরমুক্ত হয় কী করে। ওই সময়ে ভারতের মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন দিচ্ছিল। তারা মুজিব হত্যায় সিআইএকে জড়িয়ে জোরালো বক্তব্য দেয়। বামপন্থী সাংসদেরা মার্চ মাসে উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে সিআইএর 'ব্যাপক অশুভ তৎপরতা ‘ বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। এমনকি তাঁরা এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
ভারতের কমিউনিস্ট নেতা ও বিশ্ব শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বাংলাদেশেও একটি পরিচিত মুখ। তিনি ছিলেন ভালো বক্তা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নথিপত্র থেকে দেখা যায়, ২২ নভেম্বর ৭৫ লেনিনগ্রাদে তিনি মুজিব হত্যার তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। তিনি তথ্য দেন যে সিআইএর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে মুজিবকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন। মুজিব তাঁকে বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে সজাগ রয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই বি চ্যবন গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন। ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্যাক্সবি ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ লিখেছেন, 'মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা ইন্দিরাকে সহায়তা করেন। কিন্তু মুজিব হত্যা নিয়ে ইন্দিরা প্রশাসনের ভূমিকায় আমরা হতাশ। কমিউনিস্টরা কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই মুজিব হত্যায় সিআইএকে জড়িত করে প্রচার চালাচ্ছে।' ২২ আগস্ট স্যাক্সবি এক বার্তায় ওয়াশিংটনকে জানান, 'ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চ্যবন রাষ্ট্রদূত ও সিনেটর ইগলটনকে বলেছেন, 'কমিউনিস্টরা যে এ রকম আক্রমণাত্মক অভিযোগ করছে, আপনারা এটা সোভিয়েতের কাছে তুলতে পারেন।' যদিও সিপিআইয়ের পত্রিকা কালান্তর-এ পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌগত রায়ের এরকম একটি মন্তব্য ছাপা হয় যে মুজিব হত্যা সিআইএর ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। ২১ আগস্ট কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাগরিক কমিটির সভায়ও সিআইএকে দায়ী করা হয়। ২২ আগস্ট প্যাট্রিয়ট পত্রিকা রিপোর্ট করে যে ওই সভায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিও তাঁর বক্তব্যে সিআইএকে অভিযুক্ত করেছেন ।
উল্লেখ্য, ২২ আগস্ট ১৯৭৫ সিনেটর ইগলটনের সঙ্গে মিসেস গান্ধীর কথোপকথন বিষয়ে দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্যাক্সবি পৃথক একটি তারবার্তা পাঠান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে। স্যাক্সবি লিখেছেন, ব্লিৎজ –এ প্রকাশিত নিবন্ধ সম্পর্কে সিনেটর ইগলটনের প্রশ্নের জবাবে মিসেস গান্ধী বলেছেন ব্লিৎজ একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী সাময়িকী। পত্রিকাটি অতীতে তাঁকেও আক্রমণ করেছে। তিনি বুঝতে পারছেন না, এই প্রশ্নসাপেক্ষ নিবন্ধটি কী করে ছাপা হতে পারল। মিসেস গান্ধী আসলে প্রসঙ্গটি তোলায় বিব্রত হয়েছেন।
পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টে সিনেটর ইগলটন দক্ষিণ এশিয়া সফরে ছিলেন। ১৬ আগস্ট তেল আবিব থেকে এথেন্স দিল্লিতে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, সিনেটর ইগলটন ২১ আগস্ট ভারতে পৌঁছে ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। ভারতের ওপর অভ্যুত্থানের প্রভাবও জানতে চান তিনি ।
(সূত্র: মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড।। পৃষ্টা : ১৪৭-১৪৯)
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ইন্দিরা গান্ধী ভূমিকা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মুজাহিদ পাঁচশ’ টাকার একটি নোট নিয়ে বাড়ির পাশে এক দোকানে কিছু কিনতে যাচ্ছিল। এসময় তার কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিতে কৌশলে এক কিশোর ব্রহ্মপুত্রের কাছে টাকা কেড়ে নিয়ে শিশুটিকে নদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর থেকে নিখোঁজ শিশু মুজাহিদ। দুইদিনেও তার খোঁজ মেলেনি।
আজ রোববার (১২ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস।
এর আগে, শুক্রবার (১০ মে) দুপুরে উপজেলার সানন্দবাড়ী এলাকার পাটাধোয়া পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ শামিম হোসেনকে (১৫) আটক করে পুলিশ। ইতোমধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ওই কিশোর।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে মুজাহিদ তার বাবা-মায়ের অগোচরে ঘর থেকে ৫০০ টাকার একটি নোট নিয়ে পাশের এক দোকানে যায়। এসময় শামীম টাকার লোভে শিশু মুজাহিদের পিছু নেয় এবং টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য বেড়ানোর কথা বলে তাকে বাড়ির নিকটবর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মুজাহিদের কাছ থেকে কৌশলে টাকা নিতে না পেরে শামীম জোরপূর্বক ৫শ’ টাকা কেড়ে নিয়ে তাকে সানন্দবাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে শামিম গা ঢাকা দেয়। পরে নিখোঁজ মুজাহিদের স্বজনরা শামিমকে সন্দেহ করে পুলিশকে জানালে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে তাকে আটক করা হয়।
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, শামিমকে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে আটক করা হয়েছে। শনিবার ঘটনাস্থলে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে মুজাহিদকে নদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। ছোট ছেলে মুজাহিদ, সাঁতার জানে না। ধারণা করা হচ্ছে, মুজাহিদের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হলে আদালতে প্রেরণ করা হয় শামিমকে।
ব্রহ্মপুত্র নদ ৫শ’টাকার লোভ শিশু কিশোর
মন্তব্য করুন
ভারতের হাইকমিশনার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
মন্তব্য করুন
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মুজাহিদ পাঁচশ’ টাকার একটি নোট নিয়ে বাড়ির পাশে এক দোকানে কিছু কিনতে যাচ্ছিল। এসময় তার কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিতে কৌশলে এক কিশোর ব্রহ্মপুত্রের কাছে টাকা কেড়ে নিয়ে শিশুটিকে নদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর থেকে নিখোঁজ শিশু মুজাহিদ। দুইদিনেও তার খোঁজ মেলেনি।