রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৫ আগস্ট থেকেই অত্যন্ত গোপনে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়লাভের
ব্যাপারে যোগাযোগ ও কথাবার্তা বলছিলেন। তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ করছিলেন এবং তাঁদের মতামত শুনছিলেন। এ সময় যুগোস্লাভিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রিয়া বা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ওই সময় পশ্চিম জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডে
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সে হিসেবে তাঁর সুপারিশে বা চেষ্টায় পশ্চিম জার্মানি, সুইজারল্যান্ড বা অস্ট্রিয়ায়
তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে ওই দেশগুলোতে তাদের নিয়ম মেনে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে বরাবরই বেশ সময় লাগে। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তাঁর সহকর্মীদের বলেন, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো সব ন্যাটো জোটের সদস্য এবং সবাই তারা আমেরিকার তল্পিবাহক। আর বর্তমানে ঢাকায় যারা ক্ষমতা হাতে তুলে নিয়েছে, তারাও মার্কিনপন্থী। তাই শেখ হাসিনারা এসব দেশে আশ্রয় নিলে ভবিষ্যতে তাঁদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এসব বিবেচনা করে সবাই তাঁদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেন।
১৬ আগস্ট রাষ্ট্রদূত চৌধুরী পশ্চিম জার্মানিতে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত মহম্মদ আতাউর রহমানের সঙ্গে শেখ হাসিনাদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়লাভের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান বিষয়টি নিয়ে তাঁর দুই সহকর্মী ভারতীয় দূতাবাসের প্রথম সচিব অরুণ পাটবর্ধন এবং কাউন্সেলর ও ডেপুটি চিফ (পলিটিক্যাল) সি ভি রঙ্গনাথনের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন তারিক এ করিম অরুণ পাটবর্ধনের ফোন পান। পাটবর্ধন তারিক এ করিমকে জানান, তিনি সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে কিছু বিষয়ে কথা বলতে চান। তারিক এ করিম রাষ্ট্রদূত চৌধুরীর বাসার তিনতলার ফোনের নম্বর জানালে অরুণ পাটবর্ধন শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তবে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তারিক এ করিম কিছু জানতেন না।
সি ডি রঙ্গনাথন অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাস করেন। তিনি এই লেখককে টেলিফোন মারফত জানান, ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তাঁকে শেখ হাসিনাদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান। বিষয়টি তখন ভারতীয় দূতাবাসের তিন কর্মকর্তা রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান, প্রথম সচিব অরুণ পাটবর্ধন ও তিনিই কেবল জানতেন। তাঁরা বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা শুনে খুবই বিচলিত হন। মুজিব- কন্যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের এ বিষয়টি দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খুব দ্রুত ও গুরুত্বসহকারে
জানানো হয়। দুই দিন পরই দিল্লির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
জবাব আসে। তাতে বলা হয়েছিল, শিগগিরই যেন তাঁদের দিল্লি পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে বিষয়টি খুব গোপনে ও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে কাউকে যেন বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানানো না হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের স্বার্থে কেবল রাষ্ট্রদূত চৌধুরীকে বিষয়টি জানানো হয়। ভারতীয় কর্মকর্তাদের তরফ থেকে আরও একটি বিষয়ে বলা হয়, শেখ হাসিনাদের যেন এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে সরাসরি দিল্লিতে পাঠানো হয়।
তারিক এ করিম ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মহম্মদ আতাউর রহমান ও অরুণ পাটবর্ধনকে আগে থেকেই চিনতেন। মহম্মদ আতাউর রহমান একসময় ইরানে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেই সময় তারিক এ করিম তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের তৃতীয় সচিব ছিলেন।
এদিকে ড. কামাল হোসেন বনে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাসায় ১৫ আগস্ট রাত যাপন করে ১৬ আগস্ট লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তাঁর গাড়িতে করে তাঁকে ফ্রাঙ্কফুট বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন। ওয়াজেদ মিয়াও তাদের সঙ্গে বিমানবন্দরে যান। বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসার পর রাষ্ট্রদূত চৌধুরী ওয়াজেদ মিয়াকে কার্লসরুয়েতে যেতে বলেন তাঁর প্রয়োজনীয় জরুরি জিনিসপত্র ও গবেষণাকাজে ব্যবহৃত বইপুস্তক নিয়ে আসার জন্য। সেই মতো ওয়াজেদ মিয়া কার্লসরুয়ে যান। কিন্তু ওই দিন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র বন্ধ ছিল। ফলে তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় বইপত্র সংগ্রহে ব্যর্থ হন। সন্ধ্যার কিছু পরেই তিনি বনে ফিরে আসেন।
ওয়াজেদ মিয়া কার্লসরুয়ে থেকে ফিরে আসার পর রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তারিক এ করিমকে ফোন করে তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িটি নিয়ে তাঁর বাসায় আসতে বলেন। ফোন পেয়ে তারিক এ করিম তাঁর গাড়ি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের
বাসায় যান। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী বেশ রাতে ওই গাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে পূর্বনির্ধারিত এক স্থানে যান। তিনি নিজেই গাড়িটি চালান । পথে রাষ্ট্রদূত ওয়াজেদ মিয়াকে বলেন, ওখানে ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা গাড়ি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। ওই কর্মকর্তা তাকে ভারতের রাষ্ট্রদূতের
কাছে নিয়ে যাবেন। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী ভারতীয় কর্মকর্তার অবস্থানের কাছে ওয়াজেদ মিয়াকে নামিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। তিনি ইচ্ছা করেই তাঁর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেননি। কারণ, গাড়ির নম্বরপ্লেটটি দেখলেই বোঝা যেত তা কোন দূতাবাসের গাড়ি।
পূর্বনির্ধারিত স্থানে ওয়াজেদ মিয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন দূতাবাসের কর্মকর্তা সি ভি রঙ্গনাথন। ওয়াজেদ মিয়া তাঁর গাড়িতে ভারতের রাষ্ট্রদূতের
বাসভবন অভিমুখে রওনা হন।
ওয়াজেদ মিয়ার অবস্থা তখনো একজন অপ্রকৃতিস্থ মানুষের মতো। নিজেদের অজানা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তিত। যদিও কিছু মানুষ ওই দুঃসময়েও তাঁদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁদের জন্য কিছু করতে চাচ্ছেন। যাহোক ওয়াজেদ মিয়া বিপর্যস্ত মন নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূত মহম্মদ আতাউর রহমানের বাসভবনে পৌঁছালেন। সেদিনের স্মৃতিচারণা করে ওয়াজেদ মিয়া তাঁর পূর্বোক্ত বইটিতে লিখেছেন:
অতঃপর ভারতীয় ওই অফিশিয়ালের সঙ্গে আমি তাঁদের রাষ্ট্রদূতের
বাসায় যাই। তখন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন একজন মুসলমান জার্নালিস্ট। একটু ভয়ে ভয়ে আমাদের বিপর্যয়ের কথা আমি তাকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি। আমার কথা শোনার পর তিনি আমাকে লিখে দিতে বলেন যে আমরা ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে চাই। অতঃপর তিনি একটি সাদা কাগজ ও কলম আমার হাতে তুলে দেন। তখন মানসিক দুশ্চিন্তা ও অজানা শঙ্কায় আমার হাত কাঁপছিল। যাহোক, অতি কষ্টে রেহানাসহ আমার পরিবারবর্গের
নাম উল্লেখপূর্বক
সকলের পক্ষ থেকে আমি লিখলাম, শ্যালিকা রেহানা, স্ত্রী হাসিনা, শিশু ছেলে জয় ও শিশু মেয়ে পুতুল এবং আমার নিজের কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং প্রাণ রক্ষার জন্য ভারত সরকারের নিকট কামনা করি রাজনৈতিক আশ্রয়।
আতাউর রহমান হাঙ্গেরিতে ভারতীয় দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স
থাকাকালে সে দেশের তরুণ বিপ্লবীদের নানা সহযোগিতা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নির্দেশে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যাদের দুর্দিনে তিনিই আবার নেহরু-কন্যার নির্দেশে তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন। ভারতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ ও গোপনে জার্মানি ত্যাগের ঘটনায় নেপথ্যের কুশীলব ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আতাউর রহমান পশ্চিম জার্মানিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।
(সূত্র: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন।। পৃষ্টা: ৬৩-৬৬)
শেখ হাসিনা শেখ রাহানা রাজনৈতিক আশ্রয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জেলা প্রশাসক সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে একটি চালকলে ধান সিদ্ধ করার সময় বয়লার বিস্ফোরণে এক শ্রমিকে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুই শ্রমিক। শুক্রবার (৩ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মেসার্স আজাহার চালকলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফজল আলী (২৬) উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার রবিয়াল হোসেনের ছেলে।
আহত শ্রমিকরা হলেন, উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মৃত পলান শেখের ছেলে জহুরুল শেখ (২৬) এবং কর্ণসূতি পশ্চিম পাড়ার মৃত সুরুত মন্ডলের ছেলে জিন্নাহ মন্ডল (৩০) ।
আহত শ্রমিক জহুরুল শেখ জানান, ‘ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এতে আমি সহ ফজল ও জিন্নাহ আহত হই। আমি আর জিন্নাহ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে চলে এসেছি আর ফজলের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।’
জহুরুল আরও জানান, ‘আমি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই চালকলে কাজ করছি। এর মধ্যে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হলেও বয়লার পরিবর্তন করা হয়নি।'
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত ফজলের ভাই আসলাম হোসেন জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে বয়লার বিস্ফোরণে ফজল গুরুতর আহত হয়। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
মেসার্স আজাহার চালকলের স্বত্বাধিকারী আজাহার আলী রাজা দাবি করেন, ‘গত ছয় মাস আগে বয়লার ও কয়েক দিন আগে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হয়েছে। বয়লার কেন বিস্ফোরণ হলো বুঝতে পারছি না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমনুল হক জানান, ‘বয়লার বিস্ফোরণে আহত তিন জন শ্রমিককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। দুই জনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়ে। এদের মধ্যে ফজল নামে একজন শ্রমিকের মুখের অনেকাংশ থেঁতলে গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।'
মন্তব্য করুন
গাজীপুরের জয়দেবপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে তেলবাহী ট্রেনের
মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (০৩ মে) গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত বহু
আরও পড়ুন: দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: উদ্ধারে যোগ দিয়েছে বিজিবি
এদিকে ঘটনার পর থেকে জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম
রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে অন্তত ৬টি ট্রেন।
জয়দেবপুরের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী মিয়া বলেন, ‘আজ পৌনে ১১টার
দিকে টাঙ্গাইল কমিউটার ও তেলবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। রেললাইনের পয়েন্টের ভুলের
কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি
বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনটিতে যাত্রী কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। কমিউটার ট্রেনের
লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায়
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ’।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার হাশেম ও পয়েন্টসম্যান
সাদ্দাম হোসেনসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের
জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধারের জন্য ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন
ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এরই মধ্যে রেলের সব বগি তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভেতরে কেউ আটকা নেই। ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করে বলেন, জয়দেবপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে
প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের
প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা
ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার
প্রক্রিয়া শুরু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ
করা হয়েছে।
এরআগে, শুক্রবার (০৩ মে) বেলা ১১টার দিকে জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার
সিগনালে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে একটি তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, রেল দুর্ঘটনায় দুই ট্রেনের চালক ও সহকারীরা আহত হয়েছেন।
তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রেল দুর্ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের
রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে কমলাপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়েছেন ৪-৫টি ট্রেনের যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি উত্তরবঙ্গ থেকে
ছেড়ে এসে গাজীপুর হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগনালে
পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তবে টাঙ্গাইল
কমিউটারে খুব বেশি যাত্রী ছিল না।
একজন উদ্ধারকর্মী জানান, শুক্রবার টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনে থামে। আজ বন্ধ থাকায় এটির থ্রোপাস করার কথা। আর অপরদিকে ঢাকা থেকে আসা তেলবাহী ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়ানো ছিল। এখানে আপলাইন ও ডাউনলাইন আছে, কিন্তু কী কারণে ট্রেন দুটি মুখোমুখি হল সে বিষয়ে তদন্তের পর জানা যাবে।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
এর আগে, গতকাল রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে
উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করে। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের
মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি সকালে ২ নম্বর
রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোতে ঢোকার সময় লাইনচ্যুত হয়। তখন এ রুটে
সব রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন সাড়ে ১০টার দিকে লাইনচ্যুত
ট্রেনটি উদ্ধার করে। বর্তমানে রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা
রুটে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ২ নম্বর রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন
ডিপোতে ঢোকার সময় মালবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে মেইন লাইন ব্লক হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর
সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে তিন ঘণ্টা পর ট্রেনটি উদ্ধার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজবাড়ীর সঙ্গে স্বাভাবিক হয়েছে ট্রেন চলাচল।
দুই ট্রেন সংঘর্ষ স্টেশন মাস্টার তদন্তে কমিটি
মন্তব্য করুন
গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ পরবর্তী উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে দুই
প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাকা-জয়দেবপুর রেল সড়কের গাজীপুরের ছোট দেওড়া কাজীবাড়ি
এলাকায় মালবাহী ও যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্ধার কাজের
সহায়তায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন।
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল
কমিউটার ট্রেনটি আজ (শুক্রবার) বেলা ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে ঢাকার
উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে আউটার সিগন্যালে পৌঁছানোর পর লাইন
ক্রসিং করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা জয়দেবপুর আউটার সিগন্যালের কাজীবাড়ি ছোট দেওড়া
এলাকায় একটি মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকসহ আহত ৪জনকে উদ্ধার করে গাজীপুর
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আরও আহত
থাকতে পারে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
মন্তব্য করুন