ইনসাইড বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সেনাবাহিনী


Thumbnail বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সেনাবাহিনী।

সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের উজ্জল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসের দ্বিতীয় দিবসে ‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র ১’ থেকে পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা হলো।  

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সেনাবাহিনী

-শেখ হাসিনা 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছিলেন এদেশের প্রতিটি মানুষের অতি আপনজন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রত্যেক বাঙালির জন্যই ছিল তাঁর অকৃত্রিম দরদ। স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য তাঁর স্নেহ ও দায়িত্ব কিছু কম ছিল না। যারা সেনাবাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অশুভ শক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে সেনাবাহিনী নিয়ে একটি বিতর্কের সূত্রপাত করা। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্য বা জনগণ কেউই তা চায় না। এতে শুধু সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে না, জনসাধারণের সাথে বিচ্ছিন্নতাও বেড়ে যাবে। সেনাবাহিনী নিয়ে যে কোনো ধরনের বিতর্কই দেশের জন্যও হবে আত্মঘাতী। জনগণের সাথে একাত্মতাবোধ নষ্ট হলে তাদের উপর অর্পিত দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংহতি রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালন বিঘ্নিত হবে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন সেনাবাহিনী বহিঃশত্রুর আক্রমণের সহজ শিকারে পরিণত হয়। কোনো দেশপ্রেমিক সুস্থ মানুষই এ রকম অবস্থা কামনা করতে পারে না।

পাকিস্তান আমলে সেনাবাহিনী জনসাধারণের প্রতিপক্ষরূপে দাঁড়িয়েছিল। দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ও জনসাধারণের উৎসাহ- উদ্দীপনাকে নস্যাৎ করে আটান্ন সালে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বসেছিল। গভীর রাতে ক্ষমতার হাতবদল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চরিত্রকে করে তুলেছিল কলঙ্কিত। বেলুচিস্তানে বোমা ফেলে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করে সেনাবাহিনী চূড়ান্তভাবে জনগণের প্রতিপক্ষরূপে দাঁড়িয়েছিল। সংঘাত ছিল যার স্বাভাবিক পরিণতি। আজও পর্যন্ত পাকিস্তানে সে সংঘাতের অবসান ঘটেনি।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশরূপে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু অচিরেই বাংলাদেশ পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্রের বাজারে পরিণত হয়ে একটি নয়া উপনিবেশ হিসেবে গড়ে উঠল। তবে এ অবস্থা প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। আর এর থেকে শুরু হয় এক দীর্ঘস্থায়ী গণসংগ্রামের। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৬২-এর ছাত্র-গণআন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা-বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ৬ দফা ও ১১ দফা ভিত্তিক আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০- এর নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পরিপূর্ণ বিকাশের অভিযাত্রায় এক-একটি পতাকাচিহ্ন। এসব আন্দোলন আর সংগ্রামের স্তরে স্তরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ঘটে উত্তরণ। ১৯৭১-এ এসে তা চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর বাঙালি জনতা একীভূত হয়ে যায়।

আমাদের ইতিহাসের এ পর্যায়ক্রমিক ধাপে অন্যান্য দাবির পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও বেসামরিক চাকরিতে বাঙালিদের অন্তর্ভুক্তি, পদোন্নতি ইত্যাদি প্রশ্নে যে বৈষম্যমূলক নীতি বিরাজ করছিল, তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুই প্রথম থেকে ছিলেন সোচ্চার। আর এ কারণেই তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবিতে পূর্ব বাংলার জন্য স্বতন্ত্র সেনাবাহিনী এবং নৌ সদর পূর্ব বাংলায় স্থাপনের দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। বাঙালির সেদিনের সংগ্রাম ও আন্দোলনে শেখ মুজিবের নেতৃত্ব যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিল, সমগ্র জাতির মতোই তার সে আবেদন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও জোয়ানদের মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছিল অভূতপূর্ব। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি ১৯৭১-এ রক্তে বান ডাকানো দিনগুলোতে। ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল শান্তিপ্রিয় ও নিরস্ত্র বাঙালি জনগণের উপর। সে মুহূর্তেই বঙ্গবন্ধু তাঁর ৩২ নং ধানমণ্ডি সড়কের বাড়ি থেকে ঘোষণা করলেন স্বাধীনতা। তিনি ডাক দিলেন সকল বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে। শুরু হয়ে গেল সশস্ত্র প্রতিরোধ ও যুদ্ধ। চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও যুদ্ধের আহ্বান ওয়ারলেস যোগে পৌঁছে দেওয়া হলো। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনতা ও অন্যান্য আধা-সামরিক বাহিনীর বাঙালি ভাইদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও জোয়ান ভাইয়েরা। আর এভাবেই সূচনা হলো একটি নতুন দেশ ও একটি নতুন সশস্ত্র বাহিনী সৃষ্টির। বঙ্গবন্ধুর আহ্বান, জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ও নিজেদের দেশপ্রেমের জন্যই একটি শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে গড়ে উঠতে পেরেছে আমাদের সেনাবাহিনী। বিজয়ী সৈনিকের উপযোগী স্বাধীন দেশের বাহিনী গড়ে তোলার জন্য তাই বঙ্গবন্ধু ও এদেশের জনগণ স্বাধীনতার পর সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীকে আরও সুসংগঠিত ও সুসজ্জিত করার জন্য জনসাধারণকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সঙ্কুচিত করতে হয়েছে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের অনেক জরুরি কর্মসূচি। তবুও সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটাতে কুণ্ঠিত হয়নি বাংলার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এ সেনাবাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধু ছিলেন যেমনি স্নেহপ্রবণ তেমনি দায়িত্বসচেতন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তখন হাজার সমস্যা। হানাদার বাহিনী পিছু হটার সময় রাস্তাঘাট, রেলসেতু, ব্রিজ, কালভার্ট সব ভেঙে দিয়ে গেছে। অকেজো করে দিয়েছে বন্দর। জ্বালিয়ে ফেলেছে অনেক শহর, গ্রাম। দেশের কলকারখানা প্রায় সব কটিই ছিল বিধ্বস্ত। কৃষিকাজও তখন প্রায় বন্ধ। তার ওপর এক কোটি শরণার্থীর সমস্যা। যুদ্ধে নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রন্ত লক্ষ লক্ষ পরিবার। ঔপনিবেশিক শোষণের নিগড় থেকে মুক্তি পাওয়া সদ্য স্বাধীন একটি দেশের সম্পদ বলতে তখন শুধু মানুষের ঐক্য ও কর্মস্পৃহা। এরকম অবস্থায় বঙ্গবন্ধু হাত দেন দেশ পুনর্গঠনের কাজে। কিন্তু তাতেও সেনাবাহিনীর চাহিদা এতটুকু খাটো করে দেখেননি তিনি। সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনীরূপে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার । ইনফ্যানট্রি, আর্টিলারি, সিগন্যাল, আর্মড, ইঞ্জিনিয়ার, মেডিকেল প্রভৃতি পূর্ণাঙ্গ রেজিমেন্ট ও ব্যাটালিয়ন এবং আনুষঙ্গিক ইউনিটসহ তিনি সেনাবাহিনী গঠন করেছেন। প্রায় ৩০ হাজার সৈন্যের এ বাহিনী জন্মলগ্নেই সুসজ্জিতভাবে গড়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ আন্তরিকতা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ফলেই স্বাধীন বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় নৌ, বিমান ও পদাতিক বাহিনী।

দেশ তখন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। বঙ্গবন্ধু হাঁপিয়ে উঠেছেন দশ কোটি মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে। বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও তখন তুঙ্গে। সে সঙ্কটের সময়ও বঙ্গবন্ধু ভুলে যাননি তাঁর প্রিয় সেনাবাহিনীর কথা। খাদ্য ক্রয়ের পাশাপাশি বিদেশ থেকে সেনাবাহিনীর জন্য সংগ্রহ করেছেন প্রয়োজনীয় অস্ত্রসম্ভার। যুগোশ্লাভিয়ায় সামরিক প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে পদাতিক বাহিনীর জন্য আনা হয় ক্ষুদ্র অস্ত্রশস্ত্র এবং সাঁজোয়া বাহিনীর জন্য ভারী অস্ত্র। ভারতের অনুদান ৩০ কোটি টাকায় সেনাবাহিনীর জন্য কেনা হয় কাপড় ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে মিগ বিমান, হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান। সে সময় মিগ-২১ই ছিল এ উপমহাদেশের সবচেয়ে আধুনিক বিমান। আজ পর্যন্ত তার সমকক্ষ কোনো জঙ্গী বিমান আওয়ামী লীগ-পরবর্তী সরকারসমূহের পক্ষে সামরিক বাহিনীর জন্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফলেই মিসর থেকে আনা সম্ভব হয়েছে সাঁজোয়া গাড়ি বা ট্যাংক। উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত জ্ঞান লাভ করে দেশ যাতে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়তে পারে সে উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে প্রেরণ করেন। ব্রিটেন, সোভিয়েত রাশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন সেনাবাহিনীর অফিসাররা। জেনারেল এরশাদ নিজেও সে সময় দিল্লিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার সেনাবাহিনীর জন্য নগদ অর্থে আধুনিক বেতারযন্ত্র ক্রয় করেন এবং সিগন্যাল শাখাকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলেন। এভাবে স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে অত্যন্ত সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর প্রতি কোনো প্রকার অনীহা প্রকাশ করেননি। তিনি সামরিক একাডেমী স্থাপন করে আরও নতুন নতুন তেজোদীপ্ত তরুণের সমন্বয়ে সেনাবাহিনীকে উন্নত করার চেষ্টা করেছেন।

পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনকারী আরও ত্রিশ হাজারের অধিক সামরিক কর্মকর্তা ও জওয়ানদের তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পুনর্বাসিত করেন। এ কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তৎকালীন সেনাবাহিনীর অনেক কর্তাব্যক্তি এ পুনর্বাসনের বিরোধিতা করেছেন। অনেক জেনারেল বিভিন্ন সেনাছাউনিতে গিয়ে এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বক্তৃতাও করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত উদার ও যুক্তিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। এ প্রত্যাবর্তনকারী হাজার হাজার সৈনিক ছিল দেশেরই সন্তান। তারা দেশের শত্রু ছিল না। জাতির জনক হিসেবে তাদের প্রতি অনুদার ছিলেন না বঙ্গবন্ধু। তাছাড়া সে মুহুর্তে সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলার জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজনও ছিল। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ সৈনিকদের সেনাবাহিনীতে গ্রহণ করাই বঙ্গবন্ধু যুক্তিসংগত মনে করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তখন ত্রিশ-চল্লিশ জন মাত্র কর্মকর্তা। আর প্রত্যাবর্তনকারী কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল প্রায় তেরো শত। বঙ্গবন্ধু সেদিন অত্যন্ত সততার সঙ্গে সকল অফিসার ও জওয়ানদের নিয়ে অর্ধ লক্ষের অধিক সদস্যের সেনাবাহিনী গড়ে তুললেন ।

বঙ্গবন্ধু সকলকে শুধু চাকরিতে পুনর্বাসনই করেননি, কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য নির্ধারণ করেছেন পদোন্নতির প্রণালী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ও পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেছেন। আজকের কর্মকর্তা ও সেনানায়কদের পদমর্যাদা লক্ষ্য করলেই এর সত্যতা মিলবে। বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। তিনি প্রত্যাবর্তনকারী কর্মকর্তা ও জওয়ানদের পাকিস্তানে বন্দি থাকাকালীন সময়ের জন্যও বেতন প্রদান করেন। সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র, খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ সংগ্রহের জন্যই শুধু বঙ্গবন্ধু ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, সেনা ছাউনির (ক্যান্টনমেন্ট) উন্নতি ও নতুন ছাউনি নির্মাণের পরিকল্পনাও গৃহীত হয় তখনই। পুরনো ছাউনিগুলোতে নতুন নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার সাথে নতুন ছাউনিও গড়ে ওঠে সারাদেশে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে 'দিঘনালা', 'রুমা, ‘আলিকদম'-এর মতো সামরিক গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ছাউনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই গড়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধুর সরকারই প্রথম সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর যারা নির্ভরশীল তাদের রেশন নিকটস্থ সেনা ছাউনি থেকে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পূর্বে যারা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে ছাউনিতে অবস্থান করতেন তারাই শুধু এ সুযোগ লাভ করতেন।

জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন ছিল বঙ্গবন্ধুর একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফল। অথচ এ নিয়েও এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচারের ঘোলাজলে মাছ শিকারে নেমেছিল। জাতীয় রক্ষীবাহিনী কোনোদিনই সামরিক বাহিনীর বিকল্প ছিল না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেরও প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠনের প্রয়োজন ছিল দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের স্বার্থে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির মধ্যেই বাঙালির সামরিক স্বার্থের কথা উল্লেখ করেছেন। স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে জনগণের কল্যাণের জন্যই বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনী ও জনসাধারণের সহায়ক শক্তিরূপে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করেন—যার সদস্যসংখ্যা ছিল সেনাবাহিনীর মাত্র ৬ ভাগের ১ ভাগ। মুক্তিযোদ্ধাদের ফেরত দেওয়া অস্ত্রেই শুধু তারা সজ্জিত ছিল। কোনো ব্যাটালিয়নেই ৬ থেকে ৮টির বেশি হালকা মেশিনগান ছাড়া ভারী অস্ত্র ছিল না। প্রশাসনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সর্বোপরি সদ্য স্বাধীন দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বাহিনী গঠনের যৌক্তিকতা সারা বিশ্বে বিদ্যমান। সেভাবেই বঙ্গবন্ধুও গঠন করেছিলেন জাতীয় রক্ষীবাহিনী।

বঙ্গবন্ধু সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনী গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ের মধ্যে, যখন দেশ স্বাধীনতার ধকল সামলে উঠতেই হিমসিম খাচ্ছিল। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজই ছিল তখন জরুরি। তার মধ্যেও সেনাবাহিনীর কল্যাণ কার্যক্রম ব্যাহত হতে দেননি বঙ্গবন্ধু, অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়েছেন।

এদেশের সেনাবাহিনী তাই গড়ে উঠেছে জনসাধারণের স্বার্থত্যাগের বিনিময়ে, বঙ্গবন্ধুর গর্ব ও গৌরবের প্রতীক হিসেবে। সে সেনাবাহিনী নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে এ কথা কল্পনা করাও ছিল কঠিন। অথচ বাস্তব কি নির্মম, সত্য কি কঠিন, যা কোনোদিন কেউ কল্পনা করে নাই তা-ই সত্য হয়েছে বাংলাদেশে।

জনগণের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রে কিছু বিপথগামী উচ্চাভিলাষী অফিসারের হাতে প্রাণ দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং এ কুচক্রীরা জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে তাঁর অনুসৃত কর্মসূচিকে বানচাল করে বাংলাদেশে প্রগতির ধারা পাল্টে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। একের পর এক নিজেদের ক্ষমতারোহণ, রাজনীতি, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, দুর্নীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে অভ্যুত্থানকারীরা তাদের স্থায়ী বাহনে পরিণত করে চলেছে। এমনকি ক্ষমতালোভীরা সেনাবাহিনীর নামে হুমকি দিচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে। সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করে তাদের বার বার যুক্ত করা হচ্ছে সুবিধাবাদী সমাজবিরোধী ও অসৎ চরিত্রের ক্ষমতাশ্রয়ী সংগঠনের সাথে।

ক্ষমতাসীনরা উসকে দিচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠনে কলহ বিভেদ। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে ঠেলে দিয়ে নেতাকর্মীদের চরিত্রহননের অশুভ প্রক্রিয়ার সূচনাও করেছে দেশে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতার লোভে অভ্যুত্থানকারী ও তাদের দোসররা সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে জনগণের প্রতিপক্ষরূপে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এদেশে সূচনা করা হয়েছে হত্যার রাজনীতি। অন্যায়ভাবে অস্ত্র শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিতে আগত দুশ্চরিত্র কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক অশুভ প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের ধারাও এক্ষেত্রে অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতার লড়াইয়ে এক একটি সামরিক অভ্যুত্থানে যেমনি প্রাণ দিতে হয়েছে বীর সৈনিকদের তেমনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে গত এক দশকে শহীদ হয়েছে বহু ছাত্র-জননেতৃবৃন্দ।

গত দশ বছরে দেশের অবস্থাও হয়েছে আরও সঙ্কটাপন্ন। সামরিক শাসন বলবৎ থাকা সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে যেমনি অস্থির করে তুলেছে তেমনি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু-কিশোর হত্যা, খুন, ডাকাতি, ব্যাংকের টাকা লুট, ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি, সরকারি অর্থ অপব্যয় বেড়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর জাতীয়করণ, ভূমি সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সর্বজনীন শিক্ষার কর্মসূচি বিসর্জন দিয়ে আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য। ক্ষমতাসীনরা সামরিক বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে নির্যাতনের মুখে।

অথচ বঙ্গবন্ধুর কত গর্বই না ছিল সেনাবাহিনী নিয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ছিল তাঁর স্বপ্নের বাস্তব রূপ। কুমিল্লার সামরিক একাডেমীতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি পূর্ণ সুযোগ পেলে আমাদের ছেলেরা যে কোনো দেশের যে কোনো সৈনিকদের সাথে মোকাবিলা করতে পারবে, তাদের সে শক্তি আছে।” তিনি সেদিন তাদের প্রতি শৃঙ্খলা ও জনসাধারণের প্রতি দায়িত্ব ও মমত্ববোধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তব কি নির্মম! জাতির জনকের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত তাঁরই প্রিয় সেনাবাহিনী। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সমগ্র সেনাবাহিনী এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। অথচ ১৫ আগস্টের হত্যার দায়িত্বের বোঝা তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ক্ষমতাসীনচক্র খুনীদের বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরষ্কৃত করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার আজও হয়নি বলেই হত্যার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাঁধে চেপে আছে। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার কারণেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার বাঞ্ছনীয় ছিল। আসলে ক্ষমতাসীনরা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের কারণেই খুনীদের বিচার করতে চায় না।

সেনাবাহিনীর ওপর এ দায়িত্ব চাপিয়ে রাখতে চায়। এসব ক্ষমতালোভী সেনানায়করা কথার চমক দিয়ে সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশীদারিত্বের প্রশ্ন তুলেছে এ বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য। সংবিধানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। দেশরক্ষা, দেশের উন্নয়ন, দুর্যোগকালে সহায়তা –এ সকল ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে। সঙ্গীন নয়, সহৃদয়তাই স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে জনগণের সম্পর্কের মাপকাঠি। অথচ উচ্চাভিলাষীরা সমঝোতা ও ভ্রাতৃত্বের সাংবিধানিক সেতু ভেঙে জনগণ ও সৈনিকদের মধ্যে প্রতিপক্ষ চেতনার স্থায়ী সংঘর্ষ বাধিয়ে ক্ষমতা ভোগ করতে চায়। ১৫ আগস্টের পর যেমনি জনগণ হারিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার, দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে সঙ্কট — ঠিক তেমনি সেনাবাহিনীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাদের করে তোলা হয়েছে বিতর্কিত। এ অবস্থা দেশের জন্য কিছুতেই কল্যাণকর হবে না। ধুরন্ধর ক্ষমতালোভীরা সৈনিক ও জনতার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে সেনাবাহিনী ও জনগণের ওপর কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব চালিয়ে যাচ্ছে গত দশ বছর ধরে।

সেনাবাহিনী জনগণের পবিত্র আমানত। তারা দেশ রক্ষা করবে, দেশ শাসন করা তাদের দায়িত্ব নয়। আমি স্পষ্টই মনে করি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ সৈনিকের নৈতিক উন্নতি ব্যাহত করে ও দেশবাসীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে আজ দেশে সামরিক শাসন স্থায়ী করার যে কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে তাতে সর্বনাশের পথই সুগম হবে। ক্ষমতার স্বার্থে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। একাজ কারও জন্যই শুভ নয়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার অত্যন্ত কষ্টকর সময়ে দেশবাসীর অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে এ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছেন এবং তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সংগ্রাম সামরিক শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র অর্জনের সপক্ষে। সামরিক ও বেসামরিক যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী আজ ব্যক্তিস্বার্থে জাতীয় সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সংগঠন আওয়ামী লীগ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ সহযোদ্ধা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকই ক্ষুণ্ণ হতে দিতে চায় না; বঙ্গবন্ধুর এ প্রিয় সেনাবাহিনী তাঁর আদর্শের পথ থেকে বিচ্যুত হবে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আমারও তা কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে এদেশে সেনাবাহিনী তার যোগ্য মর্যাদা পাবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর সাথে আমারও রয়েছে। সেনাবাহিনী জাতির প্রতিবন্ধক নয়; ক্ষমতালোভীদের উচ্চাভিলাষই হচ্ছে সকল প্রতিবন্ধকতার উৎস। বঙ্গবন্ধু তাঁর সৈনিকদের বলেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে যেন পাকিস্তানি মনোভাব না আসে। .... তোমরা হবে আমাদের জনগণের বাহিনী। ... তোমরা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবে। যেখানে অন্যায়-অবিচার দেখবে, সেখানে চরম আঘাত হানবে।” বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অসৎ উদ্দেশ্যে যারা ক্ষমতার উচ্চাশায় উন্মাদ হয়ে সামরিক শাসনের চক্রান্তে জনগণের গণতান্ত্রিক ক্ষমতাকে বন্দি করেছে, তাদের হাত থেকে ক্ষমতা উদ্ধার বঙ্গবন্ধুর তিল তিল শ্রমে গড়া সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন সমুন্নত থাকবে এ প্রত্যাশা আমারও রয়েছে ।

রচনাকাল : আগস্ট ১৯৮৩, প্রকাশিত : আমি তোমাদেরই লোক (সংকলন)

[সূত্র : শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১, পৃষ্ঠা : ৩৩-৪০]


বঙ্গবন্ধু   সেনাবাহিনী   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শনিবার থেকে ট্রেনের নতুন ভাড়া, কোন রুটে কত

প্রকাশ: ০৭:০৭ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত আগামীকাল শনিবার (৪ মে) থেকে কার্যকর হচ্ছে। ফলে প্রায় সব রুটের ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে।

সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন তালিকা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হবে ৭৭৭ টাকা।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ১৫০ ও ২৮৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ১৬০ ও ৩০৫ টাকা।

ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩৪০ ও ৬৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৪০৫ ও ৭৭১ টাকা।

ঢাকা-নোয়াখালী রুটে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৭৫ ও ৫২৪ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩১০ ও ৫৯৩ টাকা।

ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩২০ ও ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩৭৫ ও ৭১৯ টাকা।

ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২০ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭২ টাকা।

ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০০ ও ৯৫৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২৫ ও ১১৯৬ টাকা।

ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-রংপুর রুটে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪২৫ ও ৮১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৫১২ ও ৯৭৫ টাকা।

ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫১০ ও ৯৭২ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৪৫ ও ১২৩৭ টাকা।

ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৯৫ ও ৯৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২০ ও ১১৮৫ টাকা।

ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৮০ ও ৯২০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬০০ ও ১১৫০ টাকা।

ঢাকা-ভূঞাপুর রুটে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৬০ ও ৪৯৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৯৫ ও ৫৭০ টাকা।

ঢাকা-দেওয়াগঞ্জ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২৫ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭৬ টাকা।

এ ছাড়া শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার বাদে সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে এসি সিট ও বার্থ এবং প্রথম শ্রেণির সিট ও বার্থ আসনের ভাড়াও আনুপাতিক হারে বেড়েছে।

এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে প্রদত্ত রেয়াত প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করা হবে।

ট্রেন   বাংলাদেশ রেলওয়ে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ইলিশের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেল বিজ্ঞানীরা

প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের অন্ত্রের অণুজীবসমূহের গঠন ও বৈচিত্র্য উদঘাটন করে এক অনন্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধ্যান পেয়েছেন গবেষকরা। সর্বদা রোগমুক্ত মাছ হিসেবে ইলিশের যে গৌরব রয়েছে, যার প্রকৃত রহস্য এই উপকারি ব্যাকটেরিয়া-মনে করেন গবেষকরা।

বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই) এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের ইলিশের অন্ত্রে অনন্য এই প্রোবায়োটিকের সন্ধান পান গবেষকরা। মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ মাছের অন্ত্রে এই নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়।

গবেষকদের দাবি, উপকারী এই প্রোবায়োটিক বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহার করা গেলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বর্তমানে মৎস্যচাষে মাছ রোগমুক্ত রাখতে বিপুল পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, যা মাছকে রোগমুক্ত রাখলেও জলজ বাস্তুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি করে। এ ধরনের উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার জলজ প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে মৎস্য চাষে নতুন বিপ্লব আনতে পারে।

গবেষকরা জানান, সমুদ্র থেকে নদীতে বিচরণকারী ইলিশ মাছ কখনো রোগাক্রান্ত হয়েছে, এমন কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন নেই। সুতরাং অত্যাধুনিক মেটাজিনোমিক্স দ্বারা আবিষ্কৃত অনন্য নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিায়ার শনাক্তকরণ, ইলিশের রোগপ্রতিরোধিতা এবং অন্যান্য অনন্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিজ্ঞানীদল মনে করে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে প্রোবায়োটিক হিসেবে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহারে সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।

গবেষণাদলের প্রধান বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই)’র অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এই গবেষণায় শনাক্তকৃত ব্যাকটেরিয়াসমূহের মধ্যে ল্যাকটোকক্কাস, মরগানেলা, এন্টেরোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, শিওয়েনেলা, পেডিওকক্কাস, লিওকোনস্টক, স্যাক্কারোপোরা এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস উল্লেখযোগ্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হিসেবে তাৎপর্য বহন করে। এই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলি বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক এবং নদীর বাস্তুতন্ত্রে বিচরণকারী ইলিশের অনন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাদ ও ফিটনেসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত ড. এম. নাজমুল হক বলেন, এই গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার (সাইনোবাকা, সায়েনোকক্কাস, গেমাটা সেরেনিকক্কাস, স্যাক্কারোপলিস্পোরা এবং পলিনেলা) শনাক্তকরণ যা পূর্বে কোনো মিঠাপানি বা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিতে রিপোর্ট করা হয়নি। সমষ্টিগতভাবে, এই গবেষণায় রিপোর্ট করা ইলিশ মাছের ব্যাকটেরিয়োম এবং শ্রেণিবিন্যাস পর্যবেক্ষণের বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আরও ব্যাপক গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে।

গবেষণা প্রবন্ধটি উচ্চ ইমপ্যাক্ট বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাময়িকী প্লস ওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং এদের আপেক্ষিক সংখ্যা নির্ণয় করেন। তারা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আবাসস্থল যথাক্রমে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহীতে বসবাসকারী ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার কৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলি এবং স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করে ইলিশের অন্ত্রে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান।

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এ দেশের একটি ভৌগোলিক নির্দেশক (এও) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এটি একটি আইকনিক ফ্ল্যাগশিপ প্রজাতি হিসেবে বিখ্যাত। স্বতন্ত্র্য এবং ব্যতিক্রমী স্বাদের কারণে ইলিশ মাছের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মূল্য এবং দেশ ও বিশ্বব্যাপী এর সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক আন্তঃসীমান্ত প্রজাতি হিসেবে পরিচিত।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও, ইলিশ অপরিসীম আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। ইলিশ মাছের মোট বার্ষিক মূল্য ১৪, ৯৫০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১.১৫ শতাংশেরও বেশি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ৪ মিলিয়ন মানুষের জীবিকার উৎস এই ইলিশ মাছ। এর বাইরে আনুমানিক ২.৫ মিলিয়ন ব্যক্তির বিস্তৃত ভেলুচেইনের সঙ্গে জড়িত। এই অতি চাহিদাসম্পন্ন এবং দামি মাছটি বাংলাদেশের সামগ্রিক মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রাখে।

ইলিশ   উপকারী ব্যাকটেরিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সন্তানদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় চান আমলারা

প্রকাশ: ০৩:৫৬ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চান আমলারা। একই সঙ্গে দেশে অবস্থিত সরকারি এবং এমপিওভুক্ত কলেজে ব্যাপকভাবে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুকরণ বন্ধ করে বিদ্যমান অনার্স ও মাস্টার্স লেভেলে প্রতি বছর নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিবসে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মুক্ত আলোচনায় এই প্রস্তাব দেন কর্মকর্তারা। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্য মাস্টার্স এবং উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আলাদা সিভিল সার্ভিস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

জেলা প্রশাসক সম্মেলন   প্রধানমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জে বয়লার বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, আহত ২

প্রকাশ: ০৩:৫৫ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে একটি চালকলে ধান সিদ্ধ করার সময় বয়লার বিস্ফোরণে এক শ্রমিকে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুই শ্রমিক। শুক্রবার (৩ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মেসার্স আজাহার চালকলে এ ঘটনা ঘটে। 

 

নিহত ফজল আলী (২৬) উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার রবিয়াল হোসেনের ছেলে।

 

আহত শ্রমিকরা হলেন, উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মৃত পলান শেখের ছেলে জহুরুল শেখ (২৬) এবং কর্ণসূতি পশ্চিম পাড়ার মৃত সুরুত মন্ডলের ছেলে জিন্নাহ মন্ডল (৩০) ।

 

আহত শ্রমিক জহুরুল শেখ জানান, ‘ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এতে আমি সহ ফজল ও জিন্নাহ আহত হই। আমি আর জিন্নাহ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে চলে এসেছি আর ফজলের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।’ 

 

জহুরুল আরও জানান, ‘আমি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই চালকলে কাজ করছি। এর মধ্যে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হলেও বয়লার পরিবর্তন করা হয়নি।'

 

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত ফজলের ভাই আসলাম হোসেন জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে বয়লার বিস্ফোরণে ফজল গুরুতর আহত হয়। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'

 

মেসার্স আজাহার চালকলের স্বত্বাধিকারী আজাহার আলী রাজা দাবি করেন, ‘গত ছয় মাস আগে বয়লার ও কয়েক দিন আগে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হয়েছে। বয়লার কেন বিস্ফোরণ হলো বুঝতে পারছি না।’ 

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমনুল হক জানান, ‘বয়লার বিস্ফোরণে আহত তিন জন শ্রমিককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। দুই জনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়ে। এদের মধ্যে ফজল নামে একজন শ্রমিকের মুখের অনেকাংশ থেঁতলে গেছে।’

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।'


বয়লার বিষ্ফোরন   চালকল   শ্রমিক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: স্টেশন মাস্টারসহ বরখাস্ত ৩, তদন্তে ২ কমিটি

প্রকাশ: ০৩:১৪ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

গাজীপুরের জয়দেবপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার (০৩ মে) গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

আরও পড়ুন: গাজীপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত বহু

আরও পড়ুন: দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: উদ্ধারে যোগ দিয়েছে বিজিবি

এদিকে ঘটনার পর থেকে জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে অন্তত ৬টি ট্রেন।

জয়দেবপুরের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী মিয়া বলেন, ‘আজ পৌনে ১১টার দিকে টাঙ্গাইল কমিউটার ও তেলবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। রেললাইনের পয়েন্টের ভুলের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনটিতে যাত্রী কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। কমিউটার ট্রেনের লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ’।

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার হাশেম ও পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম হোসেনসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধারের জন্য ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এরই মধ্যে রেলের সব বগি তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভেতরে কেউ আটকা নেই। ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, জয়দেবপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এরআগে, শুক্রবার (০৩ মে) বেলা ১১টার দিকে জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগনালে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে একটি তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

তিনি জানান, রেল দুর্ঘটনায় দুই ট্রেনের চালক ও সহকারীরা আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রেল দুর্ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে কমলাপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়েছেন ৪-৫টি ট্রেনের যাত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে এসে গাজীপুর হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগনালে পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তবে টাঙ্গাইল কমিউটারে খুব বেশি যাত্রী ছিল না।

একজন উদ্ধারকর্মী জানান, শুক্রবার টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনে থামে। আজ বন্ধ থাকায় এটির থ্রোপাস করার কথা। আর অপরদিকে ঢাকা থেকে আসা তেলবাহী ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়ানো ছিল। এখানে আপলাইন ও ডাউনলাইন আছে, কিন্তু কী কারণে ট্রেন দুটি মুখোমুখি হল সে বিষয়ে তদন্তের পর জানা যাবে।

আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

এর আগে, গতকাল রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করে। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি সকালে ২ নম্বর রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোতে ঢোকার সময় লাইনচ্যুত হয়। তখন এ রুটে সব রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন সাড়ে ১০টার দিকে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করে। বর্তমানে রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা রুটে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।

এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ২ নম্বর রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোতে ঢোকার সময় মালবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে মেইন লাইন ব্লক হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

খবর পেয়ে তিন ঘণ্টা পর ট্রেনটি উদ্ধার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজবাড়ীর সঙ্গে স্বাভাবিক হয়েছে ট্রেন চলাচল।


দুই ট্রেন সংঘর্ষ   স্টেশন মাস্টার   তদন্তে কমিটি  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন