নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৫ পিএম, ১৩ মার্চ, ২০১৮
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মৃতদেহ শনাক্ত করতে এবং আহতদের দেখতে বাংলাদেশ থেকে স্বজনরা নেপালে পৌঁছেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্বজনরা না দেখতে পারছে লাশ, না দেখতে পারছে জীবিতদের। সেখানে এখন দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারটা সবাইকে আরও বেশি হতাশ করছে।
স্বজনরা যারা মৃত অথবা হসপিটালে ভর্তি। তাদের স্বজনদের একটি ফর্ম ধরিয়ে দিয়েছে নেপালের হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। যে প্রক্রিয়ায় তারা যেতে বলছেন সেই প্রক্রিয়ায় আরও পাঁচ সাতদিন সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পরে তড়িৎ যে ব্যবস্থা, তেমন কোনো নজিরই স্বজনরা দেখতে পাচ্ছেন না। বিদেশের মাটিতে গিয়ে এই দীর্ঘ সময়, নিজেদের থাকা বা মানসিক অবস্থা কী কারও আছে? নিহতদের মরদেহ কাঠমান্ডু টিচিং হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মরদেহগুলো আগুনে পুড়ে বীভৎস হয়ে গেছে। এগুলো চোখে দেখে শনাক্ত সম্ভব নয়। মরদেহগুলো দেখে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এ আশঙ্কায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
স্বজনরা নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস সঙ্গে দেখা করেছেন। আহবান জানিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব প্রিয় মানুষটিকে যেন দেখতে পায়।
নেপালে প্রায় ত্রিশ জনের মত সাংবাদিকও পৌছেছেন। তারাও লাশ কিংবা জীবীতদের দেখতে পারেননি। সূত্র জানিয়েছে, সেদেশের সরকার এসব হসপিটাল কড়াকড়িভাবে পাহাড়া দিচ্ছে। বিমানমন্ত্রীও গিয়েছেন, তার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম রয়েছে। তারাও এখন পর্যন্ত হসপিটালে যেতে পারেননি।
আজ সকালে স্বজনরা নেপালে পৌছেছেন। সেখানে অবস্থানরত এক স্বজন বলেন, ‘এটা খুব দু:খের কথা তারা লাশ দেখতেই দিচ্ছে না। লম্বা প্রসিডিউরের কথা বলছে। অ্যম্বাসি ট্রাই করতেছে কীভাবে দেখানো যায়। আমরাও চাচ্ছি যেন একবার হলেও দেখতে পারি। তারপর প্রসিডিউর অনুযায়ী যা করার করবো। ’
অন্য এক স্বজন বলেন,‘ বাড়ি থেকে বারবার জানতে চাচ্ছে কী হয়েছে? জীবিত নাকি মৃত? ইউএস বাংলা বলছে আমার আত্নীয় জীবিত। কিন্তু আমি না দেখা পর্যন্ত কীভাবে বিশ্বাস করি! একবার হলেও যেন আমাদের স্বজনদের মুখটা দেখতে দেয়। এ নিয়ে কেন এত গড়িমসি। জীবনমৃত্যুর এ সময় আমরা কেন পাশে থাকতে পারবো না’।
এদিকে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্টদূত মারফত জানা যায়, পাইলট, ক্রুসহ বাংলাদেশি ৩৬ জনের মধ্যে ২৬ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নেপালে যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করছে ইউএস-বাংলা। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্যাসেঞ্জারদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ৪৬ জনকে সকালে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ওই বিমানে চার কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ
মন্তব্য করুন
ফরিদপুরের সালথায় তীব্র দাবদাহে ৩ শিক্ষক ও ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ
হয়ে পড়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের
রামকান্তুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ও সালথা থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেন।
অসুস্থদের মধ্যে রয়েছেন রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে স্কুল বন্ধ ছিল। প্রধান
শিক্ষকও মাতৃত্বকালিন ছুটিতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর গতকাল রোববার স্কুল খোলা হয়। সকালে
স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুম ও মাঠে জমে থাকা
ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, কিছু সময় কাজ করার পর তীব্র গরমে আমরা সবাই পানির
পিপাসায় ভুগছিলাম। তখন সবারই গলা শুকিয়ে আসছিল। পরে স্কুলের টিউবওয়েল চেপে ঠান্ডা পানি
বের করে তা পান করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একে একে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বমি করতে থাকে
এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় এক যুবক এসে আমাকে বলেন, স্যার ওই টিউবওয়েলের পানি
খেয়েন না, পানিতে বিষ মেশানো হয়েছে। পরে অসুস্থদের দ্রুত সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নেওয়া হয়। সেখানে সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রানিতা নামে এক শিশুর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে
শিক্ষক সুকলা রানী শীল, রেবেকা বেগম, রবিউল ইসলাম, শিক্ষার্থী সাদিহা, নাহিদ ও তৌকিয়ার
নাম পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল
মমিন বলেন, ‘টিউবওয়েলের পানিতে কোনো ধরনের বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা
করা হচ্ছে, ওই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে দুজনের
চিকিৎসা এখনো চলছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সবাই শঙ্কামুক্ত’।
সালথা থানার ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রথমে খবর পেয়েছিলাম
টিউবওয়েলের পানি খেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে এসে ডাক্তারের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি জানিয়েছেন টিউবওয়েলের পানিতে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ পাননি’।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী
জানান, রোববার স্কুল খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে এসে টিউবওয়েলের পানি
খেয়ে অসুস্থ পরলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সবাই মোটামুটি সুস্থ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তারা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত
পাননি। গরমের কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিউবওয়েলের পানি আমরা পরীক্ষা করে দেখব।
একইসঙ্গে আগামীকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরাপদ পানি খেতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন