তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে পাচারের তথ্য উদঘাটন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
একইসঙ্গে পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শনাক্তও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এমডিএস ফ্যাশন, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড, স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) শুল্ক গোয়েন্দার যুগ্ম পরিচালক শাসমুল আরেফিন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পরিক যোগসাজশে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। ইএক্সপির কার্যকারিতা না থাকায় বৈধ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থাৎ মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শাসমুল আরেফিন আরও বলেন, এর আগেও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একই পন্থায় ৩৭৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উৎঘাটন করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৬৭৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উদঘাটন করলো শুল্ক গোয়েন্দা।
শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যচালান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত হচ্ছে না এমন একটি অভিযোগ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর তদন্ত অধিদপ্তরের কাছে ছিল। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেম (ইএক্সপি) ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে। যার বিপরীতে কোনো অর্থ দেশে ফিরে আসেনি বা সমুদয় রপ্তানি মূল্য বাবদ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।
তদন্তকালে ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১ হাজার ২৩৪টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ১ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন যার বিপরীতে ফেরতযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানসমূহ টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট, প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বিল অব এক্সপোর্টের কোড ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। ১০ প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপি তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি এবং সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ওই ব্যাংকে লিয়েন করা নয়।
প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড
সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড ২০১৯ সালে ৩৮৩টি ও ২০২০ সালে ৮টিসহ ৩৯১টি রপ্তানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছ। রপ্তানি করা পণ্যচালানগুলোতে ৩ হাজার ৮০ মেটন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬৯৯ মার্কিন ডলার বা ৯২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫ টাকা প্রায়। প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের কোম্পানি এমএজে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, অ্যান্ডজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জেজে অ্যাসোসিয়েট ও এক্সপ্রেস ফরোয়ার্ডারস।
ফ্যাশন ট্রেড
রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৭৩টি, ২০১৯ সালে ১১৬ ও ২০১৮ সালে ৫৭টিসহ ২৪৯ রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। রপ্তানি করা পণ্যচালানগুলোতে ১ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফলিপাইন, নাইজরেমি, সঙ্গিাপুর, অস্ট্রলেয়িা, থাইল্যান্ড, সুদান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৮০ লাখ ৫১ হাজার ৬৪০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৬ টাকা। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্টের নাম এমজে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল এবং এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
এম ডি এস ফ্যাশন
ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত এমডিএস ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১৮২টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে প্রমাণ পাওয়া গেছে। রপ্তানি করা পণ্যচালানগুলোতে ১ হাজার ৩৭৬ মে. টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও ফিলিপাইন রপ্তানি কথা বলেছে। যার মূল্য প্রায় ৫১ লাখ ৮২ হাজার ৫৮৬ মার্কিন ডলার বা ৪৪ কোটি ১ হাজার ৫৫১ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো চট্টগ্রামের এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও পান বেঙ্গল এজেন্সি।
হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড
গাজীপুরের টঙ্গিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১৫৬টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে। তার ১ হাজার ৯৬১ টন টি-শাট রপ্তানি করা কথা বলেছে। অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েজ, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬ মার্কিন ডলার বা ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ টাকা পাচার করেছে বলে প্রমাণ পাওযা গেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি, পরাগ এসএমএস লিমিটেড, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল ও একে ইন্টারন্যাশনাল।
থ্রি-স্টার ট্রেডিং
ঢাকার বনানীতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালে ১২০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। রপ্তানি করা পণ্যচালানগুলোতে ৮১৬ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করে। মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, কানাডা, মিসর প্রভৃতি দেশে রপ্তানির নামে ৩০ লাখ ৫৩ হাজার ১০৮ মার্কিন ডলার বা ২৫ কেটি ৯২ লাক ৮ হাজার ৮৬৯ টাকা। রপ্তানি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি, আর এস সি অ্যান্ড এফ লিমিটেড, ও এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
ফরচুন ফ্যাশন
ঢাকার মিরপুরের ঠিকানার প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ এবং ২০১১ সালে ৫৯টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে। ৪৩৫ টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, মিশর, কানাডা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করে ১৫ লাখ ২৪ হাজার ৮১৩ মার্কিন ডলার বা ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬২৩ টাকা পাচার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল,এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও এম/এস এ. কে এন্টারপ্রাইজ।
অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড
রাজধানীর কচুক্ষেতের ঠিকানাধারী প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৪২টি রপ্তানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। পণ্যচালানগুলোতে ১৯৫ টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানির বিপরীতে প্রায় ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭০ মার্কিন ডলার বা ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা পাচার করেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো পান বেঙ্গল এজেন্সি, এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জে জে অ্যাসোসিয়েট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এন এইচ কর্পোরেশন।
পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড
গাজীপুরের টঙ্গিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ২০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে ১৭০ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইনস, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি দেখিয়ে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ২৮২ মার্কিন ডলার বা ৫ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৪১ টাকা পাচার করেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এন এইচ কর্পোরেশন।
স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড
রাজধানীর শাহবাগের ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১০টি রপ্তানি চালান জালিয়াতি করে ৬৬.৮ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করে। অধিকাংশ পণ্যচালান ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে রপ্তানির বিপরীতে প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৯ মার্কিন ডলার বা ২ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৯০২ টাকা পাচার করেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি ও কে আর এস সি অ্যান্ড এফ লিমিটেড।
ইডেন স্টাইল টেক্স
রাজধানীর খিলক্ষেতে ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালে ৮টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করেছে। ৪২ টন টি-শার্ট ওমান, জুনাই, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করে প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫ মার্কিন ডলার বা ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা পাচার করেছে। রপ্তানি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট হলো জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি ও কে আর এস সি এন্ড এফ লিমিটেড।
পোশাক রপ্তানি টাকা পাচার প্রতিষ্ঠান শনাক্ত
মন্তব্য করুন
দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা,
যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্ধ থাকবে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের
সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে সেসব প্রতিষ্ঠান চাইলে খোলা রাখতে পারবে। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত
জানানো হবে।
প্রভাতী শাখায় ক্লাস হওয়ায় প্রাথমিক স্কুল খোলা থাকবে বলে প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন
থাইল্যান্ডে ৬ দিনের সরকারি সফর শেষে আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) ব্যাংকক
থেকে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্র জানিয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সোমবার সকালে (স্থানীয় সময়) ব্যাংকক ত্যাগের কথা রয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি ঢাকায়
পৌঁছাবেন।’
প্রেস উইং থেকে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা
থাভিসিনের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক
উভয় সফরে ২৪ এপ্রিল বিকেলে ব্যাংককে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে ডন মুয়াং
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লালগালিচা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে তাকে গার্ড
অব অনার ও গান স্যালুট জানানো হয়।
শেখ হাসিনা এই সফরকে ‘প্রতিবেশী’ নীতির ওপর বৃহত্তর ফোকাসের অংশ
বলে বর্ণনা করেছেন, কারণ এটি দুদেশের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিকে আরও নবায়নের
চমৎকার সুযোগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ সফর দুদেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করার
ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
থাই প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এ সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশে অত্যন্ত
প্রয়োজনীয় প্রেরণা জোগাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি এ সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে
একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটি আমাদের দুদেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের একটি নতুন
যুগের সূচনা করেছে। আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আগামীতেও সম্পর্কের
নবায়নের এ গতিকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
সফর চলাকালীন (২৬ এপ্রিল) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই প্রধানমন্ত্রী
থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন,
যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
জোরদার করতে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি স্বাক্ষরিত হয়।
নথিগুলো হচ্ছে- একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), একটি
লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই), যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের
প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর হয়।
নথির মধ্যে অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য ভিসা ছাড়সংক্রান্ত
চুক্তি, জ্বালানি সহযোগিতা, শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে
সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)
নিয়ে আলোচনা সংক্রান্ত লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) রয়েছে।
শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি আনুষ্ঠানিক
মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেন। গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
থাই কুহ ফাহ ভবনের সামনের উন্মুক্ত স্থানে লালগালিচা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত
মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০ তম অধিবেশনে যোগ দেন। এ অধিবেশনে
দেওয়া ভাষণে তিনি সব বিশ্বনেতাকে যুদ্ধ, আক্রমণ এবং আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে
যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা এবং ইউএনএসক্যাপ সম্মেলনস্থলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুসিত প্রাসাদের অ্যামফোর্ন সাথার্ন থ্রোন হলে থাইল্যান্ডের রাজা ও রানি মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরা-ক্লাওচা-উয়ুয়া এবং রানি সুথিদা বজ্রসুধা-বিমলা-লক্ষণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
মন্তব্য করুন
ফরিদপুরের সালথায় তীব্র দাবদাহে ৩ শিক্ষক ও ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ
হয়ে পড়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের
রামকান্তুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ও সালথা থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেন।
অসুস্থদের মধ্যে রয়েছেন রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে স্কুল বন্ধ ছিল। প্রধান
শিক্ষকও মাতৃত্বকালিন ছুটিতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর গতকাল রোববার স্কুল খোলা হয়। সকালে
স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুম ও মাঠে জমে থাকা
ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, কিছু সময় কাজ করার পর তীব্র গরমে আমরা সবাই পানির
পিপাসায় ভুগছিলাম। তখন সবারই গলা শুকিয়ে আসছিল। পরে স্কুলের টিউবওয়েল চেপে ঠান্ডা পানি
বের করে তা পান করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একে একে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বমি করতে থাকে
এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় এক যুবক এসে আমাকে বলেন, স্যার ওই টিউবওয়েলের পানি
খেয়েন না, পানিতে বিষ মেশানো হয়েছে। পরে অসুস্থদের দ্রুত সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নেওয়া হয়। সেখানে সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রানিতা নামে এক শিশুর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে
শিক্ষক সুকলা রানী শীল, রেবেকা বেগম, রবিউল ইসলাম, শিক্ষার্থী সাদিহা, নাহিদ ও তৌকিয়ার
নাম পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল
মমিন বলেন, ‘টিউবওয়েলের পানিতে কোনো ধরনের বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা
করা হচ্ছে, ওই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে দুজনের
চিকিৎসা এখনো চলছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সবাই শঙ্কামুক্ত’।
সালথা থানার ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রথমে খবর পেয়েছিলাম
টিউবওয়েলের পানি খেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে এসে ডাক্তারের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি জানিয়েছেন টিউবওয়েলের পানিতে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ পাননি’।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী
জানান, রোববার স্কুল খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে এসে টিউবওয়েলের পানি
খেয়ে অসুস্থ পরলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সবাই মোটামুটি সুস্থ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তারা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত
পাননি। গরমের কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিউবওয়েলের পানি আমরা পরীক্ষা করে দেখব।
একইসঙ্গে আগামীকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরাপদ পানি খেতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন