সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের উজ্জ্বল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা রাষ্টনায়ক শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসে ‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১’ থেকে ষষ্ঠ পর্বে পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম (পর্ব -৬)
- শেখ হাসিনা
একটি পরিবারের কথা এখানে আমি তুলে ধরছি।
ল্যান্স নায়েক লুৎফর (তাঁর সন্তানদের নিরাপত্তার কারণে ঠিকানা বলব না কারণ এখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায়, পরিবারের ক্ষতি হতে পারে) বেঁচে থাকতে তাঁর ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শুরু করেছিল কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর সে সুযোগ তারা হারায়। অসহায় ছেলেটা গ্রামে কামলার কাজ করে আর গ্রামের আত্মীয়-স্বজন মিলে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের একজন ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান কিছু গমের বরাদ্দ করেছেন যা দিয়ে কোনোমতে তাদের চলে। এ তো একটা পরিবার। এরকম হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জে. জিয়ার হাতে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর যে সমস্ত জোয়ানকে তিনি হত্যা করেছেন, সেসব পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র সেনাবাহিনীতে হত্যালীলা চালায় নাই, রাজনীতিকেও কলুষিত করেছে। শিক্ষাঙ্গনেও অস্ত্রের অবাধ প্রবেশ ঘটিয়ে ছাত্র রাজনীতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করেছে। ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছে। মেধাসম্পন্ন ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মেধাবী-প্রতিভাদীপ্ত তারুণ্যের চরিত্রহানি ঘটিয়েছেন।
জে. জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কিন্তু অন্যান্য সেক্টর কমান্ডাররা যেভাবে যুদ্ধ করেছেন জিয়া তা করেন নি, বরং তার কর্মতৎপরতায় বিরক্ত হয়ে জে. ওসমানী বাধ্য হয়ে তাকে তিনবার সাসপেন্ড করেন ও গ্রেফতার করবার হুমকি দেন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার যে সম্পর্ক ছিল তা প্রমাণিত হয় পরবর্তী দিনগুলোতে তার কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে। যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার নিম্নলিখিত আইন জারি করেছিলেন:
• ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ দালাল আইন জারি করা হয় P.o No. VIII of 1992
• ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্ব স্ব জেলা কোর্টে যুদ্ধাপরাধীদের হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছিল।
• ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন জারি করা হয়। P.o No. 149 of 1992.
• ১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে গোলাম আযম গংদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়।
• ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৩ ৩৮ অনুচ্ছেদ মোতাবেক ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা রহিত করা হয় এবং
• ৬৬ ৩ ১২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দালালদের ভোটাধিকার ও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার বাতিল করা হয়।।
কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের বিশেষ করে যারা গণহত্যা ও অগ্নি সংযোগ, নারী ধর্ষণ ও লুটতরাজ করেছে সেই সব অপরাধীদের ক্ষমা করেন নি, এই আইনগুলো তাদের শাস্তি দানের জন্য করা হয়েছিল এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
• ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা এই আইনগুলো তুলে নেয়।
• ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে Ordinance No. 63 of 1975 এর মাধ্যমে।
• এর পরে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর Second Proclamation Order No. 3 of 1975 এর প্রথম তফসিল থেকে বাংলাদেশ দালাল আইনের যে সেফগার্ড ছিল তা তুলে দেওয়া হয়।
• ১৯৭৬ সালের Second Proclamation Order No. 3 of 1976 জারি করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করবার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাবলি তুলে দেওয়া হয়।
• Second Proclamation ঘোষণা জারি করে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
• Proclamation Order No. 1 of 1977 জারি করে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়।
• ১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি নাগরিকত্ব ফেরত পাবার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়।
• এবং Proclamation Order No. 1 of 1977 দ্বারা সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া হয়।
এসব কিছুই করা হয়েছিল কোনো সংসদের মাধ্যমে নয় বরং মার্শাল ল' অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজন করা হয়।
সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদটিতে ছিল, “জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারে কোনো সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারে ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্য কোনো সমিতি বা সংঘ গঠন বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোনো প্রকারে তাহার তৎপরতার অংশগ্রহণ করিবার অধিকার কোনো ব্যক্তির থাকিবে না।”
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৮ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, গোলাম আযমকে দেশে ফেরার অনুমতি প্রদান, সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া কাজ করা হয়।
মে ১৯৭৬ সালে অধ্যাদেশ জারি করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সঙ্গে তিনি বেঈমানি করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের জুন মাসে আরও একটি অধ্যাদেশ জারি করে, ১৯৭২ সালে জারিকৃত ‘বাংলাদেশ কোলাবরেটর্স আদেশ’ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) বাতিল করে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের মামলা তুলে নেন। এই দালালদের মন্ত্রীও করেন।
জে. জিয়াউর রহমান পরাজিত শক্তির দোসর পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। শহীদ পরিবারদের জন্য বঙ্গবন্ধু যে সমস্ত বাড়ি বরাদ্দ করেছিলেন— জবরদস্তিভাবে ঐসব বাড়ি থেকে কখনো পুলিশ দিয়ে, কখনো সেনাবাহিনী দিয়ে শহীদ পরিবারগুলোকে উৎখাত করা হয়। জে. এরশাদও ক্ষমতায় এসে এই কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখেন।
যে পবিত্র সংবিধান জনগণ ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দু'লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ফসল হিসেবে পেয়েছিল—যে লড়াই ছিল মার্শাল ল'র বিরুদ্ধে, মিলিটারি ডিক্টেটর আইয়ুব-ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে। দুর্ভাগা বাঙালি জাতির! আবার সেই মার্শাল ল' জারি হলো, আবার মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া ক্ষমতা দখল করল অবৈধভাবে। চতুর্থ সংশোধনীর বিরুদ্ধচারী যারা তারা মার্শাল ল'কে স্বাগত জানালো কোনো গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে—এ প্রশ্নটা আমার বার বার মনে জাগে।
চতুর্থ সংশোধনীকে যারা সমালোচনা করে তারাই আবার দেখি সামরিক সরকারকে সমর্থন করছে অথবা তাদের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। এই বেআইনি আইন দ্বারা দখলকৃত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে যে রাজনৈতিক দলটির সৃষ্টি করা হয় তার সদস্যপদ গ্রহণ করতেও এদের কোনো আপত্তি থাকে না। এরা ভুলে যায় যে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ পন্থায় দখলকারী ক্ষমতার অপব্যবহারের মধ্য দিয়েই এই রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি। সবচেয়ে হাস্যকর মনে হয় যখন দেখি এরাই আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। চরিত্রের এই বৈপরীত্য এরা কি উপলব্ধি করতে পারে?
ক্ষমতা দখলের জন্য মার্শাল ল' অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জে. জিয়া কতকগুলো আইন প্রণয়ন করেন। ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট সামরিক ফরমান জারি করা হয়। ঐ বছরই ৮ নভেম্বর আরও কতকগুলো ফরমান জারি করা হয় এবং জে. জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন। সে সময় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সায়েম। ২২ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে জে. জিয়া অস্ত্রের মাধ্যমে বিচারপতি সায়েমকে হটিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। এসবই তো সত্য, বাস্তব সত্য!
সেনা আইনের (আর্মি অ্যাক্ট বা রেগুলেশনস) ২৯২ এবং ২৯৩ বিধিতে বর্ণিত বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও এই বিধান রয়েছে যে, মিলিটারি ল' বা সেনা আইনের অধীন এমন কোনো ব্যক্তিই তার চাকরির মেয়াদ সম্পূর্ণ পরিসমাপ্তি না ঘটিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। জে. জিয়া সামরিক অফিসার ও সেনাপ্রধান হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। সামরিক ফরমান জারি করে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে ‘হ্যাঁ’- ‘না’ গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান বর্ণিত রীতিনীতি এবং সেনা আইন লঙ্ঘন করেন।
(সূত্র: শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১।। পৃষ্টা: ৯৩-৯৬)
বাংলাদেশ স্বৈরতন্ত্র জন্ম শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্লেটন মিল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার ডি হাসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডেভিড স্লেটন মিল। আর নতুন এই রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ মনোনয়নকে আমরা স্বাগত জানাই। মাস দেড়েক আগে এ বিষয়টা আমাদের জানানো হয়েছে। এখন তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। আশা করছি— নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে মানবাধিকার অনেক দেশের চেয়ে ভালো। বিশ্বের কোনো দেশেই মানবাধিকার আদর্শ অবস্থানে নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ যেভাবে দমন করছে, সেটি আমরা টিভির পর্দায় দেখছি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নাগরিক আন্দোলনকে কীভাবে পুলিশ দমন করছে, সেটিও আমরা দেখছি।
তিনি বলেন, সব দেশের উচিত মানবাধিকার উন্নয়নে একযোগে কাজ করা। আমরাও আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মানবাধিকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জুলাই থেকে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন কূটনীতিক মিল। মিনিস্টার কাউন্সেলর হিসেবে ১৯৯২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। এরপর ওয়াশিংটনের ফরেইন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট স্কুলের সহযোগী ডিন, ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ডেভিড মিল।
ডেভিড মিল বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মন্তব্য করুন
মন্ত্রী-এমপি ফেসবুক আইডি ভেরিফায়েড আইডি
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে পিটার ডি হাসের অধ্যায়। বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন এটি সিনেটের অনুমোদন হলে ডেভিড মিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে আবির্ভূত হবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিচ্ছেন পিটার ডি হাস। অর্থাৎ এটি সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ব্যাপারে যে মার্কিন নীতি অনুসরণ করছিল সেই নীতিতে পরিবর্তন আসছে। নিশ্চয়ই ডেভিড মিল একটি নতুন মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। আর এ কারণেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে নেওয়া হল পিটার ডি হাসকে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে মার্কিন নীতির কী পরিবর্তন করবেন, তার নীতি কী ধরনের হবে? একজন রাষ্ট্রদূতকে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয় তখন প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশে তাদের পররাষ্ট্রনীতির কৌশলপত্র চূড়ান্ত করে। আর ওই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য যাকে যোগ্য মনে করা হয় তাকে মনোনয়ন দেয়।
পিটার ডি হাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল এমন এক সময়ে যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি, বাংলাদেশের র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি সুস্পষ্ট চাপ দিচ্ছিল। এই চাপকে আরও বাড়ানোর জন্যই পিটার ডি হাস বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার দায়িত্ব পালনকালে সুস্পষ্টভাবে তিনি তার অবস্থান প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব দেখানোর লক্ষ্যেই নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিটার ডি হাস মিশন ব্যর্থ হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তাও দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পিটার ডি হাসের সরে যাওয়াটা ছিল অবধারিত। অবশেষে সেটাই ঘটল।
এখন ডেভিড মিল বাংলাদেশে কী করবেন? প্রথমত, ডেভিড মিলের কূটনৈতিক ক্যারিয়ার যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব যে, তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দেয়। একই সাথে বাংলাদেশে চীনকে মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন কৌশলেরও একটি ইঙ্গিত বহন করে। ডেভিড মিল বাংলাদেশে উপ-রাষ্ট্রদূত হিসাবে বা ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাজেই বাংলাদেশ তার পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের মানুষের মন মানসিকতা এবং বাংলাদেশে কীভাবে কাজ আদায় করতে হয় ইত্যাদি কলাকৌশল সম্পর্কে তাকে নতুন করে শিখতে হবে না। এটি ডেভিড মিলের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এটি বিবেচনা করেই সম্ভবত ডেভিড মিলকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, ডেভিড মিল এখন এই মুহূর্তে চীনের বেজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মার্কিন-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, ডেভিড মিল চীনের রাজনীতি এবং চীনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অনেক পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ ধারণা রাখেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ চীনের উপর অর্থনৈতিকভাবে অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর এর প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছেন যিনি চীনের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্বের একটি বড় বিষয় হল, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি মাখামাখির সম্পর্ক। আর এ কারণেই চীনের কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এবং চীনের কূটনীতি অলিগলি চেনা ডেভিড মিলকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ডেভিড মিলের নিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি বার্তা সুস্পষ্ট হয়েছে। তা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক, বিশেষ করে অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং বাংলাদেশে কাজ করা একজন ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছে। তৃতীয়ত বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরতে পারে এজন্য চীনের কূটনীতি সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে এমন একজন কূটনৈতিককে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এখন দেখা যাক, ডেভিড মিলের বাংলাদেশ মিশন কতটুকু সফল হয়।
ডেভিড মিল বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি
মন্তব্য করুন
ফেক আইডি দিয়ে অপপ্রচার বন্ধে মন্ত্রী-এমপিদের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েড করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েড করার জন্য পাঠালে আমরা ফেরিফাই করে দেবো। ফলে ফেক আইডি দিয়ে আপনার নামে কেউ অপপ্রচার করতে পারবে না।
শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে পিটার ডি হাসের অধ্যায়। বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন এটি সিনেটের অনুমোদন হলে ডেভিড মিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে আবির্ভূত হবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিচ্ছেন পিটার ডি হাস। অর্থাৎ এটি সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ব্যাপারে যে মার্কিন নীতি অনুসরণ করছিল সেই নীতিতে পরিবর্তন আসছে। নিশ্চয়ই ডেভিড মিল একটি নতুন মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। আর এ কারণেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে নেওয়া হল পিটার ডি হাসকে।