সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের
উজ্জ্বল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা রাষ্টনায়ক শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ
না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের
অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম
‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসে
‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১’ থেকে অষ্টম পর্ব পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের
জন্ম
পর্ব -৮
জিয়ার আমলে হ্যাঁ ও না ভোট পড়েছে শতকরা ৮৮ ভাগ। এর মধ্যে ৯৯.৪ ভাগ
পড়েছে হ্যাঁ-সূচক। এরশাদের আমলে ভোট পড়েছে ৭৭ ভাগ। তার মধ্যে হ্যাঁ পড়েছে ৬৮ ভাগ।
মনে হয় জিয়াউর রহমানের চেয়ে এরশাদ ধূর্ততার পরিচয় দিয়েছেন । গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবার
জন্য হ্যাঁ-তে ভোটের সংখ্যা কম দেখিয়েছেন।
হ্যাঁ ও না ভোটের উৎপত্তি হচ্ছে সামরিক শাসন। সংবিধানকে স্থগিত রেখে
সামরিক শাসন জারি করা হয়। এরপরই দেখা যায় যে, একজন সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে
নিয়েছে এবং রাতারাতি রাষ্ট্রের পতি বনে গেছেন। এখন এই পতিকে তো কেউ মানতে চায় না।
যদিও মিলিটারির ভয়ে কেউ কিছু বলেন না। কিন্তু মনে মনে তো সবাই জানে যে, এই পন্থায়
ক্ষমতা বৈধ নয়। অবৈধ পতিত্ব সমাজে ঠাঁই পায় না—এটা সামাজিক পর্যায়ে যেমন প্রযোজ্য,
রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তেমনই প্রযোজ্য। তখন বৈধকরণের নানা কলাকৌশল অবলম্বন করা হয়।
'হ্যাঁ' বা 'না'র ভোট তারই একটা নমুনা।
এক জেনারেলের পর আরেক জেনারেল ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে
দুর্নীতি লুটপাটের রাজত্ব করেছে। স্বৈরাচারী শাসকগণ তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য যুক্তি
খুঁজেছে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সমালোচনা ও দোষারোপ করে। যারা বলেন, একদলীয় ব্যবস্থা
গণতন্ত্র নস্যাৎ করেছে তাদের। কাছেই প্রশ্ন— বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে গণতন্ত্র যদি উদ্ধারই
করে থাকবেন তবে আবার গণতন্ত্রের জন্য এত সংগ্রাম এত আন্দোলন হরতাল মিছিল মিটিং করতে
হলো কেন? জিয়াউর রহমান যে পদ্ধতিতে ক্ষমতায় এসেছে, দল গঠন করেছে, নির্বাচন করেছে,
মার্শাল ল' অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জারিকৃত সামরিক ফরমান দিয়ে দেশ চালিয়েছে আবার
সেগুলো বৈধ করেছে পঞ্চম সংশোধনী দিয়ে—ঠিক জে. এরশাদ একই পথে ক্ষমতা দখল, দল গঠন, নির্বাচন
ও সামরিক ফরমান জারি সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধকরণ করেছে। জে. জিয়া পঞ্চম সংশোধনী
সংসদে পাস করিয়ে মার্শাল ল' প্রত্যাহার করেছে এবং জে. এরশাদ সপ্তম সংশোধনী পাস করিয়ে
মার্শাল ল' প্রত্যাহার করেছে। সামরিকতন্ত্রের ওপর জে. জিয়া যেতাবে গণতন্ত্রের লেবাস
পরিয়েছিল, জে. এরশাদও সেই একইভাবে সামরিকতন্ত্রের ওপর। গণতন্ত্রের লেবাস এঁটেছিল।
জে. জিয়ার আমলে বিষয়টা গভীরভাবে জনগণ উপলব্ধি করতে পারে নি বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে
দীর্ঘদিন জেলে বন্দি করে রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার ফলে আন্দোলন সেভাবে গড়ে
ওঠে নি। তদুপরি জে. জিয়ার আমলে সেনাবাহিনীতে পর পর আঠারোটা ছোট-বড় ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান
ঘটে। এই অভ্যুত্থান দমনের নামে সামরিক অফিসার ও জোয়ানদের ফাঁসি দিয়ে অথবা ফায়ারিং
স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। খুলনা,
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রদের হত্যা করে, শ্রমিক নেতা ও সাংবাদিকদের
হত্যা করে। মৌলভী সৈয়দ, মনির, মাহফুজসহ বহু নেতাকর্মীদের হত্যা করে। তাছাড়া মিথ্যা
মামলা, গ্রেফতার শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি— লোভ দেখিয়ে দলে টানা অব্যাহত থাকে। জে.
এরশাদ দল গঠন করতে গিয়ে ঐ একই পথ অনুসরণ করেন।
সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা করবার মতো পরিবেশ জিয়া-এরশাদ
নষ্ট করে দেয়। তবুও জিয়ার আমলের অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে আন্দোলনে সহায়তা করে। অতীত অভিজ্ঞতা
থেকে এরশাদের আমলে অত্যন্ত সচেতনভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। আন্দোলনের বিভিন্ন
পর্যায়ে পুরনো পথে নতুন করে ক্ষমতা দখলেরও পাঁয়তারা চলতে থাকে যা অত্যন্ত সতর্কতার
সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, জে. জিয়া যদি গণতন্ত্রই এনে দিয়ে
থাকেন তবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হলো কেন? জে. এরশাদ জিয়ার অনুসারী হিসেবে
একই পদ্ধতিতে সামরিকতন্ত্রের ওপর গণতন্ত্রের লেবাস পরিয়েছিল। কিন্তু লেবাস পরালেই
গণতন্ত্র হয় না সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আর হয় না বলেই আন্দোলন করতে হয়েছে। ক্ষমতার
খেলায়
লক্ষণীয় বিষয় হলো – জে. জিয়ার দল ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতা পেল আরেক জেনারেল হুসাইন মোঃ এরশাদ।
বিএনপি (জে. জিয়া) অর্থাৎ B- Bangladesh বাংলাদেশ, N Nationalist—জাতীয়তাবাদী,
P -Party -দল
জে. এরশাদের দল যাকে বলা হয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তা হলো B - Bangladesh—বাংলাদেশ,
N National— জাতীয়, P— Party—পার্টি।
একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যায় মূলত দলের নাম বা সংক্ষিপ্ত শিরোনাম দুটি
দলেরই এক।
জন্মস্থান—গোয়েন্দা সংস্থা; উদ্দেশ্য—প্রশাসনকে সামরিকীকরণ; দেশকে
শাসন জাতিকে শোষণ।
জে. জিয়ার দল গঠন সম্পর্কে পাকিস্তানের ‘দি হেরাল্ড' (করাচি) পত্রিকার
১৯৯১ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে :
“....And with the help of army intellegence, in which he had
served for a long time, he was successful in floating his own Bangladesh
Nationalist Party (BNP). According to a former officer of the defence
intelligence unit (DFU) said to be the Bangladeshi version of the Pakistan's
ISI-the blueprint of the BNP was prepared by the army. The Philosophy worked
out for the BNP was to attack the Awami League where it was most vulnerable and
to explcit the Islamic and anti-Indian sentiments of the people, who were
disappointed with the performance of the civilian government. According to the
Ex DFI man, a large number of disgruntled Awami Leaguers were inducted into the
new party. In addition, age old intelligence contacts in different parties were
revived and people from various affiliation as diverse as Bhashanis extreme
left wing party to Muslim League were successfully assembled an one platfrom
launched by the establishment the BNP soon became a formidable force."
Source: The Herald (Karachi) Dec. 1991
[অনুবাদ : জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনীতে গোয়েন্দা বিভাগে অনেককাল ধরে
কাজ করার ফলে তিনি গোয়েন্দা বাহিনীর সাহায্যে নিজ দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনে
সমর্থ হন। একজন প্রাক্তন সামরিক গোয়েন্দা অফিসারের মতে বিএনপির জন্ম ছিল পাকিস্তানি
গোয়েন্দা সংস্থার নীল নকশার ফলশ্রুতি। এই দলের জন্য যে দর্শন নির্ধারিত করা হয় তা
হলো আওয়ামী লীগের দুর্বল স্থানে আঘাত করা, ইসলামের সপক্ষে ও ভারতের বিরুদ্ধে জনগণের
অনুভূতিকে জাগ্রত করা। একজন প্রাক্তন ডিএফআই কর্মচারীর মতে অনেক নিন্দিত আওয়ামী লীগকে
জিয়ার নতুন দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ভাসানীর নেতৃত্বাধীন চরম বামপন্থী এবং মুসলিম
লীগের লোকদের দলে শামিল করে দলকে শক্তিশালী করেন।]
(সূত্র: শেখ
হাসিনা রচনা সমগ্র-১।। পৃষ্টা: ৯৮-১০০)
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নতুন সরকার বাজেট ঘোষণা জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন